পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সাখাওয়াত হোসেন বাদশা : দেশে অব্যাহত গ্যাস সঙ্কট মোকাবেলায় এলপিজি নির্ভরতা বাড়াতে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। সাশ্রয়ী বিধায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও লিকুইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস বা এলপিজি’র চাহিদা প্রতিদিনই বাড়ছে। ইতোমধ্যেই সারাদেশে ৫শ’ এলপি গ্যাস স্টেশন স্থাপনের অনুমতি দেয়া হয়েছে বেক্সিমকোকে। প্রতিষ্ঠানটি আগামী জুলাই মাসে তার প্রথম এলপিজি গ্যাস স্টেশন চালু করবে। এছাড়াও জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় ইতোপূর্বে আরও ৩৫টি প্রতিষ্ঠানকে এই স্টেশন চালু করার লাইসেন্স প্রদান করে। যার মধ্যে ১২টি এলপিজি স্টেশন তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে।
জ্বালানি বিভাগের মতে, অকটেন-পেট্রোলে গাড়ি চালাতে খরচ অনেক বেশি বিধায় উন্নত দেশগুলোর গাড়ি মালিকরা ঝুঁকছেন এলপি গ্যাসের দিকে। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়াসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, চীন, তুরস্ক এবং পাকিস্তানেও গাড়ি চলছে এলপি গ্যাসে। সরকার শুধু গৃস্থালিতেই নয়; প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ তলানিতে ঠেকায় কমপ্রেসড ন্যাচারাল গ্যাস বা সিএনজি পুড়িয়ে গাড়ি চালানোর সুযোগও রহিত করতে চাচ্ছে। এক্ষেত্রে বিকল্প হিসাবে সরকার চাচ্ছে পরিবহন মালিকরা এলপি গ্যাসকে বেছে নিক।
এদিকটি লক্ষ্য রেখেই গাড়ির জ্বালানি হিসেবে ‘অটোগ্যাস’ নামে পরিচিত এলপিজি’র ব্যবহার বাড়াতে সম্প্রতি জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ আন্তঃমন্ত্রণালয় সভাও করেছে। সেখানে সিএনজির ব্যবহার কমিয়ে এলপিজির ব্যবহার বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ওই সভায় সিএনজি ব্যবহারে গাড়ির মালিকদের নিরুৎসাহিত করতে সিএনজি কিটস-এর ওপর আমদানি শুল্ক আরোপ ও এলপিজি কিটস আমদানির ওপর শুল্ক প্রত্যাহারের বিষয়েও আলোচনা হয়। ভবিষ্যতে যেসব গাড়ি আমদানি করা হবে, সেগুলোতে যেন অটোগ্যাস ব্যবহারের সুবিধা থাকে তা নিশ্চিত করার পক্ষেও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় মতামত দিয়েছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এই মতামতের ফলে এখন থেকে শুধু রান্নার কাজে যেমন এলপি গ্যাসের ব্যবহার বাড়বে; তেমনি মোটরযানেও বাড়বে এলপি গ্যাসের ব্যবহার। ইতোমধ্যেই দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলছে এলপিজি চালিত বহু প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, লরি ও পিকআপ। যদিও প্রয়োজনের তুলনায় এলপি গ্যাসের স্টেশন একেবারেই অপ্রতুল। সে কারণেই সরকার চাচ্ছে দ্রুত সারাদেশে এলপি গ্যাস স্টেশন গড়ে তুলতে। আর এ লক্ষ্যেই দেশের বৃহত্তম শিল্প প্রতিষ্ঠাণ বেক্সিমকোকে ৫শ’ এলপি গ্যাস স্টেশন স্থাপনের অনুমতি দেয়া হয়েছে।
জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালের মাঝামাঝি সময়ে এলপি গ্যাস স্টেশন স্থাপনের লাইসেন্স দেয়া শুরু হয়। প্রথম দফায় সরকার বেসরকারি খাতে ২৫টি কোম্পানিকে লাইসেন্স দেয়। এর পর দেয়া হয় আরো আটটি লাইসেন্স। লাইসেন্সপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছে ওরিয়ন, সানোয়ারা, ওরিয়েন্টাল, নাভানা, এনার্জিপ্যাক, বাংলা ট্র্যাক ও আমিন মোহাম্মদ গ্রুপ। এছাড়াও লাইসেন্স পেয়েছে সোনার বাংলা গ্যাস অ্যান্ড পেট্রোলিয়াম, ওমেরা পেট্রোলিয়াম, মাহমুদ এন্ড ব্রাদার্স, কোস্টাল গ্যাস, ডিক্যান এলপিজি, ইউরো পেট্রো প্রডাক্ট, ক্রিস্টাল এনার্জি, বিএনবি এনার্জি, এফ এন্ড এফ সিস্টেম, প্রমিতা অয়েল এন্ড গ্যাস, গায়েন পাওয়ার অ্যান্ড এনার্জি, ইনডেক্স পাওয়ার এন্ড এনার্জি, প্রজ্ঞা পেট্রোলিয়াম করপোরেশন, জেড এন্ড জেড এনার্জি, জোলস পাওয়ার, বিএম এনার্জি, আম্বিয়া ট্যাংক টার্মিনাল এন্ড রিফাইনারি ও আজনা এন্ড আজনা।
জানা গেছে, সিএনজি স্টেশন স্থাপনের নীতিমালা অনুযায়ীই নির্মাণ হবে এলপিজি বা অটোগ্যাস স্টেশন। পৃথকভাবে লাইসেন্স নিয়ে এটি করতে হবে। একই স্টেশনে সিএনজি ও এলপিজি সরবরাহ করা যাবে না। পৃথক অটোগ্যাস স্টেশনের লাইসেন্স ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। এছাড়াও সরকার ভারতের সহায়তায় চট্রগ্রামে বড় একটি এলপিজি স্টেশন নির্মাণের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। চট্টগ্রামে এলপিজি স্টেশন স্থাপনের লক্ষ্যে ভারত সরকার ইতোমধ্যেই ত্রিপুরা পর্যন্ত ২ হাজার ৫শ’ কিলোমিটার লম্বা পাইপলাইন স্থাপনের কাজও শেষ করেছে। ভারতের রাষ্ট্রীয় তেল ও গ্যাস কোম্পানি আইওসিএল এই পাইপ লাইন স্থাপনের কাজ করে। ত্রিপুরা থেকে ফেনী হয়ে চট্টগ্রাম পর্যন্ত পৌঁছাতে আরও ২৫০ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপন করবে ভারত। বাংলাদেশ ভারতের এই আহ্বানে সাড়াও দিয়েছে।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বিশ্বজুড়ে গাড়ি চালনায় এলপিজির ব্যবহার বাড়ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দরপতনের এই সময়েও গাড়ির মালিকরা অকটেন ও পেট্রল ছেড়ে অটোগ্যাসে ঝুঁকছেন। কারণ এতে জ্বালানি খরচ ৩৩ থেকে ৪০ শতাংশ কম পড়ে।
কম খরচ ও কম কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণের জন্য অটোগ্যাসকে ‘গ্রিনার, ক্লিনার অ্যান্ড চিপার’ জ্বালানি আখ্যায়িত করা হচ্ছে। শুধু যুক্তরাজ্যেই দেড় হাজারের বেশি এলপিজি ফিলিং স্টেশন রয়েছে। দেশটিতে এক লাখ ৬০ হাজার গাড়ি এলপিজি ব্যবহার করে।
