Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ব্যাপক সংঘর্ষ ভোট বর্জন, কেন্দ্র দখল, গুলি, নিহত ১

প্রকাশের সময় : ২৪ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : গতকাল দেশের বিভিন্ন স্থানে তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ব্যাপক সহিংসতা, গুলি, জালভোট, ভোট বর্জন, কেন্দ্র দখল ও হামলা-পাল্টা হামলার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। পাবনার চাটমোহরে বিজিবির গুলিতে এক বিএনপি কর্মী নিহত হয়েছে।
খাগড়াছড়ি জেলা সংবাদদাতা জানান, বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে খাগড়াছড়ি জেলার ৩২ ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। কোথাও বড় ধরনের কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া না গেলেও জেলার পানছড়ি উপজেলায় ব্যাপক জাল ভোট প্রদান ও এজেন্টদের বিরুদ্ধে ভোটারদের কাছ থেকে ব্যালট ছিনিয়ে নিয়ে ভোট প্রদানের অভিযোগ উঠেছে।
সকাল আটটায় একযোগে ৩২টি ইউনিয়ন পরিষদের ভোটগ্রহণ শুরু হয়। বেলা বাড়ার সাথে সাথে কেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে পানছড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কিছুটা উত্তেজনা দেখা দেয়। ওই ইউনিয়নের পাহাড়ি আঞ্চলিক সংগঠন ইউপিডিএফ সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রিয়ংকর চাকমা অভিযোগ করেন, আওয়ামী প্রার্থীর এজেন্টরা ভোটারদের কাছ থেকে ব্যালট ছিনিয়ে নিয়ে প্রকাশ্যে ভোট প্রদান করেছে। তবে অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে সংশ্লিষ্ট প্রিজাইডিং কর্মকর্তা। এছাড়া দুপুর দুইটার পর সদর ইউনিয়ন এবং লোগাং ইউনিয়নের বেশকটি কেন্দ্রে ভোটার ও এজেন্টদের বের করে দিয়ে জাল ভোট প্রদানের অভিযোগ করেছে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। আর একই অভিযোগে নির্বাচন বয়কট করেছে সদর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের সাধারণ সদস্য পদপ্রার্থী (বর্তমান মেম্বার) জয় প্রসাদ দেব।
এছাড়া দুপুর দুইটার দিকে জেলার দীঘিনালা উপজেলার কবাখালী ইউপির হছিনসনপুর উচ্চ বিদ্যালয় এবং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গুজবকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ কর্মীদের সাথে পাহাড়ি আঞ্চলিক সংগঠন সমর্থিত এক স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীর কর্মীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় দুটি মোটর সাইকেলে আগুন দেয় তারা। সৃষ্ট গোলযোগে প্রায় এক ঘন্টা ভোটগ্রহণ বন্ধ থাকার পর পুনরায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর ভোটগ্রহণ শরু করা হয়।  
এদিকে জেলার ৭টি ইউনিয়নের ১৫টি কেন্দ্রে এজেন্টদের মারধর করে কেন্দ্র থেকে বের ও ব্যালট পেপারে জোরপূর্বক সিল মারার অভিযোগ করেছে খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপি

শরীয়তপুরে ৩ সংঘর্ষে আহত ৯ : ১ কেন্দ্রে ভোট স্থগিত  
শরীয়তপুর জেলা সংবাদদাতা : গোসাইরহাট উপজেলার কোদালপুর ইউনিয়নে আ’লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সৈয়দ মনিরুজ্জামান বশির বেলা ৩টায় তার নির্বাচনী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান ও ্উপজেলা আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম মিজানুর রহমানের বিভিন্ন ভোট কেন্দ্র দখলসহ প্রশাসনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এনে নির্বাচন বর্জন করেছেন।
একই উপজেলার গোসাইরহাট ইউনিয়নে বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী তারিক আজিজ মোবারক ঢালী গতকাল দুপুর ১টায় নিজ বাড়ীতে সংবাদ সম্মেলন করে সরকার দলীয় প্রার্থীর বিভিন্ন কেন্দ্র দখল করে নৌকা মার্কায় সীল মারার অভিযোগে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। অপর দিকে ২ চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের কারণে বেলা ২টা থেকে সদর উপজেলার শৌলপাড়া ইউনিয়নের সারেঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মোতালেব খান ভোট গ্রহন স্থগিত ঘোষণা করেন। এখানে সংঘর্ষে রাশেদা বেগমসহ ৩ জন আহত হয়।
