পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
জনগণের ভোটের অধিকার সুনিশ্চিতের দাবিতে মাঠে নামার ক্ষেত্রে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যের আনুষ্ঠানিক যাত্রা কার্যত শুরু হয়ে গেছে। জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার ব্যানারে মহানগর নাট্টমঞ্চে অনুষ্ঠিত সমাবেশ থেকে এই যাত্রা শুরু হলো। বিএনপি, যুক্তফ্রন্ট, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া, গণফোরামসহ ডান, বাম মধ্যপন্থী প্রায় অর্ধশতাধিক রাজনৈতিক দলের নেতা উপস্থিত হয়ে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের আওয়াজ তুলেছেন। তারা আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি, নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙ্গে দেয়া, নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন, ইভিএম বাতিল এবং বন্দী খালেদা জিয়ার আইনগত ও ন্যায়-সংগত অধিকার নিশ্চিত করার দাবীতে ঐক্যবদ্ধ ভাবে আন্দোলনে একমত হন। তবে বিএনপির নেতারা বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবীও যুক্ত করে বক্তৃতা দেন। গতকাল গুলিস্তানের মহানগর নাট্টমঞ্চে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বি. চৌধুরী, ড. কামাল হোসেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আ স ম রব, মাহমুদুর রহমান মান্না, ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেন বক্তৃতায় অভিন্ন সুরে জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, দেশ-মানচিত্র-পতাকা বাঁচাতে হলে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ঐক্য প্রায় হয়েই গেছে এমন দাবী করে তারা আরো বলেন, জনগণের সাংবিধানিক ক্ষমতা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিতেই এই ঐক্য।
সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী প্রধান অতিথি এবং বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তৃতা করেন। ঘোষণাপত্র পাঠ করেন তেল গ্যাস বন্দর ও খনিজ সম্পদ রক্ষা জাতীয় কমিটির আহবায়ক পরিবেশবিদ ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ। দুপুরে গুড়িগুড়ি বৃষ্টির মধ্যেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা নানান শ্লোগান দিয়ে মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে হাজিন হন। মিছিলে মিছিলে মুখরিত হয়ে উঠে নাট্টমঞ্চস্থল। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে তারা নানান শ্লোগান দেন।
জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার উদ্যোগে নাগরিক সমাবেশের ঘোষণা পত্রে তেল গ্যাস বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আহবায়ক প্রবীণ ব্যাক্তিত্ব ইঞ্জিনিয়ার মুহম্মদ শহীদুল্লাহ দেশের হত্যা-সন্ত্রাস-গুম-অব্যবস্থাপনার চিত্র এবং ঐক্য প্রক্রিয়ার দাবি দাওয়া তুলে ধরেন। তিনি বলেন, জাতীয় প্রেসক্লাবে ৫ দফা ও ৯ লক্ষ ঘোষণা করা হয়েছে। ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির কার্যকর পদক্ষেপ করতে হবে। বর্তমান সংসদ ভেঙ্গে দিতে হবে। এসব দাবী পুরণ না হলে পহেলা অক্টোবর থেকে দেশব্যাপী ঐক্যবদ্ধ ভাবে সভাসমাবেশ করা হবে। সরকারকে বাধ্য করা হবে জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে।
