Inqilab Logo

রোববার, ১২ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

ট্রেন যাবে সিঙ্গাপুর

প্রকাশের সময় : ২০ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৩৪ পিএম, ১৯ এপ্রিল, ২০১৬

বিশেষ সংবাদদাতা : ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত হচ্ছে বাংলাদেশ। দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার-ঘুনধুম রেললাইন প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে এর নেটওয়ার্ক বিস্তৃত হবে ভারত থেকে বাংলাদেশ হয়ে মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, চীন, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া ও কোরিয়া হয়ে ইউরোপ পর্যন্ত। তখন ট্রেনে চড়েই যাওয়া যাবে থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর। ২০২২ সালের মধ্যেই এই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। গতকাল মঙ্গলবার আলোচিত দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার-ঘুনধুম রেল প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রকল্পের আওতায় তিন বছরের মধ্যেই চালু হচ্ছে ঢাকা-কক্সবাজার রেল যোগাযোগ। পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান, প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২২ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশনা দিয়েছেন আগামী তিন বছরের মধ্যেই দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত কাজ শেষ করতে হবে।
বহুল প্রত্যাশিত দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমারের নিকট ঘুনধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। পাঁচ বছর আগে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হলেও দাতা সংস্থা না পাওয়ায় এত দিন এ প্রকল্পটির বাস্তবায়ন আটকে ছিল। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) অর্থায়নে সম্মত হওয়ায় প্রকল্পটির সংশোধনী প্রস্তাবে অনুমোদন মিলল। এটি বাস্তবায়িত হলে ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত হবে বাংলাদেশ। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৪ হাজার ৯১৯ কোটি ৭ লাখ টাকা এবং এডিবির ঋণ ১৩ হাজার ১১৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা। ২০২২ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের কাজ শেষ করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
সূত্র জানায়, ১৮৯০ সালে মিয়ানমার রেলওয়ে চট্টগ্রাম থেকে রামু এবং কক্সবাজার হয়ে মিয়ানমার পর্যন্ত রেলওয়ে লাইন নির্মাণের জন্য সার্ভে করেছিল। সেই প্রেক্ষিতে ১৯০৮ থেকে ১৯০৯ সালের মধ্যে মিয়ানমার রেলওয়ে আরও বিশদ সার্ভে পরিচালনা করে। চট্টগ্রামের সঙ্গে আকিয়াবের (মিয়ানমার) রেল যোগাযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে দোহাজারী হতে রামু হয়ে আকিয়াব পর্যন্ত ১৯১৭ সাল থেকে ১৯১৯ সালের মধ্যে পুনরায় সার্ভে করা হয়। সে মোতাবেক চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী পর্যন্ত মিটার গেজ রেল লাইন স্থাপন করা হয়। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে কক্সবাজার হতে রামু পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। ১৯৫৮ সালে তৎকালীন পূর্ব বাংলা রেলওয়ে চট্টগ্রামের দক্ষিণ দিক থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারণের জন্য সার্ভে পরিচালনা করে। যার উদ্দেশ্য ছিল চট্টগ্রাম হতে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলওয়ে সংযোগ স্থাপন করা। জাপান রেলওয়ে টেকনিক্যাল সার্ভিস (জেআরটিএস) ১৯৭১ সালে রেল লাইনটি ট্রাফিক সম্ভাবনা যাচাইয়ের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা করে। পরবর্তীতে বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে জেআরটি ১৯৭৬-৭৭ সালে ডাটা সংগ্রহের কাজ সম্পন্ন করে। ১৯৯২ সালে ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কমিশন ফর এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিক কমিশন অধিবেশনে সম্মতিপ্রাপ্ত এশিয়ান ল্যান্ড ট্রান্সপোর্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট নামের প্রকল্পের আওতায় ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কে তিনটি ইউরো-এশিয়া সংযোগ বোডের্র মধ্যে সাউদার্ন করিডর অন্যতম রুট। এ বিবেচনায় সর্বশেষ দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমারের নিকট ঘুনধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন মিটার গেজ নির্মাণের জন্য ১ হাজার ৮৫২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে (এর মধ্যে সরকারি তহবিল ৬৭০ কোটি ৭ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তার