পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। ওই দিনই তাকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পরিত্যাক্ত কারাগারে পাঠানো হয়। এখন পর্যন্ত তিনি সেখানেই রয়েছেন। স্যাঁতস্যাঁতে আলো-বাতাসহীন ঘরে বসবাসের কারণে কারাবন্দি বেগম খালেদা জিয়া শারীরিকভাবে ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। শরীরিক নানা সমস্যার কারণে আগে থেকেই হাটা চলায় সমস্যা হচ্ছিল ৭৩ বছর বয়সী বয়স্কা এই মহিলার। তবে এখন এসব সমস্যা আরও জটিল আকার ধারণ করেছে। দীর্ঘদিন ধরে যথাযথ চিকিৎসা না হওয়ায়, এখন হাটা চলা তো দূরের কথা তিনি একা একা বিছানা থেকে ওঠা-বসাও করতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন তার পরিবারের সদস্যরা। গত শুক্রবার কারাগারে খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাত করেন তার পরিবারের সদস্যরা। এদের মধ্যে ছিলেন ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার, ভাবি কানিজ ফাতেমা, ভাতিজা অভিক ইস্কান্দার, অনিক ইস্কান্দার, বোন সেলিমা ইসলাম, ভাগ্নে ডাঃ মামুন। এর আগে গত বুধবার খালেদা জিয়ার আইনজীবীরাও তার সাথে কারাগারের ভেতরে সাক্ষাত করেন। ওই দিন আইনজীবীরা এবং পরবর্তীতে পরিবারের সদস্যরাও খালেদা জিয়ার অসুস্থতার কথা জানান।
খালেদা জিয়ার পরিবারের এক সদস্য জানান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী এখন ভীষণ অসুস্থ পড়েছেন। একা একা চলা ফেরা তো দূরের কথা তিনি বিছানা থেকে উঠে বসতেও পারছেন না। তাকে একজন সহায়কের সাহায্যে উঠে বসতে হচ্ছে এবং শোয়াতে হচ্ছে। এভাবে বিনা চিকিৎসায় চলতে থাকলে অবস্থা কি দাঁড়াবে তা অকল্পনীয়। তার শারীরিক অবস্থা দেখলে চোখের পানি ধরে রাখা যায় না। অন্যদিকে আইনজীবীরাও দেখা করে এসে খালেদা জিয়ার গুরুতর অসুস্থতার কথা তুলে ধরেন। আইনজীবী এড. সানাউল্লাহ মিয়া জানান, গত সপ্তাহে খালেদা জিয়া বাথরুমে পড়ে গিয়েছিলেন। তিনি হাটা চলা করতে পারছেন না, একজনের সহায়তা ছাড়া কিছুই করতে পারছেন না। তিনি গতবছর লন্ডনে চিকিৎসা করে এসেছেন। তার অসুস্থতার জন্য নিয়মিত ডাক্তারদের পরামর্শ জরুরি। কিন্তু এটুকু মৌলিক অধিকারও তিনি পাচ্ছেন না।
পরিবারের সদস্য ও আইনজীবীরা জানান, অসুস্থ বেগম খালেদা জিয়া চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। তাঁকে যখন অন্যায়ভাবে সাজা দিয়ে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয় তখন পূর্বের চিকিৎসাধীন নিয়ন্ত্রণে থাকা রোগগুলি ছাড়া অসুস্থ ছিলেন না। তাহলে এই পরিস্থিতি হলো কেন? কর্তৃপক্ষের অবহেলা, হয়রানী, অস্বাস্থ্যকর স্যাঁতসেতে বদ্ধ পরিবেশের মধ্যে তাঁকে দিনযাপন করতে হচ্ছে, যা একটি চরম নির্যাতন। এই নির্যাতন সহ্য করতে যেয়ে তাঁর পূর্বের অসুস্থতা এখন আরও গুরুতর রূপ ধারণ করেছে। কর্তৃপক্ষ তাঁকে সুচিকিৎসা হতে বঞ্চিত করেছে। তাঁকে বিশেষায়িত হাসপাতালের সুবিধা ও ব্যক্তিগত বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের দ্বারা নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা থেকেও বঞ্চিত করেছে কর্তৃপক্ষ।
এর আগে খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ৯ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সাথে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সহ সিনিয় নেতারা। ওই বৈঠকে বিএনপি নেতারা খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের সমন্বয়ে মেডিকেল বোর্ড গঠন এবং বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসার দাবি জানান। বিএনপি নেতাদের আশ্বস্ত করার পর ১২ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। যে বোর্ডের সকল সদস্য সরকার দলীয় চিকিৎসক বলে অভিযোগ করে আসছে বিএনপি। ওই বোর্ড খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে ১৬ সেপ্টেম্বর রিপোর্ট দেয় এবং পরামর্শে বলে তিনি অসুস্থ না কিন্তু হাসপাতালে ভর্তি করতে বলা হয়।
