Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিএসএফ’র নির্যাতনের শিকার বাংলাদেশি ট্রাক চালকরা

প্রকাশের সময় : ২৬ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বেনাপোল অফিস : বেনাপোল বন্দরের ওপারে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে নতুন পার্কিং এ বাংলাদেশী ট্রাক ড্রাইভাররা প্রতিনিয়ত অমানবিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে ভারতীয় বিএসএফ ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ’র হাতে। এ নিয়ে ট্রাক চালকদের মাঝে বিরাজ করছে উওেজনা। এ ঘটনার প্রতিকার না হলে যে কোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে দু’দেশের মধ্য আমদানি-রফতানি কার্যক্রম।
বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতে গতবছরের তুলনায় বাংলাদেশী পণ্যের রফতানি বেড়েছে দ্বিগুণ। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে এই বন্দর দিয়ে রফতানি হয়েছে ২ লাখ ৪৭ হাজার ২৭৬ মেট্রিক টন পণ্য। গত বছরের একই সময়ে রফতানি হয়েছিল এক লাখ ৬৫ হাজার ৭৮৩ মেট্রিক টন পণ্য।
বেনাপোল ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়ন সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ থেকে রফতানি পণ্য বোঝাই ট্রাক নিয়ে পেট্রাপোল বন্দর পার্কিং এ প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে ওজন করার সময় ওয়েব্রিজে চালকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে থাকে। এছাড়া ক্যান্টিনে পানি খেতে গেলে গালিগালাজ, ঠিক মতো খাবার না পাওয়া, টয়লেটসহ সব জায়গায় জোর করে বেশী টাকা আদায় করা হচ্ছে। প্রতিবাদ করলে শুনতে হয় গালিগালাজ। সেখানে ট্রাক রেখে কারপাসের মাধ্যমে বাংলাদেশে আসতে চাইলে বিএসএফের বাধার মুখে আসতে পারেন না।
অথচ ভারতীয় ট্রাক চালক ও হেলপাররা বেনাপোল বন্দরে ট্রাক রেখে দিব্যি রাতে ভারতে ফিরে যাচ্ছেন। কিন্তু বাংলাদেশি ট্রাক চালকদের ক্ষেত্রে সেটা হচ্ছে না। রাতে ট্রাক থেকে নিচে নামলে বিএসএফ কর্তৃক মারপিট করে থাকে তাদের। নানাভাবে বাংলাদেশি চালকদের উপর নির্যাতন করা হচ্ছে। ৩’শ একর জমির ওপর নির্মিত বর্তমানে এই পার্কিং এ ২শ’৫০ জন বিএসএফ সার্বক্ষণিক রযেছে নিরাপওার দায়িত্বে। কোন ড্রাইভারকে পার্কিং এর বাইরে যেতে দেয়া হয় না। এমনকি খাওয়া ও বাথরুম করতে পরিচয়পত্র নিয়ে বাংলাদেশ আসতে চাইলেও তাদের বাধা দেয়া হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ফলে মানবেতর অবস্থান করতে হয় ডাইভারদের।
ঢাকা থেকে আসা চালক ওহিদুল ইসলাম জানান, রফতানি পণ্য নিয়ে ভারতের পেট্রাপোল পার্কিং এ যাওয়ার ২ দিন পর গাড়ি খালি হয়েছে। সেখানে খাওয়ার খুব কষ্ট। একটি ক্যান্টিন আছে। ভাত পাওয়া যায় তা তরকারি পাওয়া যায় না। এ দু’দিনে বিএসএফকে বারবার অনুরোধ করেছি। পণ্য নিয়ে ভারত সীমান্তে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মনে হবে জেলখানায় ঢুকলাম। আগে যে পার্কিং এ যেতাম সেখানে টাকা কম লাগত। বর্তমানে এখানে টাকাও বেশি দিতে হচ্ছে।
যশোর জেলা ট্রাক ও ট্যাংকলরী শ্রমিক ইউনিয়নের বেনাপোল শাখার সাধারণ সম্পাদক শাহিন আহমেদ জানান, প্রতিনিয়ত ভারতীয় পুলিশ কাস্টমস, বিএসএফ আমাদের চালক ও হেলপারদের মারপিট করে চলেছে। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার আমদানি-রফতানি বন্ধ হয়েছে। তারপরও বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতীয় কর্তৃপক্ষ কোনো সুরাহা করছে না। ভারতীয় ট্রাক চালকরা যদি বেনাপোলে ট্রাক রেখে কারপাশের মাধ্যমে ভারতে যেতে পারে তাহলে বাংলাদেশি ট্রাক চালকরা কেন সেখানে ট্রাক রেখে বাংলাদেশে আসতে পারবে না। এ রকম চলতে থাকলে আমাদের যে কোন সময় আমদানি-রফতানি বন্ধ করে দেয়া ছাড়া উপায় থাকবে না।
বেনাপোল চেকপোষ্ট কাস্টমস কাগো শাখার রাজস্ব কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, বাংলাদেশ থেকে আগে রফতানি শুরু হতো সকাল ১০টার সময় কিন্তু বর্তমানে নতুন পার্কিং চালু হওয়ায় তারা এখন সাড়ে ১১টা থেকে ১২টার পর রফতানি পণ্য নিয়ে থাকে। বর্তমানে চালকরা নতুন পার্কিং এ যাচ্ছে না।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের নেতা কামাল হোসেন বলেন, আশা করেছিলাম ভারতে নতুন পার্কিং চালু হলে এতে রফতানি কাজ দ্রুত হবে। কিন্তু সেটা হচ্ছে না। সেখানে ট্রাক চালকদের কাছ থেকে পার্কিং চার্জ বেশি নেয়া হচ্ছে। চালকরা খাওয়া-দাওয়াসহ নানা সমস্যায় পড়ছেন। তাদের মারপিটও করা হয়ে থাকে। এ অবস্থার সমাধান না হলে এ পথে রফতানি অনেকাংশে কমে যাবেএ
বেনাপোল বন্দরের পরিচালক নিতাই চন্দ্র সেন জানান, ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে বাংলাদেশী ট্রাক চালকরা যে হয়রানির শিকার হচেছ তা আগামীতে থাকবে না। আমরা বিষয়টি ওপারের বন্দর কর্তপক্ষকে জানিযেছি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিএসএফ’র নির্যাতনের শিকার বাংলাদেশি ট্রাক চালকরা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