Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নিবন্ধ : জাতীয় শিক্ষানীতি বনাম ধর্ম শিক্ষা

প্রকাশের সময় : ২৮ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মোঃ আবদুল লতিফ নেজামী
(পূর্বে প্রকাশিতের পর)
জাতীয় শিক্ষা নীতির অধীনে প্রণীত জাতীয় পাঠ্যক্রমের বিভিন্ন শ্রেণীর পাঠ্যবই থেকে মুসলিম লেখকদের ইসলামভিত্তিক রচনা, গল্প ও কবিতা মুসলিম ধর্মীয় গুরুদের ওপর লিখিত জীবনী বাদ দেয়ার অভিযোগ সময়োপযোগী চিন্তার বহিঃপ্রকাশ। কেননা সব দেশেই তাদের জাতীয় বীর ও ধর্মীয় গুরুদের ওপর লেখা প্রবন্ধ ও কবিতা স্ব স্ব দেশের পাঠ্য বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত থাকে নিজস্ব আদর্শের প্রতিফলন ঘটানোর জন্য। পৃথিবীর সব দেশেরই নিজস্ব আদর্শ রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার সিলেবাস এর ব্যতিক্রম। ফলে শিক্ষা আইনের ব্যাপারে বিভিন্ন মহল থেকে প্রতিবাদ অনিবার্য হয়ে ওঠে। একমুখী শিক্ষার নামে ধর্মীয় শিক্ষা সংকোচনের একপেশে উদ্যোগ অনাকাক্সিক্ষত এবং চিরায়ত মূল্যবোধের সম্পূর্ণ পরিপন্থী হিসেবে আখ্যায়িত করে বলা হচ্ছে যে, এসব পদক্ষেপ এদেশের জনগণের লালিত ও ধারণকৃত চেতনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। সুদীর্ঘকাল ধরে প্রচলিত ধর্মীয় শিক্ষার বাস্তব সত্যকে অস্বীকার করে শিক্ষার ক্ষেত্রে অন্যের সাথে অভিন্নতাবোধ নির্মাণের প্রয়াস হিসেবে ধর্মীয় শিক্ষাকে স্রেফ বৈশিষ্ট্যহীনতায় রূপান্তরের ষড়যন্ত্র বৈ আর কিছুই নয়। ধর্মীয় শিক্ষার বৈশিষ্ট্য বদল ঘটিয়ে অন্য শিক্ষার সাথে অভিন্ন করে তোলাই শিক্ষানীতির মূল লক্ষ্য বলে মনে করা হচ্ছে।
জাতীয় শিক্ষা নীতির উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের ধারায় জাতীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারা বিকশিত করে প্রজন্ম পরম্পরায় সঞ্চালনের ব্যবস্থা করার কথা বলা হলেও এই সুপারিশে দেশ-জাতি ও জনগণের স্বতন্ত্র জাতীয়তাবোধ, আদর্শ, ইতিহাস-ঐতিহ্য, রীতি-নীতি, তাহযিব-তমদ্দুন, বিশ্বাস ও মূল্যবোধ এবং সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যের চেতনাকে সঞ্জীবিত করার ব্যবস্থা নেই। বরং এই শিক্ষানীতিতে স্বকীয়তার চেতনাকে সঞ্জীবিত রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে স্বচেষ্ট ধর্মীয় শিক্ষা বন্ধের পর্যায়ক্রমিক পদক্ষেপ এবং গোটা শিক্ষাব্যবস্থাকে বিজাতীয়করণ প্রক্রিয়ারই ধারাবাহিকতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
শিক্ষানীতিতে শিক্ষাব্যবস্থাকে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা, প্রাথমিক শিক্ষা, বয়স্ক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা, মাধ্যমিক শিক্ষা, বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষা, মাদ্রাসা শিক্ষা, ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা, উচ্চ শিক্ষা, নারী শিক্ষা, ললিতকলা শিক্ষা, তথ্য প্রযুক্তি শিক্ষা ইত্যাদি বিভিন্ন অধ্যায়ে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রকৌশল, চিকিৎসা, তথ্য-প্রযুক্তি, নারী, ব্যবসায়, কৃষি, আইন প্রভৃতি সাধারণ ও টেকনিক্যাল বিষয়ে সব রিপোর্টে প্রায় একই সুপারিশ থাকায় মতানৈক্য হয়নি। কিন্তু প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও মাদ্রাসার বিভিন্ন শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তকে ধর্মীয় বিষয়কে ডাউন