পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বোর্ড পরীক্ষাসহ সরকারি চাকরি ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে নানা পদক্ষেপ নিয়েও প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না প্রশ্নফাঁসকারী চক্রকে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অভিযানে প্রকৃত প্রশ্ন ফাঁস অনেকটা বন্ধ হলেও নতুন করে মাথাচড়া দিয়ে উঠেছে ‘ভুয়া প্রশ্ন’ ফাঁসকারী চক্র। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্ন উপায়ে পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের সাথে নিয়মিত প্রতারণা করে যাচ্ছে এ সব চক্রের সদস্যরা। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র বলছে- প্রশ্ন ফাঁসকারী চক্রের সদস্যরা সারা বছর নিস্ক্রিয় থাকলেও পরীক্ষার আগে অনেক বেশি সোচ্চার হয়ে ওঠে। একশ’ শতাংশ কমন পড়ার নিশ্চয়তা দিয়ে ফেসবুকে বিভিন্ন ভুয়া আইডির মাধ্যমে প্রশ্ন বিক্রির প্রচারণা চালায় তারা। চলতি বছর আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যালে ভর্তি পরীক্ষার ভুয়া প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে অন্তত ৫০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রশ্ন ফাঁসকারী ছাড়াও প্রতারিত হওয়া শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা রয়েছেন।
এদিকে মেডিক্যালে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে গত বুধবার ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত। পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮’ পাশ হওয়ার পরে এই আইনে এটিই প্রথম মামলা।
আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র বলছে, প্রতিবছর রাজধানী ছাড়াও প্রত্যন্ত অঞ্চলে অভিযান চালিয়ে প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে ৫০ থেকে ৮০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। র্যাব সূত্র বলছে, গত ৫ অক্টোবর মেডিক্যালের প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে ১১ জনকে গ্রেফতার করে র্যাব-১০। এর মধ্যে প্রশ্নপত্র সরবরাহকারী চক্রের ৫ সদস্য ছাড়া ভুয়া প্রশ্ন গ্রহণকারী ৬ শিক্ষার্থী ছিল। তাদের কাছ থেকে ১ কোটি ২৪ লাখ টাকার চেক ও ভূয়া প্রশ্নপত্র, মোবাইল ফোন ও অন্যান্য ইলেক্ট্রনিকস ডিভাইস জব্দ করা হয়। এছাড়া ২০১৩ সাল থেকে ২০১৮ পর্যন্ত প্রশ্নফাঁস বিরোধী ১০৫টি অভিযান চালায় র্যাব। এতে চক্রের ২৩০ জনকে গ্রেফতার করা হয়
গতকাল দুপুরে মালিবাগে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইমের বিশেষ পুলিশ সুপার ম্যোলা নজরুল ইসলাম বলেন, গত বুধবার রাতে রাজধানীর কাজলা, দনিয়া, যাত্রাবাড়ী ও বাড্ডা এলাকায় অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম। তারা হলো- পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ার কালাম গাজীর ছেলে কাউসার গাজী, চাঁদপুরের মতলবের জাকির হোসেনের ছেলে সোহেল মিয়া, মাদারীপুরের কালকিনির হাসানুর রশীদের ছেলে তারিকুল ইসলাম শোভন, নওগাঁর পত্নীতলার আলমের ছেলে রুবাইয়াত তানভির (আদিত্য), টাঙ্গাইলের কালিহাতীর আনসার আলীর ছেলে মাসুদুর রহমান ইমন। এ সময় তাদের কাছ থেকে মোবাইল, ল্যাপটপ, ভুয়া ফেসবুক আইডি, বিকাশ অ্যাকাউন্ট, সিমকার্ড ও নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে রাজধানীর পল্টন থানায় ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে’ একটি মামলা করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গতকাল প্রত্যেকে দুই দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত।
মোল্যা নজরুল বলেন, প্রথমে চক্রের মাস্টার মাইন্ড কাউসার গাজীকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে সে বর্তমান সময়ে প্রকৃত প্রশ্নপত্র ফাঁস করতে না পারার অক্ষমতা স্বীকার করে। তবে কাউসার জানায়, প্রকৃত প্রশ্ন ফাঁস করতে না পেরে নিজেদের মতো করে প্রশ্ন তৈরি করে। পরে ফেসবুকে বিভিন্ন ফেইক আইডি খুলে এবং মেসেঞ্জার, ভাইবার, হোয়াটস অ্যাপে ১০০ ভাগ কমন পড়ার গ্যারান্টি দিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছে এসব প্রশ্ন বিক্রি করে আসছে। মূলহোতা কাউসার গাজীকে তার বন্ধু সোহেল মিয়া সহযোগিতা করতো। সোহেল অন্যের জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে ভুয়া বিকাশ অ্যাকাউন্ট খুলে টাকা লেনদেন করত।
তারা সিআইডিকে জানায়, দীর্ঘদিন ধরে তারা মেডিকেল প্রশ্নপত্র ফাঁসের কাজ করে আসছিল। কিন্তু এবার প্রশাসনের তৎপরতায় প্রশ্নপত্র ফাঁস করতে পারেনি। তবে ভুয়া প্রশ্নপত্র তৈরি করে ১০টি ফেইক আইডি খুলে মেডিক্যালের প্রশ্ন পাওয়ার প্রচারণা চালায়। বিভিন্ন সাজেশন বই, বিগত বছরগুলোর প্রশ্নপত্র একত্রে করে একটি ভুয়া প্রশ্নপত্র তৈরি করে। তিনি জানান, চক্রের পাঁচ সদস্যের বিরুদ্ধে গতকাল পল্টন থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে প্রথম মামলা
ভুয়া প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে গ্রেফতার পাঁচজনের বিরুদ্ধে গত বুধবার পল্টন থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করা হয়েছে। থানা ও আদালত সূত্র বলছে- ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ পাশ হওয়ার পরে এই আইনে এটাই প্রথম মামলা। মামলায় তাদের বিরুদ্ধে- ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮-এর ধারা ২৩(২), ২৪(২) ও ২৬(২)-সহ পাবলিক পরীক্ষা (অপরাধ) আইন ১৯৮০-এর ৪/১৩ ধারাও অন্তভূক্ত করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিলটি গত ২০ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে পাস হয়। ৮ অক্টোবর প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ বিলটিতে সম্মতি দিলে ওইদিন থেকেই এটি আইন হিসেবে কার্যকর হয়।
দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর
এদিকে, মেডিক্যালে ভর্তি পরীক্ষার ভুয়া প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে গ্রেফতার পাঁচজনের প্রত্যেককে দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল বিকেলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইমের (উপ-পরিদর্শক) শিব্বির আহমেদ পাঁচজনকে আদালতে হাজির করে ৭ দিন করে রিমান্ডের আবেদন করেন। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক সত্যব্রত শিকদার প্রত্যেকের দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আদালতের সংশ্লিষ্ট থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (জিআর) জালাল উদ্দীন এই তথ্য জানান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।