পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : অভিভাবকদের কাছে আতঙ্ক আর ভীতির কারণে পরিণত হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। শিক্ষাদান কিংবা জ্ঞান বিতরণ নয়, যেন ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে স্কুল-কলেজগুলো। বছরের শুরু হলেই দুর্ভাবনায় পড়ে যান শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা। চিন্তিত হয়ে পড়েন, এবার সন্তানের জন্য বাড়তি কত টাকা গুনতে হবে? প্রতিবাদ কিংবা অভিযোগ করেও কোনো কাজ হয় না। আলোচনা, আন্দোলন, স্মারকলিপি প্রদান করলেও কমেনি বাড়তি ফি আদায়। ফেরত দেয়া হয়নি আদায় করা অতিরিক্ত অর্থ। শিক্ষামন্ত্রী ও মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনাও মেনেছে খুব কম প্রতিষ্ঠান। বরং বারবার নিয়ম লঙ্ঘন করে এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েই শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে নামিদামি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানগুলো। বাড়তি অর্থ আদায় এবং অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করলেও কেবল নোটিশের মাধ্যমেই পার পেয়ে যাচ্ছে। ফলে পরের বছর আবারও ঘটছে এর পুনরাবৃত্তি। রাজধানীসহ সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামের সাথে নামিদামি তকমাটি লাগলেই শুরু হয় লাগামছাড়া বাণিজ্য। বছরের শুরু হলেই একেকটি খাতের অজুহাতে শিক্ষার্থীদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে নানা রকম ফি। অতিরিক্ত এই ফি আদায়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে থাকা কর্তাব্যক্তি কিংবা শিক্ষকরাও আশ্রয় নেন নিষ্ঠুর আচরণের। বাড়তি ফি দিতে না পারলে প্রতিষ্ঠান থেকে বহিষ্কারের ঘটনাও ঘটছে অহরহ। প্রতিবাদ করলেও শিক্ষার্থীকে ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে ট্রান্সফার সার্টিফিকেট (টিসি)। শুধু ফি বৃদ্ধিই নয়, শিক্ষার্থী ভর্তি নিয়েও নামিদামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অনিয়ম বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে গেছে। মাত্রাতিরিক্ত বাণিজ্য আর অনিয়মের সাথে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাবরবার শোকজ করা হলেও আমলে নিচ্ছে না অনেক প্রতিষ্ঠান। ফলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আবারও ফি নির্ধারণ করে দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ গতকাল (রোববার) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বাড়তি ফি আদায় করা বেসরকারি ১২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক ও পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের নিয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বাড়তি অর্থ ফেরত দেয়ার বিষয়ে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান এবং পর্ষদের সদস্যরা কোনো কথা না বলে বরং ওই অর্থ আদায়ের পক্ষেই সাফাই গেয়েছেন এবং হালাল করার চেষ্টা করেছেন বলে বৈঠক সূত্রে জানা যায়। তবে শিক্ষা সচিব মোঃ সোহরাব হোসাইন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর বাড়তি অর্থ আদায়ের বিষয়টি স্পষ্টভাবেই উল্লেখ করেছেন এবং তা সমন্বয়ের কথা জানান। বৈঠক শেষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অযৌক্তিক ফি ও বেতন বৃদ্ধির বিষয়ে শিক্ষা সচিব মোঃ সোহরাব হোসাইন বলেন, অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমন ধরনের বেতন নির্ধারণ করে রেখেছে, যেটা অনেক বেশি। এটা সঠিকভাবে হয়নি। এ জন্য আগে শিক্ষকদের বেতন পুনর্নিধারণ করে সে অনুযায়ী ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের টিউশন ফির ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। তবে এ ক্ষেত্রে খুব বেশি পরিবর্তনের প্রয়োজন হবে না। কারণ, অনেকেই ইতোমধ্যে বেশি টাকা নিয়ে রেখেছেন, সেটাও সমন্বয় করা হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর নামিদামি ১২টি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির সদস্যদের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ডাকা হয়। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল ও কলেজ, ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজ, মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, টিঅ্যান্ডটি উচ্চ বিদ্যালয়, ফয়জুর রহমান আইডিয়াল ইনস্টিটিউট, খিলগাঁও মডেল হাইস্কুল, লালবাগ ওয়েস্টএন্ড হাইস্কুল, মগবাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল, বিএএফ শাহীন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বাড্ডা আলাতুন্নেছা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং শেরেবাংলা রেলওয়ে স্কুল অ্যান্ড কলেজ। এসব প্রতিষ্ঠানকে প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ভর্তিতে বাড়তি ফি আদায়, এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে অতিরিক্ত ফিসহ অন্যান্য অর্থ আদায়ের অভিযোগে হাজির হয়ে তাদের এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়। শিক্ষা সচিব সোহরাব হোসাইনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সভায় প্রতিষ্ঠান প্রধান ও পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হলে তারা অনুতপ্ত হওয়ার পরিবর্তে বাড়তি অর্থ আদায়কে হালাল করার জন্য নিজেদের পক্ষে নানা রকম যুক্তি তুলে ধরেন বলে বৈঠকে উপস্থিত একাধিক ব্যক্তি জানান। কেবল এই ১২ প্রতিষ্ঠানই নয়, এই বছরই এক হাজারের বেশি প্রতিষ্ঠানকে অতিরিক্ত ফি আদায়ের জন্য শোকজ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল এন্ড কলেজে অতিরিক্ত ফি আদায়ের বিরুদ্ধে রাজপথে আন্দোলনে পর্যন্ত নামেন অভিভাবকরা। এর পরপরই অতিরিক্ত ফি নিয়ে অভিভাবকদের আন্দোলনে উত্তাল হয়ে ওঠে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বড় শহরগুলো। অভিভাবকরা অভিযোগ করে বলেন, অভিভাবক, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্টদের সাথে কোনো আলোচনা ছাড়াই প্রতিবছর শুরুতেই বাড়ানো হচ্ছে বেতন ও ফি। এবার তা শতভাগ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। হাইকোর্টের নির্দেশনা অমান্য করেই আদায় করা হয় এসএসসি’র ফরম পূরণে বাড়তি ফি। শুধু বেতন বা ফি বৃদ্ধিই নয়, ভর্তির ক্ষেত্রেই নানা অনিয়ম ও অনৈতিক কর্মকা-ে জড়িত হয়ে পড়ে প্রতিষ্ঠানগুলো। এ নিয়ে সরকারের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকলেও তা মানছে না কোন প্রতিষ্ঠানই। দেশের নামিদামি প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই নীতিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিজেদের ইচ্ছেমতো ফি নির্ধারণ করছে। শুধু অভিভাবকদের প্রতিবাদই নয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা দেয়ার পরও এখনো কোন প্রতিষ্ঠান বাড়তি ফি কমায়নি। ফেরত দেয়নি অতিরিক্ত আদায় করা অর্থও। অতিরিক্ত ফি ফেরত দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে শোকজ এবং গত ২৫ ফেব্রুয়ারি নুরুল ইসলাম নাহিদ সাত দিনের সময় বেঁধে দেন। তাতেও অনেক প্রতিষ্ঠান অর্থ ফেরত দেয়নি। এমনকি গতকাল বৈঠকে অংশ নেয়া ১২ প্রতিষ্ঠানই কোন অর্থ ফেরত দেয়নি।
মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এসএসসির ফরম পূরণের সময় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করায় এবছরই এক হাজার ২০৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে শোকজ (কারণ দর্শানো নোটিশ) করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এসব প্রতিষ্ঠানকে অতিরিক্ত আদায় করা অর্থের বিষয়ে নোটিশের জবাব দেয়ার জন্য ২৫ মার্চ পর্যন্ত সময়ও বেঁধে দেয়া হয়। এমনকি এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও সে সময় জানিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। ২০১৫ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফরম পূরণের সময় তিন হাজার ৩৮টি প্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার পর ৮৩০টি প্রতিষ্ঠান আদায় করা অতিরিক্ত অর্থ ফেরত দেয়, ৯৯৯টি প্রতিষ্ঠান জানিয়েছিল তারা বোর্ডের নির্ধারিত ফি নিয়েছে। এর অতিরিক্ত কোন অর্থ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা হয়নি। আর এক হাজার ২০৯টি প্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার কোনো জবাব দেয়নি।
চলতি বছরের শুরুতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বেতন, ভর্তি ফিসহ নানা খাতে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে। বর্ধিত ফি প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা। এরপরই শিক্ষা মন্ত্রণালয় অতিরিক্ত ফি আদায় করা প্রতিষ্ঠানের তালিকা করার জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেয়। নির্দেশনা অনুযায়ি অধিদপ্তর একটি প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদন পাওয়ার পর নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, অনিয়ম করে কেউ রেহাই পাবে না। শুধু ফি আদায় নয়, ভর্তির ক্ষেত্রেও অনিয়ম করে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ। ‘কিছুসংখ্যক’ অতিরিক্ত ভর্তির কথা বলা হলেও বিজ্ঞাপিত পদের চেয়ে ২ হাজারেরও বেশি অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। নীতিমালা লঙ্ঘন করে টাকার বিনিময়ে ও তদবিরের মাধ্যমে এসব শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়।
************
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।