Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চট্টগ্রামে বেপরোয়া ছিনতাই

প্রকাশের সময় : ২১ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

রফিকুল ইসলাম সেলিম : চট্টগ্রাম নগরীতে ছিনতাইকারীদের বেপরোয়া তা-ব চলছে। রাতে-দিনে সমানে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। পথচারী, রিকশা আরোহী থেকে শুরু করে অটোরিকশার যাত্রীরাও ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ছে। মহানগরীর কয়েকটি এলাকা এখন রীতিমত ছিনতাইকারী চক্রের নিরাপদ জোনে পরিণত হয়েছে। এসব এলাকায় প্রকাশ্যে দিনের আলোতে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে।
মাঝেমধ্যে দু-একটি ঘটনায় ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা গ্রেফতার হলেও বেশির ভাগ ঘটনায় অধরা থেকে যাচ্ছে অপরাধীরা। বড় ছিনতাইয়ের ঘটনায় থানায় মামলা হলেও বেশির ভাগ ঘটনায় ভুক্তভোগীরা থানা পুলিশের কাছে যায় না। ফলে অনেক ছিনতাইয়ের ঘটনার কোন রের্কডও থাকছে না।
পেশাদার ছিনতাইকারীদের পাশপাশি মাদকসেবীরাও নেমে পড়েছে ছিনতাই ও ঝাপটাবাজিতে। নানা কৌশলে তারা লোকজনের সর্বস্ব কেড়ে নিচ্ছে। টহল পুলিশের সামনেই ঘটছে ছিনতাই। এতে করে জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সকাল, সন্ধ্যা ও রাতে অটোরিকশা কিংবা মোটর সাইকেলে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় টহল দেয় ছিনতাইকারী চক্র। সুযোগ বুঝে তারা পথচারী ও রিকশা আরোহীদের কাছ থেকে টাকা পয়সা ও মালামাল কেড়ে নিচ্ছে। কোন কোন এলাকায় চেনাজানা লোকজনের মতো শুভেচ্ছা বিনিময়ের আড়ালে পথচারীদের কাছ থেকে সর্বস্ব লুট করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার দুপুরে নগরীর লাভলেইন এলাকায় টাফিক পুলিশের সার্জেন্টের সামনেই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। অটোরিকশা আরোহী ছিনতাইকারীরা রিকশা আরোহী দুই ভাইয়ের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয়। নগরীর জুবিলী রোড থেকে টাকা নিয়ে তারা কাজির দেউরিতে যাচ্ছিল। রিকশা থামিয়ে তারা তাদের প্রকাশ্যে মারধর করে টাকা ছিনিয়ে নিয়ে ফের অটোরিকশাযোগে পালিয়ে যায়। ওই দুই যুবক এসময় চিৎকার করে কর্তব্যরত পুলিশের সাহায্য চেয়েও পায়নি। তাদের পিটিয়ে রক্তাক্ত আহত করে টাকা নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। লাভলেইন থেকে শুরু করে নেভাল এভিনিউ হয়ে কাজির দেউরি পর্যন্ত সড়কে প্রতিদিনই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। এই এলাকা এখন ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যদের নিরাপদ জোন বলে জানান ভুক্তভোগীদের কয়েকজন।
১১ এপ্রিল দুপুরে পাঁচলাইশ থানাধীন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের পার্শ্ববর্তী পপুলার ডায়াগনিষ্টিক সেন্টারের সামনে ব্যস্ততম সড়কে ছিনতাইয়ের কবলে পড়েন চট্টগ্রামের যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ, ৭ম আদালতের বিচারক বেগম সালমা খাতুন। রিক্সাযোগে যাওয়ার সময় অটোরিক্সা আরোহী একদল ছিনতাইকারী পেছন থেকে এসে ভ্যানিটি ব্যাগ টান দিয়ে নিয়ে যায়। ব্যাগে নগদ টাকা, মোবাইল ফোন, জাতীয় পরিচয়পত্রসহ বিভিন্ন কাগজপত্র রক্ষিত ছিল। এই ঘটনায় ১৮ এপ্রিল নগরীর খুলশী থানাধীন ডিজেল কলোনী এলাকা থেকে মোঃ জাহাঙ্গীর আলম সেলিম (৩৬) ও মোঃ রিয়াজ (২৫) নামে দুই জনকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। এ সময় তাদের হেফাজত থেকে লুণ্ঠিত ব্যাক বেরী মোবাইল সেট উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামীরা তাদের উপরোক্ত নাম ঠিকানা প্রকাশ করে এবং উক্ত ঘটনায় জড়িত মর্মে স্বীকার করে ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দেয়। তারা একই কায়দায় মহানগরীতে আরও অসংখ্য ছিনতাই করার কথা স্বীকার করে।
