Inqilab Logo

সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

আইনজীবীদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া-- কারাগার আদালতে খালেদা জিয়ার বিচার

মালেক মল্লিক | প্রকাশের সময় : ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিচারকার্যক্রম চলছে পুরাতন কেন্দ্রীয় করাগারে অস্থায়ী আদালতে। প্রথম দিনের শুনানিতে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা অনুপস্থিত থাকায় বিচারকার্যক্রম ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মুলতবি করেন আদালত। ওই দিনই খালেদা জিয়া পরবর্তী শুনানিতে হাজির না হওয়ার কথা জানিয়েছেন। নির্ধারিত দিনের শুনানিতে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা অংশ নিবেন কিনা এ নিয়ে বিএনপি আইনজীবীদের মধ্যে চলছে নানা পর্যালোচনা। এমন পরিস্থিতিতে এই মামলার বিচারকার্যক্রম নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন দেশের আইনজ্ঞনরা। ধার্য্য তারিখে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা উপস্থিত না হলে একতরফা অথবা আদালত আইনজীবী নিয়োগ করতে পারেন সরকার। তবে তড়িঘড়ি করে একটি মামলার বিচার শেষ করলে নৈতিকভাবে ন্যায়বিচার নিয়ে প্রশ্নও রয়েছে যায় বলে মনে করে আইন বিশেষজ্ঞরা।
আসামী পক্ষের আইনজীবীরা অভিযোগ করে বলেছেন, বেআইনিভাবে সাজা দিতেই কারা আদালত। সরকার সংবিধান লঙ্ঘন করে সরকার পরিত্যক্ত কারাগারে অস্থায়ী আদালত গঠন করেছে। সরকার পক্ষের আইনজীবীরা বলছেন, খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা ভুল ব্যাখা দিচ্ছেন। কোনো মামলা বিচারের জন্য কোনো স্থানকে আদালত হিসেবে ঘোষণা করা নতুন নয়। আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও বলেছেন, খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই কারাগারে আদালত বসানো হয়েছে। এটা ক্যামেরা ট্রায়াল নয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সাবেক আইন উপদেস্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন ইনকিলাবকে বলেছেন, শত শত মামলা বিচারের অপেক্ষা রয়েছে; সেইসব নিয়ে চিন্তা না করে একটি মামলা নিয়ে এত তড়িঘড়ি নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। বিএনপি উচিত এইসব রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করা। সরকার সংবিধান লঙ্ঘন করে সরকার পরিত্যক্ত কারাগারে অস্থায়ী আদালত গঠন করা বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা শক্তিশালী কোন যুক্তি হতে পারে না।
সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ইনকিলাবকে বলেছেন, কোন জায়গা আদালত স্থাপন করা বিষয়টি সরকারের ওপর নির্ভর করে। এটা আইনে কোন ব্যতয় ঘটেনি। আসামী পক্ষের আইনজীবীরা কোর্ট বর্জণ করলে একতরফা বিচার চালাতে পারেন। অথবা আইনজীবী নিয়োগ করতে পারেন। এটা সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি আরো বলেন, আইনে শাসনে যারা বিশ্বাস করেন তাদের উচিত বিচারকাজ বাধাগ্রস্থ না করে সহযোহিতা করা। এখানেই তো শেষ নয়। এরপর হাইকোর্ট তো রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে খালেদা জিয়ার অন্যতম আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ইনকিলাবকে বলেন, পরবর্তী তারিখে বিচারে অংশগ্রহণ করব কিনা এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো নেয়নি। আমরা আইনি বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে দেখছি। আমরা চিন্তা ভাবনা করছি বিষয়টি নিয়ে। প্রয়োজনে উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হবো বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তিনি আরো বলেন, তড়িঘড়ি করে কোন মামলার বিচার করলে নৈতিকভাবে ন্যায়বিচার নিয়েও প্রশ্নও উঠে।
