Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আ’লীগে বিভক্তি : সহিংসতা বৃদ্ধির আশঙ্কা

তৃতীয় দফা ইউপি নির্বাচন

প্রকাশের সময় : ২২ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

তারেক সালমান : চলতি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের আসন্ন তৃতীয় ধাপের ভোটেও ত্যাগী ও দলের প্রতি নিবেদিত নেতারা চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন না পাওয়ায় দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীরা। একারণে দিন দিন দলীয় ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ, হামলা-মামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগসহ সহিংসতা বাড়ছেই। প্রথম ও দ্বিতীয় দফার চেয়ে তৃতীয় দফায় অনিয়ম ও মনোনয়ন বাণিজ্যের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় এ সহিংসতার পরিমান আরও বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা করেছেন দলটির একাধিক শীর্ষ নেতা।
শীর্ষ নেতারা মনে করেন, তৃণমূলের অনেক ত্যাগী নেতারা চেয়ারম্যান পদে টিকিট না পাওয়ায় একটি বড় অংশ দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলেও দাবি করছেন তারা।
কিন্তু বিদ্যমান পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন না হওয়ারও কোনো সুযোগ নেই। সারাদেশের তৃণমূল নেতাকর্মীরা আজ দ্বিধাবিভক্ত। এর জন্য দায়ী দলের কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের কিছু অসাধু নেতা। তারা মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে বাণিজ্যও আশ্রয় নিয়েছেন। যার দায় নিতে হবে পুরো দলকে। এছাড়াও দলের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে আশংকাজনক হারে বেড়ে চলেছে। এতে করে প্রথম ও দ্বিতীয় দফা নির্বাচনের চেয়ে তৃতীয় দফায় সহিংসতার মাত্রা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।    
তারা বলেন, ২৩ এপ্রিল তৃতীয় দফায় ৪৮ টি জেলার ৬২০ টি ইউনিয়নে নির্বাচন হবে। কিন্তু এসব নির্বাচনী এলাকাগুলোতে ইতোমধ্যে দলীয় ও বিদ্রোহী সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ, হামলা-মামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা ঘটছে। এর পেছনে কিছু কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের নেতারা জড়িত রয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তারা।
জানা গেছে, এ দ্বন্দ্বের জেরে চলছে দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর, বহিষ্কার, মিছিল, মানববন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশ ও পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি। বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা এখন পরস্পর মুখোমুখি। নিজেরাই নিজেদের প্রতিপক্ষ হয়ে দাড়িয়েছে।
এছাড়াও গত সপ্তাহে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে খোদ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, যেসব ইউনিয়নে ক্ষমতাসীন দলের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন, ওইসব স্থানেই আসন্ন তৃতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে সহিংসতার আশংকা রয়েছে।
সূত্র জানায়, আশঙ্কা থেকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ বার্তা নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার ক্ষমতাসীন দলের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও অন্য কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠক করেন। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন।
সিইসির সঙ্গে বৈঠক থেকে বের হয়ে হানিফ সাংবাদিকদের জানান, প্রধানমন্ত্রীর কঠোর নির্দেশনা রয়েছে-নির্বাচনে কোনো ধরনের অনিয়ম, ত্রুটি, বিচ্যুতি উনি দেখতে চান না। সে নির্দেশনা নির্বাচন কমিশনকে পৌঁছে দিয়েছি।
তিনি বলেন, অনিয়ম হলেই জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানানো হয়েছে। পাশাপাশি দলীয় নেতাকর্মীদেরও এ বিষয়ে সতর্ক করে দেয়া হবে।
হানিফ আরও বলেন, আমরা মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদেরও নির্দেশনা দিয়ে রাখব। কোথাও কোনো অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রথম ও দ্বিতীয় দফা ইউপি নির্বাচনে এখন পর্যন্ত অন্ত ৫৬ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। আহত হয়েছে প্রায় ৫ হাজার। এছাড়াও গত কয়েকদিনে আওয়ামী লীগ ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, গাজীপুরের কাপাসিয়া, টাঙ্গাইলের মধুপর, নড়াইলের কালিয়া, পাবনাসহ বিভিন্ন স্থানে। মাদারীপুওে নির্বাচনোত্তর সহিংসতা ঘটেই চলেছে। এ ঘটনায় অন্তত গুলিবিদ্ধসহ ৬০/৭০ জন আহত হয়েছে।
এদিকে, আওয়ামী লীগের প্রার্থী বাছাই ও মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে বাণিজ্য হয়েছে বলে খোদ দলীয় সংসদ সদস্যরাও অভিযোগ তুলেছেন। এমন অভিযোগ করেছেন ফরিদপুর ভাঙার স্থানীয় সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন। তিনি অভিযোগ করেছেন দলের সভাপতিম-লীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহর বিরুদ্ধে। গত মঙ্গলবার ভাঙ্গা উপজেলার পুলিয়ায় তার নিজ বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।
ইউপি নির্বাচনে দলে মনোনয়ন বাণিজ্য অস্বীকার করছেন না দলের দায়িত্বশীল নেতারা। ইউপি নির্বাচনে মনোনয়ন বোর্ডের প্রধান দলের সভাপতিম-লীর সদস্য সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ বিষয়ে বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়নে বাণিজ্যের বিষয় তদন্ত করতে আওয়ামী লীগ কমিটি করছে।  
ওবায়দুল কাদের বলেন, ইদানিং মনোনয়ন না পেলে বঞ্চিতদের পক্ষ থেকে বলা হয় রাজাকার পুত্র মনোনয়ন পেয়েছে কিংবা অর্থের বিনিময়ে মনোনয়ন পেয়েছে। এ সকল কথাবার্তা বাস্তবে যতটা না সত্য তারচেয়ে বেশি অপপ্রচার। বিষয়টি তদন্ত করতে আমরা একটি কমিটি করেছি। সেই কমিটি এ সব বিষয়ে খোঁজ খবর নেবে। বিষয়টি প্রমাণিত হলে আমরা এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেব। নেত্রী (শেখ হাসিনা) আমাদের এ বিষয়টি নিয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
এ সম্পর্কে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, আওয়ামী লীগ একটি বড় দল। এখানে মনোনয়নের জন্য প্রতিযোগিতা থাকবেই। কোনো বাণিজ্য হওয়ার সুযোগ নেই। আর মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আর যদি এমন অভিযোগ কারও বিরুদ্ধে প্রামনিত হয় তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে পৌর নির্বাচনে যেভাবে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে বিদ্রোহ নিয়ন্ত্রণ ও দ্বন্দ্ব নিরসন করা হয়েছে। আগামীতেও একইভাবে করা হবে বলেও জানান তিনি।
এ সম্পর্কে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বলেন, দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও নির্বাচন কমিশনের আশঙ্কার বিষয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। আওয়ামী লীগ একটি বড় দল। সেখানে প্রতি ইউনিয়নে ৩-৪ জন যোগ্য প্রার্থী রয়েছেন। তাদের একজন মনোনয়ন পেলে অন্যরা মনোক্ষুন্ন হবেন এটাই স্বাভাবিক। সাংগঠনিক উপায়েই দলের দ্বন্দ্ব-কলহ নিরসন করা হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
উল্লেখ্য, সদ্য সমাপ্ত দুই ধাপ ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ৭৭৬ বিদ্রোহী প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এদের মধ্যে দেড় শতাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন।
                           



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আ’লীগে বিভক্তি : সহিংসতা বৃদ্ধির আশঙ্কা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