Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নারায়ণগঞ্জে জাহাজী শ্রমিক-কর্মচারীদের বিক্ষোভ

প্রকাশের সময় : ২৫ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নারায়ণগঞ্জ থেকে স্টাফ রিপোর্টার : নৌযানে কর্মরত সকল জাহাজী শ্রমিক কর্মচারীদের জন্য সর্বনিম্ন মজুরী ১১ হাজার টাকা নির্ধারণ ও গ্রহণযোগ্য পে-স্কেল ঘোষণা ছাড়া কর্মবিরতি প্রত্যাহারের বিষয়ে সমস্বরে ‘না’ শব্দটি উচ্চারণ করেছে বাংলাদেশ জাহাজী শ্রমিক ফেডারেশনের নেতাকর্মীরা। রোববার বিকেলে প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে এ দাবি জানান নৌ শ্রমিকরা। এর আগে শহরের ৫ নং সারঘাট এলাকায় অবস্থিত সংগঠনটির জেলা কার্যালয়ের অফিস থেকে বাংলাদেশ জাহাজী শ্রমিক ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক সবুজ শিকদারের নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রেসক্লাবের সামনে সমবেত হয়। সমাবেশ শেষে আবারো মিছিল বের করে নেতাকর্মীরা।
বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি আইনুল হোসেন উত্তমের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জাহাজী শ্রমিক ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক সবুজ শিকদার, ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল ওয়াহিদ মাষ্টার, জাকির হোসেন চুন্নু মাষ্টার, সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি সরদার আলমগীর মাষ্টার, কার্যকরী সভাপতি নিজামউদ্দিন খান, যুগ্ম সম্পাদক আক্তার হোসেন, ডেমরা শাখার সভাপতি জাকির হোসেন, নারায়ণগঞ্জ শাখার নেতা কবির হোসেন, কাওসার আহমেদ, পান্না মিয়া প্রমুখ।
সমাবেশে সবুজ শিকদার বলেন, আজকে অনেক মালিকরা একটি নৌযান থেকে একাধিক নৌযানের মালিক বনে গিয়েছে। অথচ শ্রমিকরা মানবেতর জীবনযাপন করে চলেছে। আজকে নৌপথে বেসরকারী শ্রমিকরা যে মজুরী পান তাতে পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। আজকে আমাদের অনেক সুকানী ভাই সকালের নাস্তা দুপুরে আর দুপুরের খাবার রাতে খেয়ে জীবনযাপন করছে। তার উপর নদীপথে ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজী, মারধরের শিকার হচ্ছে। নদীর মধ্যে তারা জীবন হাতে নিয়ে সংগ্রাম করছে। আমি যে মালিকের জাহাজে প্রথম চাকুরী করতাম সে বর্তমানে ৭টি জাহাজের মালিক। অথচ আমাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। আজকে শ্রমিকরা না খেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে অথচ মালিকপক্ষ শ্রমিকদের মজুরী বাড়াতে রাজী নয়। তার গত জানুয়ারী মাসেও একবার সময় নিয়ে আজকে ৮০ দিন অতিবাহিত করেছে, কিন্তু শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এখন মালিকপক্ষ মে মাসের ১০ তারিখ পর্যন্ত সময় চায়। শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, মালিকপক্ষ যে সময় চেয়েছে তাতে কি আপনারা কর্মবিরতি প্রত্যাহারে রাজী আছেন। তখন শ্রমিকরা সমস্বরে ‘না’ উচ্চারণ করে এর প্রতিবাদ জানান। সবুজ শিকদার আরো বলেন, কিছু কিছু শ্রমিক নেতা আছেন যারা মালিকপক্ষের দালালী করে আসছেন। তারা বিভ্রান্তি ছড়িয়ে শ্রমিকদের ঐক্যে ফাটল ধরানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু আমরা শ্রমিকরা দাবী আদায়ের ক্ষেত্রে ঐক্যবদ্ধ আছি। জীবন দিয়ে হলেও শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাব। দাবী আদায়ের জন্য যদি মৃত্যুবরণ করতে হয় তাতেও পিছপা হব না। প্রধানমন্ত্রী ও শ্রমপ্রতিমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, নৌযান শ্রমিকরা যেভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছে। আপনারা গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শ্রমিক সেক্টরের শ্রমিকদের মজুরী বৃদ্ধি করেছেন। তাই আমি আপনাদের উদ্দেশ্যে উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি অবিলম্বে শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরী ১১ হাজার টাকা নির্ধারণ ও গ্রহণযোগ্য পেস্কেল ঘোষণা করুন।
