পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়কে কেন্দ্র করে পুরো রাজধানী ছিল নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার চাদরে মোড়ানো। যে কোন ধরণের অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি এড়াতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ছিল সর্বোচ্চ সতর্ক। সব থেকে বেশি কড়াকড়ি বেশি ছিল নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগার ও আশপাশের এলাকায়। রায় ঘিরে ব্যপক নিরাপত্তায় থাকায় পুরো রাজধানী ছিল থমথমে। স্বাভাবিকের তুলনায় নগরীর রাস্তায় মানুষ ও যানবাহনের সংখ্যা ছিল খুবই কম। রায় ঘিরে এক অজানা আতঙ্ক তাড়া করেছিল নগরবাসীকে।
এদিকে, গতকাল সকালে নাজিমউদ্দিন রোডে স্থাপিত বিশেষ আদালত এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ শেষে যে কোন ধরনের নৈরাজ্য কঠোরভাবে দমনের হুশিয়ারি দেন ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া।
রায়কে কেন্দ্র করে গত মঙ্গলবার থেকেই পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে স্থাপিত ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইবুনাল-১ এর সামনের সড়ক ও আশপাশের এলাকায় বিপুল পরিমাণে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছিল।
গতকাল সরেজমিনে দেখা গেছে, আদালতের আশপাশের সব সড়ক ও প্রতিটি প্রবেশপথে ব্যারিকেড দিয়ে অবস্থান নিয়েছিল পুলিশ। তালিকাভুক্ত সাংবাদিক ছাড়া কাউকে আদালতের ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। পোশাক ছাড়াও সাদা পোশাকে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা টহল দিচ্ছিলেন। দাঙ্গা পুলিশ, রায়ট কার, জলকামান ছাড়াও পুলিশের বিশেষায়িত সোয়াট ও বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটকেও প্রস্তুত রাখা হয়েছিল।
শাহবাগ, টিএসসি, বকশিবাজার, চাঁনখারপুল, বঙ্গবাজার, চকবাজার, বেগমবাজার, উর্দু রোড ও লালবাগের প্রতিটি পয়েন্টে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সতর্ক অবস্থান লক্ষ্য করা গেছে। আদালত এলাকার আশপাশের প্রতিটি বাড়ির ছাদে ও নির্দিষ্ট পয়েন্টে ছিল পুলিশ। চাঁনখারপুল থেকে নাজিমউদ্দিন সড়কসহ পুরনো কারাগারের দিকে এবং আশপাশের সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে যান চলাচল বন্ধ ছিল। জনসাধারণের চলাচলেও ছিল অনেক কড়াকড়ি। এলাকার বাসিন্দাদের ছাড়া অন্যদের নাজিমউদ্দিন রোডে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়। সন্দেহ হলে তল্লাশী করে ভেতরে ঢুকতে দেয় পুলিশ।
লালবাগ জোনের ডিসি ইব্রাহীম খান বলেন, পুরান ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। যে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
স্থানীয় বাসীন্দারা বলেন, রায় ঘিরে সবার মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে কি ঘটবে বলা যাচ্ছে না। খুব দরকার না থাকলে কেউ বাড়ির বাইরে বের হচ্ছে না। এ ছাড়া পুলিশের পাশপাশি স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান করতে দেখা গেছে।
চকবাজারের দোকানি বেলাল হোসাইন বলেন, খুব আতঙ্কের মধ্যে আছি। আগে থেকে কোন কিছু বলা যাচ্ছে না। আরেক ব্যবসায়ী ফারুক আহমেদ বলেন, অন্যদিনের তুলনায় রাস্তায় গণপরিবহন ও ব্যক্তিগত গাড়ি অনেক কম। মিরপুর থেকে চকবাজার আসতে অনেক বেগ পেতে হয় তাকে।
ফারিয়া তাবাসসুম নামে এক গৃহবধূ বলেন, বাচ্চাদের সামনে পরীক্ষা থাকলেও স্কুল বা কোচিংয়ে যেতে ভয় পাচ্ছেন। এর আগে স্কুলে যাওয়ার পথে জ্বালাও-পোড়াও দেখে তার সন্তানরা ভয় পেয়েছিল।
পুরান ঢাকা ছাড়াও রাজধানীর শাহবাগ, ফার্মগেট, পল্টন, মতিঝিল, মিরপুর, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, সদরঘাটসহ রাজধানীর বেশিরভাগ এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা লক্ষ্য করা গেছে। বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করছিল পুলিশ ও র্যাব। প্রতিটি পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ছিল। র্যাব-পুলিশ ছাড়াও অন্যান্য বাহিনীর সদস্যদেরও বিভিন্ন সড়কে টহল দিতে দেখা গেছে। মতিঝিলে আলী হোসেন নামে এক বাস চালক বলেন, রাস্তায় গণপরিবহনের সংখ্যা অনেক কম থাকলেও ফাঁকা গাড়ি চালাতে হচ্ছে। তার গাড়িতে সিটের তুলনায় অর্ধেক যাত্রী দেখা গেছে।
ফকিরাপুরে সিএনজি অটোরিকসা চালক খালেক মুনসি বলেন, সকাল থেকে ৪ বার তার সিএনজিতে তল্লাশী করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে চালক-যাত্রী সবাইকে আতঙ্কে থাকতে হয়।
এ দিকে, রায়কে ঘিরে নয়াপল্টনের বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। পুলিশ, ডিবি এবং সাদা পোশাকের বিভিন্ন সংস্থার সদস্যদের সেখানে দেখা গেছে। এ ছাড়া নাইটিঙ্গেল, ফকিরাপুল মোড়সহ আশপাশে বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়ে সন্দেহভাজন বিভিন্ন ব্যক্তি ছাড়াও গাড়িতে তল্লাশী করতে দেখা গেছে।
পল্টন মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) আবু সিদ্দিক বলেন, যে কোন ধরণের নাশকতা মোকাবেলায় পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে। তবে গতকাল পল্টন এলাকায় কোন ঝামেলা হয়নি বলে তিনি জানান।
এদিকে গতকাল সকালে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে স্থাপিত বিশেষ আদালত এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে আসেন ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, নিরাপত্তার জন্য যদি কেউ হুমকি হয়, জনগণের মনে আতঙ্ক ও ভয় সৃষ্টি করার সামান্যতম চেষ্টা করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, রায় ঘিরে নিরাপত্তাজনিত আগাম কোনো হুমকি নেই। তবুও কোনো স্বার্থান্বেষী মহল নৈরাজ্য বা সহিংসতার চেষ্টা করলে তাদেরকে কঠোরভাবে দমন করা হবে। কোনো ধরনের নৈরাজ্য বরদাস্ত করা হবে না বলে তিনি হুশিয়ারি দেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।