পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
শফিকুল ইসলাম বেবু, কুড়িগ্রাম থেকে : ধরলা এখন রবি ঠাকুরের সেই ‘আমাদের ছোট নদী’। এক সময়কার খরস্রোত ধরলা নদী এখন মৃতপ্রায়! অথচ বছর ছয়েক আগেও ছিল পানির প্রবাহ ও প্রাণের স্পন্দন। মাত্র ৫৫ কিমি দৈর্ঘ্য এ নদী বাংলাদেশের লালমনিরহাট জেলার মোগলহাটের কর্ণপুর দিয়ে প্রবেশ করে কুড়িগ্রামের অদূরে মোগরবাসায় ব্রহ্মপুত্রের সঙ্গে মিলিত হয়েছে।
২ শতাধিক চর সৃষ্টি করে নদীটি হাজার হাজার পরিবার বিনষ্ট করে দিনমজুর বানিয়ে দিয়েছে। শুধু বালুচর আর বালুচর। গভীরতা কমে যাওয়ায় মানুষজন হেঁটে পার হয়ে যাচ্ছে ধরলার বুক দিয়ে। অনেক স্থানে নদীটির বুক যেন এখন আবাদি জমি। ধরলা শুধু এখন কালের সাক্ষী। ধরলার তীরবর্তী হাজার হাজার হেক্টর জমি ইরি-বোরো আবাদের চরম হুমকির মুখে। সেচ পাম্পগুলো দিয়ে পর্যাপ্ত পানি উত্তোলন না হওয়ায় হাজার হাজার কৃষক দিশেহারা। নদীটির মধ্য ভাগে কোথাও কোথাও জেগে উঠেছে চর। এমনি বৃহৎ আকারে দ্বীপচর জেগে উঠেছে ফুলবাড়ির শিমুলবাড়ি ও নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের চরযতীন্দ্র নারায়ণ, চরপেচাই, চরগোরক ম-প এবং লালমনিরহাটের চরখারুয়া, বোয়ালমারি এবং অধুনালুপ্ত ছিটমহল বাঁশপেচাইকে নিয়ে। চতুর্দিকে ধরলা বেষ্টিত এ দ্বীপ চরটিতে প্রায় ২০ হাজার লোকের বসবাস। নাব্যতা না থাকায় ইঞ্জিনচালিত নৌকা বা ডিঙ্গি নৌকা চলাচল সম্ভব হচ্ছে না।
ফলে দেশের মূল ভূখ-ের সঙ্গে যোগাযোগের একটি মাত্র পথ ¯্রােতহীন ধরলার গুয়াবাড়ি ঘাটের বাঁশের সাঁকো পাড়ি দেয়া। এখানকার যে পরিবারগুলো এক সময় ধরলার মাছ শিকার করে জীবন-জীবিকা চালাতো তারা তাদের দীর্ঘ দিনের পেশা হারিয়ে কেউবা দিনমজুর, কেউবা বাড়িঘর ছাড়া, আবার কেউবা বেকার জীবনযাপন করছে। বিশেষ করে অসংখ্য চরাঞ্চল সৃষ্টি করে এক সময়কার খরস্রোত ধরলাটি মরা নদীতে পরিণত হওয়ায় সেখানকার মানুষজনের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে অসংখ্য চর জেগে ওঠা ধরলা নদী ফুলবাড়ী উন্নয়নের একমাত্র অন্তরায় বলে ভুক্তভোগী মানুষজন জানিয়েছেন। হাজার হাজার হেক্টর জমি সেচ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে। চরম বিপর্যয় ঘটছে এ এলাকার কৃষিতে। বিনষ্ট হচ্ছে প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য। অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশের। স্বচ্ছ ও সুপেয় পানির অভাবে এ এলাকার মানুষজন আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে পানিবাহিত রোগে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ তো লেগেই আছে। ফলে এ অঞ্চলে মরুকরণ লক্ষণ দেখা দিয়েছে।
ধরলা পাড়ে ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিদিন একটি বিশেষ মহলের ইঙ্গিতে ধরলার তীরবর্তী স্থানে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। সোনাইকাজী গ্রামে ধরলার পাড়ে বিএডিসির গভীর নলকূপটি দিয়ে আর পানি উত্তোলন করা সম্ভব হচ্ছে না। স্থানীয় কৃষক মিঠু, ইলিয়াছ, লায়ন জানান, প্রায় ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে স্থাপিত গভীর নলকূপটি এখন অকেজো। কারণ ধরলায় এখন আর পানি নেই। শুধু চর আর চর।
শিমুলবাড়ী চরের সুধীর চন্দ্র রায় জানান, ধরলা শুধু বর্ষা মৌসুমে বোঝা যায়, এখন শুধু চর আর চর। যতীন্দ্রনারায়ণ, কবির মামুদ সোনাই কাজী, বড়ভিটার চর, মেকলির চরের খলিল, জব্বার, মুকুল, জাহাঙ্গীর, হামিদ, শাহ্ আলম, আফসার জানান, ধরলার নাব্যতা কমে পানিও শুকিয়ে গেছে, আমাদের একমাত্র বৃষ্টি ছাড়া কোনো উপায় নেই।
কুলাঘাট খেয়াঘাটের আমিনুল জানান, এক সময়ে পাবনা, সিরাজগঞ্জ, মানিকগঞ্জের লোকজন বড় বড় নৌকা নিয়ে ব্যবসা করার জন্য এই এলাকায় আসত, কিন্তু নদীতে পানি না থাকায় তারা আর এখানে আসেন না। ধরলা পাড়ের নৌকার মালিকরা নৌকা চালাতে পারছেন না। ধরলার পাড়ের খোকা মাঝি জানালেন, ধরলা এখন মরা। এখানে কোনো মাছ নেই, সারাদিন জাল দিয়ে মাছ ধরেও ২০-৩০ টাকার মাছ পাওয়া যায় না। এ দিয়ে আমার পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্ট করে বেঁচে আছি।
পার্শ্ববর্তী কুটিচন্দ্রখানা জেলেপাড়া গ্রামের প্রায় ১শ’ পরিবার তাদের বাপ-দাদার পেশা ধরে আছে মাত্র ১০-১৫টি পরিবার। অন্যরা এ পেশা ছেড়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় রিকশা চালায়, কেউবা অন্যের দোকানে, কেউবা মাটি কাটার কাজ করছে। কেউ কেউ ভিক্ষাবৃত্তিও করছে।
ফুলবাড়ী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রব্বানী সরকার বলেন, এ নদীটি পুনঃউদ্ধার করতে হলে তলদেশ খনন এবং ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে ব্রহ্মপুত্র নদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা গেলে নদীটি আবার তার খর¯্রােত ফিরে পাবে। তাছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এ অবস্থা। ধরলা নদী আসলে আমাদের উন্নয়নের অন্তরায়। তিনি ধরলা খনন ও ভাঙন রোধের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।