Inqilab Logo

শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২২ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

দিশেহারা ক্রেতা

আবাসন কোম্পানির নামে প্রতারণা অসহায় রাজউক

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

দেশের রিয়েল এস্টেট ও আবাসন কোম্পানিগুলোর মধ্যে একটি বড় অংশই নির্ধারিত অর্থ ও কিস্তি পরিশোধের পরও তাদের ক্রেতাদের জমি, প্লট কিংবা ফ্লাটের পজিশন বুঝিয়ে না দিয়ে প্রতারণা করছে। এ ধরণের হাজার হাজার অভিযোগ থাকার পরও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় কোন ব্যবস্থা নিতে পারছে না।
এ অবস্থায় নির্ধারিত মূল্য পরিশোধ করা হাজারো ক্রেতা তাদের প্লট ও ফ্লাট পেতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তাদের দাবি, রাজউকসহ দেশের নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষগুলোর কাছে বর্তমানে হাজারো অভিযোগ রয়েছে। তবে তারা আইনের ফাঁক- ফোকর দেখিয়ে এসব নিষ্পত্তি এবং তাদের সম্পত্তি উদ্ধারে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
এ প্রসঙ্গে গৃহায়ন ও গনপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ শহীদ উল্লা খন্দকার ইনকিলাবকে বলেন, সরকারি নিবন্ধিত আবাসন কোম্পানি ছাড়া জমি বা প্লট নেয়া ঠিক নয়। তারপর জনগন নিচ্ছে, প্রত্যারনা শিকার হচ্ছে। মন্ত্রণালয়ে অনেক অভিযোগ রয়েছে। আমরা এগুলো তদন্তের কাজ শুরু করা হয়েছে। ভুয়া কোম্পানি একটাও থাকবে না।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আবদুর রহমান ইনকিলাবকে জানান, তাদের কাছেও এ ধরণের প্রতারণার অভিযোগ হাজার হাজার রয়েছে। অনেক কোম্পানি আছে, যাদের ক্রেতারা টাকা পরিশোধের পর ১০/১৫ বছরেও প্লট বা ফ্লাট পায়নি। তারা টাকাও তুলতে পারছেন না। এসব বন্ধ করতে রাজউক বিভিন্ন পদক্ষেপও নিয়েছে। কিন্তু তাতে তেমন সফলতা আসেনি। তিনি বলেন, আমরা বলেছি নিবন্ধিত ছাড়া কোনো কোম্পানির কাছে জমি বা প্লট নিবেন না। এসব বন্ধে রিহ্যাবের সঙ্গে আলোচনা করে রাজউক একটি কাঠামো তৈরির চেষ্টা করছে। যাতে বিক্রেতারা আর নিরীহ ক্রেতাদের ঠকাতে না পারেন। বিষয়টি খুব শিগগিরই চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে।
গৃহাযন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও রাজউকে দেয়া লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, রাজধানী ঢাকা, পার্শ্ববর্তী নারায়ণগঞ্জ, গাজিপুর, মানিকগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জের বিভিন্ন এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বর্তমানে কয়েক হাজার রিয়াল এস্টেট ও আবাসন কোম্পানি গড়ে উঠেছে। শুধু এসব কোম্পানিই নয়, বর্তমানে ঢাকা ও এর আশেপাশে বেশ কিছু আবাসন ব্যবসায়ী ও ভূমি উন্নয়ন কোম্পানি গড়ে উঠেছে- যারা একই ধরণের প্রতারণার সঙ্গে জড়িত। যাদের বিরুদ্ধে এ ধরণের অভিযোগ রয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে - স্বপ্নধারা রিয়েল এস্টেট, পদ্মা ফিউচার পার্ক, বিডি প্রোপার্টিজ, ডিভাইস সাউদ সিটি, আশালয় হাউজিং, চিয়ারফুল গ্রীন সিটি, দিশারী গ্রুপ, সিলভার গ্রীন সিটি, এশিয়ান টাউন, শান্তি নিবাস, আমেরিকান সিটি, অ্যারাবিয়ান সিটি, কানাডা সিটি, ফ্লোরিডা সিটি, সিডনি সিটি, প্রবাসী পল্লী, স্যাটেলাইট টাউন ও ইটালিয়ান সিটি। এসব কোম্পানি এখনো চমকপ্রদ বিজ্ঞাপন দিয়ে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে চলেছে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে এসব কোম্পানির নিবন্ধনের বাধ্যবাধকতা থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এগুলো শুধু কোম্পানি নিবন্ধন ও সিটি করপোরেশন বা পৌরসভা থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়েই কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ক্রেতাদের সুরক্ষা দিতে এগুলোর কোন জামানতও নেওয়া হয়না। এসব ভূমি উন্নয়ন ও আবাসন ব্যবসায়ীদের বেশিরভাগেরই নিজস্ব কোন জমি নেই। যেসব স্থানে তাদের সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে, সেখানে তাদের কোন জমি নেই।
