Inqilab Logo

বুধবার ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১, ০৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গুপ্তহত্যার আতঙ্ক বাড়ছে

রাজধানীতে সাবেক দূতাবাস কর্মকর্তাসহ দুইজন, কাশিমপুর কারাগার গেটে এলপিআরে থাকা কর্মকর্তা, ভেড়ামারায় শিক্ষক ও চট্টগ্রামে দুইজনকে হত্যা

প্রকাশের সময় : ২৬ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১:০২ এএম, ২৬ এপ্রিল, ২০১৬

ইনকিলাব রিপোর্ট
‘বিশ্বের অনেক আধুনিক দেশের তুলনায় বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের এমন দাবির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই গতকাল রাজধানীর কলাবাগানে বাড়িতে ঢুকে দুই ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। নিহতদের একজন জুলহাজ মান্নান ইউএসএআইডির কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির খালাত ভাই এবং সমকামীদের অধিকারের দাবিতে সোচ্চার ‘রূপবান’ নামে একটি সাময়িকী সম্পাদনায়ও যুক্ত ছিলেন। এর আগে সকালে গাজীপুর কেন্দ্রীয় কারগারের প্রধান ফটকের সামনে এলপিআর-এ থাকা সার্জেন্ট ইন্সট্রাক্টর মো. রুস্তম আলী হাওলাদার এবং চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় মো. মনজু ও মো. কাশেম নামে মামলার দুইজনকে বাড়ি থেকে অপহরণের পর গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করেছে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় গতকাল ভোরে মসজিদ থেকে ফজরের নামাজ পড়ে বাড়ি ফেরার সময় দুই ভাইয়ের ওপর ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা কর দুর্র্বৃত্তরা। এ সময় ঘটনাস্থলে সাবেক স্কুলশিক্ষক মজিবুর রহমান নিহত হন। তার ভাই গুরুতর আহত অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন। এ ধরনের ক্রমবর্ধমান গুপ্তহত্যায় সারা দেশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
এর দুইদিন আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের এক শিক্ষককে দিনের বেলায় কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এছাড়া এক মাস আগে কুমিল্লা সেনানিবাসে মেধাবী ছাত্রী তনুকে হত্যা করা হয়।
এ সব চাঞ্চল্যকর ঘটনার একটিরও কোনো কুল-কিনারা করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এমন অবনতিতে এবং নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যর্থতায় শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ থেকে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ সবাই চরম উদ্বিগ্ন। নেই জানমালের সামান্য নিরাপত্তা। যদিও পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা দাবি করছেন পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণেই আছে।
এমন প্রেক্ষাপটে গতকাল রংপুরে দেশে বর্তমানে বিচারহীনতার সংস্কৃতি চলছে জানিয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, গত তিন মাসে দেশে এক হাজার ৫০০ মানুষ খুন হয়েছে। তার কোনো বিচার হয়নি। তিনি বলেন, এভাবে দেশ চলতে পারে না।
কলাবাগানে দু’জনকে বাসায় ঢুকে হত্যা
রাজধানীর কলাবাগানে বাসায় ঢুকে সমকামীদের পত্রিকা ‘রূপবান’-এর সম্পাদক জুলহাস মান্নান (৩৫) ও তাঁর বন্ধু মাহবুব রাব্বী তনয়কে নিজ বাড়িতে কুপিয়ে হত্যা করেছে আততায়ীরা। গতকাল সোমবার বিকেলে কলাবাগান থানাধীন ৩৫ লেক সার্কাসের আসিয়া নিবাস নামের এক বাসায় এ ঘটনা ঘটে। আততায়ীরা বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী পারভেজ (১৯) ও এক পুলিশ সদস্যকে কুপিয়ে জখম করেছে। এসময় তাদের সঙ্গে থাকা একটি ব্যাগ ফেলে গেছে দুর্বৃত্তরা। পরে পুলিশ ওই ব্যাগটি উদ্ধার করেছে। এদিকে হত্যাকা-ের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে গেছেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, ডিএমপি কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া,  অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলামসহ ঊর্ধ্বতন পুলিশ ও র‌্যাব কর্মকর্তারা। জুলহাস মান্নানের হত্যাকা-ে ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট কঠোর নিন্দা জানিয়েছেন।
জানা গেছে, জুলহাস বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজীনার প্রটোকল কর্মকর্তা ছিলেন। হত্যাকা-ের আগে ‘রূপবান’ সম্পাদনার পাশাপাশি জুলহাস মার্কিন উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডিতে কাজ করতেন। নিহত জুলহাস সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক দীপু মনির খালাতো ভাই।পৃঃ ২ কঃ ১
গুপ্তহত্যার আতঙ্ক বাড়ছে



