Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বদলি আতঙ্ক

গণপূর্ত অধিদফতর

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০১ এএম

সরকারের শেষ সময়ে গনহারে বদলী শুরু হয়েছে সরকারি ভবন নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষনের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান গণপূর্ত অধিদফতরে। প্রতি ঘন্টায় বদলীর তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হচ্ছেন একজন করে কর্মকর্তা। গত দেড় মাসে (আগস্ট থেকে মধ্য সেপ্টেম্বর) ৩০ কর্মদিবসে বদলী হয়েছেন ১৫৩ জন কর্মকর্তা। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ৫ জনেরও বেশী কর্মকর্তা বদলীর তালিকায় উঠে এসেছেন। এদের মধ্যে উপ-সহকারী প্রকৌশলী থেকে শুরু করে সহকারী প্রকৌশলী, নির্বাহী প্রকৌশলী এবং তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীও রয়েছেন। গতকাল গণপূর্ত অধিদফতরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত অফিস আদেশেও তার প্রমাণ মিলেছে। এসব বদলীর অধিকাংশই বাণিজ্যিক কারণে করা হয়েছে বলে মন্ত্রণালয়ে সচিবকে অভিযোগ দিয়েছে অধিদপ্তরের বঞ্চিত কর্মচারীরা।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ শহীদ উল্লাহ খন্দকার ইনকিলাবকে বলেন, গণপূর্ত অধিদফতরে বদলী হতে পারে। যে অভিযোগ করা হয়েছে সেখানে যদি নিয়ম অনুযাীয় বদলী করা হয় তা কোন সমস্য নাই। আর যদি অনিয়মভাবে হয় তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিবকে দেয়া অভিযোগে বলা হয়, গৃহায়ন ও গনপূর্ত মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলামের চাকরি মেয়াদ ডিসেম্বর মাসে শেষ হচ্ছে। যে কারণে প্রধান প্রকৌশলী টাকার বিনিময়ে ঢাকার বাইরে প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে থাকা কর্মকর্তাদের ঢাকায় বড় বড় প্রকল্পের দায়িত্বে নিয়ে আসছেন। আবার অনেকের পোস্টিং দিচ্ছেন তাদের পছন্দ অনুযায়ী মন্ত্রীপাড়া, সংসদ, গনভবন, বঙ্গভবনের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে। আর এসব পদ ফাঁকা করতে গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় কর্মরতদের অন্যায়ভাবে সরিয়ে দিচ্ছেন অন্যত্র। তিনি টেন্ডারে অনিয়ম ও জালিয়াতি করেই সরকারের কয়েক শ’ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
অভিযোগে আরো বলা হয়, বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে এপর্যন্ত দেড় বছরে বিভিন্ন পদের দেড় হাজারেরও অধিক প্রকৌশলীকে বদলী করা হয়েছে। বাংলাদেশের কোনো সরকারি অফিসে এই সময়ে এত বদলির ঘটনা ঘটেনি। এ কারণে গণপূর্তে কর্মকর্তারা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। কয়েকজন উপ-সহকারী প্রকৌশলী জানান, সকাল হলে দুরু দুরু বুকে অফিসে যাই। আবার একই টেনশন নিয়ে প্রতিদিন অফিস শেষ করি। কখন বদলির চিঠিটা হাতে ধরিয়ে দেয়া হবে জানি না। বদলি মানেই ব্যাগ-লাগেজ গোছানো। সন্তানদের স্কুল-কলেজ নিয়েও চলে টানাপোড়েন। স্ত্রী ঢাকায় চাকরিজীবী হলে সমস্যা আরো প্রকট। সবমিলিয়ে মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে থাকতে হচ্ছে। প্রতিটি বদলির জন্য রয়েছে বড় ধরনের আর্থিক লেনদেন। এটাও আবার কয়েক ভাগে বিভক্ত। ঢাকায় যেসব এলাকায় নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজ বেশি সেসব এলাকায় বদলির জন্য নেয়া হয় ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা। মাঝারি কাজের জায়গার জন্য ১ থেকে১৫ লাখ টাকা। আর ঢাকায় থাকার জন্য নেয়া হয় ন্যূনতম ৫ লাখ টাকা। রমনা, ধানমন্ডি, শেরেবাংলা নগর ও গুলশান এলাকায় বদলির জন্য সর্বাধিক টাকা নেয়া হয় বলে জানান ভুক্তভোগিরা। বাণিজ্য করতেই ব্যাপক হারে বদলি করা হচ্ছে জানিয়ে কয়েকজন প্রকৌশলীরা বলেন, একজনকে শাস্তিস্বরূপ ঢাকার বাইরে বদলি করা হয়। আর্থিক লেনদেনে তুষ্ট হলে তাকে আবার নিয়ে আসা হয় ঢাকায়। আবার কেউ টাকা দিতে রাজি না হলে তাকে বাংলাদেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে পাঠানো হয়। মানবিক দিক বিবেচনার বিষয়টি এখানে একেবারে উপেক্ষিত থাকে।
এছাড়া গণপূর্ত অধিদফতর বাস্তবায়নাধীন বড় প্রকল্পগুলোর প্রতিটিতেই অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে শত কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়ার অভিযোগও রয়েছে প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে। সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ১ টাকা থেকে ১০০ কোটি টাকা পর্যন্ত কাজ ইজিবি টেন্ডারের মাধ্যমে দেয়ার নির্দেশনা থাকলেও বড় কাজের প্রায় সবগুলোই ম্যানুয়াল ওটিএম’র মাধ্যমে নিজস্ব ঠিকাদার সিন্ডিকেটকে দিয়ে দেয়া হয়েছে। মতিঝিল, উত্তরা, আজিমপুরসহ বিভিন্ন ডিভিশনের প্রায় তিনশ’ লিফট ক্রয়ের কাজ নিজস্ব ঠিকাদার সিন্ডিকেটকে এভাবে দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। এদিকে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত কাজও ইজিবি ছাড়াই নিজম্ব ঠিকাদার সিন্ডিকেটকে দিয়ে দেয়া হয়েছে নির্ধারিত কমিশনের মাধ্যমে।
এ বিষয়ে গণপূর্ত অধিদফতরে প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামের সাখে কথা হলে তিনি ইনকিলাবকে বলেন, আমার বিরুদ্ধে যারা অভিযোগ দিয়েছে তারাই এসব দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। আমি তাদের অনিয়ম বন্ধ করেছি। বদলী করার কথা সঠিক নয়, দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে পদোন্নতি বন্ধ ছিল। এখন পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে। তাদের পদায়ন করা হচ্ছে। সবাই ঢাকায় থাকতে চাইলেতো দিতে পারবো না। সেই কারণে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বদলি

১৬ অক্টোবর, ২০২২
৯ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