পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নাছরুল ইসলাম নাবিল, রাবি : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. এএফএম রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে রাজশাহী মহানগরীর শালবাগানের বটতলা এলাকায় তার বাসা থেকে একশো গজ দূরে তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ নিয়ে গত এক দশকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে চারজন শিক্ষক খুন হলেন। প্রকাশ্য দিবালোকে শিক্ষক হত্যায় ঘটনায় ক্যাম্পাসে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। আতঙ্কে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। হত্যাকা-ের প্রতিবাদে গতকাল ক্যাম্পাসও ছিলো উত্তাল। বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, প্রগতিশীল ছাত্রজোট ও ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। হত্যাকা-ের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন।
জানা যায়, প্রফেসর ড. রেজাউল করিম সিদ্দিকীর গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায়। তার স্ত্রী হোসনে আরা শিলা গৃহবধূ। তার দুই সন্তানের মধ্যে ছেলে রিয়াসাত ইমতিয়াজ সৌরভ রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র এবং মেয়ে রেজোয়ানা হাসিন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্রী।
নিহত রেজাউল করিমের ভাই ও নাটোরের সিংড়া থানার শিক্ষা কর্মকর্তা সাজিদুল করিম সিদ্দিকী বলেন, শনিবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের পৌনে আটটার বাস ধরতে রেজাউল করিম বাসা থেকে বের হন। কিন্তু সেখানে পৌঁছানোর আগেই বাসা থেকে একটু দূরে আরেকটি বাসার মেইন গেটের সামনে তার গলা কাটা লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়। ভাই রেজাউল করিমসহ তারা ২৬১ শালবাগান (সপুরা) এলাকায় পৈতৃক বাড়িতে একসঙ্গে বাস করতেন বলেও জানান সাজিদুল করিম। তার গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার দরগাবাড়ি এলাকায়। তার ভাইকে কেউ কখনও কোনো ধরনের হুমকি দিয়েছিল কি না, তা জানাতে পারেনি সাজিদুল করিম।
প্রফেসর রেজাউল করিমের স্ত্রী হোসনে আরা বলেন, ‘ভালো মানুষ বাসা থেকে বের হয়ে গেল। এরপর রাস্তার মধ্যে খুন হলো। তাকে কে বা কারা খুন করলো? তার তো কোনো শক্র ছিল না। কারো সঙ্গে তার কোনো ঝামেলাও ছিল না।’ সারা দেশে ব্লগার হত্যার আঘাতের ধরনের সঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকী (৫৮) হত্যার মিল রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। পুলিশের ধারণা, ইসলামি চরমপন্থীদের হাতে তিনি খুন হয়েছেন। রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহাম্মাদ শামসুদ্দিন বলেন, হামলার ধরন ও আলামত দেখে মনে হয়েছে কেনো জঙ্গি সংগঠন এই হামলায় জড়িত। ঢাকায় ব্লগার হত্যাকা-গুলোর হামলার ধরনের সঙ্গে এই হামলার ধরনের মিল রয়েছে। আমরা বিষয়টি খুবই গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে।
বোয়ালিয়া থানার ওসি শাহদাত হোসেন বলেন, ঘটনাস্থল থেকে একশো গজ দূরে রেজাউলের বাড়ি। তাকে হত্যার কারণ তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। কোনো জঙ্গি সংগঠন এ হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, হত্যাকা-ের পরই প্রতিবেশীরা মোটরসাইকেলের শব্দ শুনেছেন। ওই মোটরসাইকেলে ২ থেকে ৩ জন যুবক ছিলো বলে ধারণা করছেন তারা। খুনিরা সিদ্দিককে হত্যার পর মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যায়। এএফএম রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। গতকাল বিকেল ৪টার দিকে নিহত শিক্ষকের ছেলে রিয়াসাত ইমতিয়াজ সৌরভ বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামাদের আসামী করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে নগরীর বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহাদত হোসেন খান জানান, মামলার এজহারে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রফেসর রেজাউল করিম সিদ্দিকী বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে সকালে বাসা থেকে বের হন। এসময় আগে থেকে ওৎপেতে থাকা অজ্ঞাত সন্ত্রাসীরা মোটরসাইকেলযোগে এসে পেছন দিক থেকে কুপিয়ে ফেলে রেখে যায়।