প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সন্ধ্যায় পাঁচ-ছয়জন দুর্বৃত্ত ৩৫ লেক সার্কাস কলাবাগানের আসিয়া নিবাস নামের ছয়তলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় ঢুকে পড়ে। যাদের প্রত্যেকের গায়েই নীল রঙের শার্ট পরা ছিলো। দুর্বৃত্তরা বাসায় অবস্থানরত জুলহাস মান্নান ও তাঁর বন্ধু তনয়কে কুপিয়ে দ্রুত বেরিয়ে যায়। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় গেটের নিরাপত্তারক্ষী বাধা দিলে তাকেও জখম করে দুর্বৃত্তরা। নিরাপত্তারক্ষীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বিবিসি বাংলা বিভাগ বলছে, নিহত জুলহাস মান্নান ঢাকায় মার্কিন দাতা সংস্থা ইউএস এইডে কর্মরত ছিলেন। এই হত্যার ঘটনা এমন এক সময়ে ঘটলো যখন আজই দিনের আরো আগের দিকে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল মন্তব্য করেন যে বিশ্বের অনেক আধুনিক দেশের তুলনায় বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো। দেশী ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে দেশে নানাভাবে হত্যাকা- ঘটানো হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন। মি. খান বলেন, দেশি জঙ্গিরাই আইএসের নাম ব্যবহার করে এসব হত্যাকা- ঘটাচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও কলাবাগান পুলিশের বরাত দিয়ে বিবিসি’র সংবাদদাতারা জানাচ্ছেন, বিকাল পৌনে ছয়টার দিকে পার্সেল ডেলিভারির নাম করে বেশ কজন লেকসার্কাস রোডের বাড়িটিতে প্রবেশ করে। এরপর তারা ঐ দুজনকে কুপিয়ে হত্যা করে।
এদিকে জুলহাস মান্নানের হত্যাকা-ে ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট কঠোর নিন্দা জানিয়ে গতকাল সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে বলেন, জুলহাসের মৃত্যুতে আমি মর্মাহত। জুলহাস আমাদের একজন ভালো বন্ধু ছিল। যারা এ হত্যাকা-ের পেছনে রয়েছেন তাদেরকে ধরার জন্য সরকারের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে আহ্বান জানান তিনি। এ সময় বার্নিকাট নিহত ও আহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।
রাতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনাস্থল থেকে পার্সেলের বক্সসহ গুরুত্বপূর্ণ আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। এটা পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকা- ছিল। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
কলাবাগান থানার এসআই আনসার আলী বলেন, নিহতদের মাথায় ধারালো অস্ত্রের আঘাত আছে। একজনকে বেডরুমে, আরেকজনকে ডাইনিং রুমে হত্যা করা হয়। ঘটনার সময় জুলহাসের মা আছিয়া বেগম ঘুমিয়ে ছিলেন। আর গৃহকর্মী রান্না ঘরে ছিলেন। তিনি আরো বলেন, সন্দেহজনক গতিবিধির কারণে ডলফিন গলিতে টহল পুলিশ খুনিদের আটকানোর চেষ্টা করে। সে সময় এএসআই মমতাজ হোসেনকে তারা চাপাতি দিয়ে কোপ দেয়।
ডিএমপি’র জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার শিবলী নোমান বলেন, পালানোর সময় দুর্বৃত্তদের বাধা দিতে গিয়ে মমতাজ হোসেন নামে এক এএসআই আহত হন। তিনি হামলাকারীদের একজনের কাছ থেকে একটি ব্যাগ ছিনিয়ে রাখেন। ব্যাগে কী পাওয়া গেছে, সে বিষয়ে কিছু বলেননি শিবলী নোমান।    
পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, নিহত জুলহাস মান্নান দেশের সমকামীদের পত্রিকা ‘রূপবান’ এর সম্পাদক ছিলেন। এছাড়া গত পহেলা বৈশাখে জুলহাসসহ সমকামীরা টিএসসি এলাকা থেকে একটি র‌্যালি বের করার চেষ্টা করে। তখন পুলিশ জুলহাসসহ তাদের চারজনকে আটক করে। ওইদিন রাতেই স্বজনদের জিম্মায় তাদের ছেড়ে দেয়া হয়।
খবর পেয়ে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া, অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম, উপ-কমিশনার আবদুল বাতেনসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান।
স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল বিকেল পাঁচটার দিকে হঠাৎ ওই বাসা থেকে চিৎকার- চেঁচামেচি শুনতে পান তাঁরা। পরে অন্তত পাঁচ যুবককে ওই বাসা থেকে দ্রুত বের হয়ে যেতে দেখেন।
