Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কমেছে পাট উৎপাদন

সোনালী আঁশের স্বর্ণযুগ সহজে ফিরছে না

মিজানুর রহমান তোতা | প্রকাশের সময় : ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

‘সোনালী আঁশের স্বর্ণযৃুগ সহজে ফিরছে না, কাটছে না বিশৃঙ্খলা, প্রতিটি মৌসুমেই পাট নিয়ে নানা ধরণের সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে, উৎপাদন ভালো করলে মূল্য পাই না, আবার মূল্য যেবার ভালো নানা কারণে উৎপাদন বিপর্যয় ঘটে, আমরা আবাদে মার খাচ্ছি কি খাচ্ছি না, দাম পাচ্ছি কি পাচ্ছি না, এসব দেখার কেউ নেই, কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে নামেন খুবই কম। একথা পাটচাষি যশোরের সীমান্তবর্তী শার্শা উপজেলার ডিহি ইউনিয়নের মো: আলমের। একই ধরণের কথা সাতক্ষীরার কলারোয়ার সাহারুল ইসলাম ও ফরিদপুরের নগরকান্দার তোফাজ্জেলসহ পাটচাষিদের। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রও বলেছে, চলতি মৌসুমে সারাদেশে পাট আবাদ ও উৎপাদন আশঙ্কাজনকহারে কমেছে। সূত্র জানায়, সারাদেশে এবার পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮ লাখ ৫হাজার ৩৪ হেক্টর জমিতে। আবাদ হয় ৬ লাখ ৫০হাজার ২শ’১৫ হেক্টর জমিতে। যা লক্ষ্যমাত্রার শতকরা ২০ভাগ পূরণ হয়নি। উৎপাদনের ক্ষেত্রেও অনেক কম হয়েছে। গড়ে শতকরা প্রায় ৩০ ভাগ আবাদী জমিতে বীজ থেকে  পাটের চারা অঙ্কুরোদ্গম হয় নি, পাট লম্বা হয়নি, আঁশ হয়নি উন্নতমানের। এবার পাটের মূল্য তুলনামূলকভাবে একটু ভালো। কিন্তু চাষিরা প্রতিবিঘায় ফলন পেয়েছে খুবই কম। পাটের উৎপাদন বিপর্যয়ের সঠিক কারণ কৃষি বিভাগ বলতে পারছে না। তাদের বক্তব্য মূল কারণ চিহ্নিত করতে মাঠে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ফিল্ড সার্ভিস উইং এর পরিচালক ড. আব্দুল মুঈত গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেছেন, পাটের বীজ বপন মৌসুমে প্রচুর বৃষ্টিপাতের কারণে ফলন কম হয়েছে। পাটের আবাদী জমি কমে যাবার কারণও সেটি। তারপরেও সবখানে খবর নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের।  মাঠপর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, এবার দাম একটু ভালো কিন্তু চাষিদের পাটের উৎপাদন কম হয়েছে। মূলত মাত্রাতিরিক্ত বৃষ্টিপাত এবং উপযুক্ত মূল্য না পাওয়ায় পাট চাষে অনাগ্রহের কারণে আবাদ ও উৎপাদন কমেছে। অনেক চাষি বাজার বিশৃঙ্খলায় অব্যাহত লোকসানের কারণে পাট আবাদ কমিয়ে দেয়। বাস্তবেও তদারকির অভাবে মুনাফালোভী ফড়িয়া, দালাল ও আড়তদারদের দাপট বেড়ে যায়। পাট নিয়ে করে টানাহেচড়া। সাধারণ চাষিদের নানাভাবে প্রতারিত করে সিন্ডিকেট। এসব ব্যাপারে  নজরদারি না বাড়ানোর কারণেই সোনালী আঁশের স্বর্ণযুগ ফেরার ক্ষেত্রে বিরাট অন্তরায়। চাষিদের উপযুক্ত মূল্যপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা ও বাজার বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে সংশ্লিষ্টরা চরম ব্যর্থতার পরিচয় দেয় বরাবরই।  
কৃষি বিশেষজ্ঞ, অর্থনীতিবিদগণ ও  চাষিসহ সংশিষ্টদের বক্তব্য, বিরাট সম্ভাবনাময় ও বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম মাধ্যম কৃষির এই খাতটির দিকে সামগ্রিকভাবে আসলেই নজর দেয়া হচ্ছে না।  একজন  দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, একবিঘা জমিতে চাষ, বীজ, পরিচর্যা, কাটা, পচানো, আঁশ ছড়ানো, শুকানো ও বিক্রির জন্য পরিবহনসহ সর্বসাকুল্যে খরচ হয় প্রায় ১২ হাজার টাকা। একবিঘায় পাট হয় সাধারণত ১০ থেকে ১২মণ। গতবার প্রতিমণ ১হাজার টাকা থেকে ১হাজার ২শ’টাকা। তাতে বিঘাপ্রতি গড়ে চাষিদের লোকসানই হয়। এই চিত্র ছিল দেশের প্রায় সবখানেই।  কৃষক সংগ্রাম সমিতি পাটের মূল্য প্রতিমণ সর্বনিম্ন ৩হাজার টাকা নির্ধারণের দাবি জানিয়ে গতবার স্মারকলিপিও দেয়।  এবার বর্তমান বাজার মূল্য ১হাজার ৮শ; টাকা থেকে ২হাজার। কিন্তু পাট উৎপাদন হয়নি তেমন। সারাদেশের সবখানেই পুরাদমে পাট বপন শেষে আঁশ ছড়ানো ও শুকানোর কাজ চলছে । এবার চাষিদের মন ভালো নেই।  ফলন একবারেই কম হয়েছে। অনেক চাষির বক্তব্য বৃষ্টির কারণ তো আছেই পাটবীজের কারণেও এটি ঘটতে পারে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পাট


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