যুক্তফ্রন্ট চেয়ারম্যান সাবেক প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক এ.কিউ.এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর সরকারের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুড়ে বলেন, স্বাধীন দেশে মা-বোনেরা কেন আজ শঙ্কিত। সরকারের কাছে জনগণের প্রশ্ন, যে স্বাধীনতা আনতে লক্ষ লক্ষ মানুষ শহীদ হয়েছে, মা-বোনকে ইজ্জত দিতে হয়েছে, এর মূল্যবোধ কেনো পদদলিত? দিন-রাত প্রতিটি ঘন্টায় আতংকে কেনো বৃদ্ধ বাবা মা তার ছেলে নিরাপদে ফিরবে কিনা, শংকায় কেন থাকবে গুম, রাহাজানি নিয়ে। কেনো পুলিশ, র্যাব, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অপরাধীদের ছাড় দিবে? কেনো ঘুষ দুর্নীতিকে ‘স্পীড মানি’ বলে সরকারিকরণ করা হলো? সমস্ত জাতির নৈতিকতাবোধকে পদদলিত করা হলো? এই অধিকার কে দিয়েছে আপনাদের? নিরাপদ সড়কের দাবিতে কঁচি-কিশোরদের রাস্তায় নামতে হবে কেনো? কেনো কোটা সংস্কারের পক্ষে মেধাবী ছাত্রদের আন্দোলন করতে হবে? মেধাবী ছাত্রদের কি অপরাধ? কেনো তাদের গুন্ডা দিয়ে, হাতুড়ি, চাপাতি দিয়ে আক্রমণ করা হবে, এর জন্যই কি স্বাধীনতা? কেনো আমার ভোট আমি দিতে পারবো না? ভোটের অধিকারকে কেনো দলীয়করণ করা হলো। সারা পৃথিবীতে ইভিএম পরিত্যাক্ত, ইভিএম কেউ চায় না। কেনো আপনাদের সুবিধার জন্য ইভিএম গ্রহণ করতে হবে? এমন হাজারো প্রশ্ন আজ জনগণের আপনাদের কাছে। জনগণ যখন জেগে ঊঠে তখন স্বৈরাচার পালাতে বাধ্য হয়। জনগণের শক্তি কি দেখেন নাই? ১৯৭১ সালে দেখেছে ইয়াহিয়া আর ১৯৯০ সালে দেখেছেন এরশাদ।
অধ্যাপক বি চৌধুরী বলেন, আমাদের রাষ্ট্র তুমি কোথায়? আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সঙ্গী আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র ভারত কোথায়? কেনো গঙ্গার পানি পাবো না, কেনো বন্ধু রাষ্ট্র তিস্তার পানি দিবে না? ১০ বছর কিসের বন্ধুত্ব হলো? তিনি বলেন, এখন রুখে দাঁড়ানোর সময়, এখন অধিকার আদায়ের সময়। প্রতিবাদের কণ্ঠ ধারালো করতে হবে। গণতন্ত্রের স্বপক্ষ শক্তির সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। স্বাধীনতার স্বপক্ষ শক্তির সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। স্বাধীনতা বিরোধীদের সাথে কোন ঐক্য নয়। শুধুমাত্র স্বাধীনতার স্বপক্ষ শক্তিকে সাথে নিয়ে ভারসাম্যের ভিত্তিতে জাতীয় ঐক্য বেগবান হতে পারে। আমরা বিভিন্ন গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি এবং বিএনপির সাথে আলোচনা করছি। আশা করি ঐক্য প্রক্রিয়া সফল হবে।
জাতীয় ঐক্যের আহবায়ক ড. কামাল হোসেন বলেন, দেশে এমন এক সময় বিরাজ করছে যখন সবার মধ্যে উদ্বেগ উৎকন্ঠা। জনগণের জানমাল, ইজ্জতের নিরাপত্তা নেই। দেশে আইনের শাসন নেই। দেশের মানুষ ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত। দেশে সুশাসন-আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আমরা সমবেত হয়েছি। দেশে অবাধে দুর্নীতি ও লুটপাট চলছে। দুর্নীতি ও অর্থ পাচার বন্ধ হলে দেশের অর্থনীতি উন্নত হবে, বেকারত্ব দূর হবে। উন্নয়ন আরও দৃশ্যমান হবে। সুশাসন, গণতন্ত্র এবং ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে চাই জাতীয় ঐক্য। ’৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের ঐক্যবদ্ধ হয়ে জনগণ স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিলো। আজো জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে আমরা জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারবো। জনগণের বৃহত্তর ঐক্যের ভিত্তিতে কার্যকর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, রাষ্ট্রের আর্থিক শৃঙ্খলা নিশ্চিত করে জনগনের মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা সম্ভব। এখন দেশে অপশাসন-দুঃশাসন চলছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে প্রতিনিয়ত হয়রানি ও অপদস্থ করা হচ্ছে। বাংলাদেশের জনগণ গণতন্ত্রের জন্য অনেক সংগ্রাম করে জয়ী হয়েছে। বঙ্গবন্ধু বলতেন মানুষ ঐক্যবদ্ধ হলে কেউ তাদের দাবিয়ে রাখতে পারবে না। তিনি জনগণের ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করতেন। আজ জনগণ সেই ক্ষমতা থেকে বঞ্চিত। আমরা জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে চাই। দেশে উন্নয়নের নামে অবাধে লুটপাট চলছে। ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করা হচ্ছে। মেগা প্রকল্পের নামে জনগণের টাকা অপচয় করা হচ্ছে। বর্হিবিশ্বের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক প্রতিনিয়ত খারাপ হচ্ছে। তাই জনশক্তি রপ্তানিতে ধস নেমেছে। সর্বত্র চলছে এক অরাজকতা। এর থেকে মুক্তির লক্ষে আমাদের এই জাতীয় ঐক্য। জনগণের ভোটাধিকারসহ মৌলিক অধিকার ও সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কার্যকর গণতন্ত্র আইনের শাসন ও আইনের নিরপেক্ষ প্রয়োগ নিশ্চিত করার লক্ষে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা ছাড়া বিকল্প নেই।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জাতির এই চরম দুর্দিনে বিপন্ন মানুষ মুক্তির পথ খুঁজছে। সকলে পরিবর্তন দেখতে চান, এই সরকারের পতন দেখতে চান। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি চান। যিনি তার সারাটা জীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন। এজন্যই তাকে অন্যায়ভাবে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে কারাবন্দি করা হয়েছে। তিনি জেলে যাওয়ার আগে বলে গিয়েছিলেন, দেশ ও দেশের মানুষকে বাঁচাতে হলে, দেশের স্বাধীনতা, স্বার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে হলে জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই। সকল দল, মত ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে রাজনৈতিক দল, সংগঠন, ব্যক্তি সবাইকে এই স্বৈরাচার ও দখলদার সরকারকে সরাতে হবে। এজন্য ঐক্য হচ্ছে একমাত্র পথ। কারাগার থেকেও খালেদা জিয়া খবর পাঠিয়েছেন, আমার কি হবে সেটি নিয়ে পরোয়া করিনা। এই দুঃশাসন থেকে মুক্ত হতে, স্বৈরাচার সরকারকে সরাতে যেকোন মূল্যে জাতীয় ঐক্য তৈরি করতে হবে। বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর মামলার চিত্র তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মীর প্রাণ গেছে, ৫শ’র মত নেতাকর্মী গুম হয়েছে, গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে তিন হাজার ৭৭৩টি নতুন মামলা দেয়া হয়েছে। এসব মামলায় এজহার করা হয়েছে ৭৯ হাজার মানুষ আর অজ্ঞাত আসামী করা হয়েছে তিন লাখ মানুষকে। ইতোপূর্বে ৭৮ হাজার মামলা দেয়া হয়েছিল। ১ সেপ্টেম্বরের পর থেকে ঘরে ঘরে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। উদ্দেশ্য একটাই আগামী নির্বাচনে জনগণ যাতে অংশ নিতে না পারে জনগণকে দূরে রাখার জন্য নতুন মামলা দেয়া হচ্ছে। এই সরকারকে যদি সরাতে না পারি, জনগণের সরকার যদি প্রতিষ্ঠা করতে না পারি, ঐক্যের সরকার যদি প্রতিষ্ঠিত করতে না পারি তাহলে এই দেশের স্বাধীনতা থাকবে না। জনগণ অধিকার থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত হবে। এজন্য নূন্যতম কর্মসূচি ও দাবি-দাওয়ার ভিত্তিতে জনগণকে সাথে নিয়ে দাবি আদায়ে আন্দোলন শুরু করতে হবে। যার মাধ্যমে আমরা সরকারকে বাধ্য করবো বেগম খালেদা জিয়া ও সমস্ত বন্দিদের মুক্তি দিতে এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে।
দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহবান জানিয়ে প্রখ্যাত আইনজীবী ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন বলেন, স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে ভোটাধিকারের জন্যে লড়াই দুঃখজনক। তাই এই দুঃশাসনের জন্য জাতীয় ঐক্য অপরিহার্য। যদি ঐক্য গড়তে না পারেন তাহলে ভোট দেবেন কিন্তু তা কোনো কাজে আসবে না। প্রশাসনযন্ত্র এমন ভাবে সাজানো হয়েছে যে, জনগণের ভোট দিতে বাধা দেয়া হবে না। বাইরে পুলিশ নিরপেক্ষ ভুমিকা পালন করবে। কিন্তু ফলাফল নির্ধারণ করা হবে অন্য যায়গা থেকে। জনগণের ভোটে কোনো ফলাফল নির্ধারিত হবে না। তিনি বলেন, রাজনীতি নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে গণভোট দরকার। কিন্তু এই সরকার জনগণের ভোটাধিকার হরণ করেছে। বিশ্বজনমত গণতন্ত্রের পক্ষে। জনগণের জয় নিশ্চিত। গণতন্ত্রের জয় হবেই। আওয়ামী লীগ এখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে রাজনীতিকে আমলাতন্ত্রের পেটের ভিতরে নিয়ে গেছে। এটা দুঃখজনক। আমলাদের দলীয়করণ এবং তাদের সুযোগ সুবিধা দিয়ে ভোটের রাজনীতি হরণ করে আওয়ামী লীগ কার্যত রাজনীত থেকে হারিয়ে গেছে। সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে জোর করে বিদেশে পাঠিয়ে দেয়ার কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, পৃথিবীর কোথাও এমন নজীর নেই। দেশের প্রধান বিচারপতিকে জোর করে অসুস্থ বানিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে দেশ থেকে বিদেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এ ধরণের ঘটনা দুঃখজনক আইনের শাসনের জন্য হতাশাজনক এবং লজ্জাজনক। এমন ঘটনায় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। আওয়ামী লীগের উন্নয়নের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এক টাকার উন্নয়ন করে একশ টাকা লুট করেছেন। এতোই যদি উন্নয়ন করে থাকেন তাহলে নিরপেক্ষ ভোটের আয়োজন করেন দেখা যাবে জনগণ আপনাদের ভোট দেয় কিনা? উন্নয়ন করে থাকলে জনগণকে এতো ভয় পান কেন? কেন নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন করতে চান? দেশের কিছু সুবিধাবাদী বিশৃংখল নেতার কারণে এমন হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
জাসদের সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, দেশ এখন বেওয়ারিশ লাশের ভাগাড়ে পরিণত হয়ে গেছে। ব্যাংকে টাকা নাই। কখন দেখবো দেশের পতাকা নাই, মানচিত্র নাই। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে তিনি আরো বলেন, সেনাবাহিনীকে ম্যাজেষ্ট্রিসি ক্ষমতা দিয়ে নির্বাচনের আগে মাঠে নামাতে হবে। নির্বাচনের ৩০ দিন আগে তারা মাঠে নামবেন এবং ভোটের ১০ দিন পর ফিরে যাবেন। যারা নির্দলীয় নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রী হবেন তারা নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। জাতীয় ঐক্যের প্রতি জোর দিয়ে তিনি বলেন, ঐক্য এখন সময়ের দাবি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ফেব্রæয়ারিতেই খালেদা জিয়া স্বৈরাচার সরকারের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য এবং জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার জন্য জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন। আজকে সারা বাংলাদেশের মানুষ জাতীয় ঐক্যের দিকে তাকিয়ে আছে। যদিও জনগণের মধ্যে ইতোমধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাদের ঐক্য হচ্ছে এই সরকারের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতে হবে। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেন, জাতীয় ঐক্য ছাড়া এই স্বৈরাচারী সরকারকে অপসারণ করা সম্ভব হবে না। এই ঐক্যের মাধ্যমে ভোটের অধিকার, আইনের শাসন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ফিরে পেতে চাই। দেশে একটি সুষ্ঠু, রাজনৈতিক পরিস্থিতি, গণতান্ত্রিক চর্চা ফিরে পেতে চাই। ঐক্যের মাধ্যমে স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে। ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, গণতন্ত্র ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠির অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করেছিল। কিন্তু ৪৭ বছর পরও বলতে হচ্ছে গণতন্ত্র মৃত। তাহলে কেন স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছিলাম? সরকার স্বাধীনতা যুদ্ধের যে লক্ষ্য ছিল তার একটিও রক্ষা করতে পারেনি।
নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, দেশ আজ গভীর সংকটে। সাড়ে তিন মাস পর নির্বাচন হবে। গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২২ হাজার মামলা দেয়া হয়েছে। অজ্ঞাত আসামী কয়েক লাখ। নির্বাচন কমিশন ঘেরা কর্মসূচী পালন করতে গেলে বাম গণতান্ত্রিক ঐক্যের নেতাকর্মীদের উপর পুলিশ বেধড়ক হামলা চালিয়েছে। এটা কি সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষন, নাকি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচন করতে চায় সরকার? এ প্রশ্ন এখন সারাদেশের জনগণের মধ্যে। আমরা একটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাই। অথচ সরকার আমাদের হাত পা বেঁধে পানিতে সাঁতার কাটতে বলছে। এটা কিছুতেই হতে পারে না। দেশে সোনা তামা হয়ে যাচ্ছে, কয়লা মাটি হয়ে যাচ্ছে, ব্যাংক লুট হয়ে যাচ্ছে। অথচ লুটেরাদের বিরুদ্ধে কোন মামলা দেয়া হচ্ছে না। আর দেশের সব চেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুই কোটি টাকার অভিযোগ এনে জেলে আটক রাখা হয়েছে। আমরা বেগম খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দির মুক্তি চাই। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ওরা লুটেরা ওরা ভোট চোর। তাদের বাদ দিয়ে আমরা এক হয়ে আওয়াজ তুলছি ‘অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। আমাদের পাঁচ দফা দাবির পক্ষে সবাই একমত তাই ঐক্যতো হয়েই গেছে। এই ঐক্য এখন আরও সুসংহত হবে। জনগণের ঐক্যের মাধ্যমে সরকারকে দাবি মানতে বাধ্য করতে হবে। এবার ঘরের মানুষ রাস্তায় নামবে, আর র্দুবৃত্তরা রাস্তা থেকে ঘরে ঢুকবে।
জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সদস্য সচিব আ ব ম মোস্তাফা আমিনের সঞ্চলনায় সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেন, বিএনপির স্থানীয় কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমদ, ড. আবদুল মঈন খান, জাসদ সভাপতি আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণস্বাস্থের ট্রাষ্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি সুলতাম মোহাম্মদ মনসুর, সুপ্রিম কোট বার এসোসিয়েশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, বিকল্প ধারার মহাসচিব মেজর (অব) আবদুল মান্নান, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী, মোস্তফা মোহসিন মন্টু, ডা. মোমেনা খাতুন প্রমূখ। উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির (জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ব্যারিষ্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, গণদলের সভাপতি এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী, জাসদের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য আহসান হাবিব লিংকন, জাগপার সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান, এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, গণদলের মহাসচিব আবু সৈয়দ, জামায়াতে ওলামায়ে ইসলামীর ঢাকা মহানগর আমীর নুর হোসেন কাশেমী প্রমূখ। ##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।