গতকাল সন্ধ্যা সাতটার দিকে ওই বাড়ির সামনে গিয়ে দেখা যায়, র‌্যাব, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সেখানে উপস্থিত হন। বাড়ির সামনে গণমাধ্যমকর্মী ছাড়াও উৎসুক জনতার ভিড় ছিল। বাড়ির প্রধান ফটক ভেতর থেকে ছিল আটকানো। ভেতরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ছাড়া আর কাউকে ঢুকতে দেয়া হচ্ছিল না।
ওই বাসায় প্রাথমিক তদন্ত শেষে বের হওয়ার পর কলাবাগান থানার এএসআই হাবিবুর রহমান বলেন, নিহত জুলহাস (৩৫) ও মাহবুব তনয় পরস্পর বন্ধু বলে জানা গেছে। জুলহাজ একটি দূতাবাসে চাকরি করতেন। তিনি বলেন, বাসায় স্কচটেপ প্যাঁচানো বড় আকৃতির দুটি জিনিস দেখেছি। ধারণা করছি, ওইগুলোকে পার্সেল বানিয়ে বাসায় ঢুকেছিলেন দুর্বৃত্তরা। তবে এর ভেতরে কী তা এখনো দেখা হয়নি।
তিনি বলেন, ওই বাসায় জুলহাস, তাঁর মা আর একজন গৃহকর্মী থাকতেন। জুলহাসের বন্ধু তনয়। গতকাল বিকেলে চার-পাঁচজন যুবক পার্সেল দেয়ার কথা বলে ওই বাসায় যায়। দরজা খুললে কিছু বুঝে ওঠার আগেই যুবকেরা ভেতরে ঢুকে দুজনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। পরে দ্রুত বেরিয়ে যেতে থাকে। এ সময় বাসার নিরাপত্তাকর্মী তাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে তাঁকেও বেধড়ক মারধর করে বেরিয়ে যায়। তখন স্থানীয় লোকজন তাদের ধাওয়া করার চেষ্টা করে। তবে যুবকেরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।  
ওই যুবকদের ধাওয়া করা স্থানীয় ব্যক্তিদের মধ্যে মো. আশরাফ নামের একজন দোকানদার বলেন, আমি ওই বাড়ির কিছুটা দূরে ছিলাম। হঠাৎ বাড়ির সিকিউরিটি গার্ডের চিৎকার শুনি। এ সময় চার-পাঁচজন যুবক অস্ত্র হাতে দ্রুত বেরিয়ে যাচ্ছিল। পরে আমিসহ কয়েকজন তাদের ধাওয়া দিই। পরে দুর্বৃত্তরা অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি করার হুমকি দেয়। ফাঁকা গুলি ছুড়তে ছুড়তে তারা পালিয়ে যায়।
নিহতের প্রতিবেশী এক নারী সাংবাদিকদের বলেন, বিকেলে ডাকাত, ডাকাত চিৎকার শুনে ওই বাসায় প্রবেশের চেষ্টা করি। প্রথমে যেতে না পারলেও পরে ঘরে গিয়ে দেখি চারদিকে রক্ত ছড়িয়ে আছে। এ সময় ঘরের ডান দিকে দুই ব্যক্তিকে পড়ে থাকতেও দেখি, বলেন তিনি।
এদিকে স্থানীয় লোকজন জানায়, ডাকাত ডাকাত চিৎকারের পর ওই বাসা থেকে আনুমানিক ছয় থেকে সাতজনকে দৌঁড়ে বেড়িয়ে যেতে দেখেছেন তারা। পরে লেক সার্কাস তেঁতুলতলা মাঠের পাশ দিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।
প্রত্যক্ষ্যদর্শী রাকীব হাওলাদার জানান, হামলাকারীরা যাওয়ার সময় নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবর সেøাগান দিয়ে বেরিয়ে যায়। একজনের হাতে পিস্তলও দেখেছেন তারা।
রাকীব হাওলাদার আরও জানান, দুর্বৃত্তদের দেখে মনে হয়েছে তারা মার্কেটিংয়ে চাকরি করেন। তাদের মধ্যে তিনজনের বয়স ১৮ থেকে ২২ বছরের মধ্যে। অন্য দু’জনের বয়স আনুমানিক ৩০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে।
ভবনটির দাড়োয়ান সুমন আহত সহকর্মী পারভেজ মোল্লাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। তিনি বলেন, বিকাল ৫টার দিকে দুর্বৃত্তরা হানা দেয়। কপালের ডান পাশে আঘাতপ্রাপ্ত আহত দারোয়ান পারভেজ মোল্লা সাংবাদিকদের বলেন, বিকাল ৫টার দিকে তিন যুবক পার্সেল দেয়ার কথা বলে জুলহাস মান্নানের ফ্ল্যাটে যেতে চান। তাদের ঢুকতে দিয়ে তিনিও পেছন পেছন দোতলায় ওঠেন। দরজা নক করলে জুলহাস স্যার দরজা খোলেন। তাদের দেখে আবারও দরজা বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করেন। তখন তারা বাসায় জোর করে ঢুকতে চায়। আমি তাদের বলি, স্যার যেহেতু ঢুকতে দিতে চান না, আপনারা চলে যান। এ কথা বলার পরই আমাকে আঘাত করে। পারভেজ লুটিয়ে পড়লে ওই যুবকরা জোর করে ঘরে ঢুকে জুলহাস ও তার সঙ্গে থাকা অন্যজনকে (তনয়) কোপাতে থাকে বলে জানান দারোয়ান পারভেজ। ওই সময়ে আমি চিৎকার করি, স্যারও চিৎকার করতে থাকেন। ওই সময় বাসার নিচে কয়েক রাউন্ড গুলির আওয়াজও পাই। হুলুস্থুল পরিস্থিতিতে কখন হামলাকারীরা বাসা থেকে বের হয়ে যায়, বুঝতে পারিনি।
হাসপাতাল সূত্র জানান, রাত ৮টার দিকে লাশ দু’টি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। সূত্র আরো জানায়, জুলহাসের সাথে নিহত অপরজন হলেন, মাহবুব রাব্বী তনয়। আইনের ছাত্র ও নাট্যকর্মী তনয় জুলহাসের বন্ধু ছিলেন। হামলায় দুজনে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান।




