Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

তথ্য-উপাত্ত না দিতে পারলে অর্থ ফেরত দেবে না ফিলিপাইন

প্রকাশের সময় : ২০ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত না দিতে পারলে চুরি যাওয়া অর্থ ফেরত দেবে না ফিলিপাইন। আর তাই ফিলিপাইনে উদ্ধার হওয়া রিজার্ভের অর্থ ফিরে পেতে, প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত দিতে হবে বাংলাদেশকে। এ বিষয়ে ব্যর্থ হলে ফিলিপাইনের আইন অনুযায়ী এ অর্থের মালিক হবে দেশটির জনগণ। ম্যানিলায় সিনেটের ষষ্ঠ শুনানিতে এমনটা জানিয়েছে, মুদ্রা পাচারবিরোধী সংস্থা এএমএলসি। এছাড়া গতকাল শুনানিতে আরও ৪৩ লাখ ডলার ফেরত দিয়েছেন ক্যাসিনো ব্যবসায়ী কিম অং। এদিকে রিজার্ভ থেকে চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধারে ফিলিপাইনের সঙ্গে পারস্পরিক আইনি সহযোগিতা নেয়ার সুযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র শুভংকর সাহা। প্রয়োজন পড়লে মামলাও করা হবে বলে জানান তিনি।
সিনেটের ব্লুরিবন কমিটির গতকালের শুনানির শুরুতেই উঠে আসে ফিলিপাইনের মুদ্রা পাচার আইন। ক্যাসিনো এ আইনের আওতায় না থাকায় সুপারিশ করা হয় তা সংস্কারের। এরপর একে একে কমিটির জেরার মুখে পড়ে রিজাল কমার্সিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ। কমিটির প্রধান সার্জিও ওসমেনার প্রশ্নবানে বেরিয়ে আসে, অর্থ পাচারে বড় গাফেলতি ছিল এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানের। সন্দেহজনক লেনদেনের পরও কেন অর্থ ছাড় হলো, সদুত্তর দিতে পারেননি, জুপিটার শাখার শাখা ব্যবস্থাপক মায়া সান্তোস দেগুইতো। বড় অংকের এই লেনদেনের পেছনে কাস্টমার রিলেশনশিপের বিষয়টি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন তিনি।
আরসিবিসির শীর্ষ কর্তাদের বক্তব্যেও উঠে আসে অর্থ ছাড় নিয়ে মায়ার ছলচাতুরির বিষয়। প্রধান কার্যালয়ে সাসপিসাস ট্রানজিকশন অর্ডার পাঠিয়ে, উত্তর পাওয়ার আগেই চার অ্যাকাউন্টে টাকা ছাড় করেন মায়া। শুনানিতে আরসিবিসি জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ থেকে অর্থ চুরি হলেও তাদের সাথে কোন যোগাযোগ করেনি ফেড কর্তৃপক্ষ। অর্থ পাচারের ঘটনায় ফেড দায় এড়াতে পারেনা বলে মত দেয় সিনেট। এদিকে চুরি যাওয়া অর্থের মধ্যে আরো ৪৩ লাখ মুদ্রা পাচারবিরোধী সংস্থা এএমএলসির কাছে জমা দিয়েছেন, ক্যাসিনো ব্যবসায়ী কিম অং। এ নিয়ে ক্যাসিনো থেকে ফেরত পাওয়া অর্থের পরিমাণ প্রায় এক কোটি ডলার।
তবে রিজার্ভের উদ্ধার হওয়া অর্থ সহজেই ফেরত পাচ্ছে না বাংলাদেশ। এ জন্য সরবরাহ করতে হবে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত। নইলে ফিলিপাইনের আইন অনুযায়ী, সে অর্থ দেশটির জনগণের সম্পদে পরিণত হবে। এদিকে ব্যবসায়ী কিম অংয়ের বিরুদ্ধে করা এএমএলসির মামলার প্রাথমিক তদন্ত শুরুর তারিখ ৩ মে নির্ধারণ করেছে দেশটির বিচার বিভাগ।
অপরদিকে রিজার্ভ থেকে চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধারে ফিলিপাইনের সঙ্গে পারস্পরিক আইনি সহযোগিতা নেয়ার সুযোগ রয়েছে বলে জানালেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র শুভংকর সাহা। প্রয়োজন পড়লে মামলাও করা হবে বলে জানান তিনি। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকে এক ব্রিফিংকালে মুখপাত্র এসব কথা জানান।
