Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জুলহাস-তনয়ের খুনিরা সিসিটিভি ফুটেজে

কিলিং মিশনে পাঁচজন, সময় নেয় পাঁচ মিনিট

প্রকাশের সময় : ২৭ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৩৮ পিএম, ২৬ এপ্রিল, ২০১৬

স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীর কলাবাগানে জোড়া খুনের ঘটনায় কিলিং মিশনে পাঁচজন অংশ নেয়। জুলহাস মান্নান এবং তার বন্ধু মাহবুব তনয় হত্যাকা-ে অংশ গ্রহণকারীদের সিসিটি ফুটেজ দেখে গোয়েন্দা পুলিশ এ তথ্য পেয়েছে। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। পুলিশের পাওয়া তথ্যমতে পাঁচজন সরাসরি অংশ নেয়। মিশন শেষ করতে তারা সময় নেয় পাঁচ মিনিট।
এ হত্যাকা-ের পর খুনিদের পালিয়ে যাওয়ার দৃশ্যটি পাশের বাড়ির ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় (সিসিটিভি) ধারণকৃত ফুটেজে ধরা পরে। ঐ ফুটেজ হাতে এসেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। আর এতে কয়েকজনের সন্দেহজনক গতিবিধি দৃশ্যমান। তদন্ত কর্মকর্তাদের ধারণা, সন্দেহজনক ঐ ব্যক্তিরাই এ হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঐসব ব্যক্তিদের গ্রেফতারে বিশেষ অভিযান চালাচ্ছে। যে কোনো সময় তাদের গ্রেফতার করা হবে।
বিকেল ৫টা ৫৯ মিনিট ১ সেকেন্ডের ফুটেজে হাতে ব্যাগ থাকা একজনকে দেখা যায়। এর মাত্র ৫ সেকেন্ড পরেই তিনজনকে পালিয়ে যেতে দেখা যায়, তাদের কাঁধেও ছিল ব্যাগ। তার কয়েক সেকেন্ড পর আরো একজন দৌঁড়ে পালায়। এর মাঝে মোটরসাইকেলেও একজনকে দেখা গেছে। তবে মোটরসাইকেলে থাকা ঐ ব্যক্তির সঙ্গে অপর ৫ জনের কোনো সম্পর্ক আছে কি না ভিডিও থেকে তা নিশ্চিত হওয়া যায় না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা।
সন্দেহজনক ব্যক্তিদের গতিবিধির মাত্র ৩০ সেকেন্ড আগেই জুলহাসের বাসার পাশ দিয়ে কলাবাগান থানার একটি গাড়িও যেতে দেখা যায়। ঐ গাড়ি থেকেই সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মমতাজ এক দুর্বৃত্তকে জাপটে ধরলে সে ব্যাগ ফেলে মমতাজকে কুপিয়ে পালিয়ে যায়।
গত সোমবারের এই হামলায় নিহত জুলহাস সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির আপন খালাত ভাই ও ‘রূপবান’ পত্রিকার সম্পাদক। রূপবান পত্রিকাটির মূল বিষয়বস্তু লিঙ্গ সমতা প্রতিষ্ঠা। ঐ হামলায় নিহত অপরজন তনয় থিয়েটারকর্মী ও জুলহাসের বন্ধু।
আনসার আল ইসলাম নামে একটি টুইটার একাউন্ট থেকে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে এ হত্যাকা-ের দায় স্বীকার করে একটি টুইট করা হয়। এতে বলা হয়, আলহামদুলিল্লাহ, সর্বশক্তিমান আল্লাহ তা’লার অশেষ অনুগ্রহে আনসার আল ইসলামের মুজাহিদীনরা বাংলাদেশে সমকামিতা চর্চা ও প্রসারের পথিকৃৎ, সমকামীদের গুপ্ত সংগঠন ‘রূপবান’র পরিচালক জুলহাস এবং তার সহযোগী সামির মাহবুব তনয়কে হত্যা করেছে।
এ হত্যাকা-ের বিষয়ে গতকাল মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করতে ষড়যন্ত্র সব সময় ছিল। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র হচ্ছে। পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে টার্গেট কিলিং করা হচ্ছে। শিবির ও জঙ্গি সন্ত্রাসীরা কখনও জেএমবি, কখনও আনসারুল্লাহ বাংলা টিম বলে খুন করছে। আসলে জামায়াত-বিএনপি যাই হোক, শেকড় এক।
এদিকে এ হত্যাকা-ের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিবি দক্ষিণের ডিসি মাশরুকুর রহমান খালেদ বলেন, আমরা এভিডেন্স সংগ্রহ করছি, ছায়া তদন্ত করছি। গেল কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশে একই জাতীয় হামলায় প্রাণ হারাতে হয়েছে সমমনা বেশ কিছু সংখ্যক ব্লগার, প্রকাশক, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, কথিত পীরকে। এসব ঘটনার সঙ্গে আইএস বা আল-কায়েদার জড়িত থাকার খবর এলেও বাংলাদেশে আইএসের কোনো অস্তিত্ব নেই বলে তিনি দাবি করেন।
এদিকে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক জানিয়েছেন, কলাবাগানে জোড়া খুনের ঘটনায় হামলাকারীদের কোপানোর ধরন দেখে মনে হচ্ছে তারা প্রশিক্ষিত। এদের উদ্দেশ্য ছিলো হত্যা নিশ্চিত করা।