গ্রেড করে ব্যাপক পরিবর্তন আনায় জনমনে নানা প্রশ্নের উদ্রেক হয়। এসব শ্রেণীর বাংলা সাহিত্যে মুসলিম লেখকদের প্রবন্ধ-নিবন্ধ, গল্প-কবিতা, নাটক প্রভৃতি বিষয় পরিবর্তন করে এমনসব রচনা, গল্প, কবিতা সন্নিবেশিত করা হয়েছে, যা এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ঈমান-আক্বিদার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। তাই এই পাঠ্যপুস্তক থেকে এসব প্রবন্ধ-নিবন্ধ বাতিলের দাবিতে দেশব্যাপী প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে।
পেশাভিত্তি দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার জন্য ধর্ম শিক্ষা কোনো বাধা নয়। কারণ কোরআন-সুন্নাহ-এ সব পেশার ধারণা রয়েছে। উল্লেখ্য, ১৯২১ সালে ব্রিটিশ আমলে প্রতিষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এতদাঞ্চলের লোকদের বিশ্বাস, সংস্কৃতি ও মননের দিকে লক্ষ্য রেখে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ চালু করা হয় এবং ছাত্র-ছাত্রী জোগানের লক্ষ্যে তা পর্যায়ক্রমে কলেজেও সম্প্রসারিত করা হয়। কিন্তু প্রস্তাবিত শিক্ষা আইনে জাতীয় আদর্শিক চেতনা, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সর্বজনগ্রহণযোগ্য শিক্ষানীতির প্রতিফলন ঘটেনি। বরং ধর্মীয় চিন্তা-চেতনা বিবর্জিত সেক্যুলার ও সমাজতান্ত্রিক চিন্তা-চেতনা সৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তাছাড়া শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচিতে ললিতকলার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। ললিতকলা শিক্ষাকে আবিশ্যিক বিষয় হিসেবে নির্ধারণ করে শিশুমনে ধর্মহীন চিন্তা-চেতনা সৃষ্টির কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে। চিত্রশালার নামে জাতিকে মূর্তিপ্রীতির দিকে পরিচালনা, সঙ্গীত, নৃত্য ও সংস্কৃতির নামে এক ধরনের অপসংস্কৃতির পথে চলার কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে। মার্জিত ও রুচিসম্মত ললিতকলা শিক্ষা নির্মল চিত্তবিনোদনের মাধ্যম হতে পারে, কিন্তু এই শিক্ষা কখনো সুরুচিসম্পন্ন নাগরিক গোষ্ঠী তৈরির সহায়ক হতে পারে না।
সব দেশে স্ব ধর্মের মৌলিক শিক্ষা সম্বলিত আদর্শমানের পৃথক বিষয় হিসেবে শিক্ষাক্রমে আবিশ্যিকভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়ে থাকে। ধর্মীয় মূল্যবোধসমৃদ্ধ শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয় দেশে দেশে। কেননা ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষার উদ্দেশ্য হচ্ছে শিক্ষার্থীর আচরণগত উৎকর্ষ সাধন এবং জীবন ও সমাজে নৈতিকতা প্রয়োগের মানসিকতা ও চরিত্র গঠন। কেননা ধর্মই হলো মানুষের বিশ্বাসের মৌলিক বিষয়। এর মাধ্যমেই মানবিক গুণাবলী অর্জিত হয়। ছাত্রদের সুকুমার বৃত্তির বিকাশ, নৈতিক উৎকর্ষতা সৃষ্টি, সৃজনশীল প্রতিভার উন্মেষ, তাদের স্বশিক্ষিত ও মার্জিত করে গড়ে তোলা এবং প্রকৃত মানব সৃষ্টির ক্ষেত্রে ধর্মীয় শিক্ষার বিকল্প নেই। ধর্মীয় শিক্ষা আমাদের চেতনাকে শাণিত, কর্তব্যবোধে উজ্জীবিত, দীপ্ত পথে বলীয়ান ও উদ্দীপ্ত করতে সহায়তা করে। এই শিক্ষা কেবল চিন্তাভাবনার জগতে বিরাজমান নৈরাজ্যের উন্নতি ঘটাতে, দেশে উন্নত মানবিক জীবন এবং সমাজের মনোভূমিতে শৃঙ্খলা আনতে পারে। কেননা এই শিক্ষা মানুষের অন্তরে পারস্পরিক ভালোবাসা, সাম্য ও মৈত্রীর অনুভূতি স্বতঃস্ফূর্তভাবেই জাগ্রত করে। পারমাণবিক বোমা আবিষ্কারের পর অধ্যাপক বার্বাস বিশ্বব্যাপী ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার ওপর জোর দিয়ে বলেছেন, ‘বাধ্যতামূলকভাবে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার অনুশীলন না করলে মানব সভ্যতাকে রক্ষা করা সম্ভব হবে না’।
