পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইনকিলাব ডেস্ক : রাশিয়ার অ্যাটাক সাবমেরিনগুলোর অধিকাংশই গত দু’দশক ধরে স্ক্যান্ডিনেভিয়া ও স্কটল্যান্ডের উপকূল রেখা, ভূমধ্যসাগর ও উত্তর আটলান্টিকে ঘুর ঘুর করছে। পাশ্চাত্যের সামরিক কর্মকর্তাদের মতে, আমেরিকা ও ন্যাটোর সাগরতলের আধিপত্যের সাথে প্রতিযোগিতার লক্ষ্যে রাশিয়া তাৎপযপূর্ণভাবে তার সাবমেরিন উপস্থিতি বৃদ্ধি করেছে।
ইউরোপে মার্কিন নৌবাহিনীর শীর্ষ কমান্ডার অ্যাডমিরাল মার্ক ফার্গুসন গত শরতে রুশ নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল ভিক্টর চিরকভের প্রকাশ্য মন্তব্য উদ্ধৃত করে বলেছিলেন যে রাশিয়ার সাবমেরিন টহলের পরিমাণ গত বছরে ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এ প্রবণতা হ্রাস পায়নি। এ টহল হচ্ছে সাবমেরিন যুদ্ধ নিয়ে প্রেসিডেন্ট পুতিনের নবায়নকৃত আগ্রহের সবচেয়ে দৃশ্যমান লক্ষণ। তার সরকার অধিকতর নীরবে চলতে সক্ষম, উন্নততর অস্ত্রসজ্জিত ও অতীতের তুলনায় অনেক বেশি দক্ষ ক্রুদের দ্বারা পরিচালিত নতুন শ্রেণির ডিজেল ও পরমাণু শক্তি চালিত অ্যাটাক সাবমেরিনের জন্য শত শত কোটি ডলার ব্যয় করছে। আর তার ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে উত্তেজনা বাড়ছে।
এ উত্তেজনা হচ্ছে সম্প্রসারিত দ্বন্দ্ব ও সমর সজ্জার অংশ যাতে প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার শীতল যুদ্ধের। মস্কো শুধু উত্তর আটলান্টিকেই শক্তি প্রদর্শন করছে না, সে সিরিয়া ও ইউক্রেনেও শক্তি প্রদর্শন করছে এবং পারমাণবিক অস্ত্র ভান্ডার তৈরি করছে ও সাইবার যুদ্ধের সামর্থ বাড়াচ্ছে। আমেরিকার কর্মকর্তারা বলছেন, এটা হচ্ছে বছরের পর বছর অর্থনৈতিক পতন ও ব্যয় সংকোচনের পর তার প্রাসঙ্গিকতা প্রমাণের চেষ্টা।
নিরপেক্ষ আমেরিকান সামরিক বিশেষজ্ঞরা বর্ধিত রুশ সাবমেরিন টহলকে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর প্রতি বৈধ চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন। উত্তেজনা যদি নাও থাকে, তবু দুর্ঘটনা ও ভুল হিসেবের সম্ভাবনা আছে। তবে হুমকি যাই হোক, পেন্টাগন রাশিয়ার বর্ধিত সাবমেরিন টহলকে সাবমেরিন ও সাবমেরিন বিধ্বংসী যুদ্ধের জন্য বৃহত্তর বাজেটের পক্ষে যুক্তি হিসেবে ব্যবহার করছে।
আমেরিকার নৌ-কর্মকর্তারা বলছেন যে, স্বল্প মেয়াদে রুশ সাবমেরিনের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং পাশ্চাত্যের নৌযান ও ইউরোপীয় উপকূল রেখায় তাদের নজরদারির সক্ষমতা মনিটর করার জন্য আরো যুদ্ধজাহাজ, বিমান ও সাবমেরিন প্রয়োজন। দীর্ঘ মেয়াদে মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর ৪০টিরও বেশি টোমাহক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র বহনকারী নতুন ভার্জিনিয়া ক্লাস অ্যাটাক সাবমেরিন নির্মাণসহ আগামী পাঁচ বছরে সাগরতলে সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ৮.১ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ের প্রস্তাব দিয়েছে।
ন্যাভাল অপারেশনস প্রধান অ্যাডমিরাল জন এম. রিচার্ডসন বলেন, আমরা বিশ্বশক্তির প্রতিযোগিতার মধ্যে ফিরে গেছি। গত সপ্তাহে বাল্টিক সাগরে নিরস্ত্র দু’টি রুশ জঙ্গি বিমান বারবার একটি মার্কিন ডেস্ট্রয়ারের কাছে দিয়ে উড়ে যায় এবং একপর্যায়ে ডেস্ট্রয়ারটির ৩০ ফুটের মধ্যে চলে আসে বলে মার্কিন কর্মকর্তারা জানান। গতবছর রাশিয়ার নতুন ডিজেল সাবমেরিনের কয়েকটি সিরিয়ার লক্ষ্য বস্তুতে ৪টি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে।
