Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রায় প্রত্যাখ্যান বিএনপির

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১২ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০৪ এএম

২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলার মামলার বিচারে সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে আদালত ‘ফরমায়েশি রায়’ দিয়েছে বলে তা প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীল বলেন, বিএনপি মনে করে, এই রায় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, ক্ষমতাসীন সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার নগ্ন প্রকাশ। আমরা এই ফরমায়েশি রায় প্রত্যাখ্যান করছি। গতকাল (বুধবার) দুপুরে রায় ঘোষণার পর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, জাতির দুর্ভাগ্য এই সরকার তার প্রতিহিংসা চরিতার্থ করবার জন্যেই আদালতকে ব্যবহার করে আরেকটি মন্দ দৃষ্টান্ত স্থাপন করল, যেমনটি করেছে মিথ্যা মামলায় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাদন্ড দিয়ে। আমরা সরকারের এহেন প্রতিহিংসামূলক আচরণ ও আদালতের মাধ্যমে তা কার্যকর করার নোংরা কৌশল। সজাগ হয়ে অনির্বাচিত এই সরকারকে হটিয়ে জনগণের নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। তিনি জানান, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার নৃশংস ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তৎকালীন বিএনপি সরকারই সেসময় প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি দেয়ার জন্য মামলা দায়ের করেছে। স্থানীয় তদন্ত সংস্থাগুলোর পাশাপাশি এফবিআই এবং ইন্টারপোলকে তদন্তে সম্পৃক্ত করেছে। বিএনপি সরকারই এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করার জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্তের ব্যবস্থা করেছে। এসব তদন্ত এবং আওয়ামী লীগের আন্দোলনের ফসল ১/১১ এর সরকারের আমলের তদন্ত প্রতিবেদনে কোথাও তারেক রহমান কিংবা বিএনপি নেতাদের সম্পৃক্ত করা হয়নি। এমনকি ঐ সময় ১৬১ ধারা অনুযায়ী তখন তদন্তকারী কর্মকর্তাদের কাছে দেয়া জবানবন্দীতে কারারুদ্ধ শেখ হাসিনাও তারেক রহমান কিংবা বিএনপি’র বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করেননি। ৬২ জন সাক্ষীর কেউই তারেক রহমান কিংবা বিএনপির নামও উচ্চারণ করেননি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ২০০৯ সালে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে আওয়ামী লীগ সরকার বিএনপিকে হেয়, ক্ষতিগ্রস্ত ও বিপদগ্রস্ত করার লক্ষ্যে অবসরপ্রাপ্ত ও বিতর্কিত পুলিশ কর্মকর্তা আব্দুল কাহার আকন্দকে চাকরিতে পুণরায় নিয়োগ দিয়ে এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিযুক্ত করার মাধ্যমে এটিকে একটি রাজনৈতিক মামলায় রুপান্তরিত করে। এই আব্দুল কাহার আকন্দ সেই ব্যক্তি যাকে বিএনপি সরকারের আমলে অবসরে পাঠানো হয়। কাহার আকন্দ ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়ে প্রকাশ্যে সভা, সমাবেশ, মিছিল করেছেন, পোস্টার ও লিফলেট বিতরণ করেছেন। এসবই তৎকালীন জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। অর্থাৎ আওয়ামী লীগের একজন নেতা জেনেই ২০০৯ সালের আওয়ামী লীগ সরকার তাকে এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছিল।
নির্যাতনের মাধ্যমে মুফতি হান্নানের কাছ থেকে স্বীকারোক্তি নেয়া হয়েছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, কাহার আকন্দ মামলার অন্যতম আসামী মুফতি হান্নানকে দীর্ঘদিন রিমান্ডে নিয়ে, সীমাহীন ও অকথ্য অত্যাচার করে তারেক রহমানকে জড়িয়ে বানানো এক জবানবন্দীতে মুফতি হান্নানের স্বাক্ষর নিয়ে তারেক রহমানকে আসামী হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করে। পরবর্তী পর্যায়ে মুফতি হান্নান আদালতে লিখিতভাবে তার সেই কথিত জবানবন্দী প্রত্যাহার করেন। তিনি লিখিতভাবে জানান, তারেক রহমানকে চেনেন না, তাঁর সাথে কোন কথা হয়নি এবং অত্যাচার করে তাকে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেছে। এই মামলায় অন্য কোন সাক্ষী তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কিছু না বলায় এবং মুফতি হান্নান তার জবানবন্দী প্রত্যাহার করায় গ্রেনেড হামলা মামলায় তারেক রহমানের আর কোন সম্পৃক্ততা না থাকা সত্তে¡ও তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়ার মাধ্যমে পুণরায় প্রমাণিত হলো যে, এদেশে কোন নাগরিকেরই আর সুবিচার পাওয়ার সুযোগ নেই।
