Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চীনা সরবরাহকারীর প্রতারণা!

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ৮:৪৫ পিএম

আমদানির ডকুমেন্টে ঘোষিত পণ্যের বদলে চট্টগ্রাম বন্দরে খালাসের পর্যায়ে এর আগেও বালু-মাটির চালান পাওয়া গেছে একাধিকবার। কাগজের ঘোষণায় চীন থেকে আমদানিকৃত চালানের কন্টেইনারে এবারও মিলেছে বালু-মাটি। পুরো বিষয়টিকে ঘিরে এ নিয়ে এখন প্রশ্ন ও সংশয় দেখা দিয়েছে, এটি কী আদৌ ‘মিথ্যা ঘোষণায়’ পণ্য আমদানি এবং ‘বৈদেশিক মুদ্রা পাচারের’ ঘটনার পর্যায়ে পড়ে? নাকি বিদেশী রফতানিকারক বা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতারণা ও বিশ্বাসভঙ্গের ঘটনা? একই ধরনের কয়েকটি চালান আটকের পর চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের শীর্ষ কর্মকর্তা এবং আমদানিকারক-ব্যবসায়ী মহলকে বিষয়টি এখন ভাবিয়ে তুলেছে। বৈদেশিক বাণিজ্যে এহেন অভিনব প্রতারণায় ব্যবসায়ী মহলও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এ ধরনের সর্বশেষ ঘটনায় কাগজের বদলে বন্দরে আসা বালু-মাটির চালানটির পেছনে পৌনে ১৩ লাখ টাকা (সাড়ে ১৫ হাজার ডলার) কোনো আমদানিকারকের বিদেশে পাচার তথা মানি লন্ডারিংয়ের বিষয়টি বাস্তবতা ও যুক্তির ধোপে টেকে না। কেননা স্বপরিবারে বিদেশ সফরে গেলে এই স্বল্প পরিমাণ অর্থ নগদেও নিয়ে যাওয়া সম্ভব। তাছাড়া আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ঢাকার বনানীর প্রগ্রেস ইমপেক্স লিমিটেড চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে শুল্ক-কর বাবদ ৭ লাখ ৮৮ হাজার ৩৭২ টাকা যথারীতি রাজস্ব পরিশোধ করেছে। প্রতিষ্ঠানটি যখন আনীত চালানের পণ্য নিয়ে গোঁজামিল ও প্রতারণার সন্দেহ করেন তখনই কাস্টমসকে তা অবহিত এবং গত ২৯ আগস্ট বন্দর থানায় একটি জিডি করেন।
এতে আমদানিকারক প্রগ্রেস ইমপেক্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ এম এ আকবর বলেছেন, তিনি রফতানিকারক তথা সাপ্লাইয়ারের প্রতারণার শিকার হয়েছেন। ঋণপত্র খুলে যথারীতি ব্যাংকিং চ্যানেলেই সেই আমদানি ক্রয়মূল্য পাঠানো হয়েছিল। ১৯ হাজার ৬৫৬ কেজি ডাবল এ-ফোর কাগজ আমদানির ক্রয়মূল্য পরিশোধ সত্তে¡ও ঘোষিত পণ্যের পরিবর্তে ভিন্ন জিনিস সরবরাহ করার কারণে তিনি তার অর্থ ফেরৎ পাওয়ার চেষ্টা করছেন।
কাস্টমস সূত্র জানায়, ঢাকার বনানীর উক্ত আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ডাবল এ-ফোর কাগজ সরবরাহের কথা চীনের সাপ্লাইয়ার প্রতিষ্ঠান দালিয়ান রিশাংবো কমার্শিয়াল লিমিটেডের। গত ২১ জুন কাগজ আমদানির জন্য ব্র্যাক ব্যাংকে ১৫ হাজার ৪৪০ ডলার মূল্যের ঋণপত্র খোলে আমদানিকারক ঢাকার বনানীর প্রগ্রেস ইমপেক্স লিঃ। সমুদয় অর্থ ব্যাংকিং চ্যানেলে চীনা সরবরাহকারীর কাছে পাঠানো হয়। কাস্টমসে শুল্ক-কর জমা দেয়া হয় ৭ লাখ ৮৮ হাজার ৩৭২ টাকা। চীনের তিয়েনজিংগ্যাং বন্দর থেকে ‘এমভি হ্যাপি বী’ জাহাজযোগে গত ২৬ আগস্ট আমদানি চালানের কন্টেইনার আসে চট্টগ্রাম বন্দরে।