গতকাল ময়নাতদন্ত শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ। তিনি বলেন, আঘাতের চিহ্ন একই ধরনের। দু’জনের শরীরেই ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। বের হয়ে গেছে মাথার মগজ। জুলহাসের হাতে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, হামলা ঠেকাতে গিয়ে তিনি আঘাত পান।
ব্লগার অভিজিৎ রায়সহ অন্য ব্লগারদের কোপানোর ধরনের সঙ্গে এটির অনেকটা মিল রয়েছে বলে জানান তিনি।
এর আগে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন কলাবাগান থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আনসার আলী। প্রতিবেদনে মাথার তালু থেকে ঘাড় পর্যন্ত ও হাতে ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে কলাবাগানে জুলহাস মান্নান ও মাহবুব তনয়কে কুপিয়ে হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আগামী ২৪ মে জমা দেওয়ার দিন ধার্য করেছেন আদালত। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার মহানগর হাকিম নুরুন্নাহার ইয়াসমিন এ আদেশ দেন।
গতকাল কলাবাগান থানার পুলিশ মামলার এজাহারসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে জমা দেয়। এরপর আদালত তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার দিন ধার্য করেন। আদালত পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এসআই মো. শহীদ বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন।
উল্লেখ্য, গতকাল সোমবার কলাবাগানে বাসায় ঢুকে জুলহাস মান্নান ও তার বন্ধু মাহবুব তনয়কে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। জুলহাস যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য সংস্থা ইউএসএআইডি’তে কর্মরত ছিলেন।
সমকামীদের অধিকার বিষয়ক সাময়িকী ‘রূপবান’-এর সম্পাদনার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন তিনি। আর তার বন্ধু তনয় মঞ্চনাটকের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এ ঘটনায় নিহত জুলহাস মান্নানের বড় ভাই মিনহাজ মান্নান বাদী হয়ে কলাবাগান থানায় অজ্ঞাত পাঁচ থেকে ছয়জনকে আসামি করে মামলা করেন। আর পুলিশের পক্ষ থেকেও একটি মামলা দায়ের করা হয়।
জোড়া খুনের ঘটনায় উদ্ধার হওয়া একটি ব্যাগে নয় ধরনের আলামত পেয়েছে পুলিশ।
খুনের পর কয়েকজন যুবক পালিয়ে যাওয়ার সময় তাদের একজনের কাছ থেকে একটি ব্যাগ ছিনিয়ে নিতে সক্ষম হন কলাবাগান থানার পুলিশের এক সদস্য। এ সময় যুবকদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত হয়েছেন কলাবাগান থানার সহকারী উপপরিদর্শক মমতাজ।
এ ঘটনায় অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা করেছে পুলিশ। মামলার বাদী কলাবাগান থানার উপপরিদর্শক শামিম আহমেদ। মামলায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে।
আদালতে পাঠানো ওই মামলার বিবরণে বলা হয়, হত্যায় অংশ নেওয়া সন্দেহভাজন এক দুর্বৃত্তের কাছ থেকে একটি ব্যাগ জব্দ করেছে পুলিশ। ব্যাগের মধ্যে পিস্তল, ম্যাগাজিন, গোলাকৃতির আগ্নেয়াস্ত্র, চাপাতি, লাল চেক গামছা, পুরোনো লুঙ্গি, কাপড়ের টুপি, বাংলা ও আরবি লেখা সাদা কাগজের টুকরো ও অফিশিয়াল ব্যাগ পাওয়া গেছে।
মামলার বিবরণ অনুযায়ী, কলাবাগানের জনৈক রাশেদ মোশারফের বাসার সামনে পাঁচ-ছয়জন সন্দেহভাজন যুবককে চ্যালেঞ্জ করে পুলিশ। তাদের বয়স ২০ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। তাদের প্রত্যেকের কাঁধে ব্যাগ ছিল। গায়ে ছিল একই রঙের টি-শার্ট। একপর্যায়ে এএসআই মমতাজ দুর্বৃত্তের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত হন। তবে তিনি একজনের কাছ থেকে একটি ব্যাগ ছিনিয়ে নিতে সক্ষম হন। পরে দুর্বৃত্তরা গুলি ছুড়তে ছুড়তে পালিয়ে যায়।
গত সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর কলাবাগানের নিজ বাসায় দুর্বৃত্তদের হামলায় নিহত হন মার্কিন দূতাবাসের সাবেক কর্মকর্তা জুলহাস মান্নান ও তার বন্ধু মাহবুব তনয়।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জুলহাস-তনয়ের খুনিরা সিসিটিভি ফুটেজে
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