পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইনকিলাব ডেস্ক : ইথিওপিয়ার উত্তরে টাইগ্রে ও আফার অঞ্চল প্রচ- রকম খরাকবলিত। একে ৫০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ খরা বলা হচ্ছে। ১৯৮৪ সালে প্রচ- খরার কারণে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিল। তাতে মারা গিয়েছিল ১০ লাখ ইথিওপীয়। এবারের খরা তাকেও ছাড়িয়ে গেছে।
কারো কারো মতে, পরিহার যোগ্য বিলম্বের পর এখন বিপদ বার্তা ঘোষিত হয়েছে। এখন জাতিসংঘ ও সেভ দ্য চিলড্রেনস ইথিওপিয়ার জন্য তহবিল সংগ্রহে কাজে নেমে পড়েছে। আর এবার তহবিল সংগ্রহের যুক্তি শুধু জীবন রক্ষার জন্য নয়, ইথিওপিয়ার বর্তমান উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করা এবং এ ধরনের খরা মোকাবেলায় সক্ষম হতে দেশটিকে সুযোগ দেয়া।
৩০ বছরের অল্প বেশি কিছু সময় আগে বিশ^ব্যাপী আবেদনে বহু লাখ ডলার সংগ্রহ করা হয়েছিল, বিদেশী এনজিওগুলো দুর্ভিক্ষের ত্রাণ প্রচেষ্টায় ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এবং এ ধরনের বিপর্যয় যাতে আর না ঘটে সে জন্য বহু অবকাঠামো প্রকল্প নেয়া হয়েছিল। তারপরও কি করে আবার দুর্ভিক্ষের পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে?
ইথিওপীয় সরকারের আংশিক সাফল্যের দাবি ও তার প্রতি সন্দেহের কারণে কিছু মিডিয়ায় এ ধরনের অবিশ^াস উত্থাপিত হয়েছে।
এখন ইথিওপিয়ার বৃহত্তম চ্যালেঞ্জ হল দাতা স্বল্পতা। ২০১৫ সালটি মানবিক সাহায্যের ক্ষেত্রে ভীষণ হতাশাজনক ছিল।
আন্তর্জাতিক তহবিলের ক্ষেত্রে ইথিওপিয়া যে সংকটের সম্মুখীন তার কারণ হচ্ছে সিরিয়া ও ইয়েমেনের যুদ্ধ এবং অভিবাসন সংকট। সে সাথে রয়েছে অর্থ পাওয়ার আমলাতান্ত্রিক জটিলতা যা দ্রুত পরিবর্তিত হয় না।
উন্নয়নশীল দেশগুলো পর্যাপ্ত কিছু করে না বলে পাশ্চাত্যের অভিযোগের প্রেক্ষাপটে প্রাথমিকভাবে ইথিওপিয়া নিজেই পরিস্থিতি মোকাবেলার চেষ্টা করেছে। ১৯৮৪ সালের দুর্ভিক্ষের সময় থেকে দেশটি একটি আধুনিক খাদ্যনিরাপত্তা নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে।
প্রোডাক্টিভ সেফটি নেট প্রোগ্রাম (পিএএনপি) একটি কর্ম-কল্যাণ উদ্যোগ যা প্রায় ৬০ লাখ লোককে খাদ্য বা অর্থের বিনিময়ে সরকারী অবকাঠামো প্রকল্পে কাজ করতে সক্ষম করবে।
উপরন্তু স্থানীয় প্রশাসনিক সংস্থা ওরডাসের মাধ্যমে দেশে খাদ্য রিজার্ভ ও পূর্ব সতর্কীকরণ ব্যবস্থা রয়েছে।
ইথিওপিয়ার এক্ষেত্রে প্রচেষ্টার মধ্যে আরো রয়েছে খাদ্য পরিবহনের জন্য আদ্দিস আবাবা ও জিবুতির মধ্যে একটি নতুন রেললাইন চালু যা কিনা ইথিওপিয়ায় একমাত্র রেল লাইন এবং অনাহারে মৃত্যু থেকে রক্ষা পেতে নজিরবিহীন ১৯ কোটি ২০ লাখ ডলার সাহায্য প্রদানের প্রতিশ্রুতি। ১৯৮৪ সাল থেকে দেশটির জরুরি ত্রাণ সাহায্য দেয়ার ক্ষমতা ও উপায় বিপুলভাবে পরিবর্তিত হয়েছে।
তবে এ উদ্যোগ বাধার সম্মুখীন হয়। ২০১৫ সালের জুন থেকে অক্টোবরের মধ্যে খরাকবলিত মানুষের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে ৮২ লাখে দাঁড়ায়।
এই খরার প্রচ-তা ইথিওপিয়ার নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত, কারণ এল নিনোর কারণে সাগরের পানির তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে বিশে^র কোথাও অস্বাভাবিক প্রবল বৃষ্টি বা কোথাও প্রচ- খরার সৃষ্টি করছে। পার্শ^বর্তী দেশ সোমালিয়ার ৩০ লাখ লোক শস্য হানি ও খাদ্য ঘাটতির সম্মুখীন।