এদিকে একই উপজেলার আংগারিয়া ইউনিয়নের তুলাতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকা প্রতিকের প্রার্থী তাসলিমা রব ডোরা ও বিদ্রোহী প্রার্থী আনোয়ার হাওলাদারের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষে ৫ জন আহত হয়। আহতদের শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ সময় প্রায় ১ ঘণ্টা ভোটগ্রহণ বন্ধ থাকে। সদর উপজেলার চন্দ্রপুর ইউনিয়নে নির্বাচনকে কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির দায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত চন্দ্রপুরের শিবপুর রনখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আহম্মদ উল্যাহ মিয়া নামে একজনকে ২ বছরের কারাদ- দিয়েছে। অপর দিকে রুদ্রকর ইউনিয়নের বড় সোনামুখি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোক্তার চৌকিদার ও বিদ্রোহী প্রার্থী হাবিবুর রহমান ঢালীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে প্রিজাইডিং অফিসারের মোটর সাইকেল ভাঙচুর ও কামাল ঢালী নামে একজন আহত হয়।  
শ্রীপুরে সংঘর্ষ, এক কেন্দ্রের ভোট বাতিল
শ্রীপুর (মাগুরা) উপজেলা সংবাদদাতা : সংঘর্ষ, কেন্দ্র দখল ও ব্যালট বই ছিনতাইয়ের মধ্য দিয়ে গতকাল শ্রীপুর উপজেলার ৮ ইউনিয়নে ভোট গ্রহন সম্পন্ন হয়েছে। সরাসরি নির্বাচন কমিশন থেকে ১টি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। তবে শ্রীপুর থানা পুলিশ ও নির্বাচন কর্মকর্তারা বলছেন, ছোট-খাট কিছু বিচ্ছিন ঘটনাবাদে  নির্বাচন বেশ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা ১২ টার দিকে ৩ নং-শ্রীকোল ইউনিয়নের বারইপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে নৌকা প্রতীকের মুস্তাসিম বিল্লাহ সংগ্রাম এর সমর্থকরা জোরপূর্বক কেন্দ্র দখল করে ব্যালট পেপারে সিল মেরে তা বাক্সে জোর করে ঢুকিয়ে দেয়। এছাড়াও ওই প্রার্থীর পক্ষে একদল উচ্ছৃংখল যুবক মোটর সাইকেল বহর নিয়ে ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করে জোরপূর্বক ব্যালট ছিনিয়ে নিয়ে ভোট দেয়। কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা জীবন কুমার মন্ডল জানান, দু’টি ব্যালট বই ছিনতাই  হয়েছে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে চরম হিমশিম খায়। তবে এই কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা রকিব হোসেন মোল্লা জানান, পরিস্থিতি সামাল দিতে ৭ রাউন্ড শটগানের গুলি ছোঁড়া হয়েছে। পরিবেশ অনুকূলে না থাকায় দুপুর ১২টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত ২ ঘন্টা ভোট গ্রহণ বন্ধ ছিল। তাছাড়া একই ইউনিয়নের পূর্ব-শ্রীকোল ও দোসতিনা ভোট কেন্দ্রের সম্মুখে নৌকা প্রতীকের সমর্থক ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আনারস প্রতীকের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের কারণে উভয় কেন্দ্রে প্রায় আধা ঘন্টা ভোট গ্রহণ বন্ধ ছিল। শ্রীকোল ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত রির্টানিং অফিসার মধু সূদন সাহা বলেন, সরাসরি নির্বাচন কমিশন থেকে বারইপাড়া কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ বাতিল ঘোষনা করা হয়েছে।৮ নং-নাকোল ইউনিয়নের  রায়নগর ভোট কেন্দ্রে দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হলে ৫ জন আহত হয়। ২ নং আমলসার ইউনিয়নে রাজাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে নৌকা প্রতীক ও ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষে কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছে। তাছাড়া এই ইউনিয়নের কয়েকটি ভোট কেন্দ্রে নৌকা প্রতীকের এজেন্টরা প্রকাশ্যে নৌকা মার্কায় সিল দিতে ভোটরদের বাধ্য করেছে। ৪ নং শ্রীপুর ইউনিয়নের হাট-দারিয়াপুর কেন্দ্রে দুই মেম্বার প্রার্থীর সর্মথকদের মধ্যে সংঘর্ষে ৫ জন আহত হয়েছে।
ধনবাড়ীতে জালভোট প্রদান-পুলিশের
ফাঁকা গুলি ও ভোট বর্জন
ভোট গ্রহণ
টাঙ্গাইল জেলা সংবাদদাতা : কেন্দ্র দখল, জাল ভোট ও প্রার্থীদের ভোট বর্জনের মধ্যদিয়ে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীর ৭টি ইউনিয়ন পরিষদের ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ৬৩টি ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।
সকাল থেকে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হলেও, দুপুরের পর বিভিন্ন এলাকায় সরকার দলীয় প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কেন্দ্র দখল করে জাল ভোট দেয়ার অভিযোগ আনেন বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। দুপুরে যদুনাথপুর ইউনিয়নের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মো: আব্দুল আজিজ আ’লীগের প্রার্থী মীর ফিরোজ আহমেদের বিরুদ্ধে ইউনিয়নের যনুনাথপুর, চারিশিমুল, জাগিরাচালা, ইসলামপুর, পাথালিয়া, কলহপুরাসহ বেশ কয়েকটি কেন্দ্র দখল করে জালভোট দেয়ার অভিযোগ এনে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে যদুনাথপুর ইউনিয়নের চারিশিমুল দক্ষিণ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরকারদলীয় প্রার্থীর সমর্থকরা ব্যালট ব্যাক্স ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করলে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ২ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে।
