Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দন্ডিত ব্যক্তি দলের প্রধান নয়

আরপিও সংশোধনের সভা আজ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৬ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০১ এএম

দন্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি কোনো রাজনৈতিক দলের প্রধান যাতে থাকতে না পারে -বিষয়টি সামনে রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ (আরপিও) সংশোধন করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ডিজিটাল পদ্ধতিতে তথা ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণের বিধান যুক্তসহ ৩৫টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সংশোধনের প্রস্তাব তোলা হচ্ছে।
আজ রোববার আরপিও সংশোধনের অগ্রগতি বিষয়ে আলোচনার জন্য সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় আরপিও সংশোধনের খসড়া প্রস্তাব অনুমোদন হতে পারে বলে ইসি সূত্র জানিয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বর মাসে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে কমিশনে সংশোধন প্রস্তাব সংসদে আইন আকারে পাস হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ইনকিলাবকে বলেন, বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও ভাইন্স চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নেতৃত্ব থেকে সরাতে আরপিও সংশোধনের চক্রান্ত শুরু করেছে সরকার। সেইটি বাস্তবায়ন করতে চায় ইসি। তিনি আরো বলেন, আওয়ামীলীগ জানে দেশের জনগণ যদি ভোট দিতে পারে তা হলে সরকার ক্ষমতায় আসবে না। জনগন বিএনপিকে ভোট দিবে। সে কারণে বিনা ভোটে নির্বাচন করতে চায় আবারো।
অপরদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আরপিও সংশোধন হবে না বলে কিছুদিন আগে জানিয়েছিলেন ইসি সচিব।
জানা গেছে, বর্তমান কমিশন নিয়োগ পাওয়ার পরও গত বছরের জুলাইয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপে ইসি ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে আরপিওসহ প্রয়োজনীয় নির্বাচনি আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়ার কথা বলেছিল। সে অনুযায়ী কমিশনার কবিতা খানমের নেতৃত্বে গঠিত ইসির আইন সংস্কার কমিটি আরপিও সংশোধনের একটি প্রস্তাবনা তৈরি করে গত ১২ই এপ্রিল কমিশন সভায় উত্থাপন করে। পাশাপাশি সংশোধনী কার্যক্রমে সরকারের সাবেক অতিরিক্ত সচিব একেএম মোহাম্মদ হোসেনকে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। এই পরামর্শক সম্প্রতি ইসির কাছে তার সংস্কার প্রস্তাব জমা দিয়েছেন। তবে কমিশন তা অনুমোদন না করে কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়ে ফেরত পাঠায়। এরপর আরপিও সংশোধনীর বিষয়টি আড়ালে চলে যায়। পরবর্তীতে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ জানান, একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে আরপিও সংশোধন হচ্ছে না। অবশ্য, রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মতিতে জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হলে আরপিও সংশোধনীর প্রয়োজন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসি কর্মকর্তা জানান, দন্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি কোনো রাজনৈতিক দলের প্রধান যাতে থাকতে না পারে -বিষয়টি গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ (আরপিও) সংশোধনের প্রস্তাবে থাকছে। তবে বিষয়টি পাস হবে কি না তা বলা যাবে না। কিন্তু আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য সময় কম হলেও কমিশন চাইলে এই সময়ের মধ্যেও আরপিও সংশোধন সম্ভব। আগামী ৯ই সেপ্টেম্বর সংসদ অধিবেশন শুরুর আগে দুই সপ্তাহের বেশি সময় পাওয়া যাবে। ফলে এর মধ্যেই কমিশনে সংশোধন প্রস্তাব অনুমোদন, আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং ও মন্ত্রিসভায় অনুমোদন করানো সম্ভব। সংসদে বিল ওঠার পর এক সপ্তাহের মধ্যেই তা আইন আকারে পাস করা সম্ভব। বিএনপির পক্ষ থেকে এর আগে অভিযোগ করা হয়েছিলো খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে নেতৃত্ব থেকে সরাতে আরপিও সংশোধনের চক্রান্ত চলছে। তখনই ইসির পক্ষ থেকে বলা হয়, আরপিও সংশোধন হবে না।