একইভাবে চীনে ২০০৯ সাল থেকে এলপিজির ব্যবহার বাড়ছে। চীনের ২৫টি বড় শহরে এলপিজি ফিলিং স্টেশন রয়েছে। শুধু সাংহাইতে দুই লাখ ৬০ হাজার মোটরসাইকেল এলপিজি ব্যবহার করছে। শেনজেংয়ের স্থানীয় সরকার যানবাহনে এলপিজি ব্যবহারে উৎসাহ দিচ্ছে। সেখানে এক লাখ ৬০ হাজার ট্যাক্সিক্যাব ও আড়াই হাজার বাস এলপিজি ব্যবহার করছে।
বিপিসির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, দেশে ১ লিটার অকটেনের দাম যেখানে ৯৯ টাকা, সেখানে মাত্র ৫৯ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে সমপরিমাণ অটোগ্যাস। এ হিসাবে মাসে ৩০০ লিটার অকটেন ব্যবহার করা হলে ব্যয় হয় ২৯ হাজার ৭০০ টাকা। অন্যদিকে একই পরিমাণ অটোগ্যাস ব্যবহার করা হলে ব্যয় হবে ১৭ হাজার ৭০০ টাকা। এছাড়াও পেট্রোল বা ডিজেলের তুলনায় প্রতি মাইলে এলপিজির ব্যয়ও কম। সাধারণ একটি মোটরগাড়ির এক মাইল চলতে সিএনজিতে ৫ টাকা, এলপিজিতে ৬ টাকা আর অকটেনে ৮ টাকা খরচ হয়। অন্যদিকে সিএনজির সিস্টেম লস ২৫ শতাংশ আর এলপিজির সিস্টেম লস ৫ শতাংশ। দেশে বর্তমানে ১২টি এলপিজি ফিলিং স্টেশন রয়েছে। এগুলো বসুন্ধরা, টোটাল গ্যাস, ক্লিন হিট ও সাউদার্নের ব্যবস্থাপনাধীন।
অন্যদিকে, দেশে এলপিজির বার্ষিক চাহিদা সাড়ে ৩ লাখ টন। এর বিপরীতে সরকারের উৎপাদন ক্ষমতা মাত্র ২০ হাজার টন। অন্যদিকে বেসরকারি উদ্যোগে দেড় লাখ টন এলপিজি আমদানি করা হয়। ফলে এলপি গ্যাসের ঘাটতির পরিমান ১ লাখ ৮০ হাজার টন।
এদিকে, বেশকিছু সিএনজি স্টেশন প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি ছাড়াই এলপি গ্যাস ব্যবহার করছে। এতে করে যেকোনো মুহূর্তে বিস্ফোরণ বা অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা ঘটার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন বা বিইআরসি’র এক কর্মকর্তা। ওই কর্মকর্তার মতে, গাড়িতে ঝুঁকিমুক্তভাবে এলপিজি সরবরাহের লক্ষ্যেই অটোগ্যাস স্টেশন চালুর উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বেক্সিমকোর ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান বলেছেন, দেশে প্রাকৃতিক গ্যাস প্রাপ্তির সুযোগ দিন দিন সংকুচিত হয়ে আসছে। এ অবস্থায় এলপিজি ব্যবহারের বিকল্প নেই। তিনি বলেন, সারাদেশেই আমরা এই এলপি গ্যাস স্টেশন স্থাপন করবো। তবে যাদের সিএনজি স্টেশন রয়েছে তাদেরকে এলপিজি স্টেশন স্থাপনে প্রাধান্য দেয়া হবে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিসদ বলেন, আমাদের প্রাকৃতিক গ্যাসের আধার দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। এক্ষেত্রে আমাদেরকে বিকল্প জ্বালানির ব্যবস্থা করতে হবে। সরকার গৃহস্থালি ও সিএনজি স্টেশনে গ্যাস কমিয়ে দিতে চায়। বরং এর জায়গায় এলপি গ্যাসের ব্যবহার বাড়াতে আমরা নানামুখি উদ্যোগ নিয়েছি। এতে করে এলপি গ্যাসের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। তিনি বলেন, প্রাকৃতিক গ্যাসের মত এটি সাশ্রয়ী হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।