Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হুমকিতে রাজবাড়ী শহর রক্ষাবাঁধ

ভাঙন আতঙ্কে দিশেহারা মানুষ

মো. নজরুল ইসলাম, গোয়ালন্দ উপজেলা থেকে | প্রকাশের সময় : ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:৫৪ এএম

রাজবাড়ীর সদরের মিজানপুর, বরাট, গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম ইউনিয়ন এলাকায় নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের আহাজারিতে আবার ভারি হয়ে উঠেছে পদ্মাপাড়। ভাঙনের তীব্রতা কয়েকদিন কম থাকলেও গত দুই-তিন দিন ধরে তা আবার আগ্রাসী হয়ে গ্রাস করেছে শত-শত বিঘা ফসলী জমি, বাড়ি-ঘর ও মসজিদ-মাজার।
রাজবাড়ী শহর রক্ষা বাঁধের ফেইজ ১ এর কাজের গত ২৬ আগষ্ট থেকে ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পদ্মা নদীর তীর প্রতিরক্ষা বাঁধে পৃথক পৃথক স্থানে প্রায় ৬০০ মিটার এলাকার সিসিব্লক নদীতে ধসে গেছে। তবে ভাঙ্গন রোধে জরুরী ভিত্তিতে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
জানা গেছে, গত ৩ দিনে রাজবাড়ী শহররক্ষা বাঁধের তীর সংরক্ষণ এলাকার সিসি ব্লক দ্বারা নির্মিত ১৭০ মিটার অংশ পদ্মার ভাঙনে বিলীন হয়েছে। পদ্মা নদীর ভাঙন আতঙ্কে চর ধুঞ্চি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং মুন্সি বিলায়েত হোসেন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় দুটি হুমকির মধ্যে রয়েছে। যেকোন সময় বিদ্যালয় দুটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে। এতে করে হুমকির মধ্যে রয়েছে রাজবাড়ী শহররক্ষা বাঁধ। পদ্মার এমন ভাঙনে হতবাক স্থানীয় বাসিন্দারা।
ভুক্তভোগীরা জানান, গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া, দেবগ্রাম ও ছোটভাকলা ইউনিয়নের পদ্মার তীরবর্তী এলাকায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। এ মাসের শুরুর দিকে ভয়াবহ ভাঙনের মুখে পড়ে পদ্মা পাড়। গত সপ্তাহ খানেক ভাঙনের তীব্রতা কিছুটা কম হলেও গত তিনদিন ধরে দৌলতদিয়ার ঢল্লাপাড়া, হাতেম মন্ডল পাড়া ও বেপারী পাড়া এলাকায় অতিমাত্রায় ভাঙনে পদ্মা পাড়ের মানুষের মাঝে হাহাকার দেখা দিয়েছে। দেবগ্রাম ও ছোটভাকলা ইউনিয়নেরও বিস্তৃর্ণ এলাকা ইতিমধ্যে বিলীন হয়েছে। ৩টি ইউনিয়নের সহসস্রাধিক পরিবার ভাঙনের শিকার হয়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছে। এদের কেউ কেউ আত্মীয়-স্বজনের বাড়ীতে আশ্রয় নিলেও অনেক পরিবারেরই সে উপায় নেই। তারা মহাসড়ক, কাচা রাস্তা, বেরীবাধসহ বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছেন। এদের ছাড়াও ভাঙন আতঙ্ক নিয়ে নদীতীরে বসবাস করছে অন্তত ২ হাজার পরিবার।
সরেজমিন দৌলতদিয়ার ঢল্লাপাড়া গ্রামে দেখা যায়, সেখানকার ঢল্লা পাড়া জামে মসজিদ, রমজান মুন্সির মাজারসহ বহু বাড়ী-ঘর নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। দুদিন আগেও যেখানে বাড়ি ঘর ও মসজিদ, আজ সেখানে পদ্মার তীব্র স্রোতের গর্জন। অনেককে তাঁদের বাড়িঘর ভাঙতে ও গাছ-পালা কাটতে দেখা যায়। নদীর কাছে অধিকাংশ বসতভিটা শূন্য পড়ে থাকতে দেখা যায়।
এসময় স্থানীয় লিয়াকত মীর মালত (৬৫) হতাশা নিয়ে জানান, তার প্রায় ১০ বিঘা জমি ছিল, ২টি স্যালোমেশিন, নিজেস্ব ট্রাক্টও সবই ছিল তার। ছিল টিনের বড় ঘর। তা সবই নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এখন আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি। আত্মীয়-স্বজনরা এসে কোন মতে ঘরগুলো রক্ষা করে দৌলতদিয়া হাইস্কুলের মাঠে নেয়ার ব্যবস্থা করছে। সেখানেই আপাতত মাথা গোজার ব্যবস্থা হবে।
এছাড়া স্থানীয় সুফিয়া খাতুন (৬০), হালিমা (৫৫), মুন্নাফ বেপারী (৪৫), আ. মজিদ (৫০)সহ অনেকেই জানান, তাদের সাজানো সংসার চোখের সামনে তছনছ হয়ে যাচ্ছে। কোন মতে ঘরগুলো রক্ষা করা গেলেও গাছ-পালা, ফসলী জমি সব বিলিন হয়ে গেছে। নিজস্ব আর কোন জায়গা নেই। কোথায় গিয়ে আশ্রয় নিবো তাও জানি না।
দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম মন্ডল জানান, গত প্রায় ১ মাসের ভাঙনে তার ইউনিয়নের প্রায় ৪ শতাধিক পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে। এভাবে ভাঙতে থাকলে অচিরেই আফছার শেখের পাড়া, হাতেম মন্ডল পাড়া, ১ নং বেপারী পাড়া, ঢল্লাপাড়ার অবশিষ্ট অংশ অচিরেই বিলিন হয়ে যাবে। দ্রুত ভাঙন প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানাচ্ছি।
রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী এসএম নুরুন্নবী জানান, গোয়ালন্দের ভাঙন প্রতিরোধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে উর্দ্ধতন কতৃপক্ষের কাছে ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম শেখ বলেন, পরিকল্পনা অনুয়ায়ী ড্রেজিং না করার কারণে সিসি ব্লক দ্বারা নির্মিত অংশ ভেঙ্গে যাচ্ছে। এমন ভাঙন অব্যাহত থাকলে আগামী ২০ দিনের মধ্যে সিসি ব্লক দ্বারা নির্মিত প্রায় ৩ কিলোমিটার অংশই নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবার আশংকা প্রকাশ করে বলেন এতে শহররক্ষা বাঁধ ঝুকির মধ্যে রয়েছে।
এদিকে, গতকাল শনিবার রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের গোদার বাজার, চরধুনচী ও সোনাকাদর পদ্মা নদীর তীর প্রতিরক্ষা বাঁধের ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করেছেন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ও রাজবাড়ী ১ আসনের এমপি কাজী কেরামত আলী।
শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, পদ্মায় অব্যাহত স্রোত এবং অপরিকল্পিতভাবে নদী খনন করার কারণে পদ্মায় এই ভয়াবহ ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, রাজবাড়ী শহররক্ষার জন্য যা যা করনীয় সেগুলো করা হবে। কি কারণে তীর সংরক্ষণ এলাকার সিসি দ্বারা নির্মিত অংশের এমন ভাঙন তা জানার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পরিদর্শনের জন্য বলা হবে।



 

Show all comments
  • নাবিল আহমেদ ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ৩:০৬ এএম says : 0
    আল্লাহ তুমি তাদের প্রতি রহমত নাযিল করো।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রাজবাড়ী শহর রক্ষাবাঁধ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