পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইনকিলাব ডেস্ক : আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল গতকাল প্রচ- বিস্ফোরণে কেঁপে উঠে। কর্তৃপক্ষ জানায়, সকালে ব্যস্ত সময়ে শহরের কেন্দ্রস্থলে এই বিস্ফোরণে অন্তত ২৮ জন নিহত ও ৩২৯ জন আহত হয়েছে।
হতাহতদের মধ্যে সৈনিক ও নিরাপত্তা কর্মী রয়েছে। তবে বেশীর ভাগই সাধারণ মানুষ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সাদিক সিদিকি বলেন, আত্মঘাতী গাড়ি বোমা হামলায় এই বিস্ফোরণ ঘটে। সরকারের ভিআইপিদের রক্ষায় নিয়োজিত এমন একটি নিরাপত্তা টিমের কার্যালয় ছিল এই হামলার লক্ষ্য। এটি আফগান প্রেসিডেন্সিয়াল প্রাসাদ থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরে একটি ব্যস্ত এলাকা। সিদিক বলেন, ডাইরেক্টরেট অব সিকিউরিটি ফর ডিগনিটারিজ কার্যালয়ের বাইরে একটি গাড়ি বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এলিট সিকিউরিটি ফোর্স হিসেবে এই বাহিনী সিনিয়র সরকারী কর্মকর্তাদের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত। বিস্ফোরণ এতই প্রচন্ড ছিল যে শহরের বেশীর ভাগ ভবনের জানালার কাঁচ ভেঙ্গে পড়ে।
তালিবান এই হামলার দায়িত্ব স্বীকার করেছে। তাদের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ এক বিবৃতিতে এই হামলার দায়িত্ব স্বীকার করেন। কিছুদিন আগেই তারা বড় ধরনের হামলা শুরুর ঘোষণা দিয়েছিল। গ্রুপটি গতকাল বিবৃতিতে বলেছে, একজন আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী প্রথমে দফতরের গেটে তার বিস্ফোরক বোঝাই লড়ির বিস্ফোরণ ঘটায় এরপর অন্যান্য সশস্ত্র যোদ্ধা সেখানে ঢুকে ভেতরের শত্রুদের উপর গুলিবর্ষণ শুরু করে।
কাবুলের পুলিশ প্রধান জেনারেল আবদুল রাহমান রাহিমি বলেন, নিহত ২৮ জনের মধ্যে বেশীর ভাগই বেসামরিক লোকজন। তবে এত বিপুল সংখ্যক মানুষ আহত হয়েছে যে নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। জনাকীর্ণ যে এলাকায় বিস্ফোরণ ঘটে সেখানে কয়েকটি সরকারী অফিস রয়েছে। এলাকাটি একটি ব্যস্ত বাস স্টপও।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, বিস্ফোরণ ঘটানোর পর জঙ্গীরা ভবন কম্পাউন্ডে ঢুকে পড়ে এবং এরপর আফগান নিরাপত্তা বাহিনী তাদের উপর পাল্টা আঘাত হানে। তবে জেনারেল রাহিমি বলেন, মাত্র একজন জঙ্গী ভেতরে প্রবেশ করে এবং আধঘন্টারও কম সময়ের মধ্যে তাকে হত্যা করা হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, বিস্ফোরণের কাছাকাছি এলাকায় তালিবান যোদ্ধাদের হত্যা করতে আফগান পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেখানে পুলিশের গুলিতে অন্তত একজন হামলাকারী নিহত হয়েছে, তবে কর্তৃপক্ষ সেখানে আরো দুই সন্দেহভাজন হামলাকারীকে খুঁজছে বলে তিনি জানান।
সাদিকুল্লাহ (২৫) নামের আহত এক ব্যক্তি বলেন, আমি সড়কে হতাহত অনেককে অসহায় অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেছি। তাদের মধ্যে অনেকে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিল। অনেককে নিরবে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে দেখেছি। তিনি আরও বলেন, এক ডজনেরও বেশী যানবাহন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব গাড়ির চালক ও যাত্রীরা নিহত অথবা আহত হয়েছে।
সাদিকুল্লাহ সড়ক পাশে একটি চায়ের দোকান চালায়। তিনি বলেন, বিস্ফোরণ এতই প্রচন্ড ছিল যে আমার দোকানেরও ক্ষতি হয় এবং ব্যক্তিগতভাবে আমি নিজেও আহত হই। সাদিকুল্লাহ মাথায় আঘাত পেয়েছেন।
কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, প্রচন্ড বিস্ফোরণের পর তারা অব্যাহত বন্দুকযুদ্ধের শব্দ শুনেছেন। আফগান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, অ্যাম্বুলেন্সে করে হতাহতদের কাবুলের আশপাশের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
তালিবান বাহিনী গত সপ্তাহে তাদের বার্ষিক বসন্তকালীন আক্রমণাভিযান শুরু করার ঘোষণা দেয়ার পর থেকে আফগান রাজধানী কাবুলে নিরাপত্তা বাহিনীকে সতর্কাবস্থায় রাখা হয়েছে। বিভিন্ন রিপোর্টে বলা হয়, শহরের ভেতরে আত্মঘাতি এই গাড়ি বোমা হামলায় এটা স্পষ্ট যে এটা পরিকল্পিত হামলা।
আফগান সরকারের মুখ্য নির্বাহী আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেন, এটা আফগানিস্তানের শত্রুদের সন্ত্রাস ও চরম বর্বরতা। তিনি বলেন, তালিবান ‘আমাদের শান্তির আহ্বান’ প্রত্যাখ্যান করার কারণে সারা দেশে নিরাপত্তা বাহিনীকে সতর্কাবস্থায় রাখা হয়েছে।
১৩ বছর বয়সী বালক মোহাম্মদ আমির জানায়, বিস্ফোরণে গাড়ির একটি মেরামত কারখানার সকল সরঞ্জাম এদিকে সেদিক ছিটকে পড়ে। সেই কারখানায় আমির কাজ করে। সে আরও জানায়, এতে তার চাচা মাথায় আঘাত পেয়েছে এবং তার ভাই এখনো নিখোঁজ। সে বেঁচে আছে না মরে গেছে এখনো তা পরিস্কার নয়। সে বলছে, আমি আশা করছি সে হয়তো আমার মতোই বেচেঁ আছে।
তালিবান যোদ্ধারা গোটা দেশেই আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে তাদের লড়াইয়ের বিস্তার ঘটিয়েছে এবং বেশ কয়েকটি প্রদেশে গুরুত্বপূর্ণ সাফল্যও অর্জন করেছে তাসত্তে তাদের যোদ্ধাদের শহরের ভেতরে আক্রমণ চালানো এখন অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ। তবে মাঝে মধ্যেই তারা একই ধরণের হামলা চালাচ্ছে। তাদের হামলার প্যাটার্নটি হচ্ছে প্রথমে গাড়ি বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি করা এবং এরপর তাদের সশস্ত্র যোদ্ধাদের টার্গেটকৃত ভবনটিতে প্রবেশ করা। সেখানে নিরাপত্তা বাহিনী আসার আগ মুহুর্ত পর্যন্ত নির্বিচারে গুলি চালানো এবং পুলিশ ও এলিট ফোর্স সেখানে আসলে তাদের সঙ্গে থাকা বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিজেদেরও উড়িয়ে দেয়া।
আফগান প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আশরাফ ঘানি রাজধানীতে এই সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা করেছেন। প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে নিহতদের শহীদ হিসেবে উল্লেখ করে বলা হয়, যে নিরীহ বেসামরিক আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশংকাজনক।
প্রেসিডেন্ট এক টুইটে বলেন, কাবুলের পুলে মাহমুদ খান এলাকায় আজকের সন্ত্রাসী হামলায় এটা সুস্পষ্ট যে আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে মুখোমুখি লড়াইয়ে শত্রুরা পরাজিত হয়েছে।
কাবুলে মার্কিন দূতাবাস থেকেও এই বিস্ফোরণের আওয়াজ শোনা যায় বলে দূতাবাসের একজন মুখপাত্র জানান। বিস্ফোরণে দূতাবাসের কোন ক্ষতি হয়নি। তবে মার্কিন দূতাবাস আমেরিকান নাগরিকদের সর্বোচ্চ সতর্কতা বজায় রাখার পরামর্শ দিয়েছে।
তালিবান বাহিনী প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে বড় বড় রণাঙ্গনে সাফল্য অর্জন করলেও শহরের ভেতরে তাদের আত্মঘাতি হামলার সাফল্য সে রকম না হলেও সাধারণ মানুষ হতাহত হওয়ার পাশাপাশি এতে মানুষের দৈনন্দিন জীবন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে যা সরকারের উপর ক্রমবর্ধমান চাপ সৃষ্টি করছে। সূত্র : নিউ ইয়র্ক টাইমস, সিএনএন, বিবিসি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।