পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইনকিলাব ডেস্ক : ইসলাম ধর্মকে যারা বিকৃত করছে তাদেরকে সমাজের একটি ক্ষুদ্র অংশ হিসেবে বর্ণনা করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে চরমপন্থা মোকাবেলায় আমাদের মধ্যে বৃহত্তর ঐক্য রয়েছে যেখানে মুসলিম-আমেরিকানরা ঐতিহাসিকভাবে আমাদের সমাজেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ। তিনি বলেন, ইসলামবিদ্বেষ কেবল ভুলই নয়, বাস্তবিক অর্থে এটা আত্মপরাজয়মূলক আচরণও। তিনি বলেন, মুসলমানদের সম্পর্কে ভাষা ব্যবহারে সতর্ক হতে হবে এবং লোকজনের ধর্মবিশ্বাসের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের কথা বলেন তিনি। লন্ডনে তরুণ সমাজের সঙ্গে মতবিনিময়কালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট এই মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠানে তিনি তরুণদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
নিরাপত্তা ও মুসলমানদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে ওবামা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মতো বৈচিত্র্যপূর্ণ সমাজগুলোতে জনগণকে নিরাপদ রাখা এবং সন্ত্রাসী হামলা প্রতিরোধ করা আমাদের অন্যতম একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা হতাশাবাদ ও সবকিছুতে দোষ খুঁজে বেড়ানোর সংস্কৃতি প্রত্যাখ্যান করার জন্য তরুণ সমাজের প্রতি আহ্বান জানান। কিভাবে অগ্রগতি অর্জন সম্ভব এবং সমস্যার সমাধান করা যায় সে সম্পর্কে জানার জন্যও তিনি তাদের প্রতি আহ্বান জানান।
মতবিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ইতিহাসের অধিকতর আশাবাদী ও সুদূরপ্রসারী দৃষ্টিভঙ্গি তরুণ সমাজকে গ্রহণ করতে হবে। এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট গ্লোবাল থিয়েটার পরিদর্শন করেন এবং হ্যামলেট নাটকের অভিনয় প্রত্যক্ষ করেন।
তরুণদের উদ্দেশে তিনি বলেন, তোমাদের মধ্যে যদি কেউ একটি ইস্যু নিয়ে কাজ শুরু করে তাহলে তাকে গভীর মনোযোগের সঙ্গে করতে হবে। ইস্যুটির সমাধান এক বছরে না হলেও হতাশ হবে না। প্রচেষ্টা এবং আশা ছাড়বে না। তিনি বলেন, ৫ বছরেও যদি দারিদ্র্য নির্মূল করা না যায় এবং জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য আমাদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের সবগুলো নিষ্পত্তি না হলেও কখনো হতাশাবাদিতায় নিজেকে সমর্পণ করবে না। অগ্রগতি হাতের মুঠোর বিষয় নয়, এর জন্য অবশ্যই দীর্ঘমেয়াদি লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। ওবামা তরুণ সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে তার এই আলাপচারিতাকে উৎসাহব্যঞ্জক বলে বর্ণনা করে বলেন, এতে তিনি বেশ কিছু নতুন ধারণা পেয়েছেন।
রাজনৈতিক বিরোধীদের সঙ্গে কাজ করা এবং মধ্যপন্থা খুঁজে বের করতে তার দক্ষতা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, যেসব লোক শুধু আপনার কথায় সায় দেয় তাদের সঙ্গে কেবল সময় কাটালে আপনি আপনার অভিমতের প্রতি আরো বেশি একরোখা হয়ে উঠতে পারেন। কিন্তু যারা সব বিষয়ে আপনার সঙ্গে একমত নন তাদের খুঁজে বের করুন। তাতে আপনি সমঝোতার ব্যাপারে শিখতে পারেন। সমঝোতা মানে আত্মসমর্পণ নয়। নিজের বিশ্বাস বজায় রেখেও অন্যের সঙ্গে সমঝোতা গড়ে তোলা যায়।