পুতিনের সামরিক আধুনিকায়ন কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে বিমান, ট্যাংক ও বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাসহ নয়া আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র।
এটা নিশ্চিত যে রাশিয়া ও আমেরিকার সাবমেরিন বহরের মধ্যে অল্পই সমতা রয়েছে। রাশিয়ার প্রায় ৪৫টি অ্যাটাক সাবমেরিন আছে। এর মধ্যে ২৪টির মতো পারমাণবিক শক্তি চালিত। ২০টি ডিজেল চালিত। সেগুলো সাবমেরিন বা জাহাজ ডুবিয়ে দেওয়া, গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ টহল দেওয়ার লক্ষ্যে নির্মিত। কিন্তু পাশ্চাত্যের নৌ-বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এগুলোর মধ্যে মাত্র অর্ধেক প্রয়োজনের সময় মোতায়েনযোগ্য। অধিকাংশই দেশের কাছে অবস্থান করে এবং তাদের অভিযান উদ্দীপনাও শীতলযুদ্ধ আমলের চেয়ে অনেক নিচে।
যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫টি অ্যাটাক সাবমেরিন রয়েছে। সবগুলোই পারমাণবিক শক্তিচালিত। এছাড়া আরো ৪টি পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন রয়েছে যেগুলো ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ও স্পেশাল অপারেশনস বাহিনীর সৈন্য বহন করে। নির্দিষ্ট সময়ে আমেরিকার এক তৃতীয়াংশ অ্যাটাক সাবমেরিন সাগরে পাওয়া যায়, বাকিগুলো টহলে বা প্রশিক্ষণে কিংবা রক্ষণাবেক্ষণে থাকে। আমেরিকার নৌ-কর্মকর্তারা ও পশ্চিমা বিশ্লেষকরা বলেন, গতি, পানির নিচে অবস্থান ও নৈঃশব্দের মধ্যে স্বদেশের উপকূল থেকে বহুদূরে মোতায়েনের লক্ষ্যে নির্মিত আমেরিকার অ্যাটাক সাবমেরিনগুলো তাদের রুশ প্রতিপক্ষের সাবমেরিনের চেয়ে অনেক উন্নত।
রুশ সাবমেরিনগুলোর কাছ থেকে সাংকেতিক যোগাযোগ মনিটর করার জন্য পেন্টাগন অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এবং নতুন দূর নিয়ন্ত্রিত অথবা স্বশাসিত নৌযান তৈরির চেষ্টা করছে। ব্রিটেন, জার্মানি ও নরওয়েসহ ন্যাটো জোটের সদস্যরা বাল্টিক ও আর্কটিক সাগরে ক্রেমলিনের শক্তি প্রদর্শনের জবাবে একই সঙ্গে নতুন সাবমেরিন কেনা অথবা কেনার কথা বিবেচনা করছে।
তবে মস্কোর সম্প্রতি সংশোধিত জাতীয় নিরাপত্তা ও সমুদ্র কৌশল নীতিতে রুশ নৌশক্তির শক্তি প্রদর্শন এবং আর্কটিকের পাশাপাশি আটলান্টিক মহাসাগরের বিস্তীর্ণ এলাকায় প্রবেশাধিকার লাভের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। রুশ সাবমেরিন ও গোয়েন্দা জাহাজগুলো এখন সারাবিশ্বের ইন্টারনেট যোগাযোগ বহনকারী গুরুত্বপূর্ণ সাগরতলস্থ কেবলগুলোর কাছে ঘোরাঘুরি করছে, যা আমেরিকার সামরিক ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে যে উত্তেজনা বা সংঘাতের সময় রাশিয়ানরা এসব লাইনে হামলা চালাতে পারে। আমেরিকার সামরিক ও গোয়েন্দা বিশ্লেষকরা বলেন, রাশিয়া নৌ-বন্দর বা উপকূলীয় এলাকার বিরুদ্ধে ব্যবহারের লক্ষ্যে ছোট কৌশলগত ক্ষেপণাস্ত্র বহনে সক্ষম সাগরতলে চলতে পারে এমন মনুষ্যবিহীন ড্রোন নির্মাণ করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের মতো রাশিয়ারও বৃহৎ পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন রয়েছে, যা দূরপাল্লার পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র বহন করতে ও মহাসগরের নিচে একটানা কয়েকমাস অবস্থান করতে পারে। এসব সাবমেরিনও ভয়ংকর, তবে সেগুলো অ্যাটাক সাবমেরিনের মতো টহল দেয় না এবং সেগুলো আমেরিকার নৌ-কর্মকর্তাদের জন্য একই ধরনের উদ্বেগজনক নয়।