হত্যা ২য় খ-

কাশিমপুর কারাগারের সামনে অবসরপ্রাপ্ত কারারক্ষী নিহত

মো: দেলোয়ার হোসেন, গাজীপুর থেকে
গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে দুর্বৃত্তদের গুলিতে এলপিআরে থাকা এক কারাসার্জেন্ট ইন্ট্রাক্টর নিহত হয়েছেন। সোমবার সকালে কারাফটকের অদূরে জেলখানা রোডে মাহবুব সুপার মার্কেটের সামনে এ ঘটনা ঘটে। নিহত মো. রুস্তম আলী হাওলাদার (৬০) কারাগার থেকে গত বছরের ৪ নভেম্বর অবসর প্রস্তুতিকালিন ছুটিতে যান। এ ঘটনায় সাইফুল ও নিহতের মেয়ের জামাই সোহেল রানাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে।
কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১-এর সুপার সুব্রত কুমার বালা জানান, সকাল সোয়া ১১টার দিকে রুস্তম আলী কাশিমপুর কারাগারের প্রধান ফটকের বাইরে দুইশ’ গজের মতো উত্তরে আহম্মদ মেডিসিন কর্নারের সামনে বসা ছিলেন। এসময় কিছু বুঝে ওঠার আগেই মোটর সাইকেল যোগে তিন দুর্বৃত্ত ঘটনাস্থলে এসে তাকে লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি ছুঁড়ে। পরে তারা এক মোটরসাইকেলযোগে দ্রুত এলাকা ত্যাগ করে। স্থানীয়রা রুস্তম আলীকে উদ্ধার করে দ্রুত শহীদ তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজ হাসপতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সুব্রত বালা আরো জানান, নিহত রুস্তম আনা অবসরে যাওয়ার প্রধানকারারক্ষী থেকে সার্জেন্ট ইন্সট্রাকটর পদে পদোন্নতি পেয়ে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১ থেকে মহিলা কারাগারে যোগ দেন। তার বাড়ি পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া থানার চরকগাছিয়া গ্রামে। পিতার নাম আব্দুল মান্নান হাওলাদার। নিহত রুস্তম আলীর একটি মেয়ে সন্তান রয়েছে।
কোনাবাড়ি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মো. মোবারক হোসেন জানান, ঘটনাস্থল থেকে দুইরাউন্ড গুলির খোঁসা উদ্ধার করা হয়েছে।
শহীদ তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক মো. আব্দুস সালাম সরকার জানান, মৃতাবস্থায় রুস্তমকে হাসপাতালে আনা হয়েছে।
নিহতের লাশের সুরতহালকারী জয়দেবপুর থানার এসআই এনামুল হক জানান, নিহতের বুকের বাম পাশে, গালে বাম হাতে ৫টি গুলির ক্ষত রয়েছে।
নিহতের ভাই শাহ আলম জানান, তার ভাইয়ের কোন শত্রু ছিল না। তিনি অতি সাধারণ জীবন যাপন করতেন। সাত ভাইবোনের মধ্যে রুস্তম আলী ছিল সবার বড়।

