পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বেগম খালেদা জিয়া। জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী মূল্যবোধের বিশ্বাসী রাজনীতিক। তিনি ব্যাপক জনপ্রিয় এবং দেশের বড় দুই রাজনৈতিক দলের অন্যতম দল বিএনপির চেয়ারপারসন। তাঁর নেতৃত্বে দেশের রাজনীতির বাঁকে বাঁকে হয়েছে ‘রাজনীতির মেরুকরণ’। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে পেয়েছেন ‘আপোষহীন নেত্রীর’ খেতাব। শুধু দলের নেতাকর্মীই নয় দেশ জুড়ে রয়েছে তার লাখো-কোটি অনুসারী, অনুরাগী, ভক্ত। এমনকি জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলেও রয়েছে তাকে নিয়ে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা। তিনি হাসলে লাখ লাখ মানুষ উৎফুল্ল হন; তিনি কাঁদলে লাখো মানুষ কাঁন্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী এবং দুই বারের বিরোধীদলীয় নেতা বেগম জিয়া দীর্ঘ প্রায় সাড়ে ছয় মাস ধরে কারাগারে রয়েছেন। ঈদের আগে গত কিছুদিন ধরেই তিনি বেশ কয়েকটি মামলায় জামিন পেয়েছেন। দলের নেতাকর্মীরা ভেবেছিলেন এবার তারা দেশনেত্রীকে নিয়েই কুরবানির ঈদ করতে পারবেন। কিন্তু শেষ মূহুর্তে কুমিল্লার একটি মামলায় জামিন না পাওয়া কারামুক্তি পাচ্ছেন না সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। সদ্যই ৭৪ বছরে পা দেয়া বয়ষ্ক এই মহিলাকে তাই চতুর্থবারের মতো কারাগারেই ঈদ করতে হচ্ছে।
এই খবরে আশাহত হয়েছেন বিএনপির লাখ লাখ নেতাকর্মী ও বেগম খালেদা জিয়ার কোটি কোটি ভক্ত-অনুরাগী। প্রিয় নেত্রীর মুক্তি না হওয়ায় ঈদের আনন্দও অনেকটা ম্লান হয়ে গেছে তাদের। ঈদুল ফিতরের মতো ঈদুল আযহাতেও তাই অনেকের ঈদ কাটবে নিরানন্দে। কেউবা গ্রামে যাবেন স্বজনদের সাথে ঈদ করতে। অনেকেই বেগম জিয়ার মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে চান না। প্রতিবছরই ঈদ করতে গ্রামে যান জাতীয়তাবাদী মৎসজীবী দলের কেন্দ্রীয় নেতা বগুড়ার শুকানপুকুরের আরিফুর রহমান তুষার। কিন্তু বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কারাবন্দি হওয়ার পর গত ঈদুল ফিতরেও তিনি যাননি গ্রামে। এবারও ঈদ নিয়ে তার যেন কোন আগ্রহই নেই। ঈদ করতে বাড়ি যাবেন না? জিজ্ঞেস করতেই উত্তর- আমাদের কিসের ঈদ? গণতন্ত্রের নেত্রী কারারুদ্ধ, গোটা দেশ এখন গণতন্ত্রহীন অবরুদ্ধ। গণতন্ত্রের মা (খালেদা জিয়া) কারামুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কোন ঈদের আনন্দ নেই। আমাদের মা, আমাদের নেত্রী যতদিন কারামুক্তি পাবেন না ততদিন আমরা কোন আনন্দ-উৎসব করবো না।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ৫ বছরের কারাদন্ড দিয়ে বেগম জিয়াকে নাজিমউদ্দিন রোডের পুরাতন কারাগারে পাঠায় আদালত। সেই থেকে তিনি স্যাঁতস্যাঁতে আলো-বাতাসহীন ঘরে বসবাস করছেন। গত ঈদুল ফিতরের সময় তিনি সেই কারাগারেই ছিলেন। আসন্ন কোরবানির ঈদও তার কাটবে নাজিমউদ্দিন রোডের কারাগারে। তবে এবারই প্রথম নয়, কারাগারে বেগম খালেদা জিয়ার এটি চতুর্থ ঈদ। এর আগে ১/১১ সরকারের সময় রমজানের এবং কোরবানির ঈদ কাটে সংসদ ভবন এলাকায় স্থাপিত সাব-জেলে। ওই সময় ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ভোরে খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের মইনুল রোডের বাসভবন থেকে গ্রেপ্তারের পর সাব-জেলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ৩৭২ দিন আটক থেকে ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তিনি মুক্তি পান। খালেদা জিয়ার কারা জীবনের প্রথম রোজার ঈদ কাটাতে হয় ২০০৭ সালের ১৪ অক্টোবর। একই বছরের ২১ ডিসেম্বর কোরবানির ঈদও তাকে কাটাতে হয় ওই সাব জেলেই। এরপর চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাবন্দি হওয়ার পর খালেদা জিয়ার রোজার ঈদ কেটেছে নাজিমউদ্দীন রোডের কারাগারে। এবারের ঈদেও তাকে সেই কারাগারেই থাকতে হবে।
বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার বলেন, আমাদের নেত্রী কারাগারে বন্দি, গণতন্ত্র বিপন্ন, নেতাকর্মীদের ওপর জুলম-নির্যাচন চলছে এই অবস্থায় আমাদের মাঝে ঈদ এসেছে। গত ১০ বছর ধরেই এমনটি চলছে। কিন্তু এর আগে আমাদের মাঝে থাকতেন আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তাকে দেখে আমরা শান্ত¦না পেতাম, অনুপ্রেরণা পেতাম। কিন্তু এখন তিনিই কারাবন্দি। তাই বিএনপি নেতাকর্মীরা শপথ গ্রহণ করছে আন্দোলনের মাধ্যমে দেশনেত্রীকে মুক্ত করে আনবে। তবেই আমাদের ঈদ আনন্দ পূর্ণতা পাবে।
নেত্রকোণা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ডাঃ মোঃ আনোয়ারুল হক বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া জেলে আমাদের ঈদ আনন্দ কি আর আগের মতো হয়? তারপরও আমরা এলাকায় যাচ্ছি নেতাকর্মীদের শান্ত¦না দিতে, মানসিকভাবে সাহস যোগাতে। একই সাথে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনের জন্য সকলকে প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
এমন বিষয়কে অত্যন্ত বেদনাবিধুর এবং সীমাহীন কষ্টের উল্লেখ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমাদের দলীয় নেত্রীকে কারাগারে রেখে ঈদ পালন করাটা আমাদের জন্য অনেক কষ্টের। যদিও তিনি অত্যন্ত দৃঢ় মনোবলের। আমাদের মানতে কষ্ট হয়।
দলীয় স‚ত্র থেকে জানা গেছে, ঈদের দিন পরিবারের সদস্যরা কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে যাবেন। এছাড়া দলের সিনিয়র নেতারা ঈদের দিন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কবরে দোয়া পাঠ ও মোনাজাত করবেন। পরে তারা কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসনের সাথে দেখা করার জন্য চেষ্টা করবেন। বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয় স‚ত্রে জানা গেছে, ঈদের দিন তার সঙ্গে দেখা করার জন্য এরই মধ্যে আবেদন করা হয়েছে। অনুমতি পেলে দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ কারাগারে গিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
নয়াপল্টনেই কাটবে রিজভীর ঈদ: বেগম খালেদা জিয়া কারাবন্দি হওয়ার আগেই ৩০ জানুয়ারি থেকে বিএনপির নয়াপল্টনের কার্যালয়ে একরকম অবরুদ্ধ জীবন-যাপন করছেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। বেগম জিয়াকে কারাগারে পাঠানোর পর এখনো তিনি সেখানেই অবস্থান করছেন। মাঝে মাঝে হঠাৎ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে রাজপথে সহযোদ্ধাদের নিয়ে মিছিলও করছেন। কিন্তু প্রিয় নেত্রীর মুক্তি না হওয়ায় রোজার ঈদ একা একাই কাটিয়েছেন নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। এবারও রিজভীর কোরবানির ঈদ নয়াপল্টনেই কাটছে বলে জানিয়েছেন তিনি। রুহুল কবির রিজভী জানান, অবৈধ সরকারের এই দুঃশাসনের মধ্যে ঈদের আনন্দ বলে কিছু নেই। আমাদের জন্য তো সবচেয়ে হতাশার বিষয় হলো আমাদের নেত্রী, আমাদের সাড়ে ৬ মাস ধরে জরাজীর্ণ, সেঁতসেঁতে একটি কারাগারে বন্দি। তাকে কারাবন্দি রেখে আমরা তো ঈদের আনন্দ করতে পারি না। তিনি দলীয় কার্যালয়ে একপ্রকার অবরুদ্ধ অবস্থায় আছেন জানিয়ে বলেন, আমার বিরুদ্ধে মামলার কোন অভাব নেই। এখান থেকে বের হয়ে বাসায় গেলেই পথে যে গ্রেফতার হবো না তার নিশ্চয়তা নেই। পুলিশ যে আমাকে তুলে নিয়ে যাবে না তার কি নিশ্চয়তা? নেত্রী মুক্ত হলেই তিনি ঘরে ফিরবেন বলেও জানান। ####
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।