এস কে সিনহার ঘটনার পর সুবিচার পাওয়ার সুযোগ নেই জানিয়ে বিএনপির এই নোত বলেন, সরকারের বিরুদ্ধে রায় দেয়ায় পদত্যাগ ও দেশত্যাগে বাধ্য হওয়া সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ কুমার সিনহা’র কথাই সঠিক প্রমাণিত হলো যে, যেদেশে প্রধান বিচারপতি সুবিচার পায় না সেদেশে কোন নাগরিকেরই সুবিচার পাওয়ার সুযোগ নেই। তিনি দেশবাসীকে সরকারের প্রতিহিংসামূলক আচরণ এবং আদালতের মাধ্যমে তা কার্যকর করার নোংরা কৌশল সম্পর্কে সজাগ হয়ে অনির্বাচিত এই সরকারকে হটিয়ে জনগণের নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, এই মামলায় তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কোনো প্রত্যক্ষ সাক্ষ্যপ্রমাণ, উপাত্ত-তথ্য প্রমাণ আদালতে উপস্থাপন করা হয় নাই। তা সত্তে ও তাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধন করার জন্য।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা শিরিন সুলতানা, আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, তাইফুল ইসলাম টিপু, মুনির হোসেন, সুলতানা আহমেদ, ফরিদা ইয়াসমীন প্রমূখ।
বরিশাল ব্যুরো জানায়, গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ের প্রতিবাদে বরিশালে বিএনপির নেতাকর্মীরা বিক্ষিপ্তভাবে বিক্ষোভের চেষ্টা কালে পুলিশ ধাওয়া করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এসময় মহানগর যুবদলের সভাপতি আক্তারুজ্জামান শামীম ও সাধারণ সম্পাদক মাসুদ হাসান মামুন সহ ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ রায়কে কেন্দ্র করে নগরীতে আইন-শৃংখলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি ছিল। এমনকি বরিশালের আদালতের এলাকাতেও পুলিশ চৌকি বসান হয় গতকাল।
বগুড়া ব্যুরো জানায়, বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেছে বগুড়া বিএনপির নেতা কর্মীরা। দুপুরে জেলা বিএনপির সভাপতি ভিপি সাইফুল , সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীনসহ উপজেলা চেয়ারম্যান ও সিনিয়র নেতাকর্মীরা রায়ের প্রতিবাদে মিছিল বের করে।
ময়মনসিংহ ব্যুরো জানায়, ময়মনসিংহে তাৎক্ষনিক বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপির ছাত্রদল এবং স্বেচ্ছাসেবক দল। নগরীর সানকিপাড়া এলাকায় দক্ষিণ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শহীদুল আমীন খসরু এবং সাধারন সম্পাদক তানভীরুল ইসলাম টুটুলের নেতৃত্বে অপর একটি বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া দুপুরে আইনজীবী সমিতি প্রাঙ্গনে ময়মনসিংহে মানববন্ধন করেছে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম।
খুলনা ব্যুরো জানায়, খুলনা জেলা যুবদল ও ছাত্রদল বিক্ষোভ-মিছিলে সাতজন আহত হয় ।মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম একরামুল হক হেলালের নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভ মিছিল হয়। খুলনা মহানগরীর সিটি কলেজের সামনে থেকে জেলা যুবদল ও ছাত্রদল মিছিল নামিয়ে পিটিআই মোড়ের দিকে যাওয়ার পথে মিছিলে হামলার ঘটনা ঘটে। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয় ছাত্রলীগ ও মিছিলকারীদের সঙ্গে। এসময় যুবদল ও ছাত্রদলের সাতজন আহত হন।
সিলেট ব্যুরো জানায়, সিলেটে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল করেছে সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপি। বিক্ষোভ মিছিলে বিএনপি নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সিলেট জেলা বিএনপিসাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ, মহানগর ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আজমল বখত্ চৌধুরী সাদেকসহ প্রমুখ।
ফরিদপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, ফরিদপুর শহরের বিভিন্ন এলাকায় মামলার রায়ের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। জেলা বিএনপিসাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট মোদারররেস আলী ইছার সভাপতিত্বে এই বিক্ষোভ সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয়।
ফুলপুর(ময়মনসিংহ)উপজেলা সংবাদদাতা জানান, রায় প্রত্যাখ্যান করে তারাকান্দায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে ময়মনসিংহ জেলা (উত্তর) বিএনপি। বিক্ষোভ শেষে আয়োজিত তাৎক্ষণিক সমাবেশে ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক ও তারাকান্দা উপজেলা চেয়ারম্যান মোতাহার হোসেন তালুকদার বলেন, এই রায় আমরা মানি না।
গাবতলী (বগুড়া) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, গাবতলী পৌর সদরের থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক নতুনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর মোস্তাফিজ।
গাইবান্ধা থেকে স্টাফ রির্পোটার জানান, গাইবান্ধায় জেলা বিএনপির উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল বের করার চেষ্টা করলে পুলিশ তাতে বাধা দেয়। পরে দলীয় কার্যালয়ের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তব্য দেন জেলা বিএনপি সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ মইনুল হাসান সাদিকসহ সিনিয়র নেতৃবৃন্দ।
শ্রীপুর (গাজীপুর) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, শ্রীপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহা সড়কে বিএনপি’র বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গ্রেনেড হামলার মামলা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