পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অর্থনৈতিক রিপোর্টার : স্বচ্ছতা ও সুশাসনের অভাবে দেশের ব্যাংকিং খাত চরম ঝুঁকিতে পড়েছে। সুশাসনের অনুপস্থিতির সুযোগে গত ৭ বছরে ৬টি বড় আর্থিক কেলেঙ্কারিতেই ৩০ হাজার কোটি টাকা চুরি বা আত্মসাৎ করা হয়েছে। গত দেড় দশকে ব্যাংকিং খাতে ৯টি বড় ধরনের আর্থিক কেলেঙ্কারি হয়েছে। এসব আর্থিক কেলেঙ্কারিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিপুল সংখ্যক গ্রাহক। অথচ এসব কেলেঙ্কারির একটিরও বিচার হয়নি। গত কয়েক বছর থেকে দেশের ব্যাংকিং খাতে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে চলছে, যা দেশের উন্নয়নে অন্যতম বাধা। এ নিয়ে ব্যাংক জামানতে জনমনে তৈরি হয়েছে আস্থাহীনতা ও উৎকণ্ঠা। মানুষ ব্যাংক বিমূখ হয়ে পড়ছে। ব্যাংকিং সেক্টরে এই নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে দেশের বর্ধনশীল ব্যাংকিং ব্যবস্থা চরম হুমকির মুখে পড়েছে। গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘ব্যাংকিং খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় অর্থনীতিবিদ, ব্যাংকার, বিশিষ্টজনেররা এমন মতামতই তুলে ধরেন। সুজন সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খানের সভাপতিত্বে সংগঠনটির সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনায় অংশ গ্রহণ করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. মির্জা এবি আজিজুল ইসলাম, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফর উল্লাহ চৌধুরী, পুঁজিবাজার বিশ্লেষক প্রফেসর আবু আহমেদ প্রমুখ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রখ্যাত ব্যাংকার সৈয়দ আবু নাসের মোহাম্মদ বখতিয়ার। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সুশাসন নিশ্চিত করা, নিয়ন্ত্রণ সংস্থাকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেয়া এবং এ খাতকে রাজনীতিমুক্ত রাখার সুপারিশ করেন ব্যাংক ও আর্থিক খাত বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে এটা নিশ্চিত করতে না পারলে বিপর্যস্ত ব্যাংকিং খাত থেকে জাতীয় অর্থনীতির ওপর বড় চাপ আসতে পারে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. মির্জা আজিজুল ইসলামের মতে, সুশাসনের অভাব রয়েছে ব্যাংকিং খাতে। বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে এটি ব্যাপক। রাজনীতি সেখানে যেন বাসা বেঁধেছে। সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ মনে করেন, আর্থিক খাতে রাজনীতি প্রবেশ ঠিক না। রাজনীতি ঢুকলে এই খাত ভালো থাকতে পারে না। তিনি বলেন, রাজনীতি স্বচ্ছ না হলে কিছুই ঠিক হবে না। একই সঙ্গে বোর্ড রুমে যাতে রাজনীতি না ঢুকে সেদিকেও আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।
ব্যাংকিং খাতের সার্বিক চিত্র তুলে ধরে সভায় সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ তার গবেষণাধর্মী প্রবন্ধে বলেন, গত ৭ বছরে ছয়টি বড় ধরনের আর্থিক কেলেঙ্কারিতে ৩০ হাজার কোটি টাকারও বেশি চুরি বা আত্মসাৎ করা হয়েছে। আর্থিক খাতের হালচাল তুলে ধরে সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ বলেন, গত দেড় দশকে ব্যাংকিং খাতে ৯টি বড় ধরনের আর্থিক কেলেঙ্কারি হয়েছে। এর মধ্যে গত ৭ বছরে ৬টি বড় ধরনের আর্থিক কেলেঙ্কারিতে ৩০ হাজার কোটি টাকারও বেশি চুরি বা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এসব আর্থিক কেলেঙ্কারিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিপুল সংখ্যক সাধারণ মানুষ। অথচ এসব কেলেঙ্কারির একটিরও বিচার হয়নি। তিনি বলেন, বেশ কয়েক বছর থেকেই বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে চলছে, যা দেশের উন্নয়নে অন্যতম বাধা। এ নিয়ে জনমনে তৈরি হয়েছে আস্থাহীনতা ও উৎকণ্ঠা। নিকট অতীতে পুঁজিবাজার, হলমার্ক, বিসমিল্লাহ গ্রুপ, বেসিক ব্যাংক ও ডেসটিনি কেলেঙ্কারির সঙ্গে সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে রিজার্ভ চুরির ঘটনা। ঝানু এই ব্যংকার বলেন, আইন ও বিধিমালার তোয়াক্কা না করেই রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বেসিক ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ইচ্ছামতো ঋণ দেওয়া হয়। এমনকি প্রধান কার্যালয়ের ঋণ যাচাই কমিটির বিরোধিতা সত্ত্বেও পরিষদ অনুমোদ দেয়। ২০১২-১৩ অর্থবছরে মাত্র ১১টি পরিষদ সভায়ই ৩ হাজার ৪৯৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হয়।
