পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন দেশের জনগণ মানে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সংসদে পাস হওয়ার পর আইনের বিলে প্রেসিডেন্ট সাক্ষর করার পর তিনি বলেন, আজকের এই আইন (ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন) আমরা মানি না, দেশের জনগণও এই আইন মানে না। আমরা এই সরকারের কোনো আইন মানি না। কারণ যে সংসদে আইন পাস হয়, সেই সংসদের কোনো বৈধতা নেই। এই সংসদ জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না, অবৈধ একটা সংসদ। গতকাল (সোমবার) দুপুরে রাজধানীর গুলশানে লেকশোর হোটেলে বিএনপির উদোগে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন‘ ২০১৮’ শীর্ষক এই মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভায় বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের সম্পাদক, সিনিয়র সাংবাদিকবৃন্দ অংশ নেন। এতে যুক্তরাষ্ট্র যুক্তরাজ্য, কানাডা, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আফগানিস্তান, ফিলিস্তিন, রাশিয়া, তুরস্ক, ভিয়েতনামসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার আইনটা নিয়ে আলোচনা পর্যন্ত করেননি। এটা একটা প্রতারক সরকার। কয়েকদিন আগেই সম্পাদকদের সঙ্গে বসে কথা দিলেন যে, আইনের যে ধারাগুলো নিয়ে আপত্তি আছে সেগুলো আলোচনা করে পুনঃবিবেচনা করার চেষ্টা করবে। উনি (প্রধানমন্ত্রী) তো বিদেশ থেকে এসে বলে ফেললেন না না, যেটা আছে ঠিক আছে। যারা মিথ্যা কথা বলে তাদের জন্য। আমরা ঘরপোঁড়া গরু তো।
এই আইন দিয়ে প্রধানমন্ত্রী সরকারকে রক্ষা চেষ্টা করছে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই আইন কালো আরো কালো। এটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের কথা, হতাশ হবার কথা, অত্যন্ত ক্ষোভের কথা। তিনি বলেন, এখনো সময় আছে, অবিলম্বে যিনি আপনাদের রক্ষা কর্তা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করুন। তিনিই পারেন আপনাদের এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ দিতে। এছাড়া কোনো উপায় নেই আপনাদের। এখনো বলছি, আগেও বলেছি দেশনেত্রীই পারেন জাতির এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ দিতে। তাকে মুক্ত করুন, আলোচনা করুন কিভাবে শান্তিপূর্ণভাবে একটি নির্বাচন হবে, জনগণ তাদের মতামত দিতে পারবে এবং তাদের পছন্দমত একটা জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারবে।
অতীতে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কালো আইন প্রনয়ণের কথাও তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব বলেন, জনগণকে জিম্মি করে, বন্দি করে, তাদের বুকের মধ্যে বন্দুক-পিস্তল রেখে দিয়ে দেশ শাসন কিছুদিনের জন্য করা যায়। সবসময়ের জন্য করা যায় না। তবে হতাশ হবেন না। আমরা সংগ্রাম চালিয়ে যাবো। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত, জনগণের মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত, দেশনেত্রীর রুক্তি না হওয়া পর্যন্ত আমাদের লড়াই চলবে।
জাতীয় ঐক্যের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি নেতা বলেন, আমরা জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করার কাজ শুরু করেছি। আমরা কাজটি করার আগেই জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়ে আছে। আজকে প্রতিটি বৃত্ত, কর্ণার থেকে আওয়াজ আসছে সবাই রুখে দাঁড়ান। এই যে জগদ্দল পাথর গেঁধে বসেছেন তাকে সরান। দেখুন শুধু আমরা নই, অন্যান্য দলগুলো, সংগঠন, ব্যক্তি একবাক্য বলছে, একটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন চাই, সংসদ ভেঙে দিতে হবে।
স্বাগত বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশে কর্তৃত্ববাদী শাসন চলছে, একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করবার সকল আয়োজন প্রায় সম্পন্ন করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনাকে ভিত্তি করে আমরা যুদ্ধ করেছিলাম, সেই চেতনাকে সম্পূর্ণভাবে ধূলিসাৎ করে দিয়ে জনগণের মৌলিক অধিকারগুলোকে হরণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য বাংলাদেশেকে সত্যিকার অর্থে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা, জনগণের বাকস্বাধীনতাকে নিশ্চিত করা, মুক্ত স্বাধীন হিসেবে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠিত করা। আমরা উদ্বেগ-উৎকন্ঠা ও ক্ষোভের সঙ্গে এটা উপলব্ধি করছি যে, প্রতিনিয়ত প্রতি মূহুর্তে সেই স্বপ্নকে ভেঙে ফেলা হচ্ছে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে যে কাক্সিক্ষত রাষ্ট্র ও সমাজ নির্মাণ করতে চেয়েছিলাম যেখানে কথা বলার স্বাধীনতা থাকবে, ভিন্নমত থাকবে, বহুমাত্রিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা থাকবে, পুরোপুরিভাবে ধ্বংস করে দিয়ে একটি দল ও একজন ব্যক্তির শাসনকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য যাবতীয় আয়োজন সম্পন্ন করা হয়েছে।