অপরদিকে ধোপাখালী ইউনিয়নের হাজরাবাড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুপুর দেড়টার দিকে সরকারদলীয় প্রার্থীর লোকজন জোর পূর্বক ব্যালটপেপার  সিল দেয়ার সময় পুলিশ বাধা দেয়। এসময় পুলিশের সাথে তাদের হাতাহাতি হলে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ৬ জনকে আটক করে।
নাটোর সদরে ৫ বিএনপি প্রার্থীর ভোট বর্জন
নাটোর জেলা সংবাদদাতা : প্রকাশ্যে গণহারে কারচুপি, জাল ভোট প্রদান, ভোটারদের হাত থেকে ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে নৌকায় সীল মারা, স্বয়ং বর্তমান চেয়ারম্যানকে ভোট দিতে না দেয়া ও বিএনপি সমর্থিত পোলিং এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগে নাটোর সদরের সাত ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে পাঁচ চেয়ারম্যান প্রার্থী শনিবার সকালেই পৃথক পৃথক সংবাদ সম্মেলন করে ভোট বর্জন করেছেন। এদের মধ্যে চারজন বর্তমান চেয়ারম্যান।
সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কারচুপির ঘটনায় প্রথম ভোট বর্জন করেন সদরের ছাতনী ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ধানের শীষের প্রার্থী সুলতান আহমেদ। এর পরপরই একে একে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান জেলা বিএনপির নেতা ও কাফুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান খবির উদ্দিন শাহ্, লক্ষীপুর খোলাবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা মোঃ রফিকুল ইসলাম রফিক, হালসা ইউনিয়ন পরিষদের ধানের শীষের চেয়ারম্যান প্রার্থী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি প্রভাষক মোঃ ইব্রাহীম হোসেন। সকাল ১১টার দিকে ভোট থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন জেলা বিএনপির নেতা ও তেবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ গোলাম সারোয়ার।
ভোট বর্জনকারী ধানের শীষের প্রার্থীদের মধ্যে লক্ষীপুর খোলাবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ রফিকুল ইসলাম রফিক জানান, ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডারদের বাধার কারণে তিনি নিজে ভোট দিতে পারেন নি। যেখানে নিজেই ভোট দিতে সক্ষম হন নাই সেখানে সাধারণ ভোটারদের কি অবস্থা তা অনুমান করতে পেরেই তারা এই প্রহসনের ভোট থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
চাঁদপুরে ৪ কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধ : গুলিবিদ্ধ ৫, আহত ৫০
চাঁদপুর জেলা সংবাদদাতা : চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ ও ফরিদগঞ্জ উপজেলায় ইউপি নির্বাচনে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, সংঘর্ষ, ব্যালট পেপার ছিনতাই ও গোলাগুলিসহ বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। এসব ঘটনায় ৫ পুলিশ সদস্যসহ আহত হয়েছে কমপক্ষে ৫০ জন। এদের মধ্যে মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতলে চিকিৎসাধীন ৭ জন। কেন্দ্রে বিশৃংখলা করার সময় বিপুল পরিমাণ অস্ত্রসহ ফরিদগঞ্জের ৮নং পাইকপাড়া ইউনিয়নের সাহাপুর কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী শওকত বিএসসিসহ ১৩ জনকে দুটি মাইক্রবাসহ আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। পরে চেয়ারম্যানপ্রার্থীকে ছেড়ে দেয়া হয়।
এছাড়াও হাজীগঞ্জের রাজারগাঁও ইউনিয়নের আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রফিকুল ইসলামকে আটক করেছে পুলিশ। এদিকে কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা ও ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নেয়ার কারণে ফরিদগঞ্জের ৪টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করেছে স্বস্ব কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তারা।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, ফরিদগঞ্জে গোবিন্দপুর ইউনিয়নের ধানুয়া কেন্দ্রের বাইরে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ কর্মী-সমর্থকদের মাঝে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এ ঘটনায় একজন গুলিবিদ্ধসহ আহত হয় কমপক্ষে ১০জন। একই উপজেলার বালিথুবা ইউনিয়নের লোহাগড়া কেন্দ্রেও একই ঘটনা ঘটায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কর্মীরা। এ কেন্দ্রে হাসান তারেক নামের এক পুলিশ সদস্য গুলিবদ্ধসহ আহত হয় ৬ জন। এছাড়াও গোবিন্দপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের ১নং হাসা সিনিয়র মাদ্রাসা কেন্দ্রে সকাল ১১টায় দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাবার বুলেট ছোড়ে। এতে ২ জন গুলিবিদ্ধসহ ৪ জন আহত হয়।
