Inqilab Logo

রোববার ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ১৮ কার্তিক ১৪৩১, ৩০ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

অসহনীয় গরমে বেড়েছে লোডশেডিং

নৌ ধর্মঘটে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে ঃ পিডিবি

প্রকাশের সময় : ২৬ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৪৩ পিএম, ২৫ এপ্রিল, ২০১৬

বিশেষ সংবাদদাতা : অসহনীয় গরমের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে লোডশেডিংয়ের যাতনা। দিনে তিন থেকে চার বার লোডশেডিং হচ্ছে। রাতেও রেহাই নেই। গত এক সপ্তাহে বিদ্যুতের চাহিদার সাথে উৎপাদনের দেখা দিয়েছে বিস্তর ফাড়াক। রাজধানীর চেয়ে জেলা শহরগুলের অবস্থা আরও শোচনীয়। গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ গেলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও বিদ্যুতের দেখা মেলে না। বিদ্যুতের এমন দূরাবস্থার জন্য পিডিবি দায়ী করেছে নৌযান ধর্মঘটকে। বিদ্যুৎ বিভাগের মতে, এই ধর্মঘটকে কেন্দ্র করে জ্বালানি তেল চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে নৌপথে তেল সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এতে করে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিঘœ ঘটছে। যার কারণে উৎপাদন কমে গেছে এবং পিডিবি’কে লোডশেডিং বাড়াতে হয়েছে।
উল্লেখ্য, গতকাল সোমবার ছিল জাহাজ নৌ শ্রমিকদের ধর্মঘটের পঞ্চম দিন। এই শ্রমিক সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সুবজ সিকদার বলেন, নৌযান শ্রমিকদের দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত নৌযান ধর্মঘট চলবে। এছাড়া অন্য নৌযান শ্রমিকদের কর্মবিরতিও অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে, জাহাজি শ্রমিক ধর্মঘটে কারণে বন্দরে পণ্য উঠানামায় সংকট দেখা দিয়েছে। এ ব্যপারে জানতে চাইলে তৈরি হয়েছে কি-না চাইলে সুবজ সিকদার বলেন, এতে আমাদের কিছুই করার নেই। মালিক পক্ষ শ্রমিকদের দাবি মেনে নিলেই তো আর সমস্যা থাকে না। তার মতে, বেতন-ভাতা বৃদ্ধিসহ ১৫ দফা দাবিতে গত বুধবার (২০ এপ্রিল) রাত ১২টা থেকে সারাদেশে নৌযান শ্রমিকদের কর্মবিরতি শুরু হয়। কর্মবিরতি আহ্বান করা সংগঠনগুলো হলোÑ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন, জাহাজী শ্রমিক ফেডারেশন, লাইটারেজ শ্রমিক ইউনিয়ন ও কার্গো ট্রলার বাল্কহেড শ্রমিক ইউনিয়ন।
পিডিবি’র দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, জ্বালানি তেল সরবরাহ করতে না পারায় গতকাল তারা ৭শ’ মেগাওয়াট লোডশেডিং রেখেছে। রোববার লোডশেডিং ছিল ৩শ’ মেগাওয়াটের উপরে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পিডিবি’র পরিচালক (জনসংযোগ) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, গতকাল বিদ্যুতের চাহিদা ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৩শ’ মেগাওয়াট। আর উৎপাদন ছিল ৭ হাজার ৬শ’ মেগাওয়াট। লোডশেডিং ধরা হয়েছে ৭শ’ মেগাওয়াট।
জানা যায়, সারাদেশে জ্বালানি তেল চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ৩ হাজার মেগাওয়াট। এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অনেকগুলোই জ্বালানি তেলের অভাবে উৎপাদনে যেতে পারছে না। মেঘনায় সামিট পাওয়ারের একটি কেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ রয়েছে তেলের কারণে। জ্বালানি তেল বহনকারি বেশ কয়েকটি জাহাজ বিভিন্ন বন্দরে খালাশের অপেক্ষায় বসে রয়েছে। ধর্মঘটের কারণে নৌযান শ্রমিকরা এসব জাহাজ থেকে তেল খালাস করছে না।