গত ৫ সেপ্টেম্বর থেকে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় কারাগারের ভেতরে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে খালেদা জিয়ার অসম্পূর্ণ বিচার শুরু হয়েছে। ওইদিন খালেদা জিয়া উপস্থিত হয়ে আদালতের উদ্দেশে বলেছেন, আপনার যতদিন ইচ্ছা সাজা দিন। আমি বারবার এভাবে আদালতে আসতে পারব না। খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা ওই আদালতকে অসাংবিধানিক আখ্যা দিয়ে তা বর্জন করেন। আগামী দিনেও তারা আদালতে যাবেন কিনা তাও এখনও পরিষ্কার নয়।
এর আগে গত ৪ সেপ্টেম্বর বিকালে আইন মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, নিরাপত্তাজনিত কারণে বিশেষ জজ আদালত-৫ নাজিমুদ্দিন রোডের পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগার এর প্রশাসনিক ভবনের ৭ নম্বর কক্ষকে আদালত হিসেবে ঘোষণা করা হল। বিশেষ জজ আদালতে বিচারাধীন বিশেষ মামলা নং ১৮/২০১৭ এর বিচার কার্যক্রম পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের কক্ষ নং ৭ এর অস্থায়ী আদালতে অনুষ্ঠিত হবে।
গত ৮ ফেব্রæয়ারি থেকে জিয়া অরফানেস ট্রাস্ট মামলার রায়ের পর থেকে খালেদা জিয়া ওই কারাভবনের ২ তলার একটি কক্ষে রয়েছেন। ৫ সেপ্টম্বর শুনানিতে অংশ নেয়নি আসামী পক্ষের আইনজীবীরা। ওই দিন অসুস্থ অবস্থায় আদালতে নিয়ে আসায় উদ্বেগ-অসন্তোষ প্রকাশ করে আদালতের উদ্দেশ্যে খালেদা জিযা বলেছেন, এখানে ন্যায়বিচার নেই। যা ইচ্ছে তাই সাজা দিতে পারেন। যত খুশি সাজা দিতে পারেন। আমি অসুস্থ। বারবার আদালতে আসতে পারবো না। আর এভাবে এক নাগারে বসে থাকলে আমার পা ফুলে যাবে। আমার সিনিয়র কোনো আইনজীবী আসেনি। এটা জানলে আমি আসতাম না। ওইদিনই বিএনপি সিনিয়র আইনজীবীরা জুরুয়ী বৈঠকে করে অভিযোগ করেন অসুস্থ বেগম জিয়াকে জোর করে আদালতে হাজির করা হয়। গত বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেছেন, খালেদা জিয়াকে বেআইনিভাবে সাজা দিতেই কারাগারের ভেতরে আদালত বাসিয়ে ক্যামেরা ট্রায়াল করা হয়েছে। তিনি বলেন, এই আদালতে বিচারকার্যক্রম চলার কোন সুযোগ নেই। তিনি বলেন, সংবিধান লঙ্ঘন করে সরকার পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কারাগারে অস্থায়ী আদালত গঠন করেছে। সংবিধানের ৩৫(৩) অনুচ্ছেদ ও ফৌজদারী কার্যবিধি ৩৫২ ধারায় আদালত বলতে উন্মুক্ত আদালতের কথা বলা হয়েছে; যেখানে যে কোনো মানুষের সাধারণভাবে প্রবেশাধিকার থাকে। কারাগারের যে কক্ষটিকে আদালত হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে, সেখানে পাবলিক তো দুরের কথা, বেগম জিয়া ও অন্যান্য আসামিদের নিয়োজিত আইনজীবীরা, আসামিদের আত্মীয় স্বজন কিংবা দলীয় নেতা- নেত্রীদের প্রবেশ এবং আদালতের কার্যক্রম দেখা বা শোনার কোনো কোন সুযোগ নেই।
অপরদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, আইন মেনেই কারাগারে অস্থায়ী আদালত গঠন করা হয়েছে। তত্ত¡াবধায়ক সরকার আমলে ওই মামলাটি করা হয়, বর্তমান সরকার মামলাটি করেনি। বঙ্গবন্ধুর হত্যা মামলার বিচার যখন হয়, তখন পুরোনো কারাগারের একটি অংশকে আদালত ঘোষণ করা হয়েছিল। ওই মামলায় বিচার ক্যামেরা ট্রায়াল হবে বা কেউ উপস্থিত থাকতে পারবেন না সরকার বা আদালত এমন ঘোষণাও দেননি। কাজেই এ ব্যাপারে তাঁদের ক্ষুব্ধ হওয়ার কোনো কারণ নেই।



 

Show all comments
  • বাতেন ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ২:২৫ এএম says : 0
    বিষয়টি কেমন জানি লাগতেছে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খালেদা জিয়া

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