শেরপুর গুলি, ব্যালট ছিনতাই : আহত ৫০
শেরপুর থেকে মো: মেরাজ উদ্দিন : শেরপুরের ৬ ইউনিয়নের ভোট গ্রহণ সকাল আটটায় শান্তিপূর্ণভাবে শুরু হলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে বিভিন্ন কেন্দ্রে শুরু হয় সংঘর্ষ। এসময় পুলিশ অন্তত ৫০ রাউন্ড গুলি ছুঁড়ে গুলিদ্ধিসহ আহত হয় কমপক্ষে ৫০জন। কেন্দ্র দখল নিয়ে কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা তুমুল সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। বেশ কয়েকটি কেন্দ্র কয়েক ঘন্টা করে ভোট গ্রহণ স্থগিত থাকে।
জানা যায়, ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার পর থেকে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহন চলতে থাকলেও ভোর রাতে কয়েকটি কেন্দ্রের বাইরে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ১৫ জন আহত হয়। আহতদের মধ্যে এক জনকে আশংকাজনক অবস্থায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।
পুলিশ জানায়, ভোর রাতে চরপক্ষীমারী ইউনিয়নের সাতপাকিয়া কেন্দ্রে সিল মেরে বাক্স ভর্তি করছে এমন গুজব ছড়িয়ে পড়লে সেখানে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সংঘর্ষে কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়। একই ইউনয়নের বেপারীপাড়া কেন্দ্রে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এখানে পুলিশ ১০ রাউন্ড গুলি করে। আহত হয় ৫ জন। এদিকে চরশেরপুর ইউনিয়নের চরশেরপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে সকালে দুই মেম্বার প্রার্থীর সংঘর্ষে ৭ জন আহত হয়। আশংকাজন্ক অবস্থায় রিয়াজুল নামের একজনকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। ওই কেন্দ্রে দুপুরে মেম্বার প্রার্থী হানিফ ও শহিদুলের সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এসময় হানিফের বাড়ীতে ভাংচুর করে শহিদুলের সমর্থকরা। এখানেও কমপক্ষে ৩জন আহত হয়। একই ইউনিয়নের হেরুয়া বালুরঘাট কেন্দ্রেও জাল ভোট দেয়া নিয়ে সংঘর্ষে মেম্বার প্রার্থী জামানের ভাই পোলিং এজেন্ট আক্রাম হোসেন আঙ্গুরকে ভোট কক্ষের মধ্যেই গুলি করলে সে গুরুতর আহত হয়। তাকে প্রথমে শেরপুর সদর, পরে ময়মনসিংহ ও পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এসময় আরো ৫জন আহত হয়। সংঘর্ষের সময় পুলিশ ৮ রাউন্ড গুলি ছুড়ে। অপর দিকে চরশেরপুর ইউনিয়নের যুগিনীমোড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ শুরুর আগে দুই মেম্বার প্রার্থীর মাঝে সংঘর্ষ বাধলে ৩ জন আহত হয়।
কামারেরচর ইউনিয়নের চকসাহাব্দী কেন্দ্রে, নামাপাড়া কেন্দ্রে ও লতারিয়া কেন্দ্রে মেম্বার প্রার্থীদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এখানে পুলিশ ১৮ রাউন্ড গুলি ছুড়ে। এখানে আহাত হয় কমপক্ষে ২০ জন। একই ইউনিয়নের ৭নংচর কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ শেষে দুই মেম্বার প্রার্থীর মধ্যে সংঘর্ষের এক পর্যায়ে ভোটের বাক্স ছিনতাই করে নিয়ে যায়। এতে ওই কেন্দ্রের ভোট বাতিল করা হয়। এছাড়া আরো বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে।
মাগুরার শ্রীপুরে ৭টিতে আওয়ামীলীগ বিজয়ী ১টি স্থগিত
মাগুরা জেলা সংবাদদাতা : তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। বারই পাড়া কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করায় এ ইউনিয়নের ফলাফল স্থগিত করা হয়েছে।
বেসরকারী ফলাফলে শ্রীপুর ইউনিয়নে মশিয়ার রহমান, সব্দালপুর ইউনিয়নে নুরুল হোসেন মোল্যা, কাদির পাড়া ইউনিয়নে লিয়াকত আলী, আমলসার ইউনিয়নে সেবানন্দ বিশ্বাস, গয়েশপুর ইউনিয়েনে আব্দুল হালিম মোল্যা, দ্বারিয়াপুর ইউনিয়নে জাকির হোসেন কানান, নাকোল ইউনিয়নে হুমাউনুর রশিদ মুহিত বিজয়ী হয়েছেন। তবে শ্রীকোল ইউনিয়নের বারইপাড়া কেন্দ্রের ভোট স্থগিত থাকায় এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত শ্রীকোল ইউনিয়নের ফলাফল পাওয়া যায়নি।