ভুক্তভোগিরা জানান, প্লট বা ফ্ল্যাট না পেয়ে প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হয়েও কোন সুফল না পেয়ে প্রতারিত অনেক ক্রেতা চরম হতাশায় দিনাতিপাত করছেন। আইনগত সমস্যা দেখিয়ে আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট ও হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
আতিকুর রহমান, মুজতবা খন্দকার ও নুরুল ইসলাম নামের তিন ক্রেতা, যারা মালিবাগের পিপলস ডেভেলপার লিমিটেড নামে একটি হাউজিং কোম্পানি থেকে প্লট কিনে গত ছয় বছরেও পজিশন পাননি। তারা অভিযোগ করেন, ওই প্রতিষ্ঠান থেকে জমি কেনার জন্য গত ২০১০ সালে চুক্তিবদ্ধ হন। চুক্তি অনুযায়ী, ২০১০ সালে এসব প্লট বুঝিয়ে দেওয়ার কথা। কিন্তু কিস্তি পরিশোধ হওয়ার পর থেকেই কোম্পানির পক্ষ থেকে নানান তালবাহানা শুরু করা হয়। এক পর্যায়ে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হোসেন ও তার সহযোগী আব্দুল লতিফ তুষার গা-ঢাকা দেন। অফিস বন্ধ করে দেওয়ায় বর্তমানে তাদের কোন হদিসও পাওয়া যাচ্ছে না।
তারা জানান, পিপলস ডেভেলপারের আশুলিয়া প্রকল্পে প্লট কিনে প্রতারিত হওয়া ক্রেতার সংখ্যা প্রায় ৩শ’র বেশি। প্রতিষ্ঠানের কোন লোককে খুঁজে না পেয়ে বর্তমানে তারা চরম হতাশায় দিনযাপন করছেন। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য নাজমুল ও তুষারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের অফিসের বর্তমান ঠিকানা এবং কোন যোগাযোগের নম্বর পাওয়া যায়নি।
যমুনা বিল্ডার্স প্লট পারচেজার্স সোসাইটি’র সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্ণেল মোহসীন আলম ও সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসাইন এই প্রতিবেদককে বলেন, যমুনা ফেইজ ১ ও ২-এর প্রায় ৫০০ প্লটগ্রহিতা কিস্তির যাবতীয় অর্থ পরিশোধ করেও প্রায় নয় বছর ধরে প্লট পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন।
বিষয়টি নিয়ে তারা গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে হস্তক্ষেপ কামনা করে অভিযোগও করেছেন। কিন্তু কোন লাভ হয়নি। তারা এ বিষয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
যমুনা বিল্ডার্সের মহাব্যবস্থাপক (বিপণন) সাহেদ আলী ইনকিলাবকে জানান, আদালতের নির্দেশে ২০১৪ সালে এ প্রকল্পগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এসব ক্রেতা চাইলে তাদের জমা দেওয়া টাকা ফিরিয়ে নিতে পারেন। তবে এজন্য কোম্পানির হিসাব শাখায় তাদের যোগাযোগ করতে হবে।
রাজধানীর ভাটারা এলাকার গৃহবধু জোসনা বেগম অভিযোগ করেন, তিনি তার ভগ্নিপতি রেজাউল করিমসহ ২০১২ সালে স্থানীয় গার্ডিয়ান রিয়েল এস্টেট থেকে একটি ফ্লাট কেনেন। এজন্য তিনি কোম্পানিকে ২৪ লাখ টাকা পরিশোধ করেন। কিন্তু টাকা নেওয়ার পর কোম্পানির পরিচালক রেজাউল ইসলাম সোহেল, যার আসল নাম মোহাম্মদ আক্তার হোসেন, ফ্লাট বুঝিয়ে দিতে তালবাহানা শুরু করেন। তিনি ছয় বছরেও তার ফ্লাট বুঝিয়ে পাননি।
এ বিষয়ে রিহ্যাবের সভাপতি শামসুল আরেফিন ইনকিলাবকে বলেন, আবাসন ব্যবসায়ীদের দুটি সংগঠন রয়েছে। এগুলো হচ্ছে- রিহ্যাব ও বাংলাদেশ ল্যান্ড ডেভেলপার্স অ্যাসোসিয়েশন। দুটি সংগঠনই এসব অভিযোগের বিষয়গুলো দেখভাল করেন। তাদের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্যসহ কোন অভিযোগ করা হলে, কর্তৃপক্ষ অবশ্যই তদন্ত করে দেখে ব্যবস্থা নেবে। তিনি এ বিষয়ে অভিযোগকারীদের দু’টি সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আবাসন

২৮ ডিসেম্বর, ২০২১
২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০
১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