আরপিও সংশোধনের বিষয়ে ইসির আইন সংস্কার কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম বলেন, আইন সংস্কার কমিটির প্রতিবেদন প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে জমা দেয়া হয়েছে। আইন পরামর্শকও এ নিয়ে কাজ করেছেন। ইভিএমের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করাসহ কিছু বিষয় রয়েছে। রোববারের বৈঠকে আলোচনার জন্য বিষয়টি এজেন্ডাভুক্ত রয়েছে। কবিতা খানম বলেন,আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আরপিও সংশোধনীর চিন্তা থেকেই বিষয়টি বৈঠকে উঠানো হচ্ছে। আমি মনে করি, যে সময় হাতে রয়েছে তাতে আরপিও সংস্কার সম্ভব। সংস্কার না হওয়ারও কোনো কারণ দেখছি না।
জরুরি ভিত্তিতে দেড় লাখ ইভিএম কিনতে যাচ্ছে ইসি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভোট কেন্দ্রে এসব মেশিন ব্যবহার করা হতে পারে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্ভাব্য ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৪৪ হাজার। মেশিনগুলো কেনার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন সম্প্রতি একটি প্রকল্প অনুমোদন করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে। নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় অধিকতর স্বচ্ছতা আনার লক্ষ্যে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ক্রয়, সংরক্ষণ ও ব্যবহার শীর্ষক এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৮২১ কোটি ৪০ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এর সিংহভাগই ব্যয় হবে ইভিএম কেনার খাতে। প্রতি ইউনিট ইভিএমের দাম পড়ছে প্রায় দুই লাখ টাকা। আজ রোববার এ প্রকল্পের ওপর পিইসি (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির) সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া ইভিএম সাধারণ মানুষের মধ্যে জনপ্রিয় করতে শিগগিরই ইভিএম মেলা’র আয়োজন করতে যাচ্ছে কমিশন।
এবার একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ইলেট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম), অনলাইন মনোনয়নপত্র জমা, জামানত বাড়ানো, স্বতন্ত্র প্রার্থিতা সহজীকরণসহ অন্তত ৩৫টি প্রস্তাব নিয়ে বসেছিল ইসির আইন সংস্কার কমিটি। নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, আরপিওতে ইভিএম যুক্ত ও এর ব্যবহার নিশ্চিত করতে বেশ কিছু ধারা, উপ-ধারা সংশোধন করা হচ্ছে। কিন্তু একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাধ্যতামূলকভাবে ইভিএম ব্যবহার করতে হবে, এমন কথা কোথাও উল্লেখ নেই। আরপিওর যেসব ধারা-উপধারা সংযোজন-সংশোধন করে ইভিএম ব্যবহারের কথা বলা হচ্ছে, সেগুলো হলো ২৫-এর (বি), ২৬, ২৭ এর (৩)(৪)(৫), ২৮ এর (১), ২৮ এর (২), ২৮ এর (৩), ২৮ এর (৪) (এ), ২৮ এর (সি), ২৮ এর (ডি), ২৮ এর (৫), ২৮ এর (৬), ৩১ এর (১), ৩১ এর (৩), ৩১ এর (৮), ৩২ এর (১), ৩১ এর (১১), ৩৩ এর (১), ৩৪ এর (১), ৩৬ এর (৪), ৩৬ এর (৫), ৩৬ এর (৬), ৩৬ এর (৭), ৩৬ এর (৮), ৩৬ এর (৯), ৩৯ এর (১০), ৩৬ এর (১২), ৩৭ এর (২), ৩৭ এর (৬), ৪৪ এর (বি) (৬), ৪৪ এর (সি) (৪), ৪২ এর (এ) (বি) (সি) (ডি) (ই), ৪৪, ৮১ এর (১১) ও ৮১ এর (১) এ ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রার্থিতা সহজীকরণের যে উদ্যোগ ছিল সেটা হচ্ছে না।