পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কূটনৈতিক সংবাদদাতা : সরকার সমকামীদের একটি পত্রিকার সম্পাদক জুলহাস মান্নান এবং তার বন্ধুকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পড়েছে। জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, জার্মানি, ডেনমার্কসহ বিভিন্ন দেশ এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো এ ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে। তারা বাংলাদেশে সব ধরনের সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর জন্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছে। আল-কায়েদা ইন ইন্ডিয়ান সাবকন্টিনেন্টের বাংলাদেশ শাখা আনসার-আল-ইসলামের এক টুইটার বার্তায় এই হত্যাকা- তারা ঘটিয়েছে বলে দাবি করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বলেছেন, যারা এই হত্যাকা- ঘটিয়েছে তাদের অবশ্যই বিচার করতে হবে। এই হত্যাকা-ের নিন্দা জানিয়ে এরই মধ্যে তদন্তে সহযোগিতারও প্রস্তাব দিয়েছেন জন কেরি।
বাংলাদেশে ভিন্ন মতের লোকদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত হত্যাকা-ের শেষ দেখতে পাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছে জাতিসংঘ। গতকাল মঙ্গলবার জুলহাস মান্নানসহ জোড়া খুনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি এক বিবৃতিতে এই মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, ভিন্ন মতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে আরো একটি নৃশংস হত্যাকা-ে আমরা শোকাহত। সমাজকর্মীদের বিরুদ্ধে ক্রমাগতভাবে বেড়ে যাওয়া আক্রমণের কোনো শেষ দেখা যাচ্ছে না। সর্বসাম্প্রতিক ঘটনায় সহিংসতা ও চরমপন্থার শিকার হয়েছেন জুলহাস মান্নান ও মাহবুব তনয়।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, বাংলাদেশে অসহিষ্ণুতাসংশ্লিষ্ট সহিংসতা বেড়ে যাচ্ছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মতের সাথে মিল নেই Ñ এমন ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হচ্ছে। (জুলহাস হত্যাকা-ের) মাত্র দুই দিন আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রেজাউল করিম খুনের ঘটনা এরই দৃষ্টান্ত। তিনি এসব সহিংসতা ও নৃশংসতার বিরুদ্ধে সব রাজনৈতিক দল ও ধর্মীয় নেতাদের প্রতিবাদ জানানো উচিত বলে মনে করেন। সেইসাথে দোষীদের আইনের আওতায় আনতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যকর ও দ্রুত তদন্ত করা প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি।
এছাড়া জুলহাস ও তনয় হত্যাকা-ের নিন্দা জানিয়ে ঘটনার দ্রুত এবং পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, জার্মানি, ডেনমার্ক এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি এক বিবৃতিতে বলেছেন, জুলহাস ছিলেন ‘একজন আস্থাভাজন সহকর্মী, একজন প্রিয়তম বন্ধু এবং বাংলাদেশে ব্যক্তির মর্যাদা ও মানবাধিকারের পক্ষে সোচ্চার। কেরির মতে, জুলহাসের হৃদয়ে ছিল বাংলাদেশের চেতনা এবং সহনশীলতা, শান্তি ও বৈচিত্র্যের সুরক্ষায় বাঙালির যে ঐতিহ্য তার প্রতিনিধি ছিলেন তিনি। হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় আনতে বাংলাদেশ সরকারকে ‘পূর্ণ সহযোগিতার’ প্রস্তাব দিয়েছেন জন কেরি।
এদিকে ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, তদন্তের আগে কী উদ্দেশ্যে এ হত্যাকা- তা নিয়ে কোনো ধারণা করতে চান না তারা। তিনি (জুলহাস) ছিলেন সমকামী অধিকারের একজন সাহসী মুখপাত্র, যা মানবাধিকার এবং তার এ হত্যাকা- বর্ণনাতীত, অগ্রহণযোগ্য ও ক্ষমার অযোগ্য।
গত সোমবারের প্রেস ব্রিফিংয়েও বাংলাদেশের ব্লগারসহ বিভিন্ন অ্যাক্টিভিস্টদের আশ্রয় দেয়ার বিষয়টি বিবেচনায় থাকার কথা জানান পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র। প্রয়োজন অনুসারে ঘটনা ধরে ধরে বিষয়টি পররাষ্ট্র দপ্তর বিবেচনায় নেবে বলে জানান তিনি। এক প্রশ্নের জবাবে মুখপাত্র বলেন, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সহিংসতার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ‘সজাগ’ রয়েছে। আমি আগে যা বলেছি আবারও তা বলছি, বাংলাদেশের এগিয়ে চলার যে ইতিহাস তার সঙ্গে এটা (সহিংসতা) পুরোপুরি সাংঘর্ষিক।
