পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টালিন সরকার : ‘চেয়ে চেয়ে দেখলাম, তুমি চলে গেলে / আমার বলার কিছু ছিল না’। হৈমন্তি শুক্লার কালজয়ী এই গানের অফিসিয়াল চর্চা করছেন দেশের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ‘নির্বাচন কমিশন’। কাজী রকিবউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন ৫ সদস্যের নির্বাচন কমিশন ধাপে ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভয়ঙ্কর রূপ দেখছেন। ভোটারদের ভোট দিতে না পারার আর্তনাদ, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের তা-ব, ব্যালট পেপার-ভোটের বাক্স দখলদারিত্বের কাহিনী শুনছেন। কিন্তু ‘চেয়ে চেয়ে দেখলাম/ সবকিছু নিয়ে গেলে/ আমার বলার কিছু ছিল না’ গানের মতোই নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছেন। দুই দফা ইউপি নির্বাচনে প্রাণ হারিয়েছে ৪২ জন। প্রহসন আর রক্তারক্তির ভোট নিয়ে নির্র্বাচনী পর্যবেক্ষক, দেশের স্থানীয় নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবী, সুশীল, পেশাজীবী এমনকি ক্ষমতাসীন দলের বিবেকবানরা ইসির নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কেউ কেউ ইসিকে ‘ক্ষমতাসীনদের গোলাম’ বলেও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করছেন; গালাগাল দিয়েছেন। তারপরও ভ্রুক্ষেপ নেই সাংবিধানিক পদগুলোতে থাকা সিইসি ও অপর ৪ কমিশনারের! প্রধানমন্ত্রীকে খুশি করাই যেন তাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব। নির্বাচন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমদ, ড. বদিউল আলম মজুমদার, পর্যবেক্ষক মুনিরা খান, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) সাখাওয়াত হোসেন স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, নিরপেক্ষ নির্বাচনে প্রধান বাধা কাজী রকিবউদ্দিন আহমদের নেতৃত্বাধীন ইসি। অথচ কাগজে-কলমে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ভারতের কমিশনের চেয়েও বেশি শক্তিশালী। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী তৃতীয় দফা ইউপি নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ নির্বাচনের বার্তা দিয়েছেন।
আজ তৃতীয় দফার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। সারাদেশের ৬৮৫টি ইউনিয়ন পরিষদের ভোট হবে। ভোটের আগেই ৬৫ ইউনিয়ন পরিষদের নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা ভোট ছাড়াই নির্বাচিত হয়েছেন। অতএব ভোট হবে ৬২০টি ইউপিতে। তৃণমূলের ‘পরিষদ’ ইউপি নির্বাচনের খবর মিডিয়ায় তেমন না এলেও নির্বাচন মানেই যেন রক্তাক্ত ভোটকেন্দ্র। নির্বাচন মানেই ভোটারদের লাশ হয়ে বাড়ি ফেরা। নির্বাচন মানেই সন্ত্রাসী আর ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর সমর্থকদের ব্যালট ছিনতাই, ভোগ কেন্দ্র দখলের দৃশ্য। এলোপাতাড়ি গুলিতে শিশু হত্যা। নির্বাচন মানেই প্রতিদ্বন্দ্বীর নেতা-কর্মীদের খুন। নির্বাচন মানেই বিরোধী প্রার্থীর স্বজনকে হত্যা; ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানো। নির্বাচন মানেই প্রার্থীদের রক্তাক্ত করা। নির্বাচন মানেই নৌকা প্রতীক আর আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে লাঠালাঠি, সংঘাত-সংঘর্ষে যুদ্ধক্ষেত্র তৈরি করা। নির্বাচনকে ঘিরে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করা। ইউনিয়ন পরিষদের দুই দফার নির্বাচনের এক মাসেই নিহত হন ৪২ জন। আজকের নির্বাচনে কতজন প্রাণ হারান কে জানে?