বিএনপি নেতারা অভিযোগ করে বলেন, দল ও পরিবারের পক্ষ থেকে বারবার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের সমন্বয়ে মেডিকেল বোর্ড গঠনের দাবিকেও অগ্রাহ্য করা হয়েছে। সরকারীদলের সমর্থক এবং আওয়ামী রাজনীতিতে সক্রিয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসকদের দিয়ে মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। ওই বোর্ড দেশনেত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার পরে স্ববিরোধী বক্তব্য রেখেছেন। একদিকে তারা বলেছেন বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা গুরুতর নয়, আবার বলেছেন, তাঁর আর্থারাইটিসের ব্যথা, ফ্রোজেন শোল্ডার, হাত নড়াচড়া করতে পারেন না। হৃস্ট জয়েন্ট ফুলে গেছে, সার্ভাইক্যাল স্পন্ডিলোসিস এর জন্য কাঁধে প্রচন্ড ব্যথা, এই ব্যথা হাত পর্যন্ত রেডিয়েট করে। হিপ-জয়েন্টেও ব্যথার মাত্রা প্রচন্ড। ফলে শরীর অনেক অসুস্থ, তিনি পা তুলে ঠিক মতো হাঁটতেও পারেন না। বিএসএমএমইউ অথবা বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, সরকারি মেডিকেল বোর্ডের বক্তব্য অনুযায়ী বেগম জিয়া গুরুতর রোগে অসুস্থ নন, তাহলে তারা কেন হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দিলেন? বোর্ড বিএসএমএমইউ অথবা বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দিয়েছেন। বেগম জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে যেন এক প্যারাডক্স তৈরী করা হচ্ছে। তিনি বলেন, সরকার বিনা চিকিৎসায় খালেদা জিয়াকে কারাগারে নির্যাতন করছে আর এর প্রতি সমর্থন জানিয়ে রিপোর্ট ও পরামর্শ দিয়েছে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ও সরকার দলীয় চিকিৎসকদের মেডিকেল বোর্ড।
যদিও এই বোর্ড গঠন করে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা দেয়ার বিষয়টি বেআইনি বলেছেন বাংলাদেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বিখ্যাত চিকিৎসক ডাঃ এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। তিনি ২২ সেপ্টেম্বর জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সমাবেশে বলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে যে মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে এটা তার চিকিৎসা করতে পারে না। আমি কোন চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নিব, বা নিব না, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার অধিকার আমার আছে। মেডিকেল আইন অনুযায়ি আমার অনুমতি ছাড়া, আমি যেই চিকিৎসককে অনুমতি দেয়নি এমন কোন ডাক্তার আমার গায়ে হাত দিতে পারে না, আমার ইতিহাস দেখতে পারে না, আমার শারীরিক রিপোর্ট দেখতে পারে না। কারণ আমার শারীরিক রিপোর্ট আমার গোপনীয় বিষয়। আমার অনুমতি ছাড়া এটি কেউ দেখতে পারে না। কিন্তু এটি খালেদা জিয়ার সাথে করা হয়েছে। এর জন্য একদিন সরকারসহ সংশ্লিষ্টদেরকে জবাব দিতে হবে।
বিএসএমএমইউতে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা যে সুপারিশ করেছেন তাকে হাস্যকর বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এড. আব্দুস সালাম আজাদ। তিনি বলেন, যে হাসপাতালে একজন রোগী সমস্যা থাকায় একটি কিডনি ফেলে দেয়ার জন্য অপারেশন করাতে গিয়েছিলেন কিন্তু ডাক্তার দুটি কিডনিই ফেলে দিয়েছেন। যে ডাক্তার একটি কিডনি ফেলতে গিয়ে দুটিই কেটে ফেলেছেন তিনি ওই হাসপাতালে ছোট খাটো ডাক্তার নয়, তিনি একজন প্রফেসর। যে হাসপাতালে সরকার দলীয় চিকিৎসকরা এ ধরণের অপচিকিৎসা দেন সেই হাসপাতালে বেগম খালেদা জিয়ার কি চিকিৎসা হবে সেটি অনুমান করা খুব কঠিন নয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।