হত্যায় জড়িতদের বিচারের আওতায় আনতে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রস্তাব তুলে ধরে পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বলেন, যে কাপুরুষরা এই হত্যাকা- ঘটিয়েছে তাদের বিচারের আওতায় আনা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষকে আমাদের সহযোগিতার অঙ্গীকার করছি। যে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর আগে তদন্তকারীদের কাজটি ঠিকমতো করতে দেয়া প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অ্যাসিসটেন্ট সেক্রেটারি নিশা দেশাই বিসওয়াল এ ঘটনায় টুইট করেছেন। তাতে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস পরিবারের প্রিয় সদস্য, আমাদের সহকর্মী জুলহাস মান্নানকে নৃশংস ও বর্বরোচিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এতে আমার হৃদয় ভেঙে গেছে। আমি ক্ষুব্ধ।
সমকামী অধিকারকর্মী জুলহাস মান্নানসহ সাম্প্রতিক হত্যাকা-গুলোর নিন্দা জানিয়ে খুনিদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হুগো সয়্যার ও বাংলাদেশে জার্মানীর রাষ্ট্রদূত থমাস প্রিন্জ। ব্রিটিশ প্রতিমন্ত্রী এক টুইট বার্তায় ও জার্মান রাষ্ট্রদূত এক বিবৃতিতে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনাও জানিয়েছেন।
হুগো সয়্যার লিখেছেন, বাংলাদেশে অধ্যাপক করিম, তনয় ফাহিম ও জুলহাস মান্নানের নির্বিচার হত্যাকা-ে আমি গভীরভাবে শোকাহত। খুনিদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে।
এক বিবৃতিতে জার্মান রাষ্ট্রদূত ‘অসাধারণ দুই মানবাধিকারকর্মীর উপর নৃশংস হামলার তীব্র নিন্দা’ জানিয়ে বলেন, এটা শুধু দু’জন সাহসী মানুষের উপর নয়, এই দেশের মত প্রকাশের স্বাধীনতার উপর হামলা। দ্রুত ও ব্যাপক তদন্ত নিশ্চিত করতে সব ধরনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানান প্রিন্জ। জার্মান রাষ্ট্রদূত বলেন, বিগত মাসগুলোতে এ ধরনের অনেকগুলো ঘটনা আমরা ঘটতে দেখেছি। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার মৌলিক অধিকার রক্ষায় ঘুরে দাঁড়াতে পুরো সমাজের জন্য এখনই সময়।
এদিকে ঢাকায় ডেনমার্ক দূতাবাসের এক বিবৃতিতে হত্যাকা-ের নিন্দা জানিয়ে খুনিদের বিষয়ে সরকারকে শক্ত অবস্থান নেয়ার আহ্বান জানানো হয়। বিবৃতিতে দূতাবাসের শার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ইয়াকব হগার্ড স্বাধীন মত প্রকাশ ও ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করতেও সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
বাংলাদেশে নৃশংস হত্যাকা-ের নিন্দা জানিয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক পরিচালক চ্যাম্পা প্যাটেল গত সোমবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, একের পর এক নৃশংস হত্যাকা- রুখতে বাংলাদেশ ব্যর্থ। এসব ঘটনা প্রমাণ করে যে, বাংলাদেশে নিরাপত্তার কতটুকু অভাব রয়েছে।
নিউইয়র্ক ভিত্তিক সাংবাদিক সংগঠন দ্য কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট (সিপিজে) এর এশিয়া প্রকল্পের সমন্বয়কারী বব দিজ বলেন, কর্তৃপক্ষকে তাৎক্ষণিকভাবে জুলহাস মান্নান হত্যার তদন্ত করতে হবে এবং অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। বব দিজ আরো বলেন, বাংলাদেশের সাবংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীরা হামলার শিকার হচ্ছেন এবং সরকার এই অপরাধ বন্ধ করতে অথবা ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যৎসামান্যই কাজ করছে।
উল্লেখ্য, গত সোমবার কলাবাগানের লেক সার্কাস এলাকায় বাসায় ঢুকে সমকামী বিষয়ক ‘রূপবান’ পত্রিকার সম্পাদক ও ইউএসএআইডি’র কর্মকর্তা জুলহাস মান্নান ও তনয় নামের এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যা করে আততায়ীরা। ওই ঘটনায় এক নিরাপত্তারক্ষী ও এক পুলিশ কর্মকর্তাও আহত হন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।