ব্যাংকগুলোতে রাজনৈতিক বিবেচনায় পরিচালক নিয়োগের চিত্র তুলে ধরে সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ বলেন, মহাজোট সরকার ২০০৯ সাল থেকে রাজনৈতিক বিবেচনায় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকে পরিচালক নিয়োগ দিয়ে আসছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদে সদস্য নিয়োগ দেওয়া হলে তাদের যোগ্যতা নিযে প্রশ্ন ও সন্দেহ তৈরি হয়। তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রী একটি ব্যাংকিং কমিশন গঠনের কথা বলেছেন। নিরপেক্ষ ও অভিজ্ঞ কাউকে কমিশন প্রধানের দায়িত্ব দিলে এ থেকে ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ব্যাপক সংস্কার দরকার। এর ব্যবস্থাপনা অদক্ষ। অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের সাবেক এই ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরো বলেন, অর্থমন্ত্রী একটি ব্যাংকিং কমিশন গঠনের কথা বলেছেন। নিরপেক্ষ ও অভিজ্ঞ কাউকে কমিশন প্রধানের দায়িত্ব দিলে এ থেকে ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ব্যাপক সংস্কার দরকার। এর ব্যবস্থাপনা অদক্ষ বলে মতে দেন তিনি।
আলোচনায় ড. মির্জা আজিজ বলেন, সুশাসনের অভাব রয়েছে ব্যাংকিং খাতে। বিশেষ করে রাষ্ট্রায়াত্ব ব্যাংকে এটি ব্যাপক। ব্যাংকগুলোর পরিচালন ব্যয় এতো বেশি বেড়ে যাচ্ছে যে পুরো খাত ঝুঁকির দিকে যাচ্ছে। বিদেশী ব্যাংক একশ টাকা আয় করতে ৫০ টাকা ব্যয় করে সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ব্যয় করে ৮৬ টাকা। এছাড়া দৈনন্দিন লেনদেনেও অনিয়ম পরিলক্ষিত হচ্ছে।
ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বিগত বছরগুলোতে বৈশ্বিক মন্দা দেখা দিয়েছিল অর্থনৈতিক খাত থেকে। বর্তমানেও দেশে এমন কিছু দেখা যাচ্ছে। ব্যাংকিং খাতের অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদারকি ও নিয়ন্ত্রণ আরও স্বচ্ছ হতে হবে। তিনি বলেন, রাজনীতি ঢুকলে ব্যাংকিং সেক্টর ভালো থাকতে পারে না। আর তাই রাজনীতি স্বচ্ছ না হলে কিছুই ঠিক হবে না। ব্যাংকিং খাতের অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে পরামর্শ দিয়ে সাবেক এই অর্থনীতিবিদ বলেন, দেশের ব্যাংকগুলোকে বেশি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। বেশি নিয়ন্ত্রণ করাটা খারাপ। এক্ষেত্রে ব্যালেন্স করতে হবে। ব্যাংক নিয়ন্ত্রণে দেশে যেসব আইন আছে তা খুবই সমৃদ্ধ, তবে এর বাস্তবায়ন কম উল্লেখ করে ব্যাংকগুলোকে তাদের নিয়মের পরিপালন করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, নিয়ম পরিপালনের ব্যাপারে সচেষ্ট না হলে সারাজীবনেও অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ হবে না।
ব্যাংকের আইটি সেক্টরের বিষয়ে সালেহ উদ্দিন বলেন, শুধু আইটি মেশিন হলেই হবে না। এসব সেক্টরে দক্ষ ও সৎ মানুষের দরকার। যেসব সৎ কর্মকর্তা আছেন তাদের পেছনে সরিয়ে দেয়া হয়। তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাতে এ যাবৎকালে অনিয়ামের কোন বিচারই দৃশ্যমান ছিল না। ব্যাংকের মনোভাব পরিবর্তন করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ব্যাংকগুলোকে যথাসময়ে ঋণ দিতে হবে। ঋণ কার্যক্রম এবং টার্গেটগুলো ফুলফিল হচ্ছে কিনা, তা দেখতে হবে। এ সময় তিনি ব্যাংকিং খাতের অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধে অতি দ্রুত দৃশ্যমান বিচারের দাবি জানান। আর্থিক খাতে গোলযোগ হলে দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয় বলেও এ সময় মন্তব্য করেন এই অর্থনীতিবিদ।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ চুরির ঘটনায় ড. ফরাস উদ্দিন কমিটি যে প্রতিবেদন দিয়ে তাতে তিনটি বিষয় আছে কিনা এ প্রশ্ন মানুষের। সুইফটের যেসব লোক তদন্ত করতে এসেছিলেন তাদের কেন তদন্ত করতে দেয়া হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর আইটি উপদেষ্টা ঘটনার পর তদন্তে কোন ভূমিকা রেখেছেন কিনা, আর ভারতীয় নাগরিক রাকেশ আস্তানাকে কেন এখানে আনা হলো বিশেষজ্ঞ হিসেবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।