জানা গেছে, ২০১৫ সালের ১৬ নভেম্বর ৭ দফা দাবি নৌ পরিবহন মন্ত্রী, শ্রম মন্ত্রণালয়ের পরিচালক ও নৌযান মালিকদের সংগঠনের বরাবরে লিখিতভাবে জানানো হয়। কিন্তু মালিকপক্ষ কোন সাড়া না দেয়ায় ২৭ জানুয়ারী সারা বাংলাদেশে কর্মবিরতি পালনের ডাক দেয় বাংলাদেশ জাহাজী শ্রমিক ফেডারেশনসহ বেশ কয়েকটি নৌ শ্রমিক সংগঠন। পরে ২৬ জানুয়ারী নৌ পরিবহন মন্ত্রীর সভাপতিত্বে ত্রিপক্ষীয় সভায় সকলের উপস্থিতিতে একটি চুক্তিনামা হয়। ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে ৭ দফা দাবি মেনে নেয়ার সিদ্ধান্ত হলেও তা আজ পর্যন্ত মানা হয়নি। গত ১৬ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ শহরের শীতলক্ষ্যা নদী সংলগ্ন বরফকল ঘাটস্থ বাংলাদেশ জাহাজী শ্রমিক ফেডারেশন ট্রেনিং এন্ড কালচারাল সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে সর্বনিম্ন মজুরী ১১ হাজার টাকা নির্ধারণ ও গ্রহণযোগ্য পে-স্কেল ঘোষণাসহ ৭ দফা দাবিতে আগামী ২১ এপ্রিল থেকে দেশব্যাপী নৌপথে লাগাতার কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দেন বাংলাদেশ জাহাজী শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি জাতীয় শ্রমিকলীগের সভাপতি শুক্কুর মাহমুদ। এছাড়া অন্যান্য শ্রমিক সংগঠনও একই কর্মসূচী ঘোষণা করে। পরে ২০ এপ্রিল বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যানের সম্মেলনকক্ষে নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান এমপি’র সভাপতিত্বে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হলেও মালিকপক্ষ শ্রমিকদের দাবি মেনে না নেয়ায় সভা বয়কট করে বৃহস্পতিবার ২১ এপ্রিল থেকে পূর্ব ঘোষিত দেশব্যাপী নৌপথে লাগাতার কর্মবিরতি পালনের সিদ্ধান্ত অপরিবর্তিত থাকবে বলে ঘোষণা দেন শ্রমিক নেতৃবৃন্দ। পরে ২৩ এপ্রিল ঢাকায় শ্রম পরিদফতরে (শ্রম ভবন) শ্রম মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে মালিক-শ্রমিক সমন্বয় সভা শেষে মালিকপক্ষ ১০ মে পর্যন্ত সময় চায়। এছাড়া ইউপি নির্বাচন ও এইচএসসি পরীক্ষার জন্য যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল কর্মবিরতির আওতামুক্ত রাখা হয়। রোববার রাতে কর্মবিরতি বহাল থাকবে নাকি প্রত্যাহার হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবে শ্রমিক সংগঠনগুলো।
৭ দফা দাবিগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নৌযানে কর্মরত সকল জাহাজী শ্রমিক কর্মচারীদের জন্য সর্বনিম্ন মজুরী ১১ হাজার টাকা নির্ধারণ, গ্রহণযোগ্য বেতন স্কেল, নদীপথে ড্রেজিং-এর ব্যবস্থা করা, নারায়ণগঞ্জসহ সকল নদীবন্দরে মেরিন কোর্ট চালু করা, নদীপথে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস ও ছিনতাই বন্ধ করা।
চট্টগ্রামে পণ্য পরিবহনে অচলাবস্থা
চট্টগ্রাম ব্যুরো : নৌযান শ্রমিকদের লাগাতার ধর্মঘটের গতকাল (রোববার) চতুর্থ দিনেও চট্টগ্রাম থেকে নৌপথে পণ্য পরিবহন বন্ধ ছিল। কর্ণফুলীর ১৬টি ঘাটে অলস অসংখ্য লাইটারেজ জাহাজ বহির্নোঙরে বড় জাহাজ থেকে মালামাল খালাসও বন্ধ রয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে দেশের অনান্য অঞ্চলে নৌপথে বন্ধ জ্বালানী তেল পরিবহনও। বেতন বৃদ্ধিসহ ১৫ দফা দাবিতে বুধবার মধ্যরাত থেকে লাগাতার ধর্মঘট শুরু করে নৌযান শ্রমিকেরা। চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে ৫৬টি জাহাজ পণ্য খালাসের অপেক্ষায় আছে বলে বলে বন্দর সূত্রে জানা গেছে।
নির্দিষ্ট সময়ে বন্দর ত্যাগ করতে না পারায় অতিরিক্ত মাসুল গুনতে হচ্ছে জাহাজ মালিকদের। অন্যদিকে পরবর্তী বন্দরে সঠিক সময়ে পৌঁছতে না পারলেও আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নারায়ণগঞ্জে জাহাজী শ্রমিক-কর্মচারীদের বিক্ষোভ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