ফটিকছড়িতে ৩ ইউপিতে ভোট বর্জন আ’লীগের
ফটিকছড়ি উপজেলা সংবাদদাতা : তৃতীয় দফা ইউপি নির্বাচন ফটিকছড়িতে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, ভোট কেন্দ্র দখলের মধ্যে দিয়ে শেষ হয়েছে। এ নির্বাচনে ৩ ভোট কেন্দ্রে ৬ জন গুলিবিদ্ধ এবং পুলিশসহ অর্ধ শতাধিক লোক আহত হয়েছে। ৩টি ইউপিতে ভোট বর্জন করেছে আওয়ামীলীগ এবং ৭টিতে পুনর্নির্বাচনের দাবী জানিয়েছে বিএনপি।   
গতকাল দুপুর দেড়টা নাগাদ সুন্দরপুর ইউপির একখুলিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকার ৭/৮ জন সমর্থক হঠাৎ কেন্দ্রে প্রবেশ করে ব্যালট পেপারে সীল মারা শুরু করলে পুলিশ তাতে বাধা সৃষ্টি করে। এ সময় নৌকা সমর্থক ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ কেন্দ্র রক্ষার্থে গুলিবর্ষণ করলে আরাফাত (২৩), হোসনেরা বেগম (৪৫) গুলিবিদ্ধ হয় এবং মোহছেনা বেগম (৫৫), সানজিদা আফরিন (১৬) ও আলা উদ্দিন (২৭) আহত হয়। আহতদের মধ্যে হোসনেরা বেগমকে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বেলা ৩টার দিকে পাঁচপুকুরিয়া কাজীরখিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে আ’লীগ নেতারা প্রকাশ্যে ভোট ডাকাতি শুরু করলে দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা-ধাওয়া শুরু হয়। এ সময় দু’কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ বন্ধ ছিল কিছুক্ষণ। অপরদিকে হারুয়াছড়ি ইউপির হারুয়ালছড়ি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট চলাকালীন ২টার দিকে কেন্দ্রে এজেন্ট নিয়ে সমস্যার সৃষ্টি হলে উভয়ের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য পুলিশ ৬ রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে। এ ঘটনায় স্থানীয় আ’লীগ নেতা মোঃ সামশুল আলম (৫০) আহত হয়। এছাড়া পাইন্দং আরবীয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে ব্যালেট পেপার ছিনতায় চেষ্টায় রফিকুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি কে ৭২ দিনের জেল দিয়েছে এবং তার নিকট হতে ৩৬ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।                                                                                                                                   
নানা অনিয়মে না’গঞ্জে ভোট গ্রহণ
না’গঞ্জ থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, কেন্দ্র দখল, ব্যালট পেপার ছিনতাই, জালভোট, ভোট দিতে বাধা, নির্বাচন বয়কট ও কেন্দ্রস্থগিত করা দিয়ে শেষ হলো তৃতীয় ধাপের নারায়ণগঞ্জের ১১টি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচনের ভোট গ্রহণ।
রূপগঞ্জ ৬৯নং প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নির্বাচন স্থগিত করেছেন প্রিজাইডিং অফিসার উত্তম কুমার। শনিবার বিকালে নানা অভিযোগের কারণ দেখিয়ে ওই কেন্দ্রে নির্বাচন স্থগিত করেন তিনি।এ কেন্দ্রে সকাল থেকে আসা ভোটারদের ভোট চুরি, ব্যালট পেপার ছিনতাইসহ আতংক সৃষ্টি করার জন্য বেশ কয়েটি ককটেল বিস্ফোরণে অভিযোগ পাওয়া যায়। পরে প্রিজাইডিং অফিসার বিকেলে কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করেন।
বিএনপি প্রার্থীর ভোট বর্জন
সদর উপজেলার এনায়েতনগর ইউনিয়নে বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী এসএম আলমগীর হোসেন ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। ব্যালটে প্রকাশ্যে সীল মারাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে শনিবার বেলা ১১টায় নারায়ণগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে তিনি ভোট বর্জনের এ ঘোষণা দেন।
প্রসঙ্গত, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার যে ৬টি ইউনিয়নে নির্বাচন হচ্ছে তার মধ্যে তিনটিতে নির্বাচনের আগেই বিনা প্রতিদ্বদ্বিতায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। এছাড়া অপর তিনটি ইউনিয়নের মধ্যে শুধুমাত্র এনায়েতনগরেই বিএনপি প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
বেলকুচিতে বিএনপি প্রার্থীর ভোট বর্জন
সিরাজগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা : সিরাজগঞ্জের ৫উপজেলায় ২২টি ইউনিয়নে ২৭২টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্য দিয়ে সকালে ভোট গ্রহণ হলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে বিভিন্ন কেন্দ্রে শুরু হয় কারচুপি। ভোট কারচুপি ও জোর করে সিল মেরে ভোট ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ এনেছে বিএনপি প্রার্থীরা। নির্বাচন চলাকালে দুপুরে বেলকুচি উপজেলার ৪নং দৌলতপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোট কারচুপির অভিযোগ এনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করেন। এর আগে তিনি উপজেলা নির্বাচনী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন ভোট চলাকালে দৌলতপুর ইউনিয়নে জোরপূর্বক সকল কেন্দ্র দখল করে নৌকা প্রতেিক সিল মেরে বাক্স ভরাট করেছে। যে কারনে তিনি বাধ্য হয়ে ভোট বর্জন করেছেন।
এদিকে একই উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে কদমতলী কেন্দ্রে ২ মেম্বর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সময় ফুটবল মার্কা নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়া মেম্বর প্রার্থী সরোয়ার হোসেনকে মারপিট করে গুরুতর আহত করে। পরে ৩০ মিনিট ভোট গ্রহণ স্থগিত থাকে। এছাড়া, একই উপজেলার লক্ষ্মীপুর কেন্দ্রে মেম্বর প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম ৩টি ব্যালট বই ছিনতাই করে জোরপূর্বক সিলমারার সময় প্রতিপক্ষের সাথে সহিংসতার সৃষ্টি হলে ভোট কেন্দ্র দেড় ঘন্টা স্থগিত থাকে।
বেলকুচি উপজেলার ভাঙ্গাবাড়ী ইউনিয়নের আদাচাকী কেন্দ্রে জোরপূর্বক ভোট প্রদানের সময় আইন-শৃংখলা বাহিনী তাদের ধাওয়া করে। পরে বিক্ষুব্ধরা সেখানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়িতে ইট-পাটকেল ছুড়লে গাড়ীর কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
কুমিল্লায় আহত অর্ধশতাধিক : ৫ কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত
স্টাফ রিপোর্টার কুমিল্লা থেকে জানান, দফায় দফায় সংঘর্ষ, গুলি, ককটেল বিস্ফোরণ, ব্যালট পেপার, বাক্স ও সিল ছিনতাই, জালভোট প্রদান, বিএনপির এজেন্টদের মারধর করে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া এবং সর্বোপরি ক্ষমতাসীনদের কেন্দ্র দখলের মধ্য দিয়ে গতকাল কুমিল্লার তিন উপজেলার ১৮টি ইউনিয়নে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। এসব ইউনিয়নে পৃথক সংঘর্ষে অন্তত অর্ধশতাধিক আহত হয়েছে। চূড়ান্তভাবে ২ উপজেলার ৫টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। দুপুর ১২টার আগেই অধিকাংশ বিএনপি সমর্থক চেয়ারম্যান প্রার্থী ভোট কেন্দ্র ছেড়ে যান। এদের মধ্যে কেউ কেউ আনুষ্ঠানিক ভোট বর্জনের ঘোষণাও দেন।
বিকালে জেলা সিনিয়র নির্বাচন অফিসার রাশেদুল ইসলাম জানান, কর্মকর্তাদের মারধর করে ব্যালট বাক্স, সিল ও ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের কারনে জেলার আদর্শ সদর উপজেলায় ৪টি এবং বুড়িচং উপজেলার ১টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত রাখা হয়েছে। এর মধ্যে আদর্শ সদর উপজেলার দুর্গাপুর (উত্তর) ইউনিয়নের বদরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ব্যালট বাক্স ছিনতাই, দুর্গাপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের মতিনগর সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতি কেন্দ্রে ব্যালট পেপার ও সিল ছিনতাই, একই উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের জগন্নাথপুর বেগম জহিরুন্নেছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র, রুগুপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাকে মারধর করে ব্যালট পেপার ও সিল ছিনতাইয়ের কারণে ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়। এছাড়াও বুড়িচং উপজেলার মোকাম ইউনিয়নের আবিদপুর স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্রে আ’লীগ এবং বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মাঝে দফায় দফয় সংঘর্ষ ও গুলি বিনিময়ের ঘটনায় নির্বাচনের পরিবেশ না থাকায় ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়। পাঁচথুবি ইউনিয়নের চানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র ও আবুল মেমোরিয়াল স্কুল কেন্দ্রে মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে বেলা সাড়ে ১২টা থেকে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে প্রায় ৪ জন আহত হয়েছে। এছাড়াও বহিরাগতদের ইটের আঘাতে চানপুর প্রাইমারি স্কুল কেন্দ্রে দায়িত্বরত পুলিশের এসআই আবদুল জলিল আহত হন। প্রায় ১ ঘন্টা ভোটগ্রহণ বন্ধ থাকার পর কেন্দ্র দুটিতে পুনরায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়।    
