Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বোরো আবাদ হ্রাসে রেকর্ড

প্রকাশের সময় : ২৬ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মিজানুর রহমান তোতা : স্মরণকালের রেকর্ড ভঙ্গ করে এবার সারাদেশে বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে সোয়া লাখ হেক্টর কম জমিতে আবাদ হয়েছে। বোরো আবাদে বরাবরই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশী জমিতে আবাদ ও উৎপাদন হয়। অবশ্য কোন কোন মৌসুমে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয় না এটি ঠিক। সূত্রমতে, এবারের মতো এত বেশী হেরফের ইতিপূর্বে হয়নি। জানা যায়, প্রাকৃতিক বিপর্যয় নয়, উপযুক্ত মূল্য না পাওয়ায় মার খেতে খেতে কৃষকের দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ায় আগ্রহ হারাচ্ছে ধান উৎপাদনে। ভুট্টা, তেল, মসুরীসহ রবি ফসলের দিকে বেশীমাত্রায় ঝুঁকে পড়া খাদ্য নিরাপত্তার প্রশ্নে রীতিমতো অশনীসংকেত বলে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ বিজ্ঞানীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। হঠাৎ চলতি মৌসুমে বিপুল পরিমাণ জমি বোরো আবাদের বাইরে চলে যাওয়ার মূল কারণ হচ্ছে উৎপাদিত ধানের উপযুক্ত মূল্য না পাওয়ার পাশাপাশি গতবার উৎপাদনের ভরা মৌসুমে ভারত থেকে ঢালাওভাবে চাল আমদানি করা। যার জের শুধু বোরো নয় আগামী আউশ আবাদেও পড়তে পারে এমন আশংকা করেছেন মাঠপর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষক। যদিও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, বোরো আবাদ উৎপাদনে খরচ বেশী হওয়ার কারণে গম, ভুট্টা, তেলসহ রবি ফসল আবাদের দিকে দৃষ্টি দেয়া হচ্ছে বেশী। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে সরকার আউশ আবাদে প্রণোদনাও দিচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে সারাদেশে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৪৮ লাখ হেক্টর জমি। লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। বরং কমেছে স্মরণকালের মধ্যে অস্বাভাবিক। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ফিল্ড সার্ভিস উইংএর পরিচালক চৈতন্য কুমার দাস দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, চলতি মৌসুমে ৪৬ লাখ ৮৫ হাজার ১শ’ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ ও উৎপাদন হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ লাখ ১৪ হাজার ৯শ’ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়নি। তার মতে, ধানের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় কৃষক বোরো আবাদ ও উৎপাদনের নিরুৎসাহিত হচ্ছে। যদিও অপর একটি সূত্র জানায়, বোরো আবাদ ও উৎপাদন সরকারী হিসাবের চেয়ে আরো কম জমিতে আবাদ ও উৎপাদন হয়েছে। খাদ্যে উবৃত্ত অঞ্চল দক্ষিণ-পশ্চিমের যশোর রিজিয়নে বোরোর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ৬১ হাজার ২শ’১০ হেক্টর। সেখানে আবাদ হয়েছে ৩ লাখ ১৪ হাজার ৯শ’ ৯৫ হেক্টরে। সূত্রমতে, দেশের সব এলাকায় কমবেশী কমেছে। যা মোটেও ভালো লক্ষণ নয়। সূত্র জানায়, জমিচাষ, বীজ, চারা লাগানো, পরিচর্যা, সার, কীটনাশক, সেচ, ধানকাটা ও মাড়াইসহ প্রতি বিঘায় উৎপাদন খরচ আগের চেয়ে বেড়ে গেছে। প্রতিবিঘায় প্রায় ১১ হাজার টাকা খরচ হয়। গত মৌসুমে বাজার মূল্য ছিল প্রতিমণ গড়ে ৫শ’ ৫০’ টাকা। তাতে লোকসান হয়নি ঠিকই কিন্তু লাভ যা হচ্ছে তা কৃষকের পরবর্তী আবাদ কিংবা সংসারের উল্লেখযোগ্য কিছু করার মতো থাকেনি। আর কৃষকের দিনরাত পরিশ্রম করার মূল্য যোগ করা হলে লোকশানের পাল্লা হয় ভারি। তারপর নানা ভোগান্তি। বাজার বিশৃঙ্খলার কারণে সাধারণ কৃষকরা ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি থেকে বরাবরই বঞ্চিত হয়। তাছাড়া ফড়িয়া, মজুদদার ও পাইকারী ব্যবসায়ীদের টানাহেঁচড়া চলে ধান ওঠা মৌসুমে। বাজার তদারকির ব্যাপারে সরকারকে নজর দেয়ার তাগিদ দেয়া হলেও তা করা হয় না। কৃষক, কৃষি কর্মকর্তা ও পর্যবেক্ষক মহলের কথা শুধু ধান ও চালের ক্ষেত্রে নয়, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফসল উৎপাদন করে যদি উৎপাদকরা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ন্যায্যমূল্য না পায় তাহলে তাদের তো মনোকষ্ট বাড়বেই। কখন কি ফসল উৎপাদন হচ্ছে, কৃষক মূল্য পাচ্ছেন কিনা, কারা মধ্যস্বত্বভোগী, কারা কেন কৃষিপণ্য আমদানি করে কৃষকদের ক্ষতি করছে তা গভীরভাবে অনুসন্ধান করে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টি অনুপস্থিত থাকছে বরাবরই। গত বোরো ও আমন মৌসুমে ভারত থেকে অতিমাত্রায় চাল আমদানির কারণে ধানের মূল্য একেবারে কমে যায় বলে ব্যবসায়ীদের কথা, তাও তদন্ত হয়নি। সরকারকে সকল কৃষি পণ্যের বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার ব্যাপারে কৃষি বিশেষজ্ঞ, কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষকের বক্তব্য বিভিন্ন সময় প্রকাশ হলেও বাস্তবে সাধারণ কৃষকের স্বার্থ সংরক্ষিত হয় না। দিনরাত পরিশ্রম করে কৃষকের পেট ঠেকে পিঠে আর বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতায় ফড়িয়া, পাইকার, মজুদদার ও মধ্যস্বত্বভোগীরা পেট মোটা হয়।
কৃষকদের সরলতার সুযোগ নিয়ে সুদখোর, দাদন ব্যবসায়ী, ফড়িয়া, আড়তদার ও মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা সাধারণত ধান উঠা মৌসুমে সাধারণ কৃষকদের ফাঁদে ফেলে নানা অজুহাতে কম দামে ধান কিনে ঠকানোর ফন্দি আঁটে। এবারও তার ব্যতয় ঘটছে না। নতুন বোরো ধান কাটা পুরাদমে শুরু হয়েছে। কিছু ধান বাজারেও উঠেছে। এবার দাম একটু বেশি গতবারের তুলনায়। কিন্তু উৎপাদন খরচের চেয়ে খুব বেশী নয়। মাঠপর্যায়ের কৃষি সম্প্রসারণ, কৃষি বিপণন ও খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের বক্তব্য, বোরো ধান উঠার সময় এখনই মাঠের প্রকৃত তথ্য সংগ্রহ করে বাস্তবে কৃষকের স্বার্থে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বোরো আবাদ হ্রাসে রেকর্ড
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