বিশ্লেষকরা বলছেন যে, অ্যাটাক সাবমেরিনের জন্য মস্কোর অব্যাহত বিনিয়োগ রাশিয়ার স্থল ও বিমান বাহিনীর বহু বিভাগের সাথে বৈপরিত্যমূলক যেগুলো শীতলযুদ্ধ পরবর্তীকালে মনোযোগ পায়নি। ওয়াশিংটনে আটলান্টিক কাউন্সিলের আন্তঃআটলান্টিক নিরাপত্তা উদ্যোগের পরিচালক ম্যাগনাস নরডেনমান বলেন, রাশিয়ার নৌ-কাঠামোতে নৌ-যুদ্ধ শক্তিতে সাবমেরিনগুলো হচ্ছে মুকুটের মণি। যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো সাপ্রতিককালে সাবমেরিন বিধ্বংসী কর্মকা-ে গুরুত্ব আরোপ করেনি এবং তারা তাদের দক্ষতা ক্ষয় হতে দিয়েছে।
পাশ্চাত্য ও মার্কিন কর্মকর্তারা বলেন, তাদের এ অবহেলা রাশিয়ার পুনরুজ্জীবন ঘটিয়েছে যা কিনা রাশিয়া কোণঠাসা হয়ে পড়েছে বলে তাদের কথার জবাব। অ্যাডমিরাল ফারগুসন সাক্ষাতকারে বলেন, রাশিয়া ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নকে যে তার অস্তিত্বের প্রতি হুমকি বলে মনে করে এ কথাটি বহু লোকই বোঝে না বলে আমার ধারণা।
ষষ্ঠ নৌবহরসহ মার্কিন নৌবাহিনীর ইউরোপীয় অপারেশনসের সদর দফতর নেপলসে কয়েক দশকের মধ্যে কমান্ডাররা প্রথমবারের মতো গ্রিনল্যান্ড, আইসল্যান্ড ও যুক্তরাজ্যকে পৃথককারী জি.আই.ইউ.কে খাঁড়ির চোক পয়েন্টের মধ্য দিয়ে রুশ সাবমেরিন চলাচল মনিটর করছেন। শীতল যুদ্ধের সময় ইউরোপের প্রতিরক্ষার জন্য এ নৌপথ গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
আটলান্টিক মহাসাগরে পৌঁছতে হলে সাবেক সোভিয়েত নৌবাহিনীকে শত শত মাইল প্রশস্ত সাগরের এ বিস্তারটুকু অতিক্রম করতে হত। একইভাবে যুদ্ধকালে ইউরোপীয় মিত্রদের সাহায্য করতে অগ্রসর হলে যুক্তরাষ্ট্র বাহিনীকেও থামাতে হলে এ পথ প্রয়োজন হয়।
কয়েক দশক ধরে আমেরিকার সাবমেরিন বিধ্বংসী বিমানগুলো আইসল্যান্ডের কেফলাভিক নৌ-বিমান ঘাঁটিতে মোতায়েন ছিল। কিন্তু ¯œায়ুযুদ্ধ শেষের কয়েক বছর পর ২০০৬ সালে সেগুলোকে প্রত্যাহার করা হয়। পরে যুক্তরাষ্ট্র ঐ ঘাঁটি থেকে পরিচালিত পি-৩ সাবমেরিন বিধ্বংসী বিমানের মাঝে মধ্যে উড্ডয়নের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। এখন মার্কিন নৌবাহিনী কেফলাভিকে নতুন করে অত্যাধুনিক পি-৮এ পসিডন সামুদ্রিক টহল বিমান মোতায়েন করতে যাচ্ছে।
মার্কিন কর্মকর্তারা উদ্বিগ্ন যে রাশিয়া আটলান্টিকের বাইরে ভূমধ্যসাগর ও কৃষ্ণসাগরে অধিক সংখ্যায় সাবমেরিন টহলের দিকে দৃষ্টি দিয়েছে। ভূমধ্যসাগরে রাশিয়ার একটিমাত্র বন্দর রয়েছে, তা হচ্ছে সিরিয়ার তারতাস। তবে নৌ-কর্মকর্তারা বলছেন, মস্কো সাইপ্রাস, মিসর বা লিবিয়ায় আরো বন্দর চায়।
যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা এ বছর আধা ডজন সাবমেরিন-বিধ্বংসী মহড়া আয়োজন করতে যাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে ‘ডায়নামিক মংগুজ’ নামে এ বসন্তে উত্তর সাগরে অনুষ্ঠেয় মহড়া। এতে ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, পোলান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধজাহাজ ও সাবমেরিন অংশ নেবে।
বর্তমানে টাফটস বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্লেচার স্কুল অব ল অ্যান্ড ডিপ্লোম্যাসির ডিন সাবেক অ্যাডমিরাল ও ন্যাটোর সাবেক সুপ্রিম অ্যালাইড কমান্ডার জেমস জি. স্টাভরাইডিস বলেন, আমরা এখনো একটি শীতল যুদ্ধে ফিরে যাইনি। তবে আমি নিশ্চিত যে, আমরা সেরকমই একটা দেখতে পারি। সূত্র দি নিউইয়র্ক টাইমস।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।