হত্যাকা-ের বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি চৌধুরী সারওয়ার জাহান বলেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষককে একের পর এক হত্যা করা হয়েছে। ড. ইউনূস, ড. তাহের, ড. শফিউলের পর সর্বশেষ ড. সিদ্দিকীকে হত্যা করা হলো। এর মাধ্যমে একদিকে বিশ্ববিদ্যালয় যেমন মেধাবী শিক্ষকদের হারাচ্ছে, অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষাব্যবস্থা। শিক্ষকদের এই নিরাপত্তাহীনতা দূর করা দরকার। এজন্য সরকাররের বিভিন্ন সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কাজ করে এর পেছনে দায়ীদের খুঁজে বের করতে হবে।’
প্রফেসর রেজাউল করিম ‘কোমলগান্ধ্যা’ নামে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত একটি সাহিত্য ও সংস্কৃতিবিষয়ক পত্রিকা সম্পাদন করতেন। তিনি ভালো সেতার বাদক ছিলেন। এছাড়াও তিনি ‘সুন্দরম’ নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের উপদেষ্টা ছিলেন।
‘সুন্দরম’ সংগঠনের সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্থাপন শাখার সেকশন অফিসার হাসান রাজা বলেন,‘ তিনি একজন সংস্কৃতিমনা মানুষ ছিলেন। তিনি যে ধরনের লেখালেখি করতেন তা খুবই সাধারণ। আমরা যতটুকু জানি তার গ্রামের বাড়িতে জমিজমা নিয়ে সেখানকার কিছু লোকের সঙ্গে ঝামেলা ছিল। এ ঘটনার জেরে এ হত্যাকা- ঘটে থাকতে পারে। তিনি আরও বলেন, রেজাউল স্যার তার গ্রামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। এ নিয়ে সেখানকার কিছু লোকের সঙ্গে তার ঝামেলা হয়েছিল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও একই বিভাগের সহকর্মী ড. শহীদুল্লাহ্ বলেন, ‘প্রফেসর রেজাউল সিদ্দিকীর মতো একজন নিরীহ মানুষ এভাবে হত্যার শিকার হতে পারে তা ভাবা যায় না। একের পর এক শিক্ষক হত্যার পর রাবি যেন বদ্ধভূমিতে পরিণত হয়েছে। আমরা আর কোনো শিক্ষকের লাশ দেখতে চাই না। এসময় তিনি দ্রুত এ হত্যাকা-ের বিচারের জন্য প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। তিনি আরও বলেন, যতদিন এ হত্যাকা-ের বিচার না হবে ততদিন আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো। আমরা শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় র্যালি ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করবো। সেই সঙ্গে রোববার ক্লাস বর্জন করা হবে বলেও ঘোষণা দেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ও ইংরেজি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী তমাশ্রী দাশ বলেন, ‘সংস্কৃতির প্রতি স্যারের ঝোঁক ছিল। তিনি নিজে মুক্ত চিন্তা করতেন এবং তার চিন্তার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের যুক্ত করার চেষ্টা করতেন। একজন মুক্ত চিন্তার মানুষ এমন নৃশংসভাবে হত্যার শিকার হবে এ ঘটনা আমাদের জন্য অত্যন্ত দুঃখের।’
বিভিন্ন সংগঠনের বিক্ষোভ সমাবেশ:
এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যাকা-ের প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে প্রতিবাদী মিছিল, সড়ক অবরোধ, সমাবেশ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে শিক্ষক সমিতি, রাবি ছাত্রলীগ, প্রগতিশীল ছাত্রজোট ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ হত্যাকা-ের পর শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদে উত্তাল ক্যাম্পাস। এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ ঘটনায় গতকাল সকাল ১০টার দিকে সড়ক অবরোধ করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এরপর সাড়ে ১১টার দিকে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেছে