পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নারায়ণগঞ্জ থেকে স্টাফ রিপোর্টার : পালিত চাঁদাবাজ ও অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ক্যাডার দিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি, সাহেবপাড়া, মিতালী মার্কেট, মিজমিজি পশ্চিমপাড়া, দক্ষিণপাড়া, কান্দাপাড়া, ক্যানেলপাড়, ধনুহাজী রোডসহ সিদ্ধিরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় নানা অপকর্ম করিয়ে প্রতি মাসে কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কাউন্সিলর নজরুলসহ ৭ খুনের (এজাহারভুক্ত মামলার আসামী) চার্জশীট থেকে অব্যাহতি পাওয়া ইয়াছিন মিয়া। মিজমিজি পুকুরপাড়ে ইয়াছিন মিয়ার বাড়ি। বাড়ির মধ্যেই একটি অফিস বানিয়েছেন। এই অফিসে বসেই ইয়াছিন মিয়া কলকাঠি নাড়ছেন, অর্ধশত পালিত অস্ত্র¿ধারী সন্ত্রাসী ক্যাডারকে দিয়ে চাঁদা কালেকশন করছেন।
এলাকায় কেউ নতুন বাড়িঘর নির্মাণ করতে গেলে ইয়াছিন মিয়ার অনুমতি নিয়ে কাজ শুরু করতে হবে, এক্ষেত্রে বাড়িপ্রতি ৫ লাখ থেকে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দিতে হচ্ছে। চাঁদা প্রদান ব্যতীত বাড়ি নির্মাণ করতে গেলে ইয়াছিন তার লালিত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ক্যাডার পাঠিয়ে বাড়ি নির্মাণকাজ বন্ধ করে চাঁদা আদায় করে থাকে। এলাকাবাসী জানায়, ইয়াছিন মিয়া এক সময় ছিল ডাকাত সর্দার। সিদ্ধিরগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে আন্তঃজেলা ডাকাতদের সাথে ছিল তার সুসম্পর্ক। বাড়িঘরে ও মহাসড়কে যানবাহনে ডাকাতি করতো ইয়াছিন মিয়া। এখনো সে ডাকাতদের নিয়ন্ত্রণ করে বলে জানালেন এলাকাবাসী। কোনো অপকর্মই থেমে নেই তার। চলতি এপ্রিল মাসের শুরুতে সিদ্ধিরগঞ্জের সাহেবপাড়ায় জনৈক হুমায়ুন কবির নামে এক ব্যক্তি একটি বাড়ির নির্মাণকাজ শুরু করেন, কিন্তু সেখানে ইয়াছিন মিয়া তার প্রধান অস্ত্রধারী ক্যাডার আনোয়ার হোসেন আশিক, হেকিম,শাহজাহান, মনির, রোকনসহ ১৫-২০ জন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ক্যাডার ঘটনাস্থলে পাঠিয়ে হুমায়ুন কবিরের বাড়ি নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেয়। ইয়াছিন মিয়া সিদ্ধিরগঞ্জের প্রধানমন্ত্রী তার অনুমতি ছাড়া বাড়ি নির্মাণ করা যাবে না বলে সন্ত্রাসীরা বাড়ি নির্মাণকাজ বন্ধ করে দিয়ে হুমায়ুন কবিরকে দেখা করতে বলে চলে যায়। পুনরায় আবারও বাড়ি নির্মাণ কাজ শুরু করলে সন্ত্রাসীরা গিয়ে কাজ বন্ধ করে দিয়ে হুমায়ুন কবিরের কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী বাড়ির মালিক হুমায়ুুন কবির বাদী হয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় ইয়াছিনের ক্যাডার ৭ খুন মামলার চার্জশীট থেকে অব্যাহতি পাওয়া আনোয়ার হোসেন আশিকও তার সহযোগী সন্ত্রাসী চাঁদাবাজ রোকন, মনির, হেকিমও শাহজাহানসহ ১১ জনকে আসামী করে একটি চাঁদাবাজি মামলা দায়ের করেন। পুলিশ ইয়াছিনের শীর্ষ চাঁদাবাজ রোকনকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠিয়েছে। পুলিশ অন্য আসামীদের এখন পর্যন্ত গ্রেফতার করছে না। অথচ মামলার অন্য ১০ আসামী ইয়াছিনের অফিসে প্রতিদিন সন্ধ্যার পর গল্পগুজব করে। পুলিশ ইয়াছিনের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা খেয়ে মামলার ১০ আসামীকে গ্রেফতার না করায় এলাকাবাসী রয়েছেন রীতিমতো আতঙ্কে। সাহেবপাড়ায় হুমায়ুন কবিরের নির্মাণাধীণ বাড়ির পূর্ব পাশে ১০ কাঠা জমি নিয়ে ২৪ জনে একটি বাড়ি নির্মাণের জন্য পাইলিংয়ের কাজ করছেন, সেখানে ইয়াছিন মিয়া তার ক্যাডারদের পাঠিয়ে কাজ বন্ধ করে দেন ৩ বার, কিন্তু বাড়ির মালিকরা পুলিশকে ঘটনা জানিয়ে ৩ বারই কাজ চালু করছেন। সন্ত্রাসীরা ওই পাইলিং ঠিকাদার জাকিরকে মারধরও করেছে। ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে ইয়াছিনের ক্যাডাররা। এভাবে নতুন নতুন বাড়িঘর নির্মাণ করতে গেলে ইয়াছিন ও তার ক্যাডারদের মোটা অংকের টাকা চাঁদা দিতে হচ্ছে। অনেকেই অহেতুক ঝামেলা এড়াতে মুখ বুঝে নীরবে দাবিকৃত চাঁদা দিয়ে বাড়িঘর নির্মাণ করছেন বলে জানা গেছে। নতুন জায়গা কেউ কিনে বাউন্ডারী ওয়াল করতে গেলে সেখানেও ইয়াছিনের ক্যাডাররা বাধা হয়ে দাঁড়ায়। জমিতে অংশ পাবেন এই ধরনের মিথ্যা অজুহাত দাঁড় করিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় ভুক্তভোগীর কাছ থেকে। বাউন্ডারি ওয়ালের কাজও ক্যাডারদের দিতে হচ্ছে। ১ লাখ টাকা খরচ হলে ৫ লাখ টাকা ভাউচার ধরিয়ে দেয় ক্যাডাররা। বাড়ি নির্মাণের ঠিকাদারীও ইয়াছিনের ক্যাডারদের না দিলে বাড়ি নির্মাণ কাজও বন্ধ রাখে সন্ত্রাসীরা। বাস্তবে যদি ১০ লাখ টাকা বাড়ি নির্মাণ ব্যয় হয় সেখানে ক্যাডাররা সেখানে ২৫ লাখ থেকে ৩০ লাখ টাকার বিল ধরিয়ে দেয়। এভাবে ইয়াছিনের ক্যাডাররা মানুষের রক্ত চুষে খাচ্ছে। সিদ্ধিরগঞ্জের ১নং ও ২নং ওয়ার্ড এলাকা পড়েছে বৃহৎ মিজমিজিতে। এই ওয়ার্ডের মধ্যে ২নং ওয়ার্ডে রয়েছে একাধিক নকল জুস কারখানা, ব্যাটারীর কারখানা, ২০টি অবৈধ মশার কয়েল কারখানা, সাবান তৈরির কারখানা, মবিল কারখানা, কার্টুন ফ্যাক্টরী, চোরাই রিকশার গ্যারেজ, ২০-২৫টি বেকারী, আইসক্রিম ফ্যাক্টরীসহ বিভিন্ন ধরনের কারখানা রয়েছে। এগুলো থেকে প্রতিমাসে কোটি টাকা চাঁদা কালেকশন করে ইয়াছিনের নামে তার ক্যাডার বাহিনী। ইয়াছিনের অফিস সূত্র জানায়, আদায়কৃত অর্থ ভা-ার আনোয়ার হোসেন আশিক বহন করে ইয়াছিন মিয়াকে বুঝিয়ে দেয়। পরে ইয়াছিন মিয়া ক্যাডারদের নির্দিষ্ট হারে কমিশন দেয়। এছাড়াও ক্যাডারদের মাসিক ভিত্তিতে বেতন প্রদান করে ইয়াছিন মিয়া। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২নং প্যানেল মেয়র ও ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলামসহ ৭ খুনের পর ইয়াছিন মিয়ার বাড়িঘরে ও তার মৌচাকস্থ শ্যামস ফিলিং ষ্টেশনে বিক্ষুদ্ধ হাজার হাজার জনতা হামলা ও ভাংচুর চালায়। বিক্ষুব্ধ জনতা এ সময় মৌচাকের শ্যামস ফিলিং স্টেশনে অগ্নিসংযোগ করে। ইয়াছিন ও তার ক্যাডারদের অত্যাচারে মিজমিজিবাসী ছিল অতিষ্ঠ। যার বিস্ফোরণ ঘটে কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম হত্যাকা-ে গোটা মিজমিজিবাসী বিক্ষুব্ধ হয়ে ইয়ছিনের পেট্রোল পাম্পে আগুন লাগিয়ে দেয়। ইয়াছিন মিয়া প্রায় ১ বছরেরও বেশী সময় এলাকা ছেড়ে পালিয়ে আত্মগোপনে ছিল। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গসহ নানা অনিয়মের অভিযোগের ভিত্তিতে ওই সময়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগ সভা করে ইয়াছিন মিয়াকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে বহিষ্কার করেন। ৭ খুনের মামলার চার্জশীট থেকে অব্যাহতি পাওয়ার পর ক্যাডার বাহিনী নিয়ে এলাকায় ফিরে স্বপদে বহাল হয়ে আবারও শুরু করে নানা অপকর্ম। কয়েক মাস পূর্বে ইয়াছিন ক্যাডারদের নিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জের মক্কীনগর মাদ্রাসায় গিয়ে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের কাছে ২ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেন। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ দাবিকৃত চাঁদা প্রদানে অস্বীকৃতি জানালে ইয়াছিনের নির্দেশে তার ক্যাডার বাহিনীর প্রধান আনোয়ার হোসেন আশিকের নেতৃত্বে ২০-৩০ জন সশস্্র ক্যাডার মাদ্রাসার প্রিন্সিপ্যালসহ শিক্ষক ও ছাত্রদের উপর অতর্কিতভাবে হামলা চালায় এবং মারধর করে। এ ঘটনায় ইয়াছিন, আনোয়ার হোসেন আশিকসহ তার ২৫-৩০ জন ক্যাডারের নামে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায়। এলাকাবাসীরা জানান, ইয়াছিন মিয়া সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের পদ ব্যবহার করে ক্যাডারদের মাধ্যমে চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকা- করে সিদ্ধিরগঞ্জবাসীকে বিষিয়ে তুলেছেন। সিদ্ধিরগঞ্জবাসীর স্বার্থে অবিলম্বে ইয়াছিন মিয়ার সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে তাকে বহিষ্কার করাসহ তার বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার সেইসাথে ইয়াছিনের ক্যাডারদের কাছ থেকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারসহ ক্যাডারদের গ্রেফতার করার দাবি জানান এলাকাবাসী।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।