পরিমাণ ১ হাজার ১৮২ কোটি ২৮ লাখ টাকা) একটি প্রকল্প ২০১০ সালের ৬ জুলাই অনুমোদন দেয় একনেক। ২০১০ সালের জুলাই থেকে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের কথা ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা না পাওয়ায় প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ আটকে ছিল। এ অবস্থায় ২০১৪ সালের ৯ সেপ্টেম্বর একনেক বৈঠকে সিঙ্গেল লাইন ট্র্যাককে মিটারগেজের পরিবর্তে ডুয়েলগেজ ট্র্যাকে নির্মাণের নির্দেশনা দেওয়া হয়। ওই বছরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রেলপথ মন্ত্রণালয় পরিদর্শনের সময় এ প্রকল্পের মাধ্যমে সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ এবং নতুন রেললাইন নির্মাণের সময় ভবিষ্যতে ডাবল লাইন নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় ভূমির সংস্থান রেখে ভূমি অধিগ্রহণের নির্দেশ দেন। সে অনুযায়ী প্রকল্পটি সংশোধন করে গতকাল পুনরায় অনুমোদনের জন্য একনেকে উপস্থাপন করা হয়। একনেকের বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, এ প্রকল্পের মাধ্যমে দোহাজারী হতে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার এবং রামু হতে মায়ানমারের নিকটবর্তী ঘুনধুম পর্যন্ত ২৮ দশমিক ৭৫ কিলোমিটারসহ মোট ১২৯ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণের মাধ্যমে পর্যটন নগরী কক্সবাজারের সঙ্গে বাংলাদেশ রেলওয়ের যোগাযোগ স্থাপনসহ ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংযোগ স্থাপিত হবে। পরিকল্পনা মন্ত্রী জানান, অনুমোদিত অন্যান্য প্রকল্প হচ্ছে Ñ রেলওয়ের জন্য ১০০টি মিটার গেজ যাত্রীবাহী গ্যারেজ পুনর্বাসন প্রকল্প, এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা। পরিকল্পনা সচিব তারিক-উল-ইসলাম, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব কানিজ ফাতেমা, বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিব ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সিনিয়র সদস্য ড. শামসুল আলম জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
রেল সূত্র জানায়, দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার-ঘুনধুম রেললাইন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে চট্টগ্রাম জেলায় ২৮০ একর এবং কক্সবাজার জেলায় ৯৯৩ একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে। ভূমি অধিগ্রহণের জন্য চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের দাবিকৃত ৩৯১ কোটি টাকার মধ্যে ৩১২ কোটি টাকা ইতোমধ্যে পরিশোধ করা হয়েছে। গাছপালা এবং বাড়িঘর ছাড়া কক্সবাজার জেলা প্রশাসন অধিগ্রহণের জন্য দাবি করেছে ৩১৪ কোটি টাকা। রেল সূত্র জানায়, নতুন এ প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত থাকছে ৯টি রেল স্টেশন। সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চকরিয়া, ডুলাহাজরা, রামু, ঈদগাহ হয়ে কক্সবাজার এরপর উখিয়া। সবগুলো রেল স্টেশনের ডিজাইন করা হয়েছে সেখানকার প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্যের উপর ভিত্তি করে। এর মধ্যে কক্সবাজার রেল স্টেশনের ডিজাইন করা হয়েছে সমুদ্রের ঝিনুকের আদলে। ঝিনুকের ভিতরে একটা মুক্তাও দৃশ্যমান। প্রকল্পের একজন কর্মকর্তা জানান, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন যাবে কখনও পাহাড়ঘেঁষে কখনওবা গভীর জঙ্গলের পাশ দিয়ে। ট্রেনের যাত্রীরা প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে দেখতে ট্রেন ভ্রমণ করবেন। একটি সূত্র জানায়, গতকাল একনেকের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীও কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্যের কথা উল্লেখ করে বলেন, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতটি পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত। ১২০ কি.মি. দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট এ সমুদ্র সৈকতের বৈশিষ্ট্য হলো পুরো সমুদ্র সৈকতটি বালুকাময়। কাদার অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। পর্যটকেরা যাতে করে নিরাপদে এই সৈকতে ভ্রমণ করতে পারেন সে ব্যবস্থা করতে হবে। এ লক্ষ্যে তিনি আগামী তিন বছরের মধ্যে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের কাজ শেষ করার নির্দেশ দেন।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 



 

Show all comments
  • মনছুরুল হক ২৭ আগস্ট, ২০১৮, ৩:৪৬ পিএম says : 0
    বাংলাদেশের কোন ব্যক্তিি
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ট্রেন যাবে সিঙ্গাপুর

২০ এপ্রিল, ২০১৬
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