Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ধর্মানুরাগীর সংখ্যা বাড়ছে চীনা কমিউনিস্ট পার্টিতে

প্রকাশের সময় : ২৭ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : চীনের নেতারা দেশের সরকারীভাবে স্বীকৃত ধর্মগুলোর স্থানীয়করণ ও বিদেশী শক্তির দ্বারা অনুপ্রবেশ প্রতিরোধে সাহায্যের আন্দোলন জোরদার করেছেন। চীনা কম্যুনিস্ট পার্টির বহু সদস্য ধর্মের দিকে ফিরেছেন আর তা পার্টির মতাদর্শকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে বলে একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করার পর এ আন্দোলন শুরু হয়েছে। খবর ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস টাইমস।
সপ্তাহান্তে বিরল জাতীয় ধর্মীয় কর্ম সম্মেলনে এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়। চীনের প্রেসিডেন্ট ও কম্যুনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক শি জিনপিং এতে সভাপতিত্ব করেন। ২০০১ সালের পর এ ধরনের এটাই প্রথম সম্মেলন। কিছু পর্যবেক্ষক বলেন, এর মধ্য দিয়ে পুনরায় বিদেশী প্রভাব ও দলের সদস্যদের মধ্যে মতাদর্শগত বিশুদ্ধতার অভাব বিষয়ে প্রেসিডেন্ট শি’র উদ্বেগ প্রকাশিত হয়েছে।
১৯৬০ ও ’৭০-এর দশকে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময় নিষিদ্ধ হওয়ার পর চীনে সরকারী নিয়ন্ত্রণাধীন ধর্মকে সরকারীভাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। গত দু’দশকেরও বেশি সময় ধরে ধর্ম ক্রমেই জীবনের অংশ হয়ে উঠছে। সরকারী হিসেবে বর্তমানে ১০ কোটির মত ধর্মবিশ্বাসী রয়েছে। তবে ধর্মবিশ্বাসীদের মত, এ সংখ্যা বাস্তবের চেয়ে অনেক কম।
প্রায় তিন বছর আগে ক্ষমতায় আসার পর প্রেসিডেন্ট শি অন্তত কম্যুনিস্ট পার্টির ৮ কোটি ৮০ লাখ সদস্যের ওপর অধিকতর মার্ক্সসীয় মূল্যবোধ আরোপ করতে চেয়েছেন। তিনি সভায় বলেন যে, ধর্মীয় পন্থার মাধ্যমে বিদেশী অনুপ্রবেশ প্রতিহত এবং উগ্রপন্থীদের দ্বারা মতাদর্শগত লঙ্ঘন চীনের দৃঢ়ভাবে প্রতিহত করা উচিত।
শি বলেন, চীনের সমাজতান্ত্রিক সমাজে ধর্মের অন্তর্ভুক্তিতে সহায়তা করতে স্থানীয়করণ হচ্ছে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তিনি বলেন, আমাদের উচিত সমাজতন্ত্রের মূল মূল্যবোধে ধর্মীয় বৃত্ত ও তাদের অনুসারীদের নির্দেশনা ও শিক্ষা প্রদান করা।
চীনের আইন পরিষদ চীনা জনগণের রাজনৈতিক পরামর্শক সম্মেলনের (সিপিপিসিসি) পরামর্শদাতা কমিটি জাতিগোষ্ঠীগত ও ধর্মীয় কমিটির চেয়ারম্যান ঝু ওয়েইকুম সরকারী গ্লোবাল টাইমস সংবাদপত্রকে বলেন, বিদেশী ধর্মের স্থানীয়করণের অর্থ তাদের মূল মতবাদ ও বিধি-বিধান প্রত্যাখ্যান করা নয়, বরং ধর্মের সাথে চীনা বৈশিষ্ট্য যুক্ত করে পার্টির নেতৃত্ব অনুসরণ করা।
