পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আদালত কক্ষের পরিবেশই হবে অনেকটা ঘরোয়া ও পারিবারিক। যেখানে নেই ডক ও কাঠগড়া। বিচারকাজ চলাকালে বিচারক ও উকিলের গায়েও থাকছে গাউন ও কালো কোট। এমনকি আদালতের কর্মচারীও দাফতরিক কোনো পোশাক নেই। শিশুদের জন্য থাকবে বিভিন্ন ধরনের খেলনা, বেলুন, চকলেট, বিস্কুট। শিশুরা যেন পারিবারিক আবহ পায় এজন্য থাকবে অভিভাবকদের ওয়েটিং রুম। বিচারক-আইনজীবী পুলিশ সবাই থাকবেন সাধারণ পোশাকে। এমনই ব্যতিক্রমভাবে সারা দেশে চালু হচ্ছে শিশু আদালত। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আদালতকে ভীতিমুক্ত ও শিশুদের মানসিক চাপমুক্ত রাখতে এসব শিশু আদালত চালু করা হচ্ছে। বর্তমানে ১৪টি শিশুবান্ধব আদালত স্থাপন করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সারাদেশের ৬৪ জেলায় শিশু আদালত স্থাপন করা হবে।
গত ১২ আগস্ট ঢাকা মহানগর আদালত ভবনের দ্বিতীয় তলায় স্থাপিত দেশের প্রথম এই শিশুবান্ধব আদালত উদ্বোধন করেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। এসময় প্রধান বিচারপতি বলেছেন, শিশুরাই দেশ ও জাতির কর্ণধার। জাতির ভবিষ্যত অগ্রগতির নেতৃত্ব দিবে আজকের শিশুরা। ফলে তাদেরকে আদর্শ মানুষ ও শিক্ষিত নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তিনি বলেন, প্রচলিত আদালতের কাঠগড়া ও লালসালু ঘেরা আদালত কক্ষের পরির্বতে একটি সাধারণ কক্ষে এবং প্রচলিত আদালতের দিবস ও সময়ের বাইরে অন্য কোনো দিবস ও সময়ে শিশু আদালকের বিচার কার্য পরিচালনার সুস্পষ্ট বিধান রয়েছে। কিন্তু আমাদের আলাদা কোনো শিশু আদালত কক্ষ নেই। তাই প্রত্যেক জেলার শিশু আদালতের জন্য আলাদা কক্ষ এবং আলাদা বিচারক নিয়োগসহ শিশুদের জন্য অপেক্ষা কক্ষ স্থাপন করা প্রয়োজন।
এক পরিসংখ্যানে দেয়া যায়, সারা দেশে শিশু আদালতগুলোতে বিচারাধীন মামলা ২১ হাজার ৫০৩টি। এর মধ্যে ঢাকা জেলায় বিচারাধীন ১ হাজার ১২৪টি। শিশু আদালতের জন্য পৃথক আদালত কক্ষ স্থাপন হওয়ার শিশু বান্দব পরিবেশের মধ্যে বিচারকার্য করা সম্ভব হবে। এখন থেকে ঢাকার বিভিন্ন আদালতে থাকা শিশুদের মামলা এই আদালতে ট্রান্সফার করা হবে। শিশুদের সব ধরনের বিচার শিশুবান্ধব এই আদালতেই হবে।
সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রার দপ্তর সূত্রে জানা যায়, আদালতকে ভীতিমুক্ত এবং শিশু আইনের যথাযথ বাস্তবায়নের জন্য দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে সরকার। ২০১৭ সালেল ১৪ ফেব্রæয়ারি শিশু অধিকার বিষয়ক সুপ্রিম কোর্টের বিশেষ কমিটি এবং ইউনিসেফ বাংলাদেশ একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। শিশু অধিকার বিষয়ক সুপ্রিম কোর্টের বিশেষ কমিটির চেয়ারম্যান আপিল বিভাগের বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলীসহ কমিটির অন্য সদস্যরা প্রতিটি বিভাগীয় শহরে পরিদর্শন করে পুলিশ, সমাজসেবা কর্মকর্তা, বিচারকসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে পরামর্শক সভা করেছেন। শিশু আইনের বিধান মেনে কীভাবে শিশু আদালতের