Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পাসপোর্ট সুবিধা দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে সরকার কাজ করছে : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ২৫ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকার ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট সুবিধা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে অব্যাহত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, পাসপোর্টসহ নিরাপদ ভ্রমণ ডকুমেন্ট চালুর মাধ্যমে দেশের ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট পদ্ধতি সম্পূর্ণ আধুনিক করে তুলতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। কারণ হয়রানি ছাড়া পাসপোর্ট পাওয়া প্রতিটি নাগরিকের অধিকার। উন্নত প্রযুক্তির ইলেকট্রনিক পাসপোট তৈরির পরিকল্পনার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার লক্ষ্যে এ পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। ইলেকট্রনিক পাসপোর্টও আমরা ইনশাল্লাহ তৈরি করব।
গতকাল রোববার আগারগাঁওয়ে ডিপার্টমেন্ট অব ইমিগ্রেশন অ্যান্ড পাসপোর্ট অফিসে পাসপোর্ট সেবা সপ্তাহ ২০১৬ এবং বিভাগীয় ও আঞ্চলিক ১০টি পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের নবনির্মিত ভবন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন। এই খাতকে সম্পূর্ণ ডিজিটাল করার ক্ষেত্রে সরকার গত সাত বছরে অসামান্য সাফল্য অর্জন করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইলেকট্রনিক পাসপোট চালু হওয়ার পরে পাসপোর্ট ইস্যুতে প্রতারণার অবসান ঘটবে।
শেখ হাসিনা বলেন, পাসপোর্ট হলো একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের প্রতীক। এটি জাতির মর্যাদা বহন করে। হয়রানি ছাড়া পাসপোর্ট পাওয়া প্রতিটি নাগরিকের অধিকার। এ ক্ষেত্রে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অফিস নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে পাসপোর্ট সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে অব্যাহত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রতিটি জেলায় একটি করে পাসপোর্ট অফিস থাকবে। তিনি আশা করেন, নতুন উদ্বোধন করা পাসপোর্ট অফিস জনগণের দোরগোড়ায় উন্নত সেবা পৌঁছে দিতে সহায়ক হবে।
নতুন এই পাসপোর্ট অফিসগুলো হলোÑ ঢাকা বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস এবং আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসগুলো হলো কিশোরগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, পটুয়াখালি, ফেনী, মুন্সীগঞ্জ, কুষ্টিয়া, পাবনা ও দিনাজপুর। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক এমপি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোজাম্মেল হক খান এবং ডিআইপির মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাসুদ রেজওয়ান অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
শেখ হাসিনা এ সময় সারাদেশে সাড়ে পাঁচ হাজারেরও বেশি ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার গড়ে তোলা এবং সেখান থেকে মানুষের সেবা গ্রহণের কথা উল্লেখ করেন। একই সঙ্গে সেবা আরও বাড়ানোর পরিকল্পনার কথাও জানান।
তিনি বলেন, সারা বাংলাদেশে ডিজিটাল সেন্টার করে দিয়েছি। কাজেই ওই ডিজিটাল সেন্টারে গিয়েই মানুষ তার পাসপোর্টের আবেদন করতে পারবে, সেইভাবে সমস্ত দেশে একটা নেটওয়ার্ক তৈরি করে.. এই ডিজিটাল ব্যবস্থাটার মধ্যেই মানুষ তার সেবাটা যেন পেতে পারে সে ব্যবস্থা করে যাচ্ছি। এটা আরও দ্রুত কার্যকর হবে।
আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সুপারিশ অনুযায়ী বাংলাদেশে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) ও মেশিন রিডেবল ভিসা (এমআরভি) প্রবর্তনের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, তার নেতৃত্বাধীন সরকারের সময় ২০১০ সাল থেকে এমআরপি কার্যক্রম হাতে নেয়া হয় এবং ‘পর্যায়ক্রমিকভাবে’ তা বাস্তবায়ন করা হয়।
আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাতে না পারায় পূর্ববর্তী সরকারগুলোর সমালোচনা করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা এবং প্রযুক্তির ব্যবহার; এটার জন্য যে পদক্ষেপ নেয়া, অত্যন্ত দুঃখের বিষয় ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত যারা ক্ষমতায় তারা এরকম পদক্ষেপই নেয়নি। আমরা ক্ষমতায় এসেই এসব বিষয়ে পদক্ষেপ নেই, বলেন তিনি। বর্তমানে বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের ৬৫টি মিশনে পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস খোলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এমআরপি নিয়ে গণমাধ্যমের ভূমিকার সমালোচনাও করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এখন যে আমরা সব করে ফেললাম এটা নিয়ে আবার খুব বেশি লেখালেখি করতে দেখি না। যখন একটু খুঁত পায় তখন খুব বড় করে লেখে। কিন্তু ওইটে যখন সংশোধন বা কাজ করে ফেলি তখন লেখায় একটু কার্পণ্য থাকে। দুঃখ প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, অনেক মিডিয়া বিষয়টি নিয়ে অনেক হতাশাজনক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। কিন্তু এ প্রকল্পে ব্যাপকসংখ্যক পাসপোর্ট দেয়ার পরও মিডিয়া এ নিয়ে কোনো ইতিবাচক প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। তাঁর সরকারের আমলে মিডিয়ার উন্নতির কথা উল্লেখ করে তিনি আশা প্রকাশ করেন, মিডিয়ায় সরকারের সমালোচনার পাশাপাশি সাফল্যের প্রতিবেদনও প্রকাশ করবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৩৩টি ইমিগ্রেশন চেক পয়েন্ট এবং ৬৫টি পাসপোর্ট ও ভিসা উইং খোলা ছাড়াও তাঁর সরকার প্রত্যেক জেলায় একটি করে পাসপোর্ট অফিস স্থাপন করেছে। এই অধিদপ্তরের লোকবল ৩৯৭ থেকে ১ হাজার ১৮৪ জনে উন্নীত করা হয়েছে।
ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট খাতের উন্নয়নে নেয়া পদক্ষেপ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে যেসব জেলা থেকে বেশি মানুষ বিদেশে যায়, যেসব স্থানে পাসপোট সেবা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা নেয় তার সরকার। এ পর্যন্ত এক ১ কোটি ৪০ লাখ মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট এবং ৩ লাখ ২৬ হাজার মেশিন রিডেবল ভিসা দিয়েছে। এটি একটি যুগান্তকারী ঘটনা। অনেকে এই পদক্ষেপের সম্ভাব্যতা নিয়ে সন্ধিহান ছিলেন। কিন্তু পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরলস প্রচেষ্টায় এ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়েছে।
শেখ হাসিনা তার নেতৃত্বাধীন সরকারের সময় বিভিন্ন উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরেন এবং বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের পর যারা রাষ্ট্রক্ষমতা ‘দখল’ করেছিলেন তাদের সমালোচনা করেন। ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টের পর যারা ক্ষমতায় এসেছিল তারা নিজেদের ভাগ্য গড়তে যতটা ব্যস্ত ছিল, মানুষের ভাগ্য গড়তে ততটা পদক্ষেপ নেয়নি। দেশের বিভিন্ন স্থানে পাসপোর্ট অফিস স্থাপন ও জনবল বৃদ্ধির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যখন থেকেই ক্ষমতায় এসেছি তখন থেকেই সব এলাকায় পাসপোর্ট অফিস তৈরির কাজ করে যাচ্ছি। পাকিস্তান আমলে পাসপোর্ট পাওয়ার ‘ভোগান্তি’ ও ‘বঞ্চনার’ কথাও তুলে ধরেন তিনি।
জনসংখ্যার অর্ধেক নারী, এ জন্য নারীর ক্ষমতায়ন গুরুত্বপূর্ণ :
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেরেবাংলা নগর আদর্শ মহিলা কলেজের নবনির্মিত একাডেমি ভবন উদ্বোধন করেন। এ অনুষ্ঠানে ভাষণদানকালে তিনি শিক্ষা, বিশেষ করে নারীশিক্ষা ও ক্ষমতায়নে তার সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, জনসংখ্যার অর্ধেক হচ্ছে নারী। এ জন্য নারীর ক্ষমতায়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বেসামরিক প্রশাসন ও বিচার বিভাগসহ সব ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। অর্থনৈতিক মুক্তির প্রধান হাতিয়ার ‘ শিক্ষা’র কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বাস্তবতা থেকে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পর শিক্ষার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন। শিক্ষিত সমাজগঠনের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক ও অবৈতনিক করেছেন। শেখ হাসিনা কলেজটির জন্য আটতলাবিশিষ্ট একটি ভবন নির্মাণের ঘোষণা দেন। তিনি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানসহ অন্যরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পাসপোর্ট সুবিধা দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে সরকার কাজ করছে : প্রধানমন্ত্রী
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