খালাসের জন্য গত ২৮ আগস্ট কাভার্ড ভ্যান নিয়ে আমদানিকারকের প্রতিনিধি বন্দরে গিয়ে কাস্টমস কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে সেই কন্টেইনার খুলে দেখেন কাগজ তো নয়ই; বরং থরে থরে বালু-মাটির বস্তায় ভর্তি। ঘোষণা মাফিক পণ্য না থাকায় শতভাগ কায়িক পরীক্ষার পর কন্টেইনারে মিলেছে ৪১০ বস্তা বালু-মাটি। উপস্থিত সবাই কন্টেইনারের সিল অক্ষত দেখে নিশ্চিত হন, চীন থেকেই এসেছে বালু-মাটি ভর্তি বস্তাগুলো। কাস্টম হাউসের অডিট ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড রিসার্চ (এআইআর) শাখা আমদানি গোঁজামিল থাকায় চালানটি আটক করে। এআইআর শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত কাস্টমস উপ-কমিশনার নুর উদ্দিন মিলন বলেছেন, আনীত বালু-মাটির প্রয়োজনীয় রাসায়নিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। এ ব্যাপারে গঠিত একটি কমিটি আজ সোমবার থেকে কাজ শুরু করবে।
এদিকে চট্টগ্রাম বন্দরে মিথ্যা ঘোষণার সন্দেহজনক আমদানি পণ্যের চালানে ইতিপূর্বেও একাধিকবার বালু-মাটিসহ মূল্যহীন দ্রব্য পাওয়া গেছে। গত ১৪ ফেব্রæয়ারি চীন থেকে আমদানিকৃত প্লাস্টিক দানার ঘোষণা দিয়ে আনীত চালানের ৪টি কন্টেইনারে বালু ভর্তি বস্তা আটক করে কাস্টমস এআইআর শাখা। প্লাস্টিক দানা আমদানির জন্য ৭০ হাজার ৩৮০ ডলার চীনা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে পাঠিয়ে প্রতারিত হয় আমদানিকারক ঢাকার প্রতিষ্ঠান আরএসডি এন্টারপ্রাইজ। এতে শুল্ক-কর পরিশোধ করা হয় ১৯ লাখ টাকা। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে বিপি শিট আমদানির ঘোষণার পরিবর্তে বন্দরে আসে ২২টি কন্টেইনার ভর্তি বালু-মাটি। বিপিশিটের জন্য আড়াই লাখ মার্কিন ডলার আমদানি ক্রয়মূল্য পরিশোধ করে প্রতারিত হন ঢাকার ইমামগঞ্জ বাজার লেনের আমদানিকারক সিএটি ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনাল।
এভাবে মাঝেমধ্যে এ ধরনের ঘটনা ধরা পড়লেও বড়সড় পরিসরে মিথ্যা ঘোষণায় রাজস্ব ফাঁকি এবং মোটা অংকের বৈদেশিক মুদ্রা পাচারকারী অসৎ সিন্ডিকেট রাঘব-বোয়ালরা সুকৌশলে পার পেয়ে যাচ্ছে। আর বিদেশের অসৎ সরবরাহকারীদের প্রতারণা ও বিশ্বাসভঙ্গের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়ার উপায়ও খুঁজে বের করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন প্রকৃত আমদানিকারক-ব্যবসায়ীমহল।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রতারণা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