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করে যেভাবে ঢালাওভাবে ক্ষমতা দেয়া হচ্ছে এটা পরিস্কার যে, এখানে সরকার একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এটাই মূল কথা। এর চেয়ে কালো আইন কি হতে পারে? গণতন্ত্রের কথা বলে লাভ নেই, রাজতন্ত্রেও এরকম আইন আছে বলে আমার জানা নাই।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, দেশে কথা বলাটা বিপদ। কথা বললে সত্য প্রকাশ হয়ে যাবে। সরকার চায় না মানুষ কথা বলুক। পৃথিবীর সব দেশে রাজনীতিবিদদের সমালোচনা করা হয়। কিন্তু আমাদের সরকার এটাও চায় না কারণ তাদের এতো গন্ধ যে কথা বললে আরো গন্ধ ছড়াবে।
দৈনিক ইনকিলাবের ক্রীড়া সম্পাদক রেজাউর রহমান সোহাগ বলেন, সাংবাদিকরা যাতে নির্ভিকভাবে, সুন্দরভাবে সাংবাদিকতা করতে পারে সেই ধরণের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। কারণ সাংবাদিকরা কোন দলের না তারা দেশ ও জনগণের পক্ষে কাজ করেন। তাই এমন কোন আইন করা ঠিক হবে না যে আইন সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্বপালনে বাধা সৃষ্টি করে, হুমকীর মধ্যে ঠেলে দেয়, ভয়-ভীতির পরিবেশ তৈরি করে, হয়রানির মুখোমুখী হতে হয়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কয়েকটি ধারা স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য ভীতিকর উল্লেখ করে তিনি তা সংস্কারের দাবি জানান।
দেশে সাইবার ক্রাইম আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে রেজাউর রহমান সোহাগ বলেন, এই অপরাধ বন্ধের জন্য সরকারকে কঠোর আইন প্রণয়ন করতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে এটা করতে গিয়ে যেন সাংবাদিকতা বাধাগ্রস্ত না হয়। বরং এমন আইন করতে হবে যে আইনের মাধ্যমে সাংবাদিকরা পেশাগত দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে সরকারকে সহযোগিতা করতে পারে। সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরীর সঞ্চালনে মতবিনিময় সভায় নয়া দিগন্তের সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন, বাংলাদেশের খবরের উপদেষ্টা সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহউদ্দিন, দৈনিক ইনকিলাবের ক্রীড়া সম্পাদক রেজাউর রহমান সোহাগ, সহ-সম্পাদক মেহেদি হাসান পলাশ, সাপ্তাহিক হলিডের সৈয়দ কামালউদ্দিন, ইনডিপেন্ডেট টেলিভিশনের আশীষ সৈকত, আমার দেশ এর সৈয়দ আবদাল আহমেদ, জাহেদ চৌধুরী, কলামিস্ট হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ, রেডিও টুডের ইমামুল হক শামীম, শীর্ষ নিউজের একরামুল হক, দৈনিক সমকালের লোটন একরাম, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের রুহুল আমিন গাজী, এম আবদল্লাহ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের কাদের গনি চৌধুরী, শহীদুল ইসলাম, জাতীয় প্রেসক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, এসএ টিভির ইলিয়াস হোসেন, ল‘ রিপোর্টার্স ফোরামের সাঈদ আহমেদ খান প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
মতবিনিয়ম সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, রুহুল আলম চৌধুরী, সাংগঠিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালেয়র শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর মামুন আহমেদও বক্তব্য রাখেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের পদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুল মান্নান, আহমেদ আজম খান, আমানউল্লাহ আমান, হাবিবুর রহমান হাবিব, আতাউর রহমান ঢালী, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন, খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার, শামা ওবায়েদ, কেন্দ্রীয় নেতা কামরুজ্জামান রতন, ফাহিমা নাসরিন মুন্নী, নাজিমউদ্দিন আলম, জেবা খান, আবদুস সালাম আজাদ, শহিদুল ইসলাম বাবুল, আমিরুজ্জামান শিমুল, শামসুজ্জামান সুরুজ, চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান, শামসুদ্দিন দিদার প্রমূখ। #
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।