Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কারাগার আদালত বিতর্ক

মালেক মল্লিক : | প্রকাশের সময় : ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

আইনজীবীরা আইন জানেন না : আইনমন্ত্রী
প্রধান বিচারপতির হস্তক্ষেপ চান খালেদার আইনজীবীরা
এটা নিয়ে বির্তক হতেই পারে : ড. শাহদীন মালিক
চিকিৎসার নির্দেশনা চেয়ে রির্টের শুনানি আজ


জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিচারকার্যক্রম চলছে পুরাতন কেন্দ্রীয় করাগারে অস্থায়ী আদালতে। এই আদালতের বিচারকার্যক্রম নিয়ে শুরু হয়েছে নয়া বির্তক। খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আইন জানেন না বলে মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। আর বিএনপি আইনজীবীরা বলেছেন, পরিত্যক্ত কারাগারে কোনো বিচার কাজ চলতে পারে না। যদি চলে- তা হবে অবৈধ। প্রধান বিচারপতির সাথে পৃথক পৃথকভাবে আইনমন্ত্রী ও বিএনপি আইনজীবীরা দেখা করে সাংবাদিকদের কাছে এমন মন্তব্য করেন। কারাগারে আদালত বসিয়ে সাধারণত বিচারকার্যক্রম করা হয় না। তাই এমন বিষয় নিয়ে বির্তক হতেই পারে বলে মনে করেন বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক।এটা সরকারের জন্য মঙ্গলজনক নয়।
এদিকে খালেদা জিয়াকে বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়েছে। হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে আজ শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
গতকাল প্রথমে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের অস্থায়ী আদালত বসানো এবং খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার সার্বিক বিষয়ে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করেন বিএনপি আইনজীবীরা। এসময় তারা প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শ না করেই এ আদালত স্থানান্তর করা এবং বিচারিক সীমা লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী তদন্ত করে ব্যবস্থা দেখার জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে লিখিত আবেদন করেন। প্রধান বিচারপতি বিষয়টি দেখবেন বলে বিএনপি আইনজীবীদের আশ্বাস দিয়েছেন বলে তারা জানান। এরপর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক দেখা করেন।
গত ৪ সেপ্টেম্বর আইন মন্ত্রণালয় একটি গেজেট জারি করে। ওই গেজেটে বলা হয়, নিরাপত্তাজনিত কারণে সরকারি আলিয়া মদ্রাসার মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী আদালত থেকে নাজিমুদ্দিন রোডে অবস্থিত পুরাতন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের কক্ষ নম্বর-৭ কে অস্থায়ী আদালত ঘোষণা করা হয়েছে। এখন থেকে সেখানেই খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া চ্যারিটেবল দুর্নীতি মামলার বিচার কাজ সম্পন্ন হবে। প্রথম দিনের শুনানি বিএনপি আইনজীবীরা অংশ নেয়নি। তারা বলেছেন, বেআইনিভাবে সাজা দিতেই কারা আদালত। সরকার সংবিধান লঙ্ঘন করে সরকার পরিত্যক্ত কারাগারে অস্থায়ী আদালত গঠন করেছেন। সরকার পক্ষের আইনজীবীরা বলছেন, খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা ভুল ব্যাখা দিচ্ছেন। কোনো মামলা বিচারের জন্য কোনো স্থানকে আদালত হিসেবে ঘোষণা করা নতুন নয়। এমতাবস্থায় সর্বোচ্চ আদালতের গিয়ে প্রধান বিচারপতির সাথে আসামী পক্ষের আইনজীবীরা ও আইনমন্ত্রী দেখা করলেন। তবে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ইনকিলাবকে বলেছেন, কোন জায়গা আদালত স্থাপন করা বিষয়টি সরকারের ওপর নির্ভর করে। এটা আইনে কোন ব্যতয় ঘটেনি।
প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আইনমন্ত্রী বৈঠক: সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে আলোচনা না করে কারাগারে কোর্ট স্থাপন করে আইন মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করতে পারে না, খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের এমন দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, আমি মনে করি উনারা (বিএনপির আইনজীবীরা) যদি এ রকম কথা বলে থাকেন, তাহলে উনারা আইন জানেন না। ৩টার পর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সামনে গতকাল সাংবাদিকদের সঙ্গে এ কথা বলেন মন্ত্রী। এর আগে বেলা সোয়া ২টা থেকে ৩টা ১০ মিনিট পর্যন্ত প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদের সঙ্গে বৈঠক করেন। প্রধান বিচারপতিকে না জানিয়ে সরকার কারাগারের ভিতরে আদালত স্থাপন নিয়ম অনুযায়ী হয়নি প্রধান বিচারপতির কাছে খালেদার আইনজীবীদের এমন লিখিত অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, আমি এ বিষয়ে জানি না। আমি এ বিষয়ে অবগত নই। আমি জেনে তারপর জানাবো। বৈঠকের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতির সঙ্গে এটা আমার সৌজন্য সাক্ষাৎ