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী প্রথম ধাপে ৭৫২টি ইউনিয়ন পরিষদে ভোটগ্রহণ হয় ২২ মার্চ। দ্বিতীয় ধাপে ৩১ মার্চ ভোট গ্রহণ হয় ৭১০টি ইউপিতে। অতঃপর তৃতীয় ধাপে আজ (২৩ এপ্রিল) ৬৮৫টিতে ভোট। নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী ৬৫ জন বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়ে গেছেন। চতুর্থ ধাপে আগামী ৭ মে ৭২৮টিতে, পঞ্চম ধাপে ২৮ মে ৭১৪টিতে এবং ষষ্ঠ ধাপে ৪ জুন ৬৬০ টি ইউপিতে ভোটগ্রহণ করা হবে।
নির্বাচন কমিশনের ‘ক্ষমতাসীন দল প্রীতির’ কারণে ভোটের ফলাফল কেমন হবে আগেই ভোটার ও সাধারণ মানুষ আন্দাজ করতে পারে। নির্বাচনের দিন ভোটারের সারি, কিছু প্রার্থীর বক্তব্য, ঘটনা-দুর্ঘটনা-সংঘাত-সংঘর্ষ-ব্যালট ছিনতাই, কিছু প্রাণহানি, কিছু কেন্দ্রের ভোট স্থগিতের খবর প্রচারের পর বিকেল হলেই স্যাটেলাইট টিভিগুলোর ¯্র‹লে দেখানো হবে কোন দলের প্রার্থী কয়টা ইউনিয়নে বিজয়ী হলেন। গ্রাফিক্স-এর উন্নয়নে টিভিগুলোতে নানা রঙের রেখাচিত্র একে কোন দলের প্রার্থী কতটা বিজয়ী হলেন, কতটায় কে এগিয়ে রয়েছেন এমন গ্রাফ দিয়ে দর্শকদের আকর্ষণ করবেন। এটা যেন নিয়মিত রুটিনে পরিণত হয়েছে। কিন্তু ভোটারদের কতজন ভোট দিতে পেরেছেন সে খবর প্রচারের গরজ দেখান না। প্রশ্ন হলো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশনের কাজ কি? জনগণের ভোটের জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের ব্যবস্থা করা; নাকি নির্বাচনের নামে ক্ষমতাসীন দল সমর্থিত প্রার্থীদের জিতিয়ে দেয়া? প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দিন আহমদ, কমিশনার মোঃ শাজনেওয়াজ, আবদুল মোবারক, আবু হাফিজ, জাবেদ আলীর গত কয়েক মাসের কথাবার্তার ধারাবাহিকতা দেখে মনে হয় তারা কার্যত সরকারের কোনো অধিদপ্তর-পরিদপ্তরের কর্মচারী। তাদের কাজ সরকারকে খুশি করা; মন্ত্রী-এমপির আদেশ নির্দেশ পালন করা। নির্বাচন কমিশন যে স্বাধীন প্রতিষ্ঠান, তাদের পদগুলো যে সাংবিধানিক পদ তারা সেটা ভুলে প্রজাতন্ত্রের অনুগত কর্মচারীর মতো প্রধানমন্ত্রীকে খুশি করতে সদা ব্যস্ত থাকছেন। যার কারণে আওয়ামী লীগের নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মতো ব্যক্তির লজ্জা পেয়ে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে ঘৃণা প্রকাশ করেন তারপরও লজ্জিত হন না সিইসি ও কমিশনাররা।
ইউপি নির্বাচনে সংঘাত-সংঘর্ষ, প্রাণহানি এবং চর দখলের মহোৎসবে নাখোশ স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সারাজীবন গণতন্ত্রের লড়াই করা এই নেত্রী দেখছেন নিজের শাসনামলে জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার বদলে চর দখলের ভোটে দলীয় প্রার্থীরা বিজয়ী হচ্ছেন; এ অবস্থায় ভোটের প্রকৃত চিত্র তিনি যেমন পাচ্ছেন না; তেমনি নির্বাচন ও ভোটের প্রক্রিয়াই ধ্বংস হওয়ার পথে। তাঁর বিশেষ দূত জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদ এখন প্রতিটি সভা-সমাবেশে বলে বেড়াচ্ছেন আওয়ামী লীগের গণতন্ত্রের নীতি হলো ‘আমার ভোট আমি দেব; তোমার ভোটও আমি দেব’। বাস্তবতাও তাই। এমনকি টিভির টকশোগুলোতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত বুদ্ধিজীবী ও সুশীলরা ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের নামে ‘প্রহসন