বুড়িচং উপজেলার জগতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে একজন প্রার্থীর পক্ষে সিল মারার অভিযোগে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক রফিজুল আলম, শাহ আলম নামের ২ সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তাকে আটক করা হয়েছে। এরা দুইজনই একই উপজেলার শ্রীমন্তপুর এমএ সাত্তার উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক।
এদিকে কেন্দ্রে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বুড়িচংয়ের রাজাপুর ইউনিয়নের লাল মিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র,  মোকাম ইউনিয়নের আবিদপুর স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্র, মোকাম ইউনিয়নের হাজী চেরাগ আলী উচ্চ বিদ্যালয় ও বারাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে সদর উপজেলার দক্ষিণ দুর্গাপুর ইউনিয়নের খেতাসার কেন্দ্রে, কালিবাজার ইউনিয়নের আনন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র, জগন্নাথপুর ইউনিয়নের ঝাকুনিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বাজগড্ডা মেমোরিয়াল প্রাথমিক বিদ্যালয়,লাকসাম উপজেলার আসগরা ইউনিয়নের ঘাটার নয়াপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে প্রতিপক্ষ প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মাঝে পৃথক সংঘর্ষ, গুলি ,ককটেল বিস্ফোরণ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত অর্ধশতাধিক আহত হয়েছে।  
ঈশ্বরগঞ্জ ও নান্দাইলে প্রার্থীসহ দু’জনকে কারাদ-
ময়মনসিংহ আঞ্চলিক অফিস : ঈশ্বরগঞ্জ ও নান্দাইল উপজেলার ২২ ইউনিয়নে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
তবে নির্বাচন চলাকালে দুপুরের দিকে ঈশ্বরগঞ্জে মকবুল হোসেন নামের এক ইউপি সদস্য প্রার্থীকে ও নান্দাইলে রনি নামের এক গার্মেন্টস কর্মীকে জাল ভোট দেয়ার অভিযোগে আটক করে ৬ মাসের কারাদ- দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। নান্দাইল ও ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নোয়াখালীতে পুনঃনির্বাচনের দাবী বিএনপি’র
নোয়াখালী ব্যুরো : নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলায় বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের উপর হামলা নির্বাচনী অফিসে হামলা ভাঙচুর, দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অবরুদ্ধ, ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে বাধা প্রদান এবং ধানের শীষের এজেন্টদের অস্ত্রের মুখে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়ার মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয়েছে ইউপি নির্বাচন। কয়েকটি স্থানে হামলায় বিএনপি সমর্থিত কর্মী সমর্থক ভোটার এবং বিভিন্ন স্থানে আ’লীগ সমর্থিত মেম্বার প্রার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ২৩ জন আহত হয়েছে। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্র জবর দখলসহ নানা অনিয়মের কারণে ৯টি কেন্দ্রে ভোট স্থগিত করা হয়েছে।
দুপুরে চাটখিল দলীয় অফিসে বিএনপির প্রার্থীগণ ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি আনোয়ার হোসেন এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, সকাল সাড়ে ৮টায় উপজেলার সাহাপুর, রামনারায়ণপুর, পরকোট, বদলকোট, পাঁচগাও, মোহাম্মদপুর ও নোয়াখলা ইউনিয়নসহ সকল ইউনিয়নের প্রায় সবক’টি কেন্দ্র শাসকদলীয় সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী জবর দখল করে নেয় চাটখিল উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবিরের নেতৃত্বে। এসময় তারা প্রিজাইডিং অফিসার, পুলিং এজেন্ট, পুলিশসহ প্রশাসনের বিভিন্ন সংস্থার সহযোগীতায় ধানের শীষ, সতন্ত্র প্রার্থী ও অন্যান্য দলের ইউপি সদস্য প্রার্থীর এজেন্টদের ও ভোটারদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে প্রকাশ্যে নৌকা প্রতীকে ভোট প্রদান করে। এ ঘটনার প্রতিবাদ করলে তাদের এজেন্টদের বেদম প্রহার করে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়। বিভিন্ন কেন্দ্রে ককটেল, বোমা পাটিয়ে ও গুলি করে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। আবার কোন কোন কেন্দ্রে এজেন্টদের ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সাধারন ভোটারদের ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে প্রকাশ্যে নৌকায় এবং আ’লীগ সমর্থিত ইউপি সদস্যদের ভোট দিতে বাধ্য করে। এ ব্যাপারে তাৎক্ষনিক রির্টানিং অফিসার ও নির্বাচন অফিসারকে লিখিত অভিযোগ দিলেও এ ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পুলিশসহ প্রশাসনের সহযোগিতায় কেন্দ্র জবর দখলরে প্রকাশ্যে নৌকায় ভোট প্রদান বিএনপি দলীয় প্রার্থী কর্মী সমর্থক ও এজেন্টদের মারধর এর প্রতিবাদে নির্বাচন বাতিল ও পুনরায় নির্বাচনের দাবী জানান সংবাদ সম্মেলনে।