শুভংকর সাহা বলেন, ফিলিপাইনে অবস্থিত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি টিম অর্থ উদ্ধারের বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। ফিলিপাইনের যে ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস (ডিওজে) আছে তাদের সঙ্গে আমাদের টিমের আলোচনা হয়েছে। আমাদের মিউচ্যুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিট্যন্সির (সমন্বিত আইনি প্রক্রিয়া) যে সুযোগ আছে তার মাধ্যমে অর্থ আদায়ে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় কিনা সে বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখবো।
‘যেহেতু সার্বিকভাবে সব জায়গায় কার্যক্রমগুলো চলছে এবং এই জায়গা থেকে যা যা করা দরকার; সেখানে যদি আইনি পদক্ষেপের প্রয়োজন পড়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সেটাও নেবে। আবার মিউচ্যুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিসটেন্সির মাধ্যমে যদি করা যায় সেটিও করা হবে। সমস্ত কিছু দেশের স্বার্থ বিবেচনায় এবং আইন অনুযায়ী করা হবে’- বলে জানান মুখপাত্র।
তবে বিদেশিদের বিরুদ্ধে মামলা করে টাকা আদায়ের প্রয়োজন পড়বে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফিলিপাইনে উদ্ধারকৃত বা জব্দ করা টাকা তাদের দৃষ্টিকোন থেকে প্রসিড অব ক্রাইম। এই টাকাগুলোকে উদ্ধার করা, বাজেয়াপ্ত করার পর এটার বেনিফিশিয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংককে ফেরত দেয়ার ক্ষেত্রে কিন্তু অবশ্যই তাদেরকে কিছু আইন কার্যক্রম বা আইনি পদক্ষেপের আবশ্যকতা থাকাটাই স্বাভাবিক। সেটা তাদের কাছে আছে। এর মধ্য দিয়ে যেয়েই তাদেরকে টাকা ফেরত দিতে হবে।
টাকা উদ্ধারে আইনি প্রক্রিয়া যে কারণে প্রয়োজন পড়বে তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে শুভংকর বলেন, কাগজে কলমে সন্তুষ্ট থাকতে হবে, এই টাকাটা আসলে আমার। আমার যেমন কাগজ কলম আছে, তার (ফিলিপাইন) কাছেও আছে। এই বিষয়গুলোর জন্যেই আসলে এই প্রসেডিং, এই সমস্ত কিছু, আইনের নিয়মাচার, নীতিমালা। আগামীতে যাতে কোন অসুবিধা না হয় এই বিচার করেই টাকাটা ফেরত দেয়া হয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই এই ধরনের আইনি প্রক্রিয়া গ্রহণের প্রয়োজন পড়লে আমরা তা করবো। তবে ফিলিপাইনে অবস্থিত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি টিম টাকা উদ্ধারে সে দেশে কাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা কিন্তু সময় অসময়ে আমাদেরকে বিষয়গুলো জানাচ্ছেন। পরবর্তীতে তারা বিভিন্ন বিষয়ের উপর ভিত্তি করে যে পদক্ষেপগুলো নিতে বলবেন সে পদক্ষেপগুলো আমরা অবশ্যই গ্রহণ করবো।
পুরো অর্থ আদায়ের সম্ভাবনা নিয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত যতটুকু আদায় হয়েছে সেই আদায় যদিও প্রায় আট ভাগের এক ভাগ, কিন্তু এটাতে বুঝা যাচ্ছে পুরো টাকাটাই উদ্ধার করা হয়তো সম্ভব হবে, আমরা আশাবাদী। তবে সব তো আর আদায় হয় না; যে খরচ গেল, যে কষ্টটা যাচ্ছে, মনের দিক থেকে যতটা পেরেশানি গেল, ভাবমর্যাদারও একটা বিষয় আছে, আমাদের মনটা যতদিন খারাপ থাকে এগুলোও একটা বিষয় থাকে। এসব তো আর ফেরত পাওয়া যাবে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: তথ্য-উপাত্ত না দিতে পারলে অর্থ ফেরত দেবে না ফিলিপাইন
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