Inqilab Logo

সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

‘নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই কারাগারে আদালত’

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০৪ এএম

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই কারাগারে আদালত বসানো হয়েছে। এটা ক্যামেরা ট্রায়াল নয়। বৃহস্পতিবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এদিকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির বিএনপি আইনজীবীরা অভিযোগ করে বলেছেন, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বিএনপির চেয়ারর্পাসন খালেদা জিয়াকে বেআইনিভাবে সাজা দিতেই কারাগারের ভেতরে আদালত বাসিয়ে ক্যামেরা ট্রায়াল’ করা হয়েছে । একই সঙ্গে খালেদা জিয়ার বিচারিক আদালত জেলখানায় স্থানান্তরের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা। এছাড়াও কারা অভ্যন্তরে অস্থায়ী আদালত স্থাপনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার ও খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম।
সমকাল পত্রিকা অফিসে আয়োজিত সমতলের ক্ষুদ্র জাতিসত্তা ও দলিত জনগোষ্ঠীর অধিকার সুরক্ষা : প্রাতিষ্ঠানিক নীতি কাঠামোর দাবি’ শীর্ষক গোল টেবিল বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, একটা কথা উঠেছে এটা ক্যামেরা ট্রায়াল। যে প্রজ্ঞাপনটি জারি করা হয়েছে, সেই প্রজ্ঞাপনের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারির কারণ স্পষ্ট করে বলা আছে। তিনি বলেন, ক্যামেরা ট্রায়ালের সংজ্ঞা হচ্ছে যেখানে কাউকে কোনো পাবলিক বা মিডিয়াকে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। যেখানে শুধু বিচারক, আসামি আর প্রয়োজন হলে তার আইনজীবীকে রাখা হয়। এমনকি তার কোনো তথ্যাদি প্রকাশও করা যাবে না। এমন যদি হয় তাহলে ক্যামেরা ট্রায়াল হয়। তিনি বলেন, আপনারা জানেন গত সাত মাস যাবত এই কোর্টটা বসছে। এই সাত মাসে মূল আসামি কোর্টে হাজিরা দিচ্ছেন না। নিরাপত্তা জনিত কারণে বা অন্য কোনো কারণে তিনি যখন হাজিরা দিচ্ছেন না তখন সেইটার সুবিধার্থে নিরাপত্তা আরও সুনিশ্চিত করার জন্য সেখানে কোর্ট বসানো হয়েছে। আমার মনে হয়, এতে কারো অধিকার খর্ব করা হয়নি।
মন্ত্রী বলেন, আপনারা দেখেছেন আসামি বেগম খালেদা জিয়া সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাহলে এটা প্রমাণিত হয় যে এই কোর্ট সকলের জন্য উন্মুক্ত ছিল। যেখানে আদালত বসানো হয়েছে সেখানে কারো প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ নয়। এটা ক্যামেরা ট্রায়ালের সংজ্ঞায়ও পড়ে না। দৈনিক সমকাল পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোস্তাফিজ শফির সঞ্চলনায় আলোচনায় অংশ নেন এমপি ফজলে হোসেন বাদশা, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমেদ খান, সাবেক তত্ত¡াবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এডভোকেট সুলতানা কামাল, সমতলের ক্ষুদ্র জাতিসত্তা ও দলিত জনগোষ্ঠীর নেতৃবৃন্দ সহ অন্যান্যরা।
বেআইনিভাবে সাজা দিতেই কারাগারের আদালত- জয়নুল আবেদীন
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে বেআইনিভাবে সাজা দিতেই কারাগারের ভেতরে আদালত বাসিয়ে ক্যামেরা ট্রায়াল’ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন। তিনি বলেন, এই আদালতে বিচারকার্যক্রম চলার কোন সুযোগ নেই। খালেদা জিয়া শারীরিকভাবে খুবই অসুস্থ অবস্থায় কারা অভ্যন্তরে মানবেতর জীবন যাপন করছেন এবং তার শারীরিক অবস্থা বর্তমানে এমন অবস্থায় উপনীত হয়েছে যে, তিনি কারা অভ্যন্তরে যেকোনো দুর্ঘটনার সম্মুখীন হতে পারেন। শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ব্যানারে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে সমিতির সভাপতি এসব কথা বলেন।
জয়নুল আবেদীর বলেন, সংবিধান লঙ্ঘন করে সরকার পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কারাগারে অস্থায়ী আদালত গঠন করেছে। সংবিধানের ৩৫(৩) অনুচ্ছেদ ও ফৌজদারী কার্যবিধি ৩৫২ ধারায় আদালত বলতে উন্মুক্ত আদালতের কথা বলা হয়েছে; যেখানে যে কোনো মানুষের সাধারণভাবে প্রবেশাধিকার থাকে। পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারের যে কক্ষটিকে আদালত হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে, সেখানে পাবলিক তো দুরের কথা, বেগম জিয়া ও অন্যান্য আসামিদের নিয়োজিত আইনজীবীরা, আসামিদের আত্মীয় স্বজন কিংবা দলীয় নেতা- নেত্রীদের প্রবেশ এবং আদালতের কার্যক্রম দেখা বা শোনার কোনো কোন সুযোগ নেই। সমিতির সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকন, সহ-সভাপতি গোলাম মোস্তফা ছাড়াও বিএনপিপন্থি আইনজীবী গোলাম রহমান ভুঁইয়া, নিতাই রায় চৌধুরী, সানাউল্লাহ মিয়া, বদরুদ্দোজা বাদল, আমিনুল ইসলাম, গাজি কামরুল ইসলাম, এ কে এম এহসানুর রহমান, আহসানুল্লাহ ও মেহেদী হাসান উপিস্থিত ছিলেন।
আইনজীবীদের মানববন্ধন:
খালেদা জিয়ার বিচারিক আদালত জেলখানায় স্থানান্তরের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন সুপ্রিম কোর্টের বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান গেটের সামনে আইনজীবীরা এ কর্মসূচি পালন করেন। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও খালেদা জিয়ার মুক্তি আইনজীবী আন্দোলনের ব্যানারে অর্ধশতাধিক আইনজীবী মানববন্ধনে অংশ নেন। বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সহ-সভাপতি ড. রফিকুল ইসলাম মেহেদীর সভাপতিত্বে মানববন্ধনে অংশ নিয়ে বক্তব্য রাখেন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও খালেদা জিয়া মুক্তি আইনজীবী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য মো: মনির হোসোনে, এবিএম ওয়ালিউর রহমান খান, সাবেক যুগ্ম জেলা জজ মো: শামসুল আলম, আইয়ুব আলী আশ্রাফী, আনিছুর রহমান খান, নাসির উদ্দিন খান স¤্রাট, মাসুদুল আলম দোহা, ওয়াসিলুদ্দিন বাবু, মো: মোসলেহ উদ্দিন, নাজমুল হোসেন, কামাল হোসেন, আবদুস সাত্তার, শফিউর রহমান শফি, সাইদ হাসান বকতিয়ার, আনজুমান আরা বেগম মুন্নি প্রমুখ।
এদিকে সংবাদ সম্মেলনের পরপরই বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের সংগঠন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম কারা অভ্যন্তরে অস্থায়ী আদালত স্থাপনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার ও খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা করে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- ৯ সেপ্টেম্বর সারা দেশের আইনজীবী সমিতিতে মানববন্ধন ও ১২ সেপ্টেম্বর প্রতিকী অনশন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আদালত’
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