এটির ক্ষেত্রে বিদ্যমান ব্যবস্থাই বহাল রাখার প্রস্তাব হচ্ছে। এ ছাড়া ফেসবুক, টুইটারসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করার চিন্তা করলেও ইসি সেখান থেকে সরে আসছে। তবে, নির্বাচনী আচরণবিধিতে সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষেত্রে একটি গাইডলাইন মনে করছি ইসি সে কারণে থাকবে বলে জানা গেছে। এদিকে কমিশন সভার বিবিধ এজেন্ডায় রাজনৈতিক দলের গঠনতন্ত্র নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে জানা গেছে। সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদের ১ (ঘ) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি নৈনতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হইয়া অন্যূনতম দুই বৎসরের কারাদন্ডে দন্ডিত হন এবং তাঁহার মুক্তিলাভের পর পাঁচ বৎসরকাল অতিবাহিত না হইয়া থাকে তবে তিনি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য অযোগ্য বিবেচিত হবেন। কিন্তু ৭২ এর আরপিওতে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃত্বের ক্ষেত্রে দুর্নীতিবাজদের রাখা না রাখার ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট কোনো বক্তব্য নেই। কোনো রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে থাকতে হলে তাঁকে সংবিধান অনুযায়ী যোগ্য বিবেচিত হতে হবে- এমন সংশোধনী আনা হতে পারে আরপিওতে। এজন্য কোনো রাজনৈতিক দলে দুর্নীতির মামলায় দন্ডপ্রাপ্ত এবং যিনি সংসদ সদস্য পদে নির্বাচিত হওয়ার অযোগ্য, তিনি কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে থাকতে পারবেন না। যদি তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে থাকেন তবে সেই নেতৃত্ব বাতিল বলে বিবেচিত হবে।



 

Show all comments
  • Mohammed Shah Alam Khan ২৬ আগস্ট, ২০১৮, ৮:৪৫ এএম says : 2
    দন্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি কোনো রাজনৈতিক দলের প্রধান যাতে থাকতে না পারে -বিষয়টি সামনে রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ (আরপিও) সংশোধন করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচন কিমশন সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে এটা মানতেই হবে। একটা দেশের রাজনৈতিক দল বিশেষ করে যে দল বার বার ক্ষমতায় আসে এদের প্রধান সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি হবে এটা কোনভাবেই মানা যায়না। দেশের লোকজনকে ধাধা লাগিয়ে খালেদা জিয়া তার পারিবারিক নিয়ন্ত্রাধীন রাজনৈতিক দল বিএনপি (যে দলের সৃষ্টি করেছিল তারই স্বামী জিয়াউর রহমান) দলের প্রধান থেকে ক্ষমতা ছাড়ার আগে দলের সংবিধানের ধারা পরিবর্তন করে, যাতে করে তার পুত্র তারেক সাজাপ্রাপ্ত আসামী দলের প্রধান হতে পারে। কিন্তু একটা দেশের বৃহত্তর দলের প্রধান একজন পালাতক আসামী হয় কি ভাবে? এটা একটা মেজিকের মত দেশবাসীর কাছে মনে হচ্ছিল এবং আন্তর্জাতিক ভাবে হাস্যকর হয়ে পরেছে বাংলাদেশ। দেশের সংবিধানে সাংসদ হবার যোগ্যতার ক্ষেত্রে বলা হয়েছে সাজাপ্রাপ্তরা সংসদ নির্বাচন করতে পারবেনা। কিন্তু দলীয় প্রধান সম্পর্কে পরিষ্কার ভাবে কিছু বালা না থাকায় বিএনপি এই সুযোগ নিয়েছে জিয়া পরিবারের সদস্যকে দলের প্রধান হবার জন্যে। ইসি এখন আরপিও সংশোধনের সময় নতুন করে দলীয় প্রধান হবার যোগ্যতা নির্ধারণ করে দিলে এমন অবিচার আর ভবিষতে হবে না এটাই সত্য। কাজেই জনগণ এই নতুন আইন প্রণয়নকে স্বাগত জানাবে এটাও সত্য।
    Total Reply(0) Reply
  • Nannu chowhan ২৬ আগস্ট, ২০১৮, ৩:২৭ পিএম says : 0
    Eaiguli Aowamilig shorkarer shorojontro jate khaleda Zia o tarek Rahman nirbachone ongsho na nite pare ebong eai porikolpona basto baion korse Aowamiliger tabedar cec.jodi shottikar bichar bebosta deshe protishtito hoto taha hole Hasina theke shoro kore Aowamili 98% neta doshi shabbosto hoto
    Total Reply(0) Reply
  • ২৬ আগস্ট, ২০১৮, ৩:৫১ পিএম says : 0
    Shokol beshoy Mr.Rejveer howkaw, Mr.Rejvee apne jodi bukay hat dea boltay paren Tarek Zia , Khaleda Zia durneti koray nai, kal e ame apner shatay ace. Sacrifice koren , durneti mukto Bangladesh goren.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