ডিবি জানায় তারা দু’জনে পেশায় অটোরিকশা চালক। জাহাঙ্গীর দীর্ঘদিন যাবৎ চট্টগ্রাম শহরে বদলি চালক হিসেবে সিএনজি অটোরিক্সা চালিয়ে আসছিল। সে শুধুমাত্র রাতে গাড়ি চালায়। তারা সুযোগ বুঝে চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন এলাকায় রিক্সা যাত্রীদের টার্গেট করে ব্যাগ টান দিয়ে নিয়ে যায়। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনায় ব্যবহৃত রেজিস্ট্রেশনবিহীন একটি সিএনজি অটোরিক্সা খুলশী থানাধীন বাগগোনা এলাকার ইসমাইলের গ্যারেজ থেকে উদ্ধার করা হয়। আসামীরা সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্রের সদস্য এবং চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন জায়গায় তারা রেজিস্ট্রেশন বিহীন সিএনজি যোগে ছিনতাই করে থাকে। ইতিপূর্বে তারা একাধিক বার ছিনতাইয়ের মামলায় হাজতবাস করেছে মর্মে স্বীকার করেছে।
৮এপ্রিল ব্যবসায়ী রশিদুল হাসান তার ছোট ভাই সালাহউদ্দিনের বিয়ে উপলক্ষে ব্র্যাক ব্যাংক আন্দরকিলা শাখা থেকে ৯ লাখ টাকা উত্তোলন করেন এবং চার লাখ টাকার স্বর্ণালংকার ক্রয় করেন। বাকী পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে হেঁটে সিটি কর্পোরেশন ভবনের গেইটের কাছে আসলে ৮-৯ জন ছিনতাইকারী তার গতিরোধ করে এবং তাকে জাপটে ধরে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি ও লাথি মারতে থাকে। এক পর্যায়ে তার কাছে থাকা পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে ছিনতাইকারীরা পালিয়ে যায়।
ব্যবসায়ী রশিদুল হাসান বিষয়টি ডিবি পুলিশকে জানালে পুলিশ অভিযান শুরু করে। পরে টানা অভিযানে নগরীর এনায়েত বাজার, ডিসি হিল ও লাভলেইন এলাকা থেকে চার ছিনতাইকারীকে নগদ ৬০ হাজার টাকাসহ গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা এর আগে নগরীর বিভিন্ন স্থানে মোট ১১টি ছিনতাইয়ের কাজে সরাসরি জড়িত ছিল। ছিনতাইকারীরা হলো, মোঃ ওয়াহিদুল ইসলাম তুহিন (২০), ইমতিয়াজ হাসান ইশতি (১৮), মোঃ সাবের আহমেদ সাগর (২১) ও জাবেদ আলম আলিফ (১৯)।
মহানগরীর বিভিন্ন থানার অভিযানে প্রায়ই ছিনতাইকারী ধরা পড়ছে। তবে ছিনতাই থামছে না। জানা যায়, নগরীর জুবিলী রোড, জামাল খান, আসকারদীঘির পাড়, সাবএরিয়া, মোমিন রোড, প্রবর্তক মোড়, গণি বেকারী মোড়, আন্দরকিলা, চট্টগ্রাম কলেজ রোড, পুরাতন স্টেশন, সিআরবি, লালখান বাজার, টাইগারপাস, শেখ মুজিব রোড, আগ্রাবাদ এক্সসেস রোডসহ কয়েকটি এলাকায় প্রায়ই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। পথচারী ও রিকশা আরোহীদের পরিচিতদের মতো কাছে এসে কুশল বিনিময়ের ছলে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে টাকা পয়সা ছিনতাই করছে।
নগরীর জামালখান ও কাজির দেউরি এলাকায় সম্প্রতি সাংবাদিকসহ বেশ কয়েকজন রিকশারোহী এধরনের ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েন। পেশাদার অপরাধীদের পাশাপাশি মাদকাসক্তরাও ছিনতাইয়ে নেমে পড়েছে। কোন কোন এলাকায় টানা পার্টির দৌরাত্ম্য চলছে। ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে তারা টাকা পয়সা ও মোবাইল কেড়ে নিচ্ছে পথচারীদের। টাকা দিতে দেরি হলে ধারালো বেড দিয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে হেঁচকা টান দিচ্ছে দুর্বৃত্তরা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চট্টগ্রামে বেপরোয়া ছিনতাই
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