বিএনপি আইনজীবীদের বৈঠক: দুপুরে প্রধান বিচারপতির সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের খাস কামরায় গিয়ে সাক্ষাৎ করতে যান সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীনের নেতৃত্বে বিএনপি‘র সিনিয়র আইনজীবীরা। প্রায় আধা ঘণ্টা বৈঠক করেন তারা। এসময় উপস্থিত ছিলেন ছিলেন সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, সুপ্রিম কোট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন, সরকার ও এ জে মোহাম্মদ আলী, সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, নিতাই রায় চৌধুরী, মীর নাসির উদ্দীন এবং ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল প্রমুখ।
লিখিত আবেদনে ৩ যুক্তি: প্রথমত, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যগত অবস্থা ভালো না। তিনি গুরুতর অসুস্থ, তিনি হাঁটতে পারেন না। যা সরকারও স্বীকার করেছে। তবুও সরকার তার যথাযথ চিকিৎসার বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। দ্বিতীয়ত, পরিত্যক্ত কারাগারে কোনো বিচার কাজ চলতে পারে না। যদি চলে- তা হবে অবৈধ। তৃতীয়ত, দেশের কারাগারের তালিকা থেকে পরিত্যক্ত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারটি এখনও বাদ দেয়া হয়নি- সে কারণে সুপ্রিম কোর্টের অনুমতি ছাড়া পরিত্যক্ত কেন্দ্রীীয় কারাগারে আদালত স্থাপন অবৈধ ও আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত।
বৈঠক শেষে জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, হঠাৎ করে রাতের বেলা নিয়ম ও আইন বহির্ভূতভাবে জেল খানার একটি কক্ষকে অস্থায়ী আদালত স্থাপন করা হয়েছে। যাতে আইন অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করে নেয়ার বিধান থাকলেও সেটি করা হয়নি। বিষয়টি আমরা প্রধান বিচারপতিকে জানিয়েছি। তিনি ধৈর্যের সঙ্গে বিষয়টি শুনেছেন এবং বিষয়টি দেখবেন বলেও আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, গত তারিখে আপনারা দেখেছেন অসুস্থ অবস্থায় জোর করে খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির করা হয়েছে। বলতে গেলে খালেদা জিয়া বসতে পারে না, দাঁড়াতে পারে না, হাঁটতে পারে না। এ অবস্থায় তাকে হাজির করা হয়েছে। আইনজীবীদের কোনো জুডিশিয়াল নোটিশ পর্যন্ত করা হয়নি।
তিনি আরো বলেন, কমপক্ষে ২৪ ঘণ্টা আগে একটা জুডিশিয়াল আদেশ দিয়ে আইনজীবীদের একটা নোটিশ করতে হয়। সেই নোটিশ পর্যন্ত করে নাই। যেহেতু এটা ওপেন ট্রায়ালও না। সেই কারণে আমরা সেখানে উপস্থিত হতে পারি নাই। সেই কারণে এই আদালত আবার ১২ সেপ্টেম্বর তারিখ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমরা মনে করেছি, সংবিধানের অভিভাবক হচ্ছে সুপ্রিম কোর্ট। আর সুপ্রি কোর্টের অভিভাবক হচ্ছেন প্রধান বিচারপতি। সুতরাং এই ধরনের গেজেট নোটিফিকেশন ১৯ চ্যাপ্টার ১ সুপ্রিম কোর্ট অব বাংলাদেশ হাইকোর্ট রুলস ১৯৭৩ অনুসারে এইটা সুপ্রিম কোর্টের পাওয়ার। সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে আলোচনা না করে এই ধরনের কোর্ট স্থাপন করে প্রজ্ঞাপন জারি করতে পারে না। এই কথাগুলো আমরা বলেছি। আমরা বিশ্বাস করি প্রধান বিচারপতি আমাদের বিষয়টি যেভাবে শুনেছেন তিনিও চান বিচার বিভাগের সুপ্রিমিসি থাকবে এবং প্রধান বিচারপতি আমাদের এটা গ্রহণ করেছেন। আমরা আশাবাদী। তিনি বিষয়টি বিবেচনা করবেন। প্রধান বিচারপতি বলেছেন, আমি এটা দেখব। তিনি বলেছেন, আমার ক্ষমতাবলে, মাসদার হোসেন মামলার আলোকে এবং ১৯ বি অনুযায়ী আমার যেটুকু ক্ষমতা আছে সে অনুযায়ী আমি বিষয়টি বিবেচনা করব।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেছেন, কারাগারে আদালত বসিয়ে সাধারণত বিচারকার্যক্রম করা হয় না। যেখানে শত শত মামলা বিচারের অপেক্ষায়। সেখানে একটি মামলা কারাগারে আদালত বসিয়ে বিচার করা নিয়ে বির্তক হতেই পারে।এটা সরকারের জন্য মঙ্গলজনক নয়।
চিকিৎসা চেয়ে রিট: খালেদা জিয়ার চিকিৎসার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়েছে। এতে খালেদা জিয়াকে বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা সুবিধা দেয়ার জন্য নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। রিটে স্বরাষ্ট্র সচিব, কারা মহা-পরিদর্শক, ঢাকা জেলা প্রশাসক ও জেলা সিভিল সার্জনকে বিবাদী করা হয়েছে। খালেদা জিয়ার পক্ষে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই রিট করা হয় বলে জানান আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন।। ##



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খালেদা জিয়া

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