সারা পৃথিবীতে নিজস্ব ধর্মীয় পটভূমিকে স্মরণে রেখে পাঠ্যপুস্তকের সিলেবাস প্রণয়ন করা হয়ে থাকে। স্বাধীন বাংলাদেশে বাংলাদেশি জাতিসত্তার মর্মমূলে ধর্মের প্রভাব থাকলেও আমরা আমাদের শিক্ষার সিলেবাসে ধর্মভিত্তিক নৈতিকতাসম্পন্ন রচনা স্থান দিতে লজ্জাবোধ করি। অথচ আমাদের বাংলাদেশিত্ব ও ধর্মই আমাদের জাতিসত্তার অস্তিত্বের শর্ত। আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের গ্যারান্টি। ধর্ম ছাড়া আমাদের পৃথক জাতিসত্তার সবল ও সফল অস্তিত্ব নির্মাণ সম্ভব নয়। তাই আমাদের পাঠ্যপুস্তকে এমন সব রচনা সন্নিবেশিত করা প্রয়োজন যাতে আমাদের স্বাধীন রাষ্ট্রীয় ভূখ-ভিত্তিক এবং জীবনভিত্তিক চেতনা ও দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তি তৈরি করতে সক্ষম হয়। আমাদের অস্তিত্ব, স্বাধীন মর্যাদা, আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার, ঐক্য, শক্তি, সৃজনশীলতা, শৃঙ্খলা, কর্মপন্থা, সমষ্টি উদ্যোগ, সামগ্রিক কল্যাণ এবং ভবিষ্যৎ সবকিছুই যেন এই শিক্ষার দ্বারা আমাদের ধর্মীয় সংস্কৃতি ও ইসলাম ধর্মভিত্তিক জাতিসত্তার পরিপূর্ণ বিকাশের সুযোগ ঘটে। বাংলাদেশে জাতিসত্তা নির্মাণে ধর্মভিত্তিক শিক্ষাকেই আঁকড়ে ধরতে হবে।
ধর্ম থেকেই শিক্ষা উৎসারিত। তাছাড়া সব ধর্মেরই মৌলিক অঙ্গ হচ্ছে শিক্ষা। সব ধর্মেই শিক্ষা গুরুত্ব পেয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হয়েছে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান থেকেই। ইসলাম শিক্ষা তথা জ্ঞান অর্জনের প্রতি সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করেছে। পবিত্র কোরআনের প্রথম ওহির শিক্ষা হচ্ছে ‘পড়’। ইসলামে শিক্ষাকে প্রত্যেক নর-নারীর জন্য ফরজ (অবশ্য করণীয়) করা হয়েছে। খ্রিস্টধর্মের অনুসারীরা নৈতিকতাকে বাইবেল থেকে উৎসারিত বলে মনে করে। বেদান্ত বা বৈদিক ধর্মের মূল কথা হচ্ছে জ্ঞান। বৈদিক শব্দের অর্থও হচ্ছে জ্ঞান। বৌদ্ধধর্মে অহিংস জীবনযাপনের কথা বলা হয়েছে। ইহুদিদের ঐতিহ্য ও নৈতিকতা ধর্ম থেকেই উৎসারিত। তাই বিশ্বের উন্নত দেশে
ধর্ম শিক্ষাকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। পশ্চিমা বিশ্বের বহু দেশে খ্রিস্টধর্ম শিক্ষা চালু রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে ধর্ম শিক্ষার জন্য স্কুল-কলেজ ছাড়াও ওয়াশিংটনে একটি ক্যাথলিক ইউনিভার্সিটি রয়েছে। এককালের কমিউনিস্ট সোভিয়েত ইউনিয়নে ৭০ বছর পর আবার ধর্ম শিক্ষা শুরু হয়েছে। সমাজতান্ত্রিক মহাচীনেও ধর্মীয় শিক্ষা দিতে কোনো বাধা নেই। যুক্তরাজ্যে সরকারিভাবে খ্রিস্টধর্ম ও ইহুদি ধর্ম শিক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। ১৯৪৭ সালে স্বাধীন হওয়ার পর ভারতে ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু নানা সমস্যার কারণে সে লক্ষ্য অর্জন হয়নি। তাই ভারতে ধর্মীয় নীতির ভিত্তিতেই শিক্ষাব্যবস্থা চলছে। ভারতে জৈন স্কুল, বৈশ্য স্কুল, রাজপুত স্কুল চালু আছে। ফ্রান্স ধর্মীয় বিদ্যালয়েও ভর্তুকি দিয়ে থাকে। জার্মানি ও গ্রিসে অর্থডক্স খ্রিস্টধর্ম শিক্ষা চালু আছে। কানাডায় ক্যাথলিক ধর্ম শিক্ষার জন্য বাজেট বরাদ্দ বাধ্যতামূলক। তুরস্কে ধর্ম