Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অর্ধেকেরও কম প্রাপ্তি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০১ এএম

উন্নয়ন-সহযোগীদের বৈদশিক সহায়তা
গত ৯ অর্থবছরে প্রতিশ্রুতি ৫ লাখ ৮৩ হাজার ৪৫৬ কোটি টাকা, প্রাপ্তি ২ লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা
সঠিক সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে না পারাই এই ফারাক -বিশেষজ্ঞদের অভিমত


উন্নয়ন-সহযোগীদের কাছ থেকে বৈদেশিক সহায়তা প্রতিশ্রুতি অর্ধেকও আদায় করতে পারছে না বাংলাদেশ। যদিও প্রতিশ্রুতি ও প্রাপ্তি প্রতিবছরই বাড়ছে। আর এ ক্ষেত্রে সঠিক সময়ে প্রকল্প বাস্তায়ন করতে না পারা এবং সুশাসনের অভাবকে দায়ী করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, বৈদেশিক সহায়তার রাজনৈতিক চরিত্র থেকেই গেছে। এক্ষেত্রে দাতা ও গ্রহীতা দুই পক্ষেরই জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে- সুশাসন প্রতিষ্ঠা। বিশেষজ্ঞরা বলেন, বৈদেশিক সাহায্যের অর্থ ব্যয়ের সক্ষমতা কতটুকু, কোন খাতে তা ব্যয় হবে, স্বচ্ছ ও দক্ষ ব্যবস্থাপনা রয়েছে কি না তা বিবেচনায় নেওয়া দরকার। সূত্র মতে, ২০০৯-১০ থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছর পর্যন্ত নয় বছরে বাংলাদেশের উন্নয়ন-সহযোগীদের কাছ থেকে বৈদেশিক সহায়তা এসেছে ২৮ হাজার ৬০১ মিলিয়ন ডলার। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় দুই লাখ ৩৭ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা। অথচ এই সময়ে ৭০ হাজার ২৯৬ মিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি পাওয়া যায়। বাংলাদেশী মুদ্রায় যা পাঁচ লাখ ৮৩ হাজার ৪৫৬ কোটি টাকা। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতিশ্রুতির অর্ধেকেরও কম প্রাপ্তি গত ৯ বছরে। যদিও ইআরডির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সর্বশেষ গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বৈদেশিক সহায়তাপ্রাপ্তির পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ২৯০ দশমিক ৭৫ মিলিয়ন ডলার; বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৫২ হাজার ২০৭ কোটি টাকা। স্বাধীনতার পর এক অর্থবছরে বৈদেশিক সহায়তার দিক থেকে এটাই সর্বাধিক।
সূত্র মতে, ২০০০-০১ থেকে ২০০৮-০৯ অর্থবছর পর্যন্ত নয় বছরে এ সহায়তার পরিমাণ ছিল ১৪ হাজার ২৫ মিলিয়ন ডলার; বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় এক লাখ ১৬ হাজার ৪০৭ কোটি টাকা। অপরদিকে এই সময়ে প্রতিশ্রুতির পরিমাণ ছিল ১৭ হাজার ৪৫৮ মিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ এক লাখ ৪৪ হাজার ৯০১ কোটি টাকা। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই সময়ে প্রতিশ্রুতি ও প্রাপ্তির ফারাক খুব বেশি ছিল না।
যদিও আগের নয় অর্থবছরের তুলনায় পরের নয় অর্থবছরে বৈদেশিক সহায়তাপ্রাপ্তি বেড়েছে ১৪ হাজার ৫৭৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় এক লাখ ২০ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। অর্থাৎ পরের নয় বছরে সহায়তা বৃদ্ধি পেয়েছে ১০৪ শতাংশ। একই সঙ্গে ২০০০-০১ থেকে ২০০৮-০৯ অর্থবছর পর্যন্ত অর্জিত প্রতিশ্রুতির তুলনায় ২০০৯-১০ থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছর পর্যন্ত সময়ে অর্জিত বৈদেশিক সহায়তার প্রতিশ্রুতির পরিমাণ প্রায় ৫২ হাজার ৮৩৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থাৎ ৩০৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রতিবেদনে অনুযায়ী, গত ২০০০-০১ থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছর পর্যন্ত এ ১৮ বছরে সহায়তা প্রতিশ্রুতির পরিমাণ ৮৭ হাজার ৭৬৪ মিলিয়ন ডলার। সহায়তাপ্রাপ্তির পরিমাণ ৪২ হাজার ৬২৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। অর্থাৎ বিভিন্ন দাতা সংস্থা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কিন্তু সহায়তা পাওয়া যায়নি এমন অর্থের পারিমাণ ৪৪ হাজার ৯৮৩ মিলিয়ন ডলার। যা মোট প্রতিশ্রুতির অর্ধেকেরও বেশি।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বৈদেশিক সহায়তাপ্রাপ্তির পরিমাণ প্রতি বছরই বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে প্রতিশ্রুতির তুলনায় প্রাপ্তির মধ্যে অনেক গ্যাপ থেকে যাচ্ছে। এ গ্যাপ যত কমিয়ে আনা সম্ভব হবে দেশের সার্বিক উন্নয়ন ততই ত্বরান্বিত হবে। ইআরডির (অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ) প্রতিবেদনেও একই চিত্র দেখা গেছে।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, সহায়তার প্রতিশ্রুতি ও অর্থছাড়েরর মধ্যে কিছুটা কম-বেশি থাকাটা স্বাভাবিক। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কম-বেশির পারিমাণ একটু বেশি। এর কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি বলেন, যেসব প্রকল্পের সহায়তা পাওয়া যায় সঠিক সময়ে তা বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না। এখনও প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পিছিয়ে রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, একটা প্রকল্প নির্দিষ্ট সময়ে বাস্তবায়িত না হলে এর প্রভাব অর্থনীতিতে দুভাবে পড়ে। প্রথমত, প্রকল্পের ব্যয় বাড়ে। দ্বিতীয়ত, সঠিক সময়ে ওই প্রকল্পের বেনিফিট জনগণ পান না। তাই নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জোর দিতে সরকারকে পরামর্শ দেন এ অর্থনীতিবিদ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বৈদশিক সহায়তা

৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