Inqilab Logo

বুধবার ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইরাকে আইএসবিরোধী লড়াই স্থলযুদ্ধে পরিণত হতে যাচ্ছে

প্রকাশের সময় : ২১ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : পশ্চিম ইউরোপের কর্তৃপক্ষসমূহ যখন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) হামলার ক্রমবর্ধমান ঝুঁকির সম্মুখীন সে সময় ব্রিটেনে গ্রেফতার ঘটছে এবং ফ্রান্স ও বেলজিয়ামে নিরাপত্তা অভিযান চলছে। সব মিলিয়ে বোঝা যাচ্ছে, আইএসের নতুন অভ্যন্তরীণ হুমকির বিরুদ্ধে সরকারগুলো ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যমগুলো এ হুমকিকে আইএসের বেপরোয়া পদক্ষেপ বলে আখ্যায়িত করেছে। তবে নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা অন্য কথা বলছেন।
এখানে তিনটি বিষয় কাজ করছেÑপ্রকৃত যুদ্ধাবস্থা, যুদ্ধে মার্কিন সম্পৃক্ততা দ্রুত বৃদ্ধি করতে পেন্টাগনের পরিকল্পনা (স্থলসেনা প্রেরণসহ) এবং বিদেশে লড়াই সম্প্রসারণে আইএসের পরিকল্পনার গোপন প্রকৃতি। আইএস নিশ্চিতভাবে ইরাক ও সিরিয়ায় ভীষণ চাপের মধ্যে রয়েছে। গত বছরে তারা এ দু’দেশে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ভূখ- হারিয়েছে। তা সত্ত্বেও তাদের পরাজয়ের এখনো বহু দেরী। উল্লেখ করা যায় যে ইরাকি সেনবাহিনী যখন কোনো শহর বা নগর দখল করে তা ঘটে প্রত্যাশিত সময়ের চাইতে অনেক ধীরে। এমনকি তারা যে এলাকা পুনর্দখল করে তা ধরে রাখতে তাদের প্রচন্ড সমস্যার মুখে পড়তে হয়। রামাদি পুনর্দখল করতে ইরাকি বাহিনীর ২০১৫ সালের আগস্ট থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত পাঁচ মাস সময় লেঘেছে এবং দখলের চার মাস পরও আইএসের যোদ্ধারা নগরীর চারপাশে ইরাকি ইউনিটগুলোকে হয়রানি করছে।
২০১৬ সালে অনেক হাঁকডাক করে মসুল পুনর্দখল অভিযান শুরু হয়। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে কোনো প্রচারণা না চালিয়েই ইরাকি সেনাবাহিনী সাময়িকভাবে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তারা প্রাথমিকভাবে যে সাফল্য লাভ করেছিল তা উল্টে যাচ্ছে। এদিকে আইএস সিরিয়া-তুরস্ক সীমান্তে একটি গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত পারাপার কেন্দ্র পুনর্দখল করেছে।
এসব ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। পেন্টাগন মসুল পুনর্দখলকে মধ্যপ্রাচ্যে আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে মনে করে। এটা এখন সুস্পষ্ট যে যুক্তরাষ্ট্র ইরাকি সেনাবাহিনীর পক্ষে বিমান সমর্থন আরো সম্প্রসারিত করতে যাচ্ছে এবং এটা তাদেরকে ক্রমেই স্থলযুদ্ধের দিকে টেনে নিচ্ছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সম্প্রতি সিরিয়ায় আরো ২৫০ জন বিশেষ বাহিনীর সৈন্য প্রেরণের কথা বিবেচনা করছেন বলে খবরে জানা গেছে। জোরালো ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে যুক্তরাষ্ট্র আইএসের বিরুদ্ধে বড় ধরনের ছায়াযুদ্ধ শুরু করতে যাচ্ছে যেমনটি ২০০৪-৭ মেয়াদে জয়েন্ট স্পেশাল অপারেশনস কমান্ড (জেএসওসি) করেছিল ইরাকে আল-কায়দার বিরুদ্ধে।
তবে তা সুখকর নজির নয়। জেএসওসি আল-কায়দাকে ব্যাপক ভাবে দমন করতে সক্ষম হলেও তারা আইএসের উত্থানে সহায়তা করে যারা কিনা আল-কায়দার ভয়ংকর উত্তরসূরিতে পরিণত হয়।
স্পেশাল ফোর্সের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি পেন্টাগন স্থল সেনা মোতায়েন না করার ওবামা প্রশাসনের অঙ্গীকারকে পাত্তা না দিয়ে আইএসের সাথে লড়াইয়ে নিয়মিত যোদ্ধা সৈন্যদের সংখ্যাও বৃদ্ধি করছে।
মার্কিন মেরিন কোর বহু সপ্তাহ ধরেই ফায়ারবেস বেল নামক অগ্রগামী গোলন্দাজ ব্যাটারি সম্বলিত অগ্রবর্তী ইউনিট পরিচালনা করছে। তাদের কাছে রয়েছে ৪টি এম৭৭৭এ২ হাউইটজার। এগুলো হচ্ছে প্রচ- চাপ সহিষ্ণু অস্ত্র যা কিনা ৩০ কিমি দূরত্বে মিনিটে ২টি করে গোলা ছুঁড়তে পারে।
আইএস ফায়ারবেস এর উপর পাল্টা হামলা চালাতে শুরু করেছে। মার্চের শেষদিকে তারা এক মেরিনকে হত্যা কয়েকজনকে আহত করে। কিন্তু পেন্টাগন তা আমলে নিচ্ছে না এবং আরো ব্যাটারি স্থাপন করছে। ইরাকি বাহিনী যদি মসুল পুনর্দখল করতে চায় তবে এগুলো তাদের সাহায্য করবে।
এ লক্ষ্যে মার্কিন মেরিন বাহিনীর একটি প্রধান শক্তি ১৩তম মেরিন এক্সপেডিশনারি ফোর্স তিনটি বিশাল উভচর যুদ্ধজাহাজ ও সহায়তাকারী জাহাজসহ সবে পারস্য উপসাগরে পৌঁছেছে। অন্যদিকে বি-৫২ কৌশলগত বোমারু বিমানগুলোকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে কাতারের আল উদেইদ বিমান ঘাঁটিতে পাঠানো হয়েছে।
যুদ্ধের সম্প্রসারণ যেভাবে ঘটানো হচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে একটি বড় রকমের স্থল যুদ্ধ হতে যাচ্ছে। এখানে দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়টি একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। আইএস মনে করে আমরা হাজার হাজার মুসলমানকে হত্যা করেছি। তাই তারা আমাদের শত শত জনকে হত্যা করছে। তবে তারা আমাদের হাজার হাজার জনকে হত্যা করতে চায়। সূত্র ইউপিআই।
* নিবন্ধকার পল রজার্স ইংল্যান্ডের ব্রাডফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পিস স্টাডিজের অধ্যাপক।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইরাকে আইএসবিরোধী লড়াই স্থলযুদ্ধে পরিণত হতে যাচ্ছে
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