Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গ্রেনেড হামলার ১৪ বছর বিচার শেষ পর্যায়ে

সাখাওয়াত হোসেন | প্রকাশের সময় : ২১ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০২ এএম

আজ সেই ভায়াল ২১ আগস্ট। ২০০৪ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে চলা এক সমাবেশে আওয়ামী লীগ সভনেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে চালানো হয় গ্রেনেড হামলা। মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত ও অনেকে আহত হন। পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন আরও অনেকে। ভয়াবহ সেই হামলার পর দীর্ঘ ১৪ বছর কেটে গেলেও এখনো শেষ হয়নি বিচার।
মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চাঞ্চল্যকর গ্রেনেড হামলার বিচার কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এ পর্যন্ত আসতে সময়ে লেগে গেছে ১০ বছর। বর্তমানে আসামি পক্ষের যুক্তিতর্ক উপাস্থাপন চলছে। যুক্তিতর্ক উপাস্থাপন শেষ হলেই আইনগত পয়েন্টে জবাব দেয়ার সুযোগ রয়েছে রাষ্ট্রপক্ষের। এরপরই মামলাটি রায়ের জন্য দিন ধার্য করে দেবেন বিচারক। এদিকে গত রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, আগামী মাসের মধ্যে গ্রেনেড হামলায় হত্যা মামলার বিচারিক আদলতের রায় দেয়া সম্ভব হবে। রায়টি হলে দেশ আরো একটি দায় থেকে মুক্তি পাবে।
মামলার অন্যতম আসামি বিএনপি নেতা ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের পক্ষে যুক্তিতর্ক পেশ অব্যাহত রয়েছে। গত ১৪ আগস্ট ছিল মামলার যুক্তিতর্ক পেশের ১০৯তম দিন। বাবরের পক্ষে ওই দিন পঞ্চম দফা যুক্তিতর্ক পেশ করেন তার আইনজীবী নজরুল ইসলাম।
আগামী ২৭, ২৮ ও ২৯ আগস্ট মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য করা হয়েছে। রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালতে ২১ আগস্টের ঘটনায় দায়েরকৃত পৃথক মামলায় একই সঙ্গে বিচার চলছে। মামলায় এ পর্যন্ত ৪৪ আসামির পক্ষে যুক্তিতর্ক পেশ শেষ হয়েছে।
এ ব্যাপারে রাষ্ট্রপক্ষের অন্যতম কৌসুলি অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এটা শেষ হলে আশা করছি আগামী মাসেই এ মামলার রায় ঘোষণা হতে পারে। আসামি পক্ষের আইনজীবীরাও ধারণা করছেন চলতি বছরেই ঘোষিত হতে পারে রায়।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে চলা সমাবেশে চালানো হয় ভয়াবহ এই গ্রেনেড হামলা। এতে মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী আইভি রহমানসহ নিহত হয় ২৪ জন। আহত হন আরো অনেকে। যাদের অনেকেই পঙ্গুত্ববরণ করেছেন। তবে গুরুতর আহত হলেও প্রাণে বেঁচে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিচার কার্যক্রম চলাকালে আদালতে রাষ্ট্রপক্ষ বলেছে, আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বহীন করতেই নারকীয় ওই হামলার ঘটনা ঘটানো হয়। এ ঘটনায় আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদন্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। অপরদিকে আসামি পক্ষ নিজেদের নির্দোষ দাবি করে খালাস দেয়ার আর্জি জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত ওই হামলার ঘটনার পর মতিঝিল থানায় মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে সাজানো হয় জজ মিয়া নাটক এবং এক পর্যায়ে মামলার তদন্ত বন্ধ হয়ে যায়। ওয়ান ইলেভেনে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে মামলাটির তদন্ত শুরু হয়। তদন্ত শেষে ২০০৮ সালে হত্যা ও বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে দুটি মামলার চার্জশিট আদালতে দাখিল করেন সিআইডির সাবেক সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার ফজলুল কবির।
চার্জশিটে চার দলীয় জোট সরকারের উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুসহ ২২ জনকে আসামি করা হয়। পুরনো ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন এর আদালতে মামলার বিচার শুরু হয়। ওই সময় ৬১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত।
এরপর ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার গঠন করলে মামলার অধিকতর তদন্ত হয়। ওই তদন্তে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ (মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদন্ড কার্যকর), সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ৩০ জনের নাম আসে। এরপরই ৫২ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আব্দুল কাহহার আকন্দ।
অধিকতর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর রাষ্ট্রপক্ষের ৪৯১ জন সাক্ষীর মধ্যে ২২৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত। তবে বিচারের শুরু থেকেই তারেক রহমানসহ পলাতক রয়েছেন ১৮ জন। কারাগারে ২৩ জন এবং জামিনে আছেন ৮ জন। এছাড়া মামলার অন্যতম আসামি হরকাতুল জিহাদ (হুজি) এর শীর্ষ নেতা মুফতি আব্দুল হান্নান ও শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুলের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয় বাংলাদেশে নিযুক্ত তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর উপর সিলেটে গ্রেনেড হামলার মামলায়। মৃত্যুদন্ড কার্যকর হওয়া তিনজনের নাম আসামির তালিকা থেকে বাদ দেন আদালত। পলাতক আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবীরা শুনানি করছেন। এদিকে, গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে আজ সকাল ১০টায় ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নির্মিত বেদীতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে পুস্পার্ঘ্য নিবেদন করা হবে। গতকাল সংগঠনের দপ্তর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গ্রেনেড হামলা

২২ আগস্ট, ২০২০
২১ আগস্ট, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