পরিবেশ শিশুবান্ধব করা যায়সে ব্যাপারে তারা দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। কার কী দায়িত্ব হবে, কীভাবে আইনের আওতায় আসা শিশুদের শিশুবান্ধব পরিবেশের মধ্য দিয়ে বিচার সম্পন্ন করা যাবে, শিশু আইন অনুযায়ী আদালত কক্ষগুলো কেমন হবে এসব বিষয়ে তারাই দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। তাদের নির্দেশনার আলোকেই আদালত শিশুবান্ধব করে গড়ে তোলা হচ্ছে। যার অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে শিশু আদালত হিসেবে নির্ধারিত আদালত কক্ষগুলোকে শিশু আইনের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী শিশুবান্ধব করে গড়ে তোলা। এ সমঝোতা স্মারকের আওতায় প্রথমে পাইলট প্রকল্প হিসেবে, চট্টগ্রাম, খুলনায়, সিলেট ও রাজশাহী মহানগরী ও জেলা হিসেবে দুটি করে এবং জেলা হিসেবে ময়মনসিংহ, যশোর, কক্সবাজার ও বরিশাল জেলায় একটি করে শিশুবান্ধব আদালত কক্ষ তৈরি হচ্ছে। আগামী জুলাইয়ে চট্টগ্রামের আদালত কক্ষগুলো উদ্বোধন করা হতে পারে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, যেখানে থাকবে না সাধারণ আদালতের মতো লালসালু মোড়ানো এজলাস, পোশাক ও অস্ত্রধারী পুলিশ, ডক ও কাঠগড়া, গাউন পরা বিচারক ও আইনজীবী। আদালত কক্ষের পরিবেশই হবে অনেকটা ঘরোয়া ও পারিবারিক। শিশুদের জন্য থাকবে বিভিন্ন ধরনের খেলনা, বেলুন, বিভিন্ন ধরনের চকলেট, বিস্কুট ও বসার জায়গা। অভিভাবকদের উপস্থিতি থাকবে ঘরোয়া পরিবেশের মতো। বিচারকাজ শুরুর আগে শিশু তার মাতা-পিতা বা অন্য অভিভাবকের সান্নিধ্যে অপেক্ষা করতে পারবে। ফলে অন্যান্য আদালতে আনীত বয়স্ক অভিযুক্ত ব্যক্তির সঙ্গে এসব শিশুর সংমিশ্রণের সুযোগ থাকবে না।
জানা যায়, ২০১৩ সালের শিশু আইনের ১৬(১) ধারা অনুযায়ী প্রতিটি জেলা সদরে এবং ক্ষেত্রমত, মেট্রোপলিটন এলাকায় কমপক্ষে একটি করে শিশু আদালত থাকবে। ১৭(৪) ধারায় বলা হয়েছে, সাধারণত যেসব দালান বা কামরায় এবং যেসব দিবস ও সময়ে প্রচলিত আদালতের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় সেটা ব্যতীত, যতদূর সম্ভব, অন্য কোনো দালান বা কামরায়, প্রচলিত আদালতের ন্যায় কাঠগড়া ও লালসালু ঘেরা আদালত কক্ষের পরিবর্তে একটি সাধারণ কক্ষে এবং অন্য কোনো দিবস ও সময়ে প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি ব্যতীত শুধু শিশুর ক্ষেত্রে শিশু আদালতের অধিবেশন অনুষ্ঠান করতে হবে। ২০১৩ সালে আইন তৈরি হলেও এর বিধি বিধানগুলো সেভাবে মানা হচ্ছিল না। শিশু আদালত বয়স্কদের আদালতে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য আসে হাইকোর্ট থেকে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ড. মো. জাকির হোসাইন ইনকিলাবকে বলেন, শিশুদের মানসিক চাপমুক্ত রাখতে শিশু আইনের বাস্তবায়ন করছে সরকার। ২০১৩ সালের শিশু আইনটি বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যেই ব্যতিক্রমধর্মী আদালতকক্ষ গড়ে তোলা হচ্ছে। ইউনিসেফের সহায়তায় এসব বাস্তবায়ন হচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।