প্রগতিশীল ছাত্রজোট। এরপরে এ হত্যাকা-ের প্রতিবাদে মিছিল ও মানববন্ধন করেছে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীরা। হত্যাকা-ের প্রতিবাদে দুপুর ১২টায় সিনেট ভবনের সামনে সমাবেশ করেছে রাবি শিক্ষক সমিতি। সমাবেশ থেকে আজ রবিবার ক্লাস বর্জন ও সকাল ১০টায় প্রতিবাদ র্যালীর ঘোষণা দেওয়া হয়। সমাবেশে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শাহ্ আজমের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন, শিক্ষক সমিতির সভাপতি ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল্লাহ, ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আব্দুলাহ আল মামুন, শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. আনন্দ কুমার সাহা, সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মোহা. রেজাউল করিম, আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. হাসিবুল আলম প্রধান, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এএইচএম মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।
এদিকে শিক্ষক রেজাউল করিম সিদ্দিকী হত্যা ও গত বৃহস্পতিবার রাজশাহী শহরের আবাসিক হোটেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাসের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মিজানুর রহমানের লাশ উদ্ধারের প্রতিবাদে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক আধা ঘণ্টা অবরোধ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে সকাল সোয়া ১০টা থেকে বেলা পৌনে ১১টা পর্যন্ত অবরোধ চলে।
বিভিন্ন সংগঠনের নিন্দা :
এ হত্যার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, ছাত্র ইউনিয়ন, কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতি জোট, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, রাবি শাখা ছাত্রশিবির।
তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ
সাদা দলের শিক্ষকবৃন্দের
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের প্রফেসর ড. এএফএম রেজাউল করিম সিদ্দিকীর নৃশংস হত্যাকা-ে গভীর শোক প্রকাশ এবং এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী শিক্ষক গ্রুপ (সাদা দল)। সাদা দলের ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক প্রফেসর ড. মোহা. এনামুল হক স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রফেসর রেজাউল করিমের মতো একজন গুণী ও নিরীহ মানুষকে এভাবে নির্মমতার শিকার হতে হবে এটা আমরা কল্পনাও করতে পারছি না। এ ঘটনাই প্রমাণ করে দেশের আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির কি ভয়ংকর অবনতি ঘটেছে!
অবিলম্বে প্রফেসর ড. এএফএম রেজাউল করিম সিদ্দিকীর হত্যাকারীদের গ্রেফতার করে ফাঁসির দাবী জানিয়ে সাদা দলের নেতৃবৃন্দ বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরে একের পর এক এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অপমৃত্যুর শিকার হচ্ছেন, কিন্তু কোন ঘটনারই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ বিচার না হওয়ার ফলে দুষ্কৃতকারীরা পার পেয়ে যাচ্ছে। শিক্ষকবৃন্দ আরও উল্লেখ করেন যে, দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ ঘটনার যথাযথ বিচার না হলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলতে বাধ্য হবে। শিক্ষকবৃন্দ মরহুমের রূহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী শিক্ষকবৃন্দের মধ্যে রয়েছেন: প্রফেসর ড. মামুনুল কেরামত, প্রফেসর ড. মু. আজহার আলী, প্রফেসর ড. আব্দুর রহমান সিদ্দিকী, প্রফেসর ড. মো. শামসুল আলম সরকার, প্রফেসর ড. সি. এম. মোস্তফা, প্রফেসর ড. কে বি এম মাহবুবুর রহমান, প্রফেসর ড. মো. আমজাদ হোসেন, প্রফেসর ড. এ. বি. এম. শাহজাহান, প্রফেসর ময়েজুল ইসলাম, প্রফেসর ড. মো. বেলাল হোসেন, প্র্রফেসর ড. মো. সাইফুল ইসলাম ফারুকী, প্রফেসর ড. মামুনুর রশীদ, প্রফেসর ড. মো. ফরিদুল ইসলাম, প্রফেসর ড. মোস্তফা কামাল আকন্দ, প্রফেসর ড. গোলাম সাদিক, প্রফেসর ড.দিল আরা হোসেন, প্রফেসর ড. আব্দুল হান্নান, প্রফেসর ড. আমিনুল হক, প্রফেসর ড. সাইফুল ইসলাম, ড. ইফতিখারুল আলম মাসউদ, ড. মোহাম্মদ আলী , প্রফেসর ড. শাহনাজ পারভীন, প্রফেসর ড. ফারজানা আশরাফী নীলা, প্রফেসর ড. মো. শামসুজ্জোহা এছামী, প্রফেসর ড. মো. আব্দুল আলীম, ড. সৈয়দ সারওয়ার জাহান লিটন, ড. কুদরত-ই-জাহান, মিসেস লাভলী নাহার, প্রফেসর ড. ফাহমিদা চৌধুরী, ড. শামীমা নাসরীন সীমা, ড. আল আমীন সরকার প্রমুখ।