নাটক’ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইসিকে বার্তা দিয়েছেন ইউপি নির্বাচনগুলোতে প্রকৃত অর্থে ভোটারদের মতের প্রতিফলন ঘটাতে। গত বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল সিইসির সঙ্গে দেখা করে প্রধানমন্ত্রীর এই বার্তা পৌঁছে দেন। প্রধানমন্ত্রীর বার্তা পেয়ে নির্বাচন কমিশনার মোঃ শাহনেওয়াজ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বার্তা পেয়েছি। আগের দুই ধাপের নির্বাচনে যা হওয়ার হয়েছে। সামনের ধাপগুলোতে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করা হবে। এ ব্যাপারে আইন শৃংখলা বাহিনীকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগকে কমিশন বলেছে, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কমিশনকে সহায়তা করতে দলটি যেন স্থানীয় নেতাদের নির্দেশ দেন। আগের দুই ধাপের ইউপি নির্বাচন নিয়ে কমিশন যথেষ্ট শিক্ষা নিয়েছে। সামনের ধাপগুলোতে আর ভুল হবে না। প্রশ্ন হলো নির্বাচন কমিশন কি প্রধানমন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণাধীন? কারণ প্রধান নির্বাচন কমিশনার এর আগে বলেছিলেন, নির্বাচনে অনিয়ম হলে তার দায় পুলিশ বাহিনীকে নিতে হবে। অপর এক বক্তব্যে তিনি বলেছিলেন, একটি বুলেট থাকলেও তা প্রয়োগ করতে হবে। নির্বাচন কমিশনার শাহনেওয়াজ বলেছিলেন, সরকার ও প্রশাসন নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করছে না। অপর এক কমিশনার বলেছেন, ভোটের দিক পোলিং বুথের ভিতরে অঘটন ঘটলে তার দায় ইসির। তবে এর বাইরে কোনো ঘটনায় দায় ইসি নেবে না। আরেক কমিশনার বলেছেন, আমাদের হাত পা বাধা। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে সিইসি ও ইসির কমিশনারদের এসব বালখিল্য শিশুসুলভ কথাবার্তা নিয়ে মানুষ হাসাহাসি করেছেন। এসব উক্তিতে ভোটাররা আশাহত হয়েছে এবং নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের বিক্ষুব্ধ করেছে। ইসির এই ভূমিকায় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্বাচনকে ভয়ঙ্কর রূপ দিয়ে ভোটাদের নির্বাচন বিমুখ করাই হলো বর্তমান নির্বাচন কমিশনের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য। এই ইসির ভোটের ক্যারিকেচায় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেছে বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট। এরপর থেকে জাতিসংঘ, আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ প্রভাবশালী দেশ ও দাতা সংস্থাগুলোর সঙ্গে দেশের সম্পর্ক খারাপ। বিনা ভোটে সংবিধানের ধারাবাহিকতা রক্ষার নামে ক্ষমতা দখল করেই জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে ঢাকা উত্তর, ঢাকা দক্ষিন ও চট্টগ্রামের সিটি নির্বাচন থেকে শুরু হয় ভোটকেন্দ্র থেকে ভোটারদের বিতারিত করার থিউরি। আওয়ামী লীগ করেন এই পরিচয়ে পুলিশের নিষ্ক্রিয়কায় সন্ত্রাসীরা ভোটকেন্দ্র থেকে ভোটারদের বিতাড়িত করে ভোট ডাকাতি, ভোট কারাচুপি, ব্যালট বাক্স ছিনতাই করেছে। রক্ত ঝরিয়েছে। নির্বাচনের বিজয়ী হতে বিরোধী প্রার্থীদের নির্বাচনের প্রচারণায় মাঠে নামতে না দেয়া থেকে শুরু করে এমন কোনো অপকৌশল নেই যা করেনি ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা। ধীরে ধীরে নির্বাচন থেকে জনগণকে দূরে সরিয়ে দিতেই আরো ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে ক্ষমতাসীন