ঝু বলেন, কিছু সমস্যা আছে যা জরুরিভাবে সমাধান করা প্রয়োজন, বিশেষ করে ধর্মের মাধ্যমে বিদেশী শক্তির অনুপ্রবেশ এবং কোনো কোনো অঞ্চলে অ-চীনাকরণ ও ইসলামী উগ্রপন্থীদের অনুপ্রবেশ।
চীনে সরকারীভাবে স্বীকৃত ধর্মগুলো হল ইসলাম, বৌদ্ধধর্ম, তাও ধর্ম, প্রটেস্ট্যান্ট ও ক্যাথলিক ধর্ম যাদের কাছে কম্যুনিস্ট পার্টি শাসনের প্রতি আনুগত্য আশা করা হয়। অন্যদিকে চীনা ক্যাথলিক চার্চকে বেইজিংয়ের আদর্শে চলতে হবে, রোমের আদর্শে নয়। ঝু বলেন, ভ্যাটিকান, যার সাথে বেইজিংয়ের কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই, চীনা ক্যাথলিকদের উপর প্রাধান্য বিস্তারের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বেইজিং শুধু উত্তর-পশ্চিম চীনে (সেখানে কিছু সন্ত্রাসী হামলা ঘটেছে এবং স্থানীয় কিছু মুসলিম তরুণ ইসলামিক স্টেট গ্রুপের সাথে যোগ দিতে মধ্যপ্রাচ্যে গেছে) ইসলামী উগ্রপন্থীদের উত্থানেই শঙ্কিত নয়, তিব্বতি বৌদ্ধদের উপর নির্বাসিত তিব্বতি নেতা দালাই লামার অব্যাহত প্রভাব এবং চীনের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে খ্রিস্টধর্মের জনপ্রিয়তায়ও উদ্বেগজনক।
চীন সরকার গত বছর পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ ঝেজিয়ানের ওয়েনঝুতে সরকারীভাবে নিবন্ধিত চার্চগুলোর উপর দমন চালায়। তারা আকারে বড় বলে ক্রুশগুলো খুলে ফেলতে তাদের বাধ্য করে। একজন খ্যাতনামা ধর্মযাজককে জেল দেয় এবং তার পক্ষে মামলা পরিচালনা করায় একজন আইনজীবীকে সাত মাস আটকে রাখে। আরো জানা গেছে যে সরকার ক্রুশ দমনের প্রতিবাদ করায় চীনের সরকার অনুমোদিত প্রটেস্ট্যান্ট চার্চের শীর্ষ কর্মকর্তাকে আটক করেছে।
প্রেসিডেন্ট শি’র নির্দেশিত স্থানীয়করণের রূপটি কী হবে সে বিষয়ে চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম বিশদ কিছু বলেনি। তবে এটা বলেছে যে ধর্মীয় নেতা ও প-িতরা সরকারের পদক্ষেপে সমর্থন জানিয়েছেন।
হংকংয়ের চীনা বিশ্ববিদ্যালয়ে চীনা রাজনীতি বিভাগের বিশেষজ্ঞ উইলি ল্যাম বলেন, শি জিনপিং নেতৃত্ব সুনির্দিষ্টভাবে ক্যাথলিকসহ খ্রিস্টানদের ব্যাপারে ভীত। স্থানীয় পর্যায়ের অনেক কম্যুনিস্ট কর্মকর্তাই খ্রিস্টান হয়েছেন এবং তারা অনিবন্ধিত হাউজ চার্চগুলোর (সরকারে অনুমতি ছাড়া প্রটেস্ট্যান্ট খ্রিস্টানদের চার্চ) সুরক্ষা দিচ্ছেন।
ল্যাম বলেন, খ্রিস্টধর্মের স্থানীয়করণের অর্থ হচ্ছে পশ্চিমা ধর্মের মধ্যে সম্প্রীতি, কর্তৃপক্ষের প্রতি সম্মান ও আনুগত্য প্রকাশের ব্যাপারে কনফুসীয় ও বৌদ্ধ ধর্মের ধারণাসহ চীনা বৈশিষ্ট্য সংযুক্ত করা।
এ প্রসঙ্গে তিনি সাম্প্রতিক দলীয় নির্দেশনার কথা উল্লেখ করেন যাতে অবসরপ্রাপ্ত দলীয় কর্মকর্তা বা সদস্যদের অবশ্যই খ্রিস্টান বা তিব্বতী বৌদ্ধ হওয়া যাবে না বলা হয়েছে।