এক দশকে চার শিক্ষক খুন:
ড. এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকীসহ গত এক দশকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীলমনা চারজন শিক্ষক নির্মম হত্যাকা-ের শিকার হন। ২০১৪ সালের ১৫ নভেম্বর বিকেল পৌনে ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন চৌদ্দপাই এলাকায় খুন হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষক প্রফেসর ড.শফিউল ইসলাম। শফিউল ইসলাম লালল ভক্ত ছিলেন। তিনি মুক্তমনা ও প্রগতিশীল আদর্শের অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত ছিলেন। তার বিভাগীয় সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রফেসর শফিউল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের একজন সদস্য। আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের প্যানেল থেকে তিনি একাধিকবার প্রার্থী হয়ে শিক্ষক সমিতির বিভিন্ন পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এছাড়া তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য, বিভাগীয় সভাপতিসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন। এ হত্যার ঘটনার পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে ফেসবুক পেজে হত্যার দায় স্বীকার করে স্ট্যাটাস দেয় জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম বাংলাদেশ।
এ হত্যা মামলার কয়েকবার তদন্তকারী কর্মকর্তা বদলের পর গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর দুপুরে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক রেজাউস সাদিক চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেন। ১১ জনের বিরুদ্ধে এ অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।
এর আগে ২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর ড. এস তাহের আহমেদ বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকা থেকে নিখোঁজ হন। পরে দুইদিন পর ৩ ফেব্রুয়ারি বাসার পেছনের সেফটিক ট্যাংক থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। হত্যাকা-ে জড়িত থাকার দায়ে আদালত বিভাগের এক শিক্ষক, এক শিবির নেতাসহ চারজনকে মৃত্যুদ- দেন। রায়ের বিরুদ্ধে আসামিরা উচ্চ আদালতে আপিল করেন। পরে ২০১৩ সালের ২১ এপ্রিল দুজনের মৃত্যুদ- বহাল রাখেন হাইকোর্ট। তাঁরা হলেন ড. তাহেরের সহকর্মী একই বিভাগের শিক্ষক ড. মিয়া মো. মহিউদ্দিন এবং ড. তাহেরের বাসার তত্ত্বাবধায়ক মো. জাহাঙ্গীর আলম।
এর আগে ২০০৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর ভোরে প্রাতঃভ্রমণে বের হলে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিনোদপুরের নিজ বাসভবনের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আওয়ামীপন্থী অর্থনীতির প্রফেসর ড. ইউনুসকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় তার ছোট ভাই আব্দুল হালিম বাদী হয়ে ওইদিন নগরীর মতিহার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। সিআইডি পুলিশ মামলার তদন্ত শেষে ৮ জেএমবি সদস্যকে আসামি করে এ মামলার চার্জশিট দাখিল করে। পরে ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি ছয়জনকে বেকসুর খালাস দিয়ে দুই আসামির মৃত্যুদ-াদেশ দেন রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইবুনাল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।