Inqilab Logo

মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জ্বালানি সঙ্কটে পশ্চিম জোনে একাধিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ইউনিট বন্ধ

প্রকাশের সময় : ২৭ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নাছিম উল আলম : পণ্য ও জ্বালানিবাহী নৌযানের অব্যাহত ধর্মঘটে দেশের পশ্চিম জোনে তরল জ্বালানিনির্ভর একাধিক উৎপাদন ইউনিট বন্ধ হতে শুরু করায় বিদ্যুৎ সংকট আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। অব্যাহত তাপ প্রবাহের মধ্যে গতকাল ডে-পিক আওয়ারে পশ্চিম জোনের ২১ জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ চাহিদার অর্ধেকে নেমে আসায় জনজীবনে চরম হাহাকার সৃষ্টি হয়।
দিনরাত লোডসেডিং-এর যন্ত্রণায় বরিশাল ও খুলনাসহ ফরিদপুর অঞ্চলের ২১টি জেলার সাড়ে ৩ কোটি মানুষের জীবনে চরম দুর্যোগ নেমে এসেছে। গতকাল সারাদিন প্রায় এক হাজার মেগাওয়াট চাহিদার বিপরিতে সর্বোচ্চ সরবরাহ ছিল ৬শ’ মেগাওয়াট নিচে। সান্ধ্য পিক আওয়ারে চাহিদা সাড়ে ১২শ’ মেগাওয়াট অতিক্রম করলেও সরবরাহ সাড়ে ৭ মেগাওয়াটের বেশি ছিল না।
গ্যাসের অভাব ভোলার ২২৫ মেগাওয়াট গ্যাসটার্বাইন পাওয়ার স্টেশনটির উৎপাদন মাত্র ৬৫ মেগাওয়াটে সীমিত রাখা হয়েছে। অপরদিকে, জ্বালানি তেল সংকটে গতকাল দুপরে বরিশালে ‘সামিট পাওয়ার’-এর ১১০ মেগাওয়াট উৎপাদন কেন্দ্রটি পরোপুরিভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। একই কারণে গোপালগঞ্জের ১শ’ মেগাওয়াট, ফরিদপুরের ৫০ মেগাওয়াট, বরিশালে ২০ মেগাওয়াটের ২টি গ্যাসটার্বাইন ও ভেড়ামাড়ার অনুরূপ ৩টি ইউনিটের উৎপাদনও বন্ধের পর্যায়ে। তরল জ্বালানিনির্ভর পাওয়ার স্টেশনগুলো একে একে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যাপক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। এরই রেশ ধরে পশ্চিম জোনেও পরিস্থিতি ক্রমশ ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। গত এক সপ্তাহ ধরে বরিশাল, খুলনা, নওাপাড়া, গোপালগঞ্জ ও ফরিদপুরের বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোতে জ্বালানি তেল সরবরাহ বন্ধ রয়েছে নৌযান ধর্মঘটের কারণে। বর্তমান অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন কবে স্বাভাবিক হবে তা গতকালও বলতে পারেননি কেউ। দেশের পাওয়ার স্টেশনগুলোতে তরল জ্বালানির যোগান দিতে ন্যূনতম ৫০টি অয়েল ট্যাংকার প্রয়োজন হলেও তার প্রায় পুরোটাই বেসরকারি নৌযানের উপর নির্ভরশীল। রাষ্ট্রীয় জাহাজ চলাচল প্রতিষ্ঠান-বিআইডব্লিউটিসির হাতে যে ১২টি অয়েল ট্যাংকার রয়েছে, তার ৫টিই বন্ধ। অপর ৭টি চলছে বেসরকারি ইজারাদারের মাধ্যমে। ফলে সেসব টাংকারগুলোও বর্তমান নৌযান ধর্মঘটে সামিল হয়েছে।
এদিকে, চাহিদার অর্ধেক সরবরাহের কারণে দিনরাত লোডসেডিং-এর সাথে বিদ্যুৎ সঞ্চালন কোম্পানি পিজিসিবি’র সেন্টাল লোড ডেসপাস সেন্টার-সিএলডিসি থেকে দূর নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থায় বরিশালসহ পশ্চিম জোনের বিভিন্ন ৩৩ কেভি সাব-স্টেশনসহ লাইনসমূহ দফায় দফায় বন্ধ করে দেওয়ায় সংকট আরো বাড়ছে। এমনকি খোদ বরিশাল মহানগরীর কাশীপুর ৩৩ কেভি সাব-স্টেশন সিএলডিসি থেকে বন্ধ করে দেওয়ার পরে তা সচল হবার আগেই আবার লোডসেডিংও করা হচ্ছে কোনো কোনো এলাকায়। ফলে এ নগরীর কোনো কোনো ফিডারে এক নাগারে দেড় থেকে দু’ঘণ্টাও বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকছে। এসব পরিস্থিতিতে পশ্চিম জোনের বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি-ওজোপাডিকো’র মাঠ পর্যায়ের প্রকৗশলী ও কর্মীরা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন।
গতকাল ডে-পিক আওয়ারে পশ্চিম জোনের সাড়ে ৯শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ চাহিদার বিপরিতে সরবারহ ছিল সাড়ে ৫শ’ মেগাওয়াটের মতো। এ সময় বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলে ১৩০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরিতে সরবরাহ ৮০ মেগাওয়াটের নিচে রাখা হয়। এমনকি চাহিদার অর্ধেক বরাদ্দ নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে না পাড়ায় দফায় দফায় সিএলডিসি থেকে দূর নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থায় বিভিন্ন ৩৩ কেভি লাইন ও সাব-স্টেশনগুলোই বন্ধ করে দেওয়া হয়। বারবার ৩৩ কেভি সাব-স্টেশনগুলো বন্ধ করে দেওয়ায়-এর ট্রান্সফমারের এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দায়িত্বশীল মহল। গতকাল ডে-পিক আওয়ারে বরিশালের কাশীপুর সাব-স্টেশনটি দু’দফায় বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে নগরীর ৮টি ফিডারে একযোগে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে-পড়ের লোডসেডিং-এ নগরীর প্রায় ৩০ ভাগ এলাকার মানুষের দুর্ভোগ আরো বেড়ে যায়।
অব্যাহত লোডসেডিং-এর কারণে বরিশাল মহানগরীসহ পশ্চিম জোনের ২১ জেলা সদরসহ শতাধিক পৌর শহরে পানি সরবরাহ ব্যবস্থাও প্রায় ভেঙে পড়েছে। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা পরিসেবাও চরম সংকেট। শিল্প উৎপাদনে ব্যাপক ধস নেমেছে ইতোমধ্যে। দিন ও রাতের লোডসেডিং-এ ব্যবসা-বাণিজ্যের বিপর্যয় রোধে ব্যবসায়ীরা এখন আর কোনো পথ খুঁজে পাচ্ছেন না।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জ্বালানি সঙ্কটে পশ্চিম জোনে একাধিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ইউনিট বন্ধ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