এদিকে, শুধু নৌযান শ্রমিক ধর্মঘটের কারণেই বিদ্যুতের উৎপাদনে বিঘœ ঘটছে এমনটি মানতে রাজি নন এখাতের বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, চাহিদার সাথে উৎপাদনের যে ফাড়াক দেখানো হয়Ñ তাতে যথেষ্ট শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে। পিডিবি এই অসহনীয় গরমেও চাহিদা ৮ হাজার ৩শ’ মেগাওয়াট দেখালেও কার্যত চাহিদা ৯ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে গেছে। এক্ষেত্রে চাহিদার সাথে উৎপাদনের ঘাটতি রয়েছে কমপক্ষে ১৫শ’ মেগাওয়াট।
বিদ্যুৎ বিভাগের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, চাহিদার অনুপাতে লোডশেডিং সবচেয়ে কম হয় ঢাকা অঞ্চলে চাহিদার শতকরা ১২ ভাগ। আর ন্যাশনাল গ্রিড ডেসপাচ সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা ছাড়া দেশের অন্যন্য অঞ্চলে মোট চাহিদার ১৬ শতাংশ করে লোডশেডিং হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, বিদ্যুৎ বিভাগ কাগজে-কলমে উৎপাদন ও লোডশেডিংয়ের যে হিসাবই দিক না কেন-গ্রাহক পর্যায়ে পরিস্থিতি ভিন্ন। দিনে চাহিদার ১২ বা ১৬ শতাংশ লোডশেডিং হলে প্রতি ৬ বা ৮ ঘণ্টা পর এক ঘণ্টা করে লোডশেডিং হওয়ার কথা; কিন্তু এখন দিনে সাত থেকে ৮ বার লোডশেডিং হচ্ছে এলাকাভেদে। বিদ্যুৎ খাত সংশ্লিষ্টদের মতে সরকারিভাবে বিদ্যুতের চাহিদা এবং লোডশেডিংয়ের যে হিসাব দেয়া হয় তা সঠিব নয়।
জানা যায়- বগুড়া, রাজশাহী, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, খুলনা, সাতক্ষীরা, যশোর, কুষ্টিয়া, দিনাজপুর, নিলফামারী, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, গাইবান্ধা, রংপুর, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, নোয়াখালী, ফেনী, কুমিল্লা, চাঁদপুর, শরিয়তপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জসহ দেশের প্রতিটি এলাকাতেই চলছে লোডশেডিং।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে গতকাল ডিপিডিসি’র এক কর্মকর্তা জানান, চাহিদা মোতাবেক বিদ্যুৎ না পাওয়ায় লোডশেডিং করতে হচ্ছে। তবে তা সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। এই কর্মকর্তার মতে, গরমে ট্রান্সফরমার গরম হয়ে যাওয়া; মাটির নিচ দিয়ে নেয়া ক্যাবল এবং ওপর দিয়ে নেয়া বৈদ্যুতিক লাইন গরম হয়ে যাওয়ায় নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এতে করেও বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘœতার সৃষ্টি হচ্ছে। গরমের কারণে এসি, ফ্যান, পানির মটর যেভাবে চলছে; তাতে করেও বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে গেছে। আর ইজিবাইকের পাশাপাশি দেশের সর্বত্র যেভাবে রিকশায় বিদ্যুৎ খেকো ব্যাটারি ব্যবহার করা হচ্ছেÑ তাতে করেও বিদ্যুতের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। এই পরিস্থিতি সামাল দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এই কর্মকর্তার মতে, নৌযান শ্রমিক ধর্মঘটের কারণে জ্বালানি তেল সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এতে করেও অকস্মাৎ বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে গেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অসহনীয় গরমে বেড়েছে লোডশেডিং
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