সিপিপিসিসি কমিটি চেয়ারম্যান ঝু কর্তৃক এ ধরনের উদ্বেগের কথা নিশ্চিত হয়েছে। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বহু দলীয় সদস্য, এমনকি কিছু কর্মকর্তাও দলের দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে পতিত হয়েছেন এবং ধর্মের মধ্যে সান্ত¡না খুঁজছেন যা পার্টির মতাদর্শ, সংগঠন ও কর্ম পদ্ধতিকে ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে ও দেশের ধর্মীয় কর্মকা-কে ব্যাহত করছে।
ঝু পার্টি সদস্যদের অদম্য মার্কসীয় নাস্তিক, তাদের বিশ্বাসকে সংহত করা ও পার্টির আদর্শ অন্তরে ধারণ করার আহ্বান জানান।
প্রেসিডেন্ট জিও একথা বলেছেন বলে জানা গেছে যে, টিনএজারদের বিশ্বের প্রতি বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে সহায়তা করতে হবে এবং তাদেরকে বিজ্ঞানে বিশ্বাস করতে, বিজ্ঞান অধ্যয়ন করতে এবং বিজ্ঞানের প্রচার করতে দিকনির্দেশনা দিতে হবে যা হচ্ছে ধর্মের সম্ভাব্য প্রতিষেধক। তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ইন্টারনেট যাতে বিপজ্জনক ধর্মীয় ধারণার একটি চ্যানেল না হয়ে ওঠে তা প্রতিহত করতে চীনকে যতœবান থাকতে হবে।
চীন সরকার সাম্প্রতিক বছরগুলোতে একটি পর্যায় পর্যন্ত ধর্মকে অনুমোদন করছে যা একটি ক্রমবর্ধমানভাবে বিভক্ত সমাজে ধর্ম কিছু সামাজিক ভূমিকা পালন করতে পারে বলে অঘোষিতভাবে স্বীকৃতি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে কিছু ধর্মীয় গ্রুপ এখন সামাজিক কল্যাণ কার্যক্রম আয়োজন করতে পারে। যাহোক, পর্যবেক্ষকরা বলছেন যে সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বিষয়ে আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে ক্রমবর্ধমানভাবে নার্ভাস হয়ে পড়া একটি নেতৃত্ব বিদেশী প্রভাব সম্পর্কে অধিক উদ্বিগ্ন। বিদেশী গুপ্তচরদের বিপদ সম্পর্কে বেইজিয়য়ের অধিবাসীদের প্রতি সাম্প্রতিক সতর্কবাণী থেকে ও এনজিও সম্পর্কিত নয়া খসড়া আইন থেকে তা বোঝা যায়। সমালোচকরা এগুলোকে চীনের নাগরিক সমাজে বিদেশী প্রভাব হ্রাসের চেষ্টা বলে আখ্যায়িত করেছেন।
গ্লোবাল টাইমস একটি সম্পাদকীয়তে যোগ করেছে, বহু প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ ধর্মীয় শক্তিও বটে যাদের ভূরাজনৈতিক স্বার্থ সচেতন বা অসচেতনভাবে চীনের সাথে তাদের সাংস্কৃতিক বিনিময়ে রূপ নেয়। ফলে চীনের জন্য প্রভাবিত না হওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর তা পরিহার করা হলে বিদেশী রাজনৈতিক ও ঈর্ষাগ্রস্ত মতাদর্শগত শক্তি তার সুযোগ গ্রহণ করবে। বিদেশী শক্তিগুলো যদি আন্তর্জাতিক রাজনীতি নিয়ন্ত্রিত হয়ে চীনে তাদের প্রভাবের অনুপ্রবেশ ঘটায় তা হবে তাদের জন্য দুর্বলতম সংযোগ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ধর্মানুরাগীর সংখ্যা বাড়ছে চীনা কমিউনিস্ট পার্টিতে
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