পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
উৎপাদন বৃদ্ধির ন্যুনতম উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না
জেনেটিক্যালী মোডিফাইড করে চাষের উপর জোর
পাবদা, খলসে, বেলে, মায়া, মলা মাছ পাওয়া দুষ্কর
বাজারে দেশি সুস্বাদু মাছ নেই বললেই চলে। গ্রাম শহরের মাছের বাজারগুলোতে একই অবস্থা। বাজারে পাবদা, পুটি, ট্যাংরা, খলসে, চ্যাং, রয়না, কৈ, বেলে, টাকি, মায়া, মলা ও মাগুরসহ ছোট জাতের দেশি মাছ পাওয়া এখন রীতিমতো ভাগ্যের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক খোঁজাখুজির পর সামান্য পাওয়া গেলেও দাম অত্যধিক চড়া। নিকট অতীতেও এই রকম অবস্থা ছিল না।
মৎস্য অধিদপ্তরের সূত্রে জানা গেছে, নদ-নদী, খাল-বিল, পুকুর ও জলাশয় ক্রমাগতভাবে পানিশূন্য হওয়ার কারণে দুস্প্রাপ্যতা বাড়ছে দেশি মাছের। তবে সামগ্রিক মাছের ঘাটতি নেই তেমন। ঘাটতি পূরণে চাষ করা মাছ উৎপাদন হচ্ছে আশানুরূপ। তাছাড়া দেশি সুস্বাদু মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিরও চেষ্টা চলছে।
তাদের বক্তব্য, জেনেটিক্যালি মোডিফাইড করে বিভিন্নজাতের মাছ উৎপাদন বৃদ্ধি করে আমরা অনেকটাই সফল হয়েছি। মাঠপর্যায়ের মৎস্য কর্মকর্তাদের বক্তব্য, চাষের উৎপর অতিমাত্রায় জোর দেওয়ার ফলে দেশি মাছ হারিয়ে যাচ্ছে।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিসারিজ অ্যান্ড বায়োসায়েন্স ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান প্রফেসর ডক্টর আনিছুর রহমান দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, দেশি মাছ উৎপাদন বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। খাল বিল নদীতে সৃষ্টি করতে হবে মাছের অভয়ারণ্য। আমরা এখন মাছ চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছি। দেশি মাছ কিভাবে বৃদ্ধি করা যায় সেদিকে নজর দিচ্ছি না। বিশেষ করে বিল-বাওড় লিজ দেওয়ার পর লীজ গ্রহিতারা কীটনাশক ও চুন ব্যবহার করে তাতে মাছ চাষ করছে। শর্ত দিয়ে যদি বাওড়, খাল ও বিলে দেশি মাছ উৎপাদনের দিকে জোর দেওয়া যায় তাহলে বিরাট সফলতা আসবে। এর বাইরেও পরীক্ষা নিরীক্ষা করে উপায় উদ্ভাবন করতে হবে। দেশি মাছ হারিয়ে যেতে দেওয়া যাবে না। তার কথা, আর্টিফিসিয়ালি ফিস ফুড ব্যবহারের কারণে চাষকৃত মাছের স্বাদ কম। এতে ন্যাচারাল ফিস ফুড ব্যবহারে উৎপাদিত মাছের মতো স্বাদ কোনক্রমেই সম্ভব নয়। সূত্র জানায়, বর্ষাকালে দেশের কয়েকটি এলাকায় এখনো প্রচুর দেশি মাছ পাওয়া যায়। এই সময়ের বাইরে দেশি মাছ পাওয়া কষ্টসাধ্য ব্যাপার। বর্তমান অবস্থা যা তাতে নিকট ভবিষ্যতে দেশি মাছ পাওয়া খুবই কঠিন হবে। তবে সাম্প্রতি সময়ে মৎস্য অধিদপ্তর যশোর, ফরিদপুর, নড়াইল, গোপালগঞ্জ ও সাতক্ষীরাসহ কিছু এলাকায় মাছের অভয়ারণ্য সৃষ্টির উদ্যোগ নিয়েছে।
একাধিক সূত্র জানায়, খাল বিলের পানি শুকিয়ে যাওয়া ছাড়াও দেশি মাছ শূন্য হওয়ার আরেকটি কারণ শর্তহীনভাবে বাওড়, খাল, বিল মাছ চাষের জন্য লীজ দেওয়া। তাছাড়া শুষ্ক মৌসুমে খাল বিল থেকে পানি সরিয়ে একেবারে সব মাছ তুলে নেওয়ার ঘটনা বহুমাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে। যার কারণে মা মাছের প্রজনন হচ্ছে না প্রাকৃতিকভাবে।
মাঠপর্যায়ের মৎস্য কর্মকর্তারা বলেছেন, লাগসই প্রযুক্তি ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহার করে পরিকল্পিতভাবে বিল, বাওড় ও পুকুরসহ জলাশয়ে মাছ চাষ করা হলে মাছ উৎপাদনে বিপ্লব ঘটবে। শুধু ছোট জাতের মাছ নয়, বিল বাওড়ে উৎপাদিত রুই, কাতলা, মৃগেলও বেশ সুস্বাদু। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, বাংলাদেশে জনসংখ্যার অনুপাতে মাছের মোট চাহিদা রয়েছে ৩০ লাখ মেট্রিক টন। সেখানে উৎপাদন হচ্ছে সবমিলিয়ে প্রায় ২৪ লাখ মেট্রিক টন। মাছের ঘাটতি কমে এলেও দেশি মাছের ঘাটতি দিনে দিনে অতিমাত্রায় বাড়ছে।
এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, শুধু দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলেই ৫হাজার ৪শ’ ৮৮ হেক্টর জলাশয়ের ৬ শতাধিক বাওড় রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ২৪টি বাওড় বিল ও বাওড় মৎস্য উন্নয়ন এবং ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের আওতাধীন রয়েছে। বাকি বাওড়গুলো বিভিন্ন সময়ে প্রভাবশালীদের তদবিরে নামমাত্র মূল্যে ইজারা দেয়া হয়। সেসব জলাশয়ে দেশি মাছের অভয়ারণ্য সৃষ্টি না করে চাষের দিকে জোর দেওয়া হয়েছে। মৎস্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনো দেশে যে জলাশয় আছে তাতে পরিকল্পিত উপায়ে অভয়ারণ্য সৃষ্টি করে মাছ উৎপাদনে জোর দিলে দেশি মাছের শূন্যতা বহুলাংশে পূরণ হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।