Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভালো নেই পাটকল শ্রমিকরা

খুলনাঞ্চলের ৯ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলে বেতন বকেয়া ৩৭ কোটি টাকা

আবু হেনা মুক্তি | প্রকাশের সময় : ১ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০১ এএম

ভালো নেই খুলনার পাটকলগুলোর শ্রমিক-কর্মচারীরা। শ্রমিক কর্মচারিদের মজুরি ও বেতন বকেয়ার পরিমান ৩৭ কোটি টাকা। ফলে এসব মিলের শ্রমিকদের পরিবার-পরিজন নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এসব জুট মিলের শ্রমিক-কর্মচারীরা বকেয়া পাওনা না পেয়ে অত্যন্ত মানবেতর জীবন যাপন করছে। অনেকে চিকিৎসার অভাবে মারা গেছে। অনেক পরিবারের সন্তানদের লেখা পড়া বন্ধ হয়ে গেছে। আর এমনটা চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে এ শিল্প হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে শ্রমিক নেতারা জানিয়েছেন। মিল কর্তৃপক্ষ বলছেন আর্থিক সঙ্কটের কারণে বেতন দিতে পারছিনা। এছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্যেও চলছে চরম মন্দা।
সম্প্রতি পাটকলগুলোর শ্রমিক নেতা, নাগরিক নেতা, মানবাধিকার ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা এক গোল টেবিলে রাষ্ট্রায়াত পাটকলগুলো লোকসানের পেছনে ৬টি কারণ উল্লেখ করেছেন। কারণগুলো হচ্ছে পাটকল প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে মেশিনগুলো বিএমআরই না করা, মৌসুমী পাট (কাঁচা মাল) ক্রয় না করা, পণ্য উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি, নতুন বাজার সৃষ্টি না হওয়ায় উৎপাদিত পণ্য মজুত থাকা, পাট শিল্পের ব্যবহার শতভাগ নিশ্চিত না হওয়া, মিলের যন্ত্রাংশ ও পাট ক্রয়ে দুর্নীতি।
এদিকে, বকেয়া পাওনার দাবিতে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে পাটকল সেক্টর শিল্প ও বন্দর নগরী খুলনা। শ্রমিক অসন্তোষ ক্রমেই দানা বেঁধে উঠেছে। যে কোন মুহূর্তে কঠোর আন্দোলন ছড়িয়ে পড়তে পারে রাজপথে।
জানা গেছে, খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি পাটকলের ৪ থেকে ৭ সপ্তাহের মজুরি বকেয়া রয়েছে। আর কর্মচারি ও কর্মকর্তাদের ৮ থেকে ৪ মাসের বেতন বকেয়া। সব মিলিয়ে শ্রমিক কর্মচারি ও কর্মকর্তাদের ৩৭ কোটি টাকা ৪৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা বকেয়া পড়েছে। এর মধ্যে শ্রমিকদের মজুরি বাবদ ৩০ কোটি ৭৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা এবং কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের বেতন বাবদ ৬ কোটি ৭০ লাখ ৬০ হাজার টাকা।
শ্রমিক নেতৃবৃন্দ বলেন, খুলনাঞ্চল দেশের অন্যতম পাট শিল্পের সূতিকাগার হিসেবে স্বাধীনতার পর থেকে চিহ্নিত। শুধু এই অঞ্চলেই নয় পাট শিল্প রক্ষায় গোটা দেশে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অগ্রযাত্রার রোড ম্যাপ ছিল অদূরদর্শীতায় ভরপুর। যে কারণে সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বেসরকারি পাটকলগুলোও লোকসানী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হচ্ছে। বিগত কয়েক বছরে খুলনাঞ্চলে বেশকিছু ব্যক্তি মালিকানাধীন পাটকল গড়ে উঠলেও দেশের বিভিন্ন স্থানের ১২টি পাটকল ইতোমধ্যেই বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধের পথে রয়েছে আরও অন্তত ১২টি পাটকল। যা বর্তমানে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে।
সূত্রমতে, মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বন্ধ পাটকল চালু এবং রুগ্ন শিল্পকে চাঙ্গা করতে বেশ কয়েকটি নির্দেশনা ও প্রকল্প হাতে নেয়। এটি এ অঞ্চলের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিও ছিল। দু’টি পাটকল চালু করলেও অন্যান্য ক্ষেত্রে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দূরদর্শীতার অভাবে তা সঠিক সময় আলোর মুখ দেখতে পারেনি। ফলে এই শিল্পের সাথে জড়িত সংশ্লিষ্টরা পড়েছে চরম বিপাকে।
ক্রিসেন্ট জুট মিলের সিবিএ সাধারণ সম্পাদক মোঃ সোহরাব হোসেন বলেন, ঈদুল আযহার পূর্বে আংশিক দিলেও এখন পর্যন্ত শ্রমিকদের কোন মজুরি পরিশোধ করা হয়নি। ফলে আর্থিক কষ্টে ভুগছে শ্রমিকরা। মিলের উৎপাদিত কিছু পণ্য বিক্রি হলেও তা শ্রমিকদের না দিয়ে পাটক্রয় খাতে ব্যয় করা হচ্ছে। সরকার ডিসেম্বর পর্যন্ত শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করবে বলে শুনেছি। তবে কবে নাগাদ পরিশোধ করবে তা জানতে পারিনি।
প্লাটিনাম জুট মিলের শ্রমিক আবুল কাসেম বলেন, চলতি সপ্তাহ নিয়ে ৮ সপ্তাহের মজুরি বকেয়া পড়তে যাচ্ছে। সরকার উন্নয়নের কথা বললেও শ্রমিকদের এখন নাই নাই ভাব। শ্রমিকরা দুর্বিষহ অবস্থায় রয়েছে। এ অবস্থার পরিত্রাণ চাই।
জেজে আই জুট মিলের প্রকল্প প্রধান মোঃ নুরুল ইসলাম বলেন, আর্থিক সমস্যার কারণে শ্রমিকদের নিয়মিত মজুরি পরিশোধে হিমশিম খেতে হচ্ছে। মিলে উৎপাদিত পণ্য বিক্রি না হওয়ায় এ সঙ্কট দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে পাট ব্যবসায়ীরা প্রায় ২০ কোটি টাকা পাবে। তাদের পাওনা পরিশোধ করা যাচ্ছে না। বিশ্ববাজারে পাটপণ্যের দর কমেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পাট


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