লন্ডন সফরকালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ও বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিনের সঙ্গেও বৈঠকে মিলিত হন। সফরের সময় ওবামা ইইউ ইস্যু নিয়েও প্রকাশ্যে বক্তব্য রাখেন। ব্রিটেন ইইউতে থাকবে কি না সে বিষয়ে আগামী ২৩ জুন গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। ব্রিটেনের উচিত ইইউতে থাকা ওবামার এই প্রকাশ্য মন্তব্য ব্রিটেনের অনেক নাগরিকই ভালোভাবে নেয়নি। তারা এটাকে ব্রিটেনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখছে।
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট সিরিয়ায় মার্কিন স্থলবাহিনী মোতায়েনের কথা নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, কেবল সামরিক প্রচেষ্টা দেশটির সমস্যার সমাধান করতে পারবে না। বিবিসিকে তিনি বলেন, আসাদ সরকারকে উৎখাতে সিরিয়ায় স্থলবাহিনী পাঠানো যুক্তরাষ্ট্র বা ব্রিটেনের জন্য ভুল হবে।
ওবামা আরো বলেন, ক্ষমতায় তার শেষ নয় মাস সময়ে তথাকথিত ইসলামিক স্টেট ‘আইএসকে’ পরাজিত করা যাবে এটা তিনি মনে করেন না। তবে তাদের অভিযানের পরিধি ধীরে ধীরে সংকুচিত করতে পারি।
বিবিসির সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, সিরিয়ার সহজ সমাধান আছে বলে তিনি মনে করেন না। সিরিয়ার দীর্ঘমেয়াদি সমস্যার সমাধান করতে হলে কেবল সামরিক সমাধান একমাত্র পথ নয় এবং আমরা অবশ্যই সেখানে স্থলবাহিনী মোতায়েন করছি না। তিনি বলেন, রাকার মতো অঞ্চলগুলোতে আইএস টার্গেটসমূহে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট বাহিনী বিমান হামলা অব্যাহত থাকবে এবং জোটের চেষ্টা হচ্ছে তাদেরকে সেখানে বিভিন্ন অংশে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা এবং ইউরোপে বিদেশী যোদ্ধা পাঠানোর চেষ্টা থেকে তাদের বাধা দেয়ার উদ্দেশ্যে তাদেরকে সেখানেই আটকে রাখা।
তিনি বলেন, আগামী নয় মাসে আইএস নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে এটা আমি মনে করি না। তিনি বলেন, চরমপন্থীদের যদি একটি পকেটও থাকে এবং তারা নিজেরা যদি আত্মঘাতী হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকে তাহলে তারা আমাদের অনেক শহরে এখনো ভয়ঙ্কর প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে পারে। তবে আমি মনে করি তাদের অভিযানের পরিধি ধীরে ধীরে সংকুচিত করে ফেলতে পারি।
ওবামা আবারও সতর্ক করে দেন যে, জুনে গণভোটে ইইউ থেকে বেরিয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি আলোচনায় ব্রিটেনের ১০ বছর সময় লাগতে পারে।
ওবামা লন্ডনে তার তিন দিনের সফর শেষে গতকাল জার্মানির হ্যানেভার পৌঁছেছেন। সেখানে তিনি বিতর্কিত ট্রান্সআটলান্টিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ অংশীদারিত্ব (টিটিআইপি) চুক্তির প্রতি জোরালে সমর্থনের আশা করছেন। হ্যানোভারে তিনি এবং জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল বিশ্বের বৃহত্তম শিল্প প্রযুক্তি বাণিজ্য মেলা উদ্বোধন করবেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, সিরিয়ায় একটি অর্ন্তবর্তী সরকার প্রতিষ্ঠায় আলোচনার টেবিলে বসাতে রাশিয়া, ইরান ও মধ্যপন্থী বিরোধী গ্রুপগুলোসহ সকল পক্ষের ওপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় চাপ অব্যাহত রাখবে। ওবামা অবশ্য বলেন, এটা খুব কঠিন কাজ।
যেসব দেশের পার্লামেন্ট সিরিয়ায় ব্যবস্থা গ্রহণকে অনুমোদন করেনি অথচ তারা এখনো চাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র এ ব্যাপারে কিছু করুক ওবামা সেসব দেশেরও সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, আপনি দুই দিকেই খেলতে পারেন না। সূত্র : বিবিসি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।