Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

৮ বছর অতিবাহিত : প্রাথমিক শিক্ষায় সৃজনশীল পদ্ধতি এখনো অনেক শিক্ষকের কাছে দুর্বোধ্য

প্রকাশের সময় : ২৬ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : আট বছর আগে প্রাথমিক শিক্ষায় সৃজনশীল পদ্ধতি চালু করলেও এখনো শিক্ষকদের কাছেই বোধগম্য নয় এই পদ্ধতি। সৃজনশীল বিষয়ে অজ্ঞতার কারণে ৯২ শতাংশ শিক্ষকই শিক্ষার্থীদের পড়ানোর জন্য নির্ভরশীল রয়েছেন বাজারের গাইড বইয়ের উপর। ১৩ শতাংশ শিক্ষক সৃজনশীল পদ্ধতির কিছুই বোঝেন না। আবার ৪২ শতাংশ শিক্ষক সামান্য কিছুটা বুঝলেও রয়েছেন গোলকধাঁধার মধ্যে। তবে ৪৫ শতাংশ শিক্ষক বিষয়টি ভালোভাবে বোঝেন। রিসার্চ ফর অ্যাডভান্সমেন্ট অব কমপ্লিট এডুকেশনের (রেস) এক জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল (সোমবার) রাজধানীর ধানমন্ডির দৃক গ্যালারিতে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রবর্তিত সৃজনশীল শিক্ষা পদ্ধতির কার্যকরিতা নিয়ে গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। ওই অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রাথমিক স্তরে বই উৎসবের তামাশা ও অস্বাভাবিক বই সংখ্যায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করছে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৩ শতাংশ শিক্ষক সৃজনশীল পদ্ধতি বোঝেন না, ৪৫ শতাংশ শিক্ষক বোঝেন এবং ৪২ শতাংশ শিক্ষক অল্প অল্প বুঝতে পারেন। তবে যেসব শিক্ষক বোঝেন তাদের মধ্যে ৪৭ শতাংশ ছাত্রছাত্রীদের পড়ানোর ক্ষেত্রে প্রচলিত গাইড বইয়ের সহায়তা নেন। ৩৫ শতাংশ শিক্ষক সহকর্মীদের সাথে আলোচনা করেন এবং ১৮ শতাংশ নিজেদের নিজস্ব ধ্যান ধারণা থেকে পাঠদান করেন। ২৫ শতাংশ শিক্ষক মনে করেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য সৃজনশীল পদ্ধতি উপযুক্ত নয়, ২০ শতাংশ মনে করেন প্রচলিত পদ্ধতি আরো উন্নত করতে হবে। কিন্তু ৫৫ শতাংশ মনে করেন সৃজনশীল পদ্ধতি কিছুটা কাজ করছে। এছাড়া ৯২ শতাংশ শিক্ষার্থী গাইড বইয়ের সাহায্য নেয়। মাত্র ৮ শতাংশ শিক্ষার্থী গাইডবই থেকে দূরে থাকে। ৬৭ শতাংশ শিক্ষার্থী সৃজনশীল পদ্ধতি বোঝার ক্ষেত্রে গৃহশিক্ষকের সহায়তা নিচ্ছে, ৩৩ শতাংশ নিচ্ছে না। পরীক্ষা কেন্দ্রে ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী প্রশ্নপত্রই বুঝতে পারে না। জরিপের ফলাফল প্রকাশ উপলক্ষ্যে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, অর্থনীতিবিদ প্রফেসর আনু মুহাম্মদ, নৃ-বিজ্ঞানী ড. জহির উদ্দিন আহমেদ, বিজ্ঞানী প্রফেসর আব্দুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী এবং মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর আব্দুল্লাহ আল মামুন উপস্থিত ছিলেন। রেস‘র সভাপতি প্রফেসর মো. শরিফ উদ্দিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন ফৌজিয়া আক্তার রিনি। দেশের গ্রামীণ, শহর, সীমান্ত, হাওড় এবং পার্বত্য অঞ্চলের ১৬টি জেলার ২১ টি স্কুল নিয়ে এ জরিপ পরিচালনা করা হয়।
সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা আজ থেকে ৮০ বা ৯০ বছর আগে ভাল ছিল। বই উৎসবের নামে এখন তামাশা করা। বইয়ের আধিক্য শিক্ষার্থীদের মাঝে ভীতির সঞ্চার করেছে। ফলে তারা আনন্দ তো দূরের কথা স্বাভাবিক অবস্থায়ও থাকতে পারে না।
তিনি বলেন, সৃজনশীল শিক্ষাপদ্ধতি সমস্যা নয়, সমস্যা হল এর প্রয়োগে। শিক্ষার নামে বাণিজ্য একটা মারাত্মক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষায় যেসব উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে সেগুলোর কার্যকরিতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়? শিক্ষাপদ্ধতির আগে শিক্ষার দর্শন ঠিক করা জরুরি।
অর্থনীতিবিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর আনু মুহাম্মদ বলেন, বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বইয়ের আধিক্য অস্বাভাবিক। এখনকার শিক্ষার্থীদের যে চাপে রাখা হয় তাতে কেউ-ই সৃজনশীল হতে পারবেনা। যদি কোচিংয়েই যেতে হয় তাহলে স্কুলের দরকার কি? তিনি বলেন, এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাংকের অর্থায়নে কিছু ব্যক্তি, কিছু দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা পরিদর্শন করে এসে এটা চালু করেন। কিন্তু যে দেশে ৮০ জন শিক্ষার্থীদের জন্য একজন শিক্ষক, শ্রেণীকক্ষ নেই- সেখানে মাল্টিমিডিয়া দিয়ে খুব একটা লাভ নেই। সৃজনশীল শিক্ষা পদ্ধতির পেছনে হাজার হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য আছে। সরকারগুলো রাজনৈতিক কারণে পাসের হারের পেছনে দৌড়ায়। সেই সাথে চলছে ভয়ঙ্কর রকমের শিক্ষা বাণিজ্য। এই প্রবণতা বন্ধ না হলে ভবিষ্যত ভাল হবেনা।
রেসের সভাপতি প্রফেসর ড. মো: শরিফ উদ্দিন বলেন, সরকার দেশব্যাপী দীর্ঘ দিন ধরে শিক্ষা ক্ষেত্রে সৃজনশীল পদ্ধতি চালু করলেও প্রশিক্ষণের অভাবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভ্রান্তি রয়েছে। জরিপ করে বিভিন্ন অসঙ্গতি পাওয়া আমরা কয়েকটি সুপারিশ করেছি। দক্ষ শিক্ষক নিয়োগ দেওয়াসহ শিক্ষকদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ দিতে হবে। প্রশ্নপত্র তুলনামুলক সহজ করতে হবে। ডিজিটাল উপকরণ যেমন প্রজেক্টর, কম্পিউটার, ইন্টারনেটসহ প্রয়োজনীয় উপকরণের ব্যবস্থা করা। এছাড়া সমূদ্র উপকূলীয় ও পাহাড়ী অঞ্চল, বিচ্ছিন্ন জনপদ, সীমান্ত ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বৃদ্ধিতে বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ৮ বছর অতিবাহিত : প্রাথমিক শিক্ষায় সৃজনশীল পদ্ধতি এখনো অনেক শিক্ষকের কাছে দুর্বোধ্য
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