দলের পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া সন্ত্রাসীরা। কিন্তু কাজী রকিবউদ্দিন আহমদের নেতৃত্বাধীন ইসি এসব না দেখার ভান করেছে। তারা সব সময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আদেশ নির্দেশের অপেক্ষা করেছে। নির্বাচন কমিশন স্বাধীন অথচ ইসির দায়িত্বশীলরা সরকারের ওপর নির্ভরশীল থাকাকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছে। ইসির দায়িত্বশীলরা সাংবিধানিক চেয়ারে বসে ‘চেয়ারের ভাব মর্যাদা’ রক্ষার বদলে ক্ষমতাসীন সরকারকে তোষামোদী এবং মোসাহেবের ভূমিকায় নিজেদের অবতীর্ণ করেছে।
কাজী রকিব উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন ইসির নিজেদের চেয়ার রক্ষার স্বার্থে ‘বন্ধু, দেখিয়াও দেখলা না/ শুনিয়াও শুনলা না’ এই চটুল গানের কৌশল গ্রহণ করে ‘খামোশ’ থাকেন। যা দেখে আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন, ‘এই ইসি নড়েও না চড়েও না। একটা কিছু কর গোলাপী একটা কিছু কর’। তারপর ইসি নীরব। আহা রে! একেই বলে চেয়ারে বসার প্রতিদান!!
শাসক দলের প্রতি ইসিই এই গোলামির মানসিকতায় ক্ষমতাসীনরা পৌরসভা নির্বাচনে সন্ত্রাস নতুন মাত্রায় নিয়ে যায়। ওই নির্বাচনে বিরোধী প্রার্থীদের অসংখ্য পৌরসভায় নমিনেশনপত্র পর্যন্ত জমা দিতে দেয়নি। সেই সঙ্গে শুরু হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে নির্বাচন মাঠ থেকে বিরোধী প্রার্থীদের বিতাড়িত করা। পুলিশের চলে গ্রেফতার বাণিজ্য। হামলা-মামলা ও গ্রেফতার আতঙ্কে নির্বাচন যুদ্ধ থেকে সরে যায় বিএনপিসহ প্রতিপক্ষ্যের শত শত প্রার্থী। ফলে রেকর্ডসংখ্যক আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়। তারপরও যে সব পৌরসভায় ভোট হয়েছে সেগুলোতে কেন্দ্র দখল করে ভোট ডাকাতির মাধ্যমেই পৌরসভা নির্বাচন শেষ করা হয়। শুরু হয় দলীয় প্রতীকে ইউনিয়ন পর্যায়ের নির্বাচন। বিশেষজ্ঞদের মতো তৃণমূলের এ নির্বাচন যেন হয়ে যায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক পরিচয়ে তৃণমূলের সন্ত্রাসীদের ‘লাশ উপহারের’ নির্বাচন। নির্বাচনের সংহিসতাকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয় দুই দফা ইউপি নির্বাচনে। একের পর এক প্রাণহানি ও মানুষের মৃত্যুতে কান্নার রোল ওঠে দেশব্যাপী। মায়ের বুক খালি হয়, পিতা সন্তানকে হারায় অথচ মিডিয়ায় ছিটেফোঁটা সে খবর আসে। কিন্তু ইসির সাফ কথা ওই হত্যাকা-ের দায় ইসির নয়। ভাবখানা যেন মানুষ কেন ভোট দিতে গেল? ভোট দিতে গেলে খুন হবেই। মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের রিপোর্ট অনুযায়ী দুই দফা ইউপি নির্বাচনের এক মাসেই নিহত হন ৩৭ জন। এ রিপোর্ট প্রকাশের পর আরো ৫ জন মারা গেছে। তা ছাড়া আহতের সংখ্যা দুই হাজার ছাড়িয়ে যায়। অধিকারের রিপোর্ট হলো ৩৬ জনই ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনকালীন সহিংসতায় নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া পৌর নির্বাচনে একজন নিহত হয়েছেন এই সময়ে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ইউপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে শুরু হওয়া সহিংসতা নির্বাচনের আগ পর্যন্ত তা চলতে থাকে। বিরোধী দলের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধা, তাদের উপর হামলা এবং বাড়িঘর ভাঙচুর ও আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীরা। সরকারকে অবিলম্বে আলোচনার ভিত্তিতে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে বলা হয় প্রতিবেদনে। প্রথম দফার ইউপি নির্বাচনের দিনই নিহত হয়েছেন ১২ জন। পিরোজপুরের ধানিসাপায় পুলিশ ও বিজিবির গুলিতে মারা যান ৬ জন। এ ছাড়াও দুই প্রার্থীর সমর্থক ও পুলিশ-বিজিবির ত্রিমুখী সংঘর্ষে আরো মারা যান ২ জন। দ্বিতীয় দফা নির্বাচনের দিন নিহত হন ১১ জন। এই যে ভোটে এতো মানুষের মৃত্যু তাকে ভ্রুক্ষেপ করেনি ইসি। বরং তারা এসব মৃত্যুর দায় আইন শৃংখলা বাহিনীর ওপর চাপিয়ে নিজেরা দায় এড়ানোর চেষ্টা করে। ইসির নির্লজ্জের মতো দাবী করে ওই সব হত্যা আইন শৃংখলা বাহিনীর ব্যর্থতার জন্য হয়েছে। অথচ ইসির নির্বাচনী আইনে বলা হয়েছে নির্বাচনকালীন সময় প্রশাসন ইসির অধীনে থাকবে। এই হলো আমাদের ইসি!
প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বার্তার পরও কি মেরুদ-হীন পরজীবী এই ইসি তৃতীয় দফা ইউপি নির্বাচনে ভোটারদের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে পারবে? সে প্রশ্ন সর্বমহলে। খাচার পাখিকে উড়তে দিলেও সে উড়তে পারে না। পরাধীনতার স্বাদ পেতে যারা অভ্যস্ত তারা স্বাধীনতার স্বাদ ভোট করতে আগ্রহী হন না। ইনকিলাব পাঠকদের নিশ্চয় মনে আছে ’৯০ এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে তিন জোটের রূপরেখার অন্যতম শর্ত ছিল রেডিও-টিভির স্বায়ত্তশাসন। ’৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে রেডিও-টিভির স্বায়ত্তশাসনের বদলে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার প্রতি জোর দিয়ে উপজেলা পরিষদ বিলুপ্তি করেন। ’৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে রেডিও-টিভির স্বায়ত্তশাসনের জন্য একটি কমিশন গঠন করেন। কমিশন দীর্ঘ দিন ধরে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সংলাপ করে বিটিভিকে স্বায়ত্তশাসন দেয়ার সুপারিশ করেন। বিটিভিকে স্বায়ত্তশাসন নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হলে বিটিভিতে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিল্পী-কলাকুশলী (বর্তমানে যারা প্রগতিশীল সাংস্কৃতিসেবী তারাও) অবরোধ, অবস্থান ধর্মঘট, মানববন্ধন করেন স্বায়ত্তশাসনের বিরুদ্ধে। তার ব্যানার ফেস্টুন, লিফলেট বিলি করেন। ওইসবে লেখা ছিল ‘বিটিভির স্বাধীনতা চাই না; সরকারের অধীনে থাকতে চাই।’ রামেন্দু মজুমদার, হাসান ইমাম, ম হামিদ, আসাদুজ্জামান, নাসিরউ্্দদিন ইউসূফ বাচ্চু, তারানা হালিমরা মানববন্ধনে শ্লোগান দিতেন ‘বিটিভির স্বায়ত্ত শাসন চাই না; সরকারের অধীনে থাকতে চাই’। ওই সময় বিটিভির কর্মকর্তারা ও শিল্পী কুশলীরা সরকারকে বুঝিয়েছেন আমরা স্বাধীন নয়; আপনাদের গোলাম হয়ে থাকতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। কাজী রকিবউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন বর্তমান ইসি প্রধানমন্ত্রীর বার্তা পাওয়ার পর সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির মেরুদ- সোজা করে জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করার পথ বেছে নেন না কি বিটিভির কর্মকর্তাদের মতো সরকারের গোলাম হয়ে থাকতে চান তা বোঝা যাবে আজকের ভোটের চিত্র দেখেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।