তাই শেষপর্যন্ত ইথিওপিয়ার সরকার সাহায্য চেয়েছে। কিন্তু এনজিওর মধ্যকার লোকেরা বলছে যে সরকার অকারণে দেরি করেছে যেখানে ইথিওপিয়ার বিরাট অর্থনৈতিক পুনর্জাগরণের স্পন্দনটি একাই ধরে রাখার চেষ্টা চালিয়ে সরকার গত দশকে ১০ শতাংশ বার্ষিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।
প্রবৃদ্ধির এই হার ইথিওপিয়াকে বিশে^র অন্যতম দ্রুত প্রবৃদ্ধির দেশে উন্নীত করেছে, পাশাপাশি এ ধরনের সংকট মোকাবলায় সরকারের অর্থ সরবরাহের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটিয়েছে। তবে এ অর্থের বেশিরভাগই বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য প্রতিশ্রুত। যেমন ৫শ’ কোটি ডলার ব্যয় সাপেক্ষ আফ্রিকার বৃহত্তম গ্র্যান্ড ইথিওপিয়ান রেনেসাঁ ড্যাম। এর লক্ষ্য দেশের অর্থনৈতিক নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত পানি-বিদ্যুৎ উৎপাদন করা।
এই প্রবৃদ্ধির স্বাক্ষর পরিলক্ষিত হচ্ছে ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবায় যেখানে প্রতিমাসেই নতুন সুউচ্চ ভবনের কারণে দিগন্ত রেখা পাল্টে যাচ্ছে। কিন্তু এই আধুনিক নগর-শহরের বাইরে থেকে যাচ্ছে দেশের ৮০ শতাংশ মানুষ যারা নির্ভরশীল বৃষ্টিনির্ভর কৃষির উপর।
টাইগ্রে অঞ্চলে দ্বিতীয় বৃহৎ শহর আডিগ্রাটের বাইরে একটি ক্লিনিকে ১৭ বছর বয়স্কা মাইলাইট তার দু’বছরের কন্যাশিশুকে নিয়ে বসেছিল। শিশুর বাহু পেঁচিয়ে থাকা বিশেষ ধরনের ফিতায় হলুদ কথাটি লেখা ছিল যার অর্থ সে মাঝারি অপুষ্টির শিকার। মাইলাইট জানায়, সে তার পিতামহীর বাড়িতে থাকে। সেখানে পর্যাপ্ত খাবার মেলে না। শিশুটির সৈনিক পিতা তাদের ছেড়ে গেছে জানিয়ে কান্না শুরু করে সে।
যারা ইথিওপীয় সরকারের উদ্যোগকে জোরদার করতে দাতাদের অর্থায়নকৃত কর্মসূচি চালুর চেষ্টা করছে তারা বলছে যে প্রকৃতপক্ষে লোকজন অনাহারে না থাকলেও তার কাছাকাছি। এ উদ্বেগ আরো বাড়বে যদি আসছে বর্ষা ঋতুতে এল নিনো ইথিওপিয়ায় প্রভাব ফেলে।
জাতিসংঘের হিসাবে বলা হয়, এ ধরনের পরিস্থিতিতে অর্থসাহায্য বৃদ্ধি না করলে ২০১৬ সালের সালের মাঝামাঝি ইথিওপিয়ার বিপন্ন মানুষের সংখ্যা দেড়কোটিতে পৌঁছবে।
সাহায্য সংস্থাগুলো হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেছে, গত কয়েক বছরে খাদ্য নিরাপত্তা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে যে তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতি হয়েছিল, দেশের বিভিন্ন স্থানে তা এখন বাধার সম্মুখীন। জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক জরুরি শিশু তহবিল বলে, এর পরিণতি প্রজন্মের পর প্রজন্মকে প্রভাবিত করতে পারে।
খরা পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলায় ইতিমধ্যে বৈদেশিক সাহায্য এসে পৌঁছতে শুরু কেেছ। এর সাথে ইথিওপীয় সরকারের অর্থ মিলে মোট অর্থ দাঁড়িয়েছে ৩৬ কোটি ডলার। কিন্তু সাহায্য সংস্থাগুলোর মতে, যদি আসছে বর্ষা মৌসুমে এল নিনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলে তাহলে মোট জরুরি সাহায্যের অর্থের প্রয়োজন হবে ১৪০ কোটি ডলার। সূত্র আল জাজিরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।