দুটি তদন্ত কমিটি গঠন
অবসর পূর্ব ছুটিতে থাকা কারা সাজেন্ট ইনস্ট্রাক্টর গুলিতে নিহতের ঘটনা তদন্তে গাজিপুর জেলা পুলিশ এবং কারা কর্তৃপক্ষ দুটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন।
গাজীপুরের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মো: দেলোয়ার হোসেন জানান, ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সোলাইমানকে প্রধান করে ৪ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অপর সদস্যরা হলেন, সহকারী পুলিশ সুপার মো: মনোয়ার হোসেন, গোয়েন্দা পুলিসের ওসি মো: আমির হোসেন এবং জয়দেবপুর থানার ওসি (তদন্ত) মো: মাহফুজুর রহমান। দ্রুততম সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য বলা হয়েছে।
 গাজীপুর জেলা কারাাগারের জেল সুপার সুভাষ কুমার ঘোষ জানান, ডিআইজি প্রিজন গোলাম হায়দারকে প্রধান করে কারা কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটির অপর সদস্যরা হলেন- কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো: মিজানুর রহমান, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার -১ এর জেলার দেওয়ান মো: তারিকুল ইসলাম।

রাঙ্গুনিয়ায় হত্যা মামলার দুই
আসামীকে হত্যা
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় হত্যা মামলার দুই আসামীকে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। উপজেলার মধ্যম সরফভাটার হাজী মগদর আলী বাড়ি সড়কে রোববার গভীর রাতে এ জোড়া খুনের ঘটনা ঘটে। রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি হুমায়ন কবির জানান, নিহত মো. মনজু (২৬) ও মো. কাশেমের (৩০) বিরুদ্ধে হত্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগে থানায় মামলা রয়েছে। মনজু সরফভাটা সৈয়দুরখীল দক্ষিণপাড়ার মনিরুজ্জামানের ছেলে। আর কাশেমের বাড়ি কাইন্দারকুল এলাকায়, বাবার নাম বাদশা মিয়া।
ওসি বলেন, হামলাকারীরা আগে থেকে ঘটনাস্থলে ওঁতপেতে ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। রাত দেড়টার দিকে তারা দু’জনকে পেয়ে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করে। গত ১ মার্চ মধ্যম সরফভাটা এলাকায় উকিল আহমেদ নামে এক ব্যক্তি সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত হন। তার ছেলেকেও সেদিন কুপিয়ে আহত করা হয়। ওই ঘটনায় থানায় যে মামলা হয়েছে, তাতে এজাহারভুক্ত আসামি মনজু ও কাশেম। এই জোড়া খুন আগের ঘটনার ধারাবাহিকতা কিনাÑ তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও জানান ওসি হুমায়ন।

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় সাবেক প্রধান শিক্ষককে কুপিয়ে হত্যা
কুষ্টিয়া থেকে স্টাফ রিপোর্টার : কুষ্টিয়ায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার জের ধরে এক স্কুল শিক্ষককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। সোমবার রাত ৯টার দিকে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার ফকিরাবাদ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
ভেড়ামারা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ নূর হোসেন খন্দকার হত্যাকা-ের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। নিহতের নাম মজিবর রহমান (৬৮)। তিনি ফকিরাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক। তিনি বিএনপির সমর্থক ছিলেন। একই ঘটনায় একজন গুরুতর আহত হয়েছেন। তিনি নিহতের ছোট ভাই বলে জানা যায়। মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে প্রথমে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসাপাতালে ও পরে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার অবস্থা সংকটাপন্ন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক।
ভেড়ামারা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ নূর হোসেন খন্দকার জানিয়েছেন, পূর্বশত্রুতার জের ধরে দুইজনকে আক্রমণ করা হয়েছে। পুলিশ প্রকৃত ঘটনা উৎঘাটন করে দোষীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।



 

Show all comments
  • সালমা ২৬ এপ্রিল, ২০১৬, ১:৩৮ পিএম says : 0
    আর কত কাল আমরা চুপ করে থাকবে ?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গুপ্তহত্যার আতঙ্ক বাড়ছে
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