শিক্ষাকে নিঃশেষ করে দেওয়ার কামাল আতাতুর্কের প্রয়াস সফল হয়নি। সৌদি আরবসহ সব মুসলিম দেশে কোনো না কোনোভাবে আল-কোরআন ও ইসলামী শিক্ষা চালু রয়েছে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, সব দেশে সব সমাজে ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা চালু আছে। আর আমাদের দেশের এক শ্রেণীর লোক ধর্মীয় শিক্ষাকে কবর দিতে চায়। তাছাড়া দেখা যাচ্ছে যে, চীন কনফুসীয়-বৌদ্ধ ভিত্তি নিয়ে, জাপান বৌদ্ধ ভিত্তি নিয়ে, ইসরাইল ইহুদি ভিত্তি নিয়ে টিকে আছে। নেপাল হিন্দু ভিত্তি নিয়ে এবং পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া মুসলিম ভিত্তি নিয়ে টিকে আছে। ভারতের বিঘোষিত ধর্মনিরপেক্ষতাও আজ অস্বীকৃত হচ্ছে। এভাবে পৃথিবীতে ভাষা ও অন্যান্য বিষয় ছড়িয়ে আজ রাষ্ট্রীয় ভূখ-গত পরিচয়ে জাতিসত্তার ভিত্তি হচ্ছে ধর্ম। অথচ বাঙালিত্বের নামে আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে হিন্দুত্বের সঙ্গে সম্পর্কিত করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
ধর্মীয় শিক্ষায় এদেশের জনগণের বিশ্বাস, আমল-আখলাক, আচার-ব্যবহার, জীবন ধারণ, জীবন-মনন গঠিত হয়। তাই বর্তমান আদর্শিক শূন্যতা দূর করে সৎ, যোগ্য ও দেশপ্রেমিক নাগরিক তৈরির লক্ষ্যে নীতি-নৈতিকতা ও আদর্শের ভিত্তিতে সর্বস্তরের শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। আর এই নীতি-নৈতিকতা ও আদর্শের ভিত্তি হবে ধর্মীয় শিক্ষা। উচ্চ শিক্ষা, দুনিয়ার যে কোনো স্থান থেকে জ্ঞান, অভিজ্ঞতা আহরণ করা যাবে, প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানকে কাজে লাগানো যাবে, যোগাযোগ-যাতায়াত-বৈষয়িক লেনদেন করা যাবে।
জাতিসত্তার ভিত্তি হিসেবে ধর্ম শিক্ষাকে অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে। এদেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ধর্মীয়বোধ-বিশ্বাস ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা সংস্কার করতে হবে। সংবিধানের পবিত্র বিসমিল্লাহ ও রাষ্ট্রধর্মের আলোকে জাতীয় শিক্ষানীতি ও আইন প্রণয়ন করতে হবে। ধর্মীয়বোধের পটভূমিকে স্মরণে রেখে শিক্ষানীতি সম্পর্কে যে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ বাঞ্ছনীয়। কেননা স্বকীয়তার অন্তঃপ্রেরণায় বাংলাদেশ স্বতন্ত্র। জাতীয় শিক্ষনীতির মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি জাতীয় দলিল প্রণয়নে ব্যাপকভাবে জনগণ, শিক্ষাবিদ ও বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়ার দরকার। উল্লেখ্য, পৃথিবীর যেখানেই জোর করে বিপরীতমুখী শিক্ষানীতি চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, কালের আবর্তে এসে তা টেকেনি। যেমন তুরস্কের ওপর চাপিয়ে দেওয়া ধর্মহীন শিক্ষাব্যবস্থা টেকেনি। সোভিয়েত নেতৃত্বাধীন পূর্ব ইউরোপে কয়েকটি দেশেও চাপিয়ে দেওয়া লেলিনের ধর্মনিরপেক্ষ ও সমাজতান্ত্রিক শিক্ষাব্যবস্থা স্থায়ী হয়নি। তুরস্কে প্রবর্তিত কামাল আতাতুর্কের ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষাব্যবস্থার অস্তিত্ব নেই। তাই বলা যায়, বাংলাদেশেও ধর্মনিরপেক্ষ ও সমজতান্ত্রিক শিক্ষাব্যবস্থা টিকবে না।
লেখক : চেয়ারম্যান, ইসলামী ঐক্যজোট ও নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব

 

 

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নিবন্ধ : জাতীয় শিক্ষানীতি বনাম ধর্ম শিক্ষা
আরও পড়ুন