লক্ষ্মীপুরে দুই পুলিশসহ আহত ২০
লক্ষ্মীপুর জেলা সংবাদদাতা ঃ বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের মধ্যদিয়ে শনিবার জেলার রায়পুর ও রামগঞ্জ উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের ৩য় পর্যায়ের ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচন চলাকালে বিভিন্নস্থানে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, গুলি বর্ষণ, ককটেল বিস্ফোরণ, ব্যালট পেপার ছিনতাই ও কেন্দ্র দখলের  ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্য গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২০ জন।
সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে রায়পুর উপজেলার সোনাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে সীল মেরে বাক্স ভর্তি করাসহ দায়িত্বরত নির্বাচনী কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করায় ওই কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত (বাতিল) করেছে সংশ্লিষ্ট প্রিজাইডিং অফিসার তাপস চক্রবর্তী। দুপুর ১২ টার দিকে একই অভিযোগে রাখালিয়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রেও ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়।
অন্যদিকে দুপুর ১ টার দিকে রামগঞ্জের ইছাপুর ইউনিয়নের পশ্চিম সুন্দড়া সরকারি পপ্রাথমিক বিদ্যালয়  কেন্দ্রে দূর্বৃত্তদের ছোঁড়া গুলিতে পুলিশের উপ পরিদর্শক (এসআই) সেলিম ও কনস্টেবল সফি উল্লাহ গুরুতর আহত হন। তাদেরকে সংকাটাপন্ন অবস্থায় নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এছাড়া রামগঞ্জের হোছনাবাদ, মাছিমপুর, কাঞ্চনপুরের পূর্ব বিগা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পানপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়, রায়পুরের সোনাপুর মাদ্রাসা ও পশ্চিম চরলক্ষি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রসহ দু’উপজেলার বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে সরকার দলীয় সমর্থকরা কেন্দ্র দখলের চেষ্টা করে জাল ভোট দেয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে মেম্বার প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে  ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে কমপক্ষে ১৮ জন আহত হন।
রূপগঞ্জে সংঘর্ষে পুলিশসহ আহত ১৭
রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা : রূপগঞ্জ উপজেলার পৃথক স্থানে দুই চেয়ারম্যান ও মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মাঝে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে পুলিশসহ অন্তত ১৭ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় পুলিশ ৫ জনকে আটক করেছেন। শনিবার দুপুরে উপজেলার ভোলাব ইউনিয়নের চারিতালুক ও গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের দড়িকান্দি এলাকায় ঘটে এ ঘটনা। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এসএম জাকারিয়া ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুর ১টার দিকে ভোলাব ইউপি নির্বাচনে চারিতালুক সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের আওয়ামীলীগ মনোনিত চেয়ারম্যান প্রার্থী আবুল হোসেন খাঁনের সমর্থকদের সঙ্গে বিএনপি মনোনিত প্রার্থী আলমগীর হোসেন টিটুর সমর্থকদের বাকবিতন্ডা হয়। এক পর্যায়ে উভয পক্ষের মাঝে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে পুলিশ সদস্য আনিছুর রহমান মিয়া, আরিফ হোসেনসহ উভয় পক্ষের অন্তত ১২ জন আহত হয়েছে। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন এবং পুনরায় ভোট গ্রহণ শুরু করেন। অপরদিকে, গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের আধুরিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের চেষ্টাকালে বই প্রতিকের আম্বিয়া হকের সমর্থকদের সঙ্গে মাইক প্রতিকের রেখা বেগমের সমর্থকদের বাকবিত-া হয়।  এক পর্যায়ে উভয় পক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় সেলিম মিয়া নামে এক পুলিশ সদস্য আহত হন। প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার আব্দুল হালিম মিয়



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ব্যাপক সংঘর্ষ ভোট বর্জন